হৃদয়ের কথা পর্ব ২

0
1102

#হৃদয়ের_কথা
#প্রজ্ঞা_জামা_তৃণ
|2|

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে অনেক রাতে বাসায় ফিরে সম্রাট। তারপর এক আকাশ সমপরিমাণ অভিমান নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিধিমার ঘরের দিকে তাকায়। নিজের মনের ভিতরে জেকে বসা অদ্ভুত রাগ নিয়ে দপদপ পায়ে ছাদে উঠতে থাকে। সবাই তখন ঘুমিয়ে গছে। ছাদে পৌঁছে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের মনকে বুঝিয়ে কঠোর মন নিয়ে প্রতিজ্ঞা করল সম্রাট রিধিমাকে দিয়েই ওর প্রতিটা দীর্ঘশ্বাস আর কষ্টের উপলব্দি করাবে। সম্রাটের প্রতি ভালোবাসা টেনে হিচড়ে বের করবে রিধিমার থেকে। প্রয়োজনে জোর করবে। তীব্র যন্ত্রণায় ওর কমল হৃদয় টাকে কঠোর ভাবে সিক্ত করবে। ভালোবাসা পাওয়ার জন‍্য রিধিমা যখন ছটফট করবে তবেই তো ও বুঝবে কাউকে একতরফা ভালোবাসার কষ্টটা। ভালোবাসার মানুষের সান্নিধ্য পাওয়ার ইচ্ছে কতটা দুঃখের। ভালোবাসার মানুষটাকে একটু স্পর্শ করার ইচ্ছে কিন্তু ছুতেঁ না পারার অপারগতার কষ্ট।

.

৩.

চোখগুলো লাল টকটকে সিগারেটের উগ্র স্মেল। ভাগ‍্যিস বাসার কেউ জেগে ছিলো না। রিধিমা কখন সম্রাটের পেছন পেছন এসেছে সম্রাট হয়তো টেরই পায়নি। সম্রাটের ঠিক ডান সাইডে দাড়িঁয়ে তার সমস্ত খুটিঁনাটি পরোক্ষ করছে রিধিমা।এর আগে কখনো সম্রাট এভাবে খুটিঁয়ে খুটিঁয়ে দেখেনি রিধিমা। কারণ মুর্তজা মাহিরাদ সম্রাট তো বরাবর নিখুঁত। উজ্জ্বল ফর্সা ত্বক, কঠিন পুরুষালী ব‍্যাক্তিত্ব, ছয় ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট শক্তিশালী আকর্ষণীয় পুরুষালী দেহ। নাক মুখের গড়ন সম্পূর্ণ নিখুঁত। থুতনিতে একটা তিল রয়েছে যা সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এজন্যই মেয়েরা আজো লাইন ধরে পরে থাকে তার সঙ্গে কথা বলার জন‍্য। এমনকি রিধিমার কয়েকটি বান্ধুবী প্রায় সম্রাটকে চিঠি পাঠায়। আর এলাকার মেয়েরা তো আছেই। সম্রাট সেগুলো না পড়েই ডাস্টবিনে ফেলে। এগুলো দেখে রিধিমা প্রায় হাসতো। অন‍্যদিকে সম্রাট ওকে ধমকে দিতো নাহলে রাগ কমাতে ওর ওরনার উপর হামলা করতো।

.

রিধিমার কাছে মনে হয় সম্রাট যেমন নিখুঁত তেমনি ব‍্যাক্তিত্বে রয়েছে উগ্রতা। সবার থেকে আলাদা সবথেকে অন‍্যরকম।সবার অত্যন্ত প্রিয়। তবে প্রচন্ড রাগী আগে অবশ্য এমন ছিলোনা কিন্তু সম্রাট বছর তিনেক হলো অনেকটাই চেন্জ।
রিধিমা সম্রাটকে ডাকতে চেয়েছিল কিন্তু যদি সম্রাট রাগ করে তাই চুপচাপ রইল। খুব একটা দেরী করে বাসায় ফেরে না সম্রাট কিন্তু আজকে প্রচণ্ড দেরী। সম্রাটের আব্বু আম্মু চিন্তা করছিল কিন্তু ফোন দিয়ে জানিয়ে দেওয়ায় কিছু বলেনি। রিধিমা ধরেই ফেলেছে যা হলো ওর দোষ বেশি। তাই রাগের শিকার না হতে পিছনে ফিরে পা বারায়। হঠাৎ সম্রাটের ডাকে চমকে ওঠে ওভাবেই দাড়িয়ে যায়।

_ এখানে কি করছিস?এখনো ঘুমাসনি কেনো?

রিধিমা পিছনে ফিরে। সম্রাট এখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে কিন্তু কিভাবে দেখলো ওকে এটাই বুঝলো না। রিধিমা আমতা আমতা করে বলল,

_ বড় আব্বু আর বড় আম্মু চিন্তা করছিল আপনার জন‍্য সম্রাট ভাইয়া। আপনি দেরী করে কখনো বাসায় ফেরেন না তো তাই।

_ আর তুই?

কন্ঠটা অদ্ভুত শোনালো রিধিমার

_ আপনি আমার উপর রাগ করেই তো বেরিয়ে গেলেন।

_ শুধু এজন্য?

_ হ‍্যাঁ

সম্রাট রিধিমার দিকে ফিরে তাকালো। অপাদমস্তক রিধিমাকে পরক্ষ করল। ওর পরনে তখনকার শিফন সাদা থ্রীপিচ ওরনাটা আলাদা। রিধিমা কি বলবে বুঝতে পারলো না হ‍্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো।

সম্রাট আবার সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

_ কাল যাবো কলেজের পাশে পার্কটায় নীলিকে বলে দিস।

_ সত্যি?

_ হ‍্যাঁ। কেনো?

_ নাহ কিছুনা। আমি এখুনি বলে দিচ্ছি।

_ এখন কয়টা বাজে জানিস? তুই এখন বলবি?

_ ১২ : ৩০ বাজে। আমি ঘড়ি দেখে অপেক্ষা করছিলাম আপনার জন‍্য।

_ কি বললি?

_ না কিছুনা এমনি। আমি সকালে ফোন দিয়ে ওকে বলে দিবো। আসছি আমি

_ থাম।

_ হুমমম!

_ শুধু পাচঁমিনিট ওকে বলে দিস। এর বেশি টাইম আমি দিতে পারবো না। এখন গিয়ে ঘুমা।

_ আচ্ছা।

রিধিমা মন খারাপ করেই চলে আসলো। বিকেলে ও খুব করে চাইছিল সম্রাট যেন রাজি হয়। এখন ওর খুশি হওয়ার কথা কিন্তু খুশি হতে সে পারছে না। ও ভালো করে জানে নীলি সম্রাটকে প্রপোজ করবে যদি সম্রাট রাজি হয়ে যায় এইটা ভেবেই ওর ঘুম উরে গেছে।রিধিমা জোর করে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুম আসছে না।

এদিকে সম্রাট আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। সম্রাটের অবচেতন মন বলছে রিধিমা জেলাস ফিল করছে। ও ঠিক করেই নিলো পরবর্তী পদক্ষেপ। তারপর নিচে চলে গেলো।

৪.
সকাল ৮ : ০০ সবাই নাস্তা করছে। রিধিমার বড় আব্বু সম্রাটের বাবা মর্তুজা শাখাওয়াত তার মেজো ভাই মর্তুজা শহীদ ও ছোট ভাই মর্তুজা সারওয়ারের সঙ্গে অফিস নিয়ে টুকটাক কথা বলছেন। সম্রাটের মা মাহিদা বেগম রুটি করছে মেজো মা হেনা বেগম সাহায্য করছে। আর ছোটমা রুবায়াত টেবিলে সবাই কে নাস্তা দিচ্ছে। সম্রাট একেবারে রেডি হয়ে এসেছে। ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে রাহুল টেবিলে বসেছে। সম্রাট রিধিমার চ‍েয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখল চেয়ারটা ফাকা। সম্রাট খেতে শুরু করল। সবার শেষে রিধিমা আসল। একদম কলেজ ড্রেস পরে চুলগুলো পনিটেল করে পরিপাটি। রবায়াত বেগম রিধিমাকে ব্রেড আর জেলি দিয়ে রোল করে দিলেন। রিধিমা একটা ব্রেড খেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে যেতেই রুবায়াত বেগম ধমক দিয়ে বলল,

_ এতো তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ? একটা ব্রেড খেয়ে পেট ভরে?চুপচাপ বস ডিম আর দুধ আনছি সবটা শেষ করবি।

রিধিমা মুখ ভারি করে বলল,

_ আমি ডিম খাব না। দুধ দেও শুধু!

রাহুল বিরক্ত হয়ে রিধিমার মাথায় টোকা দিয়ে বলল,

_ প্রতিদিন এটাকে খাওয়ার জন‍্য প‍্যারাপেরি না করে খেতেই দিয়ো না আম্মু। না খাইয়ে রাখো!

রিধিমা রাহুলকে মারতে গেলে রুবায়াত বেগম চোখ রাঙায়। রিধিমা মুখ ভেঙিয়ে খাওয়াই মনযোগ দেয়।

সাহিল ভাই বলে উঠল,

_ মানুষ এমনিতেও হাওয়াই ভাসে আরোই যদি খেতে না দেওয়া হয় খুজেই পাওয়া যাবে না।

রাহুল আর ভাইয়া ও মেধা হেসে উঠেছে। সাহিল আর মেধা হচ্ছে রিধিমার মেজো আব্বুর জমজ ছেলে মেয়ে। দুজনেই রাহুল ভাইয়ার এজের। সবাই হাসাহাসি করছে এদিকে সম্রাট ভাইয়া চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। রিধিমা রেগেমেগে উঠে গেল
স্কুল ব‍্যাগ নিয়ে নিচে নামতেই মর্তুজা সারওয়ার মেয়েকে টাকা দিলো আর রুবায়াত বেগম টিফিন।

_ রিধিমা!!!

সম্রাটের ডাক শুনে থেমে গেল রিধিমা।

_ হুম বলেন ভাইয়া

_ রিক্সায় যাওয়ার দরকার নাই আমি পৌঁছে দিচ্ছি চল।

_ আমি রিক্সায় যাবো জারিফা আমার জন‍্য অপেক্ষা করছে রাস্তায়!

আমার কথায় রাহুল ভাইয়া বলল,

_ কাল কলেজের পাশে দুইটা রিক্সা এক্সিডেন্ট করেছিল। কি দরকার গাড়ি থাকতে রিক্সায় যাওয়ার? সম্রাট ভাই তো পৌঁছে দিবে জারিফাকে নিয়েই চলে যা।

_ জারিফা রিক্সায় যাবে আমি ও যেতে চাই!

বড় আব্বু বললেন সম্রাটের সঙ্গে যাও রিধিমা। জারিফা আর তোমাকে পৌঁছে দিবে। সবজাইগায় য‍্যামের কারণে রিক্সায় যাওয়া আসাটা রিক’স এখন। এক্সিডেন্ট হচ্ছে খুব!

ব‍্যাস! হয়ে গেলো এখন না চাইতেও গাড়িতে যেতে হবে। রিক্সায় চড়াটা আমার আর জারিফার অনেক পছন্দের। প্রায়ই আমি জারিফা, নীলি রিক্সায় যাওয়া আসা করতাম। জারিফা আমাকে পেটাবে। কি করার এখন যেতেই হবে বড় আব্বু বলে দিয়েছেন। মেজাজটা হটট হয়ে যাচ্ছে একেবারে।

.

.

সম্রাট গাড়িতে করে রিধিমা আর জারিফাকে পৌঁছে দিলো কলেজ গেটে। রিধিমা সম্রাটকে নীলির বিষয়টি মনে করিয়ে দিলো। সম্রাট দুপুরে আসবে বলে অফিসে চলে গেল। রিধিমা জারিফাকে নিয়ে কলেজের ভিতরে চলে গেল। নীলি ক‍্যাম্পাসে বসে অপেক্ষা করছিল রিধিমা আর জারিফা দেখে দৌড়ে আসল। রিধিমা আগেই জানিয়ে রেখেছিল নীলিকে এজন্যই অনেক সেজে গুজে এসেছে। এই নিয়ে রিধিমা আর জারিফা প্রচন্ড হাসাহাসি ও করেছে নীলিকে নিয়ে।

~ চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here