হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস (২) পর্ব ২৫

0
1042

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস (২)
#পর্ব_২৫
#মোহনা_হক

-‘তুমি আমার বিশ্বাস ভেঙেছো সাহেদ। তোমাকে ক্ষমা করা যাবে না। দয়া করে তুমি আমার দল থেকে বের হয়ে যাবে এক্ষুনি। এমন বিশ্বাসঘাতক নিয়ে আমি কাজ করতে চাই না।’

সাহেদ হতভম্ব! আয়াজ এ কথাগুলো বলেছে তাকে? কিন্তু তার যে মন থেকে বিশ্বাস হচ্ছে না। সে তো বলে ভালো করেছে কারণ একারণে তার স্যার কষ্ট পাচ্ছে। এখন বলেও তো বিপদে পড়েছে। তার কি কোনো ভুল হলো? বুঝে উঠতে পারছে না। এখানে আজ রুয়াত জোর না করলেও সে বলতো না। অবশ্যই রুয়াত বলার জন্য জোর করেছে দেখে বলেছে। রুয়াত অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় সাহেদের দিকে। তার জন্য আজ আয়াজ এতো কাছের লোককে দল থেকে বের হয়ে যেতে বলছে। আয়াজের রাগের কারণ আর এই মুহুর্তের পরিস্থিতির কারণ সে নিজেই। একে তো অনুশোচনা হচ্ছে কেনো আয়াজ কে সবটা না শুনে ভুল বুঝেছে আর এখন অনুশোচনা হচ্ছে সাহেদের সাথে আয়াজের এরূপ ব্যবহার কারণে। নিজেকে সামলে নেয় রুয়াত। সহসা বলে উঠে,

-‘আপনি ওনাকে কিছু বলবেন না। আমিই আগে এখানে এসে জিগ্যেস করেছি। ওনার সত্যিই কোনো দোষ নেই। আমি বলার জন্য জোর করেছিলাম। সেজন্য ওনিও বলতে বাধ্য হয়েছেন। আপনি প্লিজ এসব কথা বলবেন না।’

আয়াজের সর্বপ্রথম মনে পড়ে সে কথাটি আমারও তো কোনো দোষ ছিলো না প্রেয়সী অথচ তুমি আমাকে খু’নি বানিয়ে দিলে। আয়াজ ভ্রু কুচকে রুয়াতের দিকে তাকায়। অতঃপর সাহেদ কে কি যেনো ইশারা করে।

-‘সাহেদ কে ক্ষমা করবো না। ও আমার বিশ্বাস ভেঙেছে। ওর মতো মানুষ আমার হয়ে কাজ করার দরকার নেই।’

-‘স্যার ম্যাম জোর করেছিলো বলার জন্য। আমার মোটেও ইচ্ছে ছিলো না। এবারের মতো ক্ষমা করে দিন। আর করবো না স্যার। ম্যাম জোর না করলে আমি একটুও বলতাম না। স্যার আপনি তো কতো মানুষ কে ক্ষমা করে দিন আমায় ও তাদের মতো মনে করে ক্ষমা করলে খুশি হবো স্যার। আরেকবার বিশ্বাস করে দেখুন স্যার।’

পর পর অনুরোধের সুরে খারাপ লাগছে রুয়াতের। সে আজ সবকিছুর জন্য দায়ী। অথচ আয়াজ কোনো দোষ না করেও তাকে ক্রমাগত দোষ দিয়ে যাচ্ছিলো। এখন আবার তার জন্য সাহেদ ফেঁসে গিয়েছে। রুয়াত চারপাশটায় একবার চোখ বুলায়। অতঃপর বলে উঠে,

-‘ওনি যা বলেছেন তার জন্য আমি তাকে বাধ্য করেছিলাম। আপনি প্লিজ লোকটা কে ক্ষমা করে দিন।’

আয়াজ একের পর একে সাহেদের দিকে তাকাচ্ছে আবার রুয়াতের দিকে তাকাচ্ছে। ভেবেছিলো রুয়াত কে কোনো এক সময় নিজের মুখে সব বলবে কিন্তু তাকে তো সাহেদ বলে দিলো। তার উপর কোনো রাগ নেই। শুধু দেখতে চেয়েছিলো শেষটা। আয়াজ বড় নিঃশ্বাস নেয়। জিহ্বা ভেজায়। রুয়াতের মুখপানে তাকায়। ভয়ে মেয়েটার মুখ শুকিয়ে আছে। নিশ্চয়ই এসব কারণেই ভয়ে মুখটার এই অবস্থা করে রেখেছে। আয়াজ শান্ত স্বরে বললো,

-‘আরো একবার সুযোগ দিলাম সাহেদ কে। নিজেকে শোধরাবার চেষ্টা করো। বুঝেই গিয়েছো তাই আর বলছি না যে তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। যেদিন আবার পূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে। সেদিন মনে করবে তোমাকে আমি ক্ষমা করেছি।’

সাহেদ কথাটি শোনার পর খুশি হয়। সে জানে আয়াজ ক্ষমা করে দিয়েছে এবং সেটা মন থেকেই। কারণ আর যাই করুক সে অন্তত তার স্যারের ভালো খারাপ দিক সবটা বিবেচনা করে বলেছে। রুয়াত যেনো তার ভুলটা ঠিকঠাক বুঝতে পারে সেদিক চিন্তা করে বলে দিয়েছে। সাহেদ হেসে মাথা দুলাতে দুলাতে চলে যায়। আয়াজ অদ্ভুত চাহনি তে তাকায়।

রুয়াতের ভীষণ অনুশোচনা হচ্ছে। আয়াজের কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবে? তার কি আদোও ক্ষমা চাওয়ার মতো অবস্থা রয়েছে। না জেনেশুনে লোকটা কে দোষ দিয়েই যাচ্ছিলো। অথচ তার কোনো দোষ ছিলো না! তবে সেদিনের কথা সত্য আয়াজের ইগনোর রুয়াত সহ্য করতে পারছে না। অনেক সময়ের পর বলে উঠে,

-‘সাহেদ ভাইয়ার মতো কি আমাকেও ক্ষমা করা যায়না? মানুষ ভুল করে তার জন্য এতোদিন ধরে শাস্তি দেওয়া লাগবে? আমার শাস্তি যদি শেষ হয় তাহলে এবার ক্ষমা করে দিন। আর কখনো না জেনেশুনে কাউকে ভুল বুঝবো না। সত্যি কথা বলছি আমি আর সহ্য করতে পারছি না এগুলো। এখন শোনার পর সবটা, আমার নিজের কাছে খারাপ লাগছে। সাধারণত যে কেউ শুনলে এটাই মনে করবে। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। আমাকে কি সত্যিই ক্ষমা করা যায় না এমপি সাহেব?’

এটুকুন বলেই রুয়াত থামে। বারবার কথা আঁটকে আসছে তার। আয়াজ নিঃশব্দে হেঁসে দেয়। আর একটু হলেই প্রতিবারের মতো রুয়াত কেঁদে দিবে নাহয়। দূরত্ব বজায় রেখে আয়াজ বললো,

-‘কিসের ক্ষমা চাচ্ছো? প্রথমত তোমাকে আমি কষ্ট দেওয়ার জন্য এসব কিছুই করিনি। শুধুমাত্র তোমাকে তোমার ভুলটা বোঝানোর জন্য এগুলো করেছি। এখানেই কাহিনী শেষ তবে ক্ষমা চেয়ে চেয়ে যে চোখের পানি ফেলছো৷ কিসের জন্য ক্ষমা চাচ্ছো তুমি?’

অবাক দৃষ্টিতে রুয়াত আয়াজের দিকে তাকায়। সে যে ভুল করেছে তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছে এ কথা আয়াজ বুঝেনি? নিজেকে শান্ত করে রুয়াত বললো,

-‘আমি আমার ভুলের জন্য বারবার ক্ষমা চাচ্ছি। অথচ আপনি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন প্রতিবার। এর মানে কি বুঝায় আপনি রাগ করে আছেন!’

-‘ওহ্। তোমার স্মৃতিশক্তি ভালো। তোমার প্রতি আরও বেশি কঠোর হলে মনেহয় সহ্য করতে পারাটা বেশি কষ্ট সাধ্যকর হয়ে যেতো। ক্ষমা করে দিয়েছি আমি অনেক আগেই। শুধু তোমার ভুলটা বোঝানোর জন্য চুপ করে ছিলাম। আর মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটা ইচ্ছাকৃত ছিলো৷ এর পেছনে কোনো অভিমান, রাগ কিংবা ক্ষোভ ছিলো না।’

এতগুলো কথা শোনার পর ও রুয়াত নিজেকে শক্ত রেখেছে। এখন কি মনে করে চোখের পানি ফেলছে? এই মেয়ে কে বোঝে উঠা দায়। আয়াজ খানিকটা দূরত্ব কমিয়ে বললো,

-‘কাঁদার আগে নিজের ভুল বুঝতে শিখো। তারপর কেঁদো। এখন এই কান্না অফ করো। সাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তোমার। এতো সুন্দর মেয়েকে কাঁদলে খুবই বাজে লাগবে। তুমি কি চাও সবার সামনে আমাকে ছোট করতে? তাহলে কেঁদো না। আমি মন থেকে ক্ষমা করেছি। এখন যাও নিমির কাছে। এখানে একা দাঁড়িয়ে থেকো না।’

ফজলুল চৌধুরী দূর থেকে উচ্চস্বরে আয়াজ কে ডেকে ওঠে। সে আর দাঁড়ায়নি। সোজা হেঁটে চলে যায়। রুয়াত একবার আশেপাশে তাকায়। নিমি একা দাঁড়িয়ে আছে। সে সেখানে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়।

(*)

আজ ইনিমার বিয়ে। সে অনুযায়ী পুরো বাড়ি ডেকোরেশন করা হয়েছে। ফজলুল চৌধুরী কোনো রকম ত্রুটি রাখেননি। প্রতিটি জিনিস পুঙ্খানুপুঙ্খান ভাবে সম্পন্ন করেছে। তিনি চাননা তার মেয়ের বিয়েতে কোনো ত্রুটি থাকুক। তার একমাত্র আদরের মেয়ে। আর সেই মেয়ের বিয়েটা খুব ঝাকঝমক করে দেওয়ার ইচ্ছে। সবার ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। আগের দিন রাতে কেউ ঘুমায়নি। মুলত ঘুমানোর সময় ছিলো না। একমাত্র রাহীম চৌধুরী আর আয়েশা চৌধুরী ঘুমিয়েছেন। ফজলুল চৌধুরী, মাহের চৌধুরী আর আয়াজ মিলে সারারাত কাজে ব্যস্ত ছিলেন। শেষ রাতে তারা চলে আসে বাসার ভেতরে। তবে আয়াজ আসতে পারেনি। আর এখনো ক্রমশ কাজ করেই চলছে।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রুয়াত বাহিরের দিকটায় তাকিয়ে আছে। গাঢ় নীল পাঞ্জাবী পরিহিত লোকটার থেকে ঘাম ঝরছে। পুরো পাঞ্জাবী ভিজে একাকার। আজ এতো রোদ। এতো রোদের মাঝেও আয়াজ কে বসে থাকতে দেখে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকায় রুয়াত। কিছু একটা ভেবে নিচে আসে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি দিয়ে শরবত বানাচ্ছে। মাথায় ঘোমটা টানে। বাড়ি থেকে বের হয়। একদম হাতে থাকা গ্লাস নিয়ে আয়াজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ রুয়াত কে দেখে কুচকানো ভ্রু আরও কুচকে আসে। মেয়েটা কে ইশারা করে কিছু একটা। কিন্তু রুয়াত একটু আওয়াজ করে বলে,

-‘এই গরমে না ঘুমিয়ে কাজ করছেন। খারাপ লাগছে জানি। এটা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।’

শরবত জিনিসটা আয়াজের পছন্দ না। এ কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললো,

-‘আশেপাশে মানুষ দেখছো? বাড়ি থেকে বের হয়েছো কোন সাহসে?’

-‘আগে খেয়ে তারপর ধমকাবেন।’

হতভম্ব হয়ে যায় আয়াজ। রুয়াতের মুখপানে তাকায় একবার। গরমে মেয়েটা চোখ মুখ কুচকে আছে। কপাল থেকে বেয়ে পড়া বিন্দু বিন্দু ঘাম হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে সরিয়ে ফেলে। একটু গম্ভীর স্বরে বললো,

-‘খাবো না। আর এভাবে গরমে দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে যাও।’

রুয়াত গেলো না উল্টো আরও ঝিমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াজ বিরক্তিকর শব্দ করলো। কোনো উপায় না পেয়ে এক চুমুকে পুরো গ্লাস শরবত শেষ করে রুয়াতের হাতে দিলো। গ্লাস হাতে নিয়ে রুয়াত কোনো শব্দ না করে চলে আসে।
.

ইনিমা কে পার্লার থেকে সেজে আনা হয়েছে। সাথে নিমি আর রুয়াত গিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ইনিমা বলেছে সে সাজবে না পার্লারে। হুট করেই আজ আবার বলছে সাজবে। তাই কেউ আপত্তি করেনি। রুয়াত আর নিমিও সেজেছে। আরহাম গিয়ে তাদের তিনজন কে নিয়ে আসার জন্য যায় সেখানে। এদের এমন সাজ দেখে বিস্মিত হয়ে যায় সে। প্রথমে কিছু না বললেও গাড়িতে ওঠার সাথে সাথে আরহাম বলে,

-‘মনেহচ্ছে বিয়ে রুয়াত আর নিমির। ইনিমা সেজেছে ভালো কথা। ওর নাহয় বিয়ে তাই সেজেছে। তোরা এভাবে সেজেছিস কেনো? বিয়েটা তোদের হচ্ছে নাকি?’

নিমি একদম রেগে যায়। সেদিন একবার আয়াজ বলেছিলো আজ আবার আরহাম বলছে। আশ্চর্য তারা কি সাজতেও পারবে না! তাদের একমাত্র বড় আপুর বিয়ে। সাজবে না তো কি করবে? আরহাম সামনে বসাতে নিমি তাকে ছুঁতে পারেনি। তবে কর্কশ গলায় বললো,

-‘আমাদের আপুর বিয়ে আমরা সাজবো না তো কে সাজবে? যতদিন আপুর বিয়ের অনুষ্ঠান থাকবে ততদিন সেজেগুজে বসে থাকবো। আমরা সাজলে তোমার এতো সমস্যা কোঁথায়?’

রুয়াত কিছু বললো না। সে চুপ করে শুনে গেলো শুধু। কারণ বুঝেছে আরহাম তাদের জ্বা’লা’ত’ন করার জন্য বলেছে৷ কিন্তু নিমির কি সে জ্ঞান বুদ্ধি আছে? সে তো না বুঝেই বলে ফেলে সব। আরহাম নিমির কথায় থতমত খেয়ে যায়। ইনিমা বললো,

-‘সেদিন একবার আয়াজ ভাইয়া এ কথা বলেছিলো। আজ তুই ও বলছিস? তা ওরা সাজবে না? আর আমি রাজি করিয়েছি সাজার জন্য। হয়েছে দু ভাই বোন কে বলছি আর এসব নিয়ে ঝগড়া করবি না।’

গাড়ির সামনে বসে থাকা ড্রাইভার হেসে দেয়। আজকের দিনেও ইনিমার শাসন যায়নি। একটু পর বিয়ে করে চলে যাবে শ্বশুড়বাড়ি অথচ এখনো ও আরহাম কে বকাবকি করছে। গাড়ির ড্রাইভার কে এভাবে হাসতে দেখে আরহাম কপালে হাত খসে বললো ‘হাসেন কেনো?’ ব্যাস তার হাসি মুহুর্তের মধ্যেই উধাও হয়ে গেলো। রুয়াত সবটা বুঝতে পেরে সে ও হেসে দিলো।

(*)

ইনিমা আর সায়হানের বিয়ে শেষ। মোটামুটি ভালোভাবেই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয় তাদের। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সেই পবিত্র শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে কেঁদে দেয় ইনিমা। তারই সামনে ফজলুল চৌধুরী নিজেকে শক্ত করে বসে ছিলেন। শেষ পর্যায়ে এসে তিনিও কেঁদে দেয়। মায়া চৌধুরী সেখান থেকে সরে এসেছেন। সহ্য করতে পারবেন না এমন মুহুর্ত। নিজের কোলেপিঠে করা মেয়ে কে আজ অন্য একটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে। ভেবেই বুক পুড়ছে তার।

-‘কাঁদবেন না মিস থেকে হয়ে যাওয়া মিসেস বিউটিফুল। আপনার যখন মন চাইবে তখন এ বাড়িতে চলে আসবেন। কেউ কিছু বলবে না। এখন কেঁদে নিজের সাজ একদম নষ্ট করে ফেলছেন।’

সবার অগোচরে সায়হান ইনিমার চোখের পানি মুছে কথাটি বলে। ইনিমা মনে মনে শুধু আওড়াচ্ছে ‘আপনি কি বুঝবেন?’ মুখে আর প্রকাশ করলো না। তালুকদার বাড়ি থেকে লোকজন তাড়া দিচ্ছে বউ নিয়ে যাওয়ার জন্য। যা দেখে ইনিমার বুক ধড়ফড় করা শুরু করে। আর একটু পরেই তার বিদায়। এই বাড়ির প্রতি, বাড়ির মানুষের প্রতি মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্য কোঁথাও নতুন এক জায়গায়।
একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নেয় ইনিমা। ফজলুল চৌধুরীর আহাজারি। আয়াজ সামলে রাখতে পারছে না কাউকে। একদিক দিয়ে মায়া চৌধুরী আরেকদিক দিয়ে ফজলুল চৌধুরী। শেষ পর্যায়ে নিজের মেয়েকে বিদায় দিতে গিয়ে মায়া চৌধুরী জ্ঞান হারায়। রুয়াত নিমি বেঘোরে ধরে কাঁদছে। ইনিমার বিদায়ে তাদের ও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এক সাথে কতো দুষ্টমি করেছিলো তারা। আয়াজের কাছ থেকে বিদায় নিয়েই আয়াজ তার বোন কে সায়হানের হাতে তুলে দেয়। আজ ফজলুল চৌধুরীর জায়গায় সে দায়িত্ব পালন করেছে। ইনিমা কে বিদায় দিয়েই তাড়াহুড়ো করে বাসায় চলে আসে। সাহেদ আজকেও এসেছে তবে যায়নি এখনো। আয়াজের কাছ থেকে বলেই যাবে।

-‘স্যার আমি যাচ্ছি। কোনো দরকার হলে অবশ্যই কল দিবেন। আমি সাথে সাথে চলে আসবো।’

পাশ ফিরে আয়াজ সাহেদের দিকে তাকায়। কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকায় তাকে দেখে।
-‘কি দরকারের কথা বলছো?’

রুয়াত কে ইশারা করে সাহেদ বললো,
-‘ স্যার কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি? ম্যাম যেভাবে কাঁদছে মনেহচ্ছে তার নিজের বিদায় হয়ে যাবে এখনই। আসলে ওনি তো আর নিজের বিদায়ের সময় কাঁদতে পারবেন না। তাই হয়তো এখন কেঁদে নিচ্ছে। কারণ বিয়ে হলে তো তিনি এই বাড়িতেই থাকবেন। ওনার তো আর কোঁথাও যাওয়া লাগবে না। কষ্ট ও হবে না তেমন। সে কান্না এখন কাঁদছেন।’

আড়চোখে আয়াজ সাহেদের দিকে তাকায়।
-‘তুমি বোধহয় ভুলে গিয়েছো কাকে দাঁড়িয়ে এসব বলছো? আমি মনে করে দিচ্ছি আমি তোমার স্যার। পরেরবার বললে ভেবে চিন্তে বলবে।’

সাহেদ হাসে মিটমিট করে।
-‘সব সময় রাগ দেখাবেন না স্যার। যাই ম্যাম কে একটু স্বান্তনা দিয়ে আসি।’

বলেই আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলো না সাহেদ। সোজা রুয়াতের সামনে দাঁড়ায়। আয়াজ দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। পকেট থেকে টিস্যু বের করে রুয়াতের সামনে রাখতেই সে মাথা তুলে চায়। অতঃপর হেসে সাহেদ বলে উঠে,

-‘ স্যার বলেছে বেশি কাঁদতে না। আর এই যে টিস্যু দু’জন কে দিলাম। আবার কান্না আসলে এটা দিয়ে মুছবেন। এবার আমি আসি ম্যাম।’

#চলবে….

[আসসালামু আলাইকুম। গল্প একদম শেষের পথে। আর মাত্র দুই পর্ব। আর সেটা মিলাতেই আমার সময় লেগেছিলো। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here