#হৃদয়জুড়ে_তুমি
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সিমা সুস্থ হওয়ার পর তার নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছে। রায়হান খান, মান্নাত বেগম, ইনায়া তাকে অনেক অনুরোধ করেছিল ঐ বাড়িতে যাওয়ার জন্য কিন্তু সিমা তাদের অনুরোধ রাখতে পারেনি। নিজের মতো করে চলে এসেছে এই বাড়িতে। বর্তমানে বেলকনিতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সিমা। গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে ইহানের কথা ভাবছে। সবাই তাকে ঐ বাড়িতে ফিরে যেতে বললেও ইহান একবারও তাকে বলেনি। হয়তো সে চায়না সিমা আর ঐ বাড়িতে ফিরুক। এসব ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিমা। নিজেই নিজেকে বলে,
‘ইহান তো কখনো আমাকে চায়নি। তার তো নিজের জন্য একটা ডানা কা’টা পরি চাই। না থাক আমি আর তার কথা ভাবব না। আল্লাহ যেন ইহানের ইচ্ছাই পূরণ করে। তাকে তার মনের মতো মেয়ের সাথেই যেন মিলিয়ে দেয়।’
✨
ইহানের অবস্থাও অনেকটা সিমার মতোই। সেও নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে সিমার কথাই ভাবছে। শুরু থেকে সিমার সাথে করা সব অন্যায়,অপমানের কথা। অথচ এত কিছু করার পরেও সিমা তার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছিল। ইহান ভাবে, সে সিমার যোগ্য নয়। সিমাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু তবুও সিমার অনুপস্থিতিতে তার গুরুত্ব বুঝতে পারছে। আসলে কোন কিছু আমাদের সাথে থাকলে আমরা তার গুরুত্ব বুঝতে পারি নি। যখনই সে দূরে চলে যায় তখনই তার গুরুত্ব বুঝতে পারি। ইহানের সাথেও সেটাই হচ্ছে। যখন সিমা তার কাছে ছিল তখন সিমাকে বুঝতে পারে নি কিংবা বুঝতে চায় নি। তাকে অবজ্ঞা করে গেছে। এখন যখন সিমা তার কাছে নেই তখন সিমার কথা ভাবছে। সিমার স্মৃতি গুলো তাকে অনেক বেশি ভাবাচ্ছে। কষ্ট দিচ্ছে প্রচুর।
ইহান নিজের বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে,
‘কেন এত ভাবছি আমি সিমার কথা? তাকে নিয়ে ভাবনা তো আমার হৃদয়ে আসার কথা না। কেন এত কষ্ট হচ্ছে আমার? তাহলে কি,,,’
‘হ্যা তুই ঠিক ভেবেছিস, তোর হৃদয়জুড়ে সিমা রয়েছে। তাই তোর এত কষ্ট হচ্ছে সিমার জন্য।’
মান্নাত বেগমের গলার স্বর শুনে তার দিকে তাকায় ইহান। মান্নাত বেগম নিজের ছেলের কাছে এসে বলেন,
‘নিজের হৃদয়ের কথা তুই বোঝার চেষ্টা কর। তোর মন কি চায় সেটা বোঝ ইহান। এখনো সময় আছে। তোদের ডিভোর্স হয়নি এখনো। তাই সময় থাকতে মেয়েটাকে ফিরিয়ে আন। নাহলে পরে আজীবন পস্তাতে হবে তোকে। মিলিয়ে নিস আমার কথা।’
ইহান নিজের অনুভূতি গুলোকে অস্বীকার করে বলে,
‘এমন কিছুই নয় আম্মু। তুমি ভুল ভাবছ। আমি সিমাকে ভালোবাসি না।’
‘আমি তোর মা। তোকে দশমাস পেটে ধরেছি। তাই আমি জানি তোর মনোভাব।’
ইহান আবারো অস্বীকার করে। তখন মান্নাত বেগম মনে মনে বলেন,
‘নিজের অনুভূতি গুলো তুই স্বীকার করতে চাইছিস না তো। ঠিক আছে। আমিও তোরই মা। তোকে দিয়ে কিভাবে স্বীকার করাতে হবে সেটা আমি ভালো করেই জানি। এবার তুই শুধু দেখে যা আমি কিভাবে তোর মনের কথা তোকে বোঝাই।’
২৫.
সিমা নিজের বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তার সামনেই তার বাবা বসে নিউজ পেপারস পড়ছে। সিমা আচমকা তার বাবা সাজ্জাদ চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে,
‘তুমি কি মনে করো আব্বু একটা সদ্যজাত শিশু তার মায়ের মৃত্যুর কারণ হতে পারে?’
সিমার কথা শুনে সাজ্জাদ চৌধুরী মুখের সামনে থেকে নিউজ পেপার সরিয়ে সিমার দিকে হতবাক চোখে তাকান। অতঃপর নিজেকে ধাতস্থ করে বলেন,
‘এই প্রশ্নের কোন উত্তর আমার কাছে নেই। কিছু কিছু প্রশ্নের কাছে বিবেক হেরে যায় এবং আবেগ জিতে যায়।’
সিমা কঠিন গলায় বলে,
‘আবেগকে তো জিততে দিলে চলবে না আব্বু। বিবেক দিয়ে ভাবতে শেখো। আম্মুর মৃত্যুর জন্য তুমি আমার যমজ বোনকে দোষ দিতে পারো না। আমিও তো আমার মায়ের গর্ভে ছিলাম তাইনা? তোমার যুক্তিমতে যদি আমার বোন আম্মুর মৃত্যুর জন্য দায়ী হয়ে থাকে তাহলে আমিও তো সমানভাবে দায়ী। তাহলে আমাকে তুমি নিজে এত আদর করে বড় করলে কেন? আর আমার বোন কোথায় আছে কেমন আছে তার খোজ পর্যন্ত নিলে না। এটা তোমার অন্যায় আব্বু। তোমাকে বুঝতে হবে আমরা দুজনেই তোমার সন্তান। আজ যদি আম্মু বেচে থাকত তাহলে কি করতে তুমি? আচ্ছা, আম্মুর সামনে কি কখনো তুমি দাড়াতে পারবে? আম্মু যদি পরকালে তোমায় জিজ্ঞেস করে তার এক মেয়ের প্রতি তুমি কেন এত অবহেলা করলে তখন তুমি কি জবাব দিবে? উত্তর দাও আব্বু।’
সিমার কথা শুনে সাজ্জাদ চৌধুরী বলার মতো কিছুই আর খুজে পান না৷ কারণ প্রতিটা কথায় যুক্তি আছে। সত্যি তো কি দোষ ছিলো ঐ ছোট মেয়েটার। কিন্তু সাজ্জাদ চৌধুরী এই বিষয়ে আর কিছু ভাবতে নারাজ। তাই তিনি বললেন,
‘তোর শরীর খারাপ তুই বিশ্রাম নে।’
কথাটা বলেই উঠে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ান সাজ্জাদ চৌধুরী। সিমা বলে,
‘আর কতদিন এভাবে তুমি পালিয়ে বেড়াবে বাবা। এবার সময় হয়ে গেছে তোমার সাথে তার মুখোমুখি হওয়ার। আমাকে এড়িয়ে যেতে পারলেও সে যখন তোমাকে প্রশ্ন করবে তখন তুমি কিভাবে তাকে এড়িয়ে যাবে সেটা দেখব।’
২৬.
সামিহা প্রবেশ করল চৌধুরী বাড়িতে। এই বাড়িতে প্রবেশ করামাত্রই কেমন আপন আপন অনুভূতি হতে লাগল৷ এটাই যে তার নিজের বাড়ি৷ যেখানে তার বাবা আর বোন রয়েছে। সামিহা ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হতেই সিমার সম্মুখীন হয়।
সিমাও সামিহাকে দেখতে পায়। দুই বোন একে অপরকে দেখেই চিনতে পারে। আবেগাপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরে একে অপরকে। সিমা সামিহাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘ধন্যবাদ বোন৷ তুই আমাকে একবার না দুই দুইবার বাচিয়েছিস। কি ভেবেছিলি এভাবে লুকিয়েই থাকবি সবসময় আর আমি তোর খোজ পাবো না। ভুল ভেবেছিস তুই। প্রথমবার তোকে দেখেই আমি তোর প্রতি একটা টান অনুভব করি। পরে যখন ডাক্তারের কাছে যে আমাকে রক্ত দিয়েছে তার বর্ণনা শুনি তখনই শিওর হয়ে যাই তুই সেই মেয়ে। আর তোর সাথে নিশ্চয়ই আমার কোন সম্পর্ক আছে। পরে আমাদের প্রজেক্টের হেডের সাথে যোগাযোগ করে তোর নাম পরিচয় এবং ছবি দেখে বুঝতে পারি তুই আমার সেই যমজ বোন৷ যার সম্পর্কে এতদিন আমি অবগত ছিলাম না।’
সামিহাও বলে,
‘আমিও এতদিন তোদের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। নিজেকে আমি মামা-মামীর সন্তান ভাবতাম। কিছুদিন আগেই আমি সব সত্য জানতে পারি। তারপরই এই দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেই।’
‘দেশে এসে এভাবে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলি কেন রে? আজ যদি আমি তোকে ফোন করে না ডাকতাম তাহলে তো তুই আসতিই না।’
‘আমি ভয়ে ছিলাম যে তোরা যদি আমায় আবার দূরে ঠেলে দিস।’
‘এত বছর পর যখন তোকে ফিরে পেয়েছি তখন আর তোকে দূরে ঠেলে দেবো না। আব্বুও তোকে মেয়ে বলে মেনে নিবে দেখে নিস।’
এমন সময় ড্রয়িংরুমে সাজ্জাদ চৌধুরীর আগমন ঘটে। সিমা ও সামিহাকে একসাথে দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান।
✨
ইহান অফিস থেকে বাড়িতে ফিরেই দেখতে পায় বাড়িতে অনেক সাজসজ্জা চলছে। ইহান তার মা মান্নাত বেগমের কাছে জানতে চায়,
‘বাড়িতে কি কোন অনুষ্ঠান আছে?’
‘কেন ভুলে গেলি তোর বোনের বিয়ের কথা। ও হ্যা আরেকটা কথা ইনায়ার সাথে এবার তোরও বিয়ে দিয়ে দেবো।’
ইহান প্রচণ্ড চমকে যায়। বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে বলে,
‘আমার বিয়ে মানে এসব তুমি কি বলছ আম্মু?’
‘হুম ঠিকই বলছি৷ দেখ তুই তো সিমাকে পছন্দ করিস না, আর সিমাও এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তাই আমি ভাবলাম এবার তোর বিয়ে দেই। নেহার মার সাথে কথা বলেছি৷ তাদের কোন প্রব্লেম নেই। তাই বিয়েটা হয়েই যাক। কাল ইনায়া ও জিসানের সাথে তোর এবং নেহারও বিয়ে হবে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
>>কি মনে হয় আপনাদের সাজ্জাদ চৌধুরী কি সামিহাকে মেনে নিবে? আর ইহান কি নেহাকে বিয়ে করে নিবে নাকি সিমার কাছে ফিরে আসবে?