#হৃদপিন্ড_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পার্ট_৫
_______________________
ইরাবতীর ফোনে সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের। রিসিভ করতেই ইরাবতী বললো,
—- গুড মর্নিং বাবা।
—- গুড মর্নিং।
—- শোন মুসকান কে আজ বাসায় নিয়ে আসবি। আর সায়রীকে বলবি সে যেনো চৌধুরী বাড়ি পা না রাখে৷ বেশ কড়া গলায় বললো ইরাবতী।
—- সকাল সকাল এতো অভিমান কেনো ডিয়ার মাদার? নো টেনশন মায়ের অভিমান ভাঙানোর জন্য ছেলে সবসময় রেডি। দুজনকেই পেয়ে যাবে৷
—- হুম ছেলেও যেনো তারাতাড়ি ফেরে মা কিন্তু ব্রেকফাস্ট রেডি করে বসে থাকবে।
—- ওকে তারাতাড়িই ফিরবো। রাখছি এখন৷
.
মরিয়ম আক্তার ফজরের নামাজ পড়ে কোরান তেলওয়াত শেষ করে সবেই রুম থেকে বের হবে তখনি মুসকান রুমে ঢুকে বললো,
—- আম্মু চুল আঁচড়ে দাও তারাতাড়ি। তারপর রেডি হবো।
—- বোস দিচ্ছি।
মুসকান গিয়ে বিছানায় বসলো। মরিয়ম আক্তার পিছনে গিয়ে বসে চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বললো,
—- রাতে ঠিকভাবে খেয়েছিলি? মুখ অমন শুকনো লাগছে কেনো?
—- ঠিকভাবেই খেয়েছি আম্মু। তোমার চোখে আমি কবে মোটা ছিলাম একটু মোটা লাগলেও তুমি বলো না যে আমায় মোটা লাগছে। মন খারাপ করে বললো মুসকান৷
—- তুই এসব বুঝবি না বাদ দে। মাছ ভাজি আর তরকারি ফ্রিজে রেখেছিলি তো মনে করে?
—- রাতে নানাভাই এসেছে তাঁকে মাছ ভাজি দিয়েছি। শুধু তরকারি রেখেছি ফ্রিজে।
—- ইমন আসছে? আল্লাহ ঠিকভাবে খেতে দিতে পারছিস তো? আমাকে ডাকলি না কেনো? বুদ্ধিশুদ্ধি কবে হবে তোর বলতো?
—- তুমি আমাকে বকছো কেনো? আমি তো ঠিকভাবেই সব দিলাম। শুধু শুধু বকবে না আম্মু। প্রায় কেঁদে দিয়েই বললো মুসকান৷
মরিয়ম আক্তার আর কথা বাড়ালেন না। মেয়ে তাঁর যা আল্হাদী এখনি নাকের জলে চোখের জলে এক করে ফেলবে। চুল আঁচড়ে অনেক উঁচু করে ঝুটি বেঁধে দিলো পিছনে। সামনে ঘুরিয়ে কপালে চুমু খেয়ে রেডি হয়ে আসতে বললো। মুসকানও ঝুটি নাচাতে নাচাতে চলে গেলো নিজের রুমে।
.
ইমন রুম থেকে বের হতেই মরিয়ম আক্তার কে দেখলো টেবিলে খাবার গোছাচ্ছে। ইমন গিয়ে চেয়ারে বসলো৷ বললো,
—- গুড মর্নিং কাকি মা।
—- শুভ সকাল আব্বা কেমন আছো?
—- আলহামদুলিল্লাহ। তোমার শরীর ঠিক আছে?
—- আলহামদুলিল্লাহ অনেক টাই সুস্থ আছি।
—- কাকি মা দিহান কে ফোন করে বলে দিয়েছি আজ আসতে হবে না। আমি যেহেতু আছি আমিই মুসুকে স্কুলে দিয়ে আসবো।
—- আচ্ছা আব্বাজান আপনি থাকলে আমার আর কোন চিন্তা নাই। রাতে ঘুম ভালো হয়েছে তো?
—- হুম ভালো ঘুম হয়েছে। মুখে এটা বললেও মনে মনে বললো,’তোমার মেয়ে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে গো কাকি’।
—- তা আমার আব্বাজান কি একটা আম্মাজানের ব্যবস্থা করবে না এখন? রুটি আর মাংসের তরকারি সামনে দিয়ে চেয়ারে বসে বললো মরিয়ম আক্তার।
ইমন চমকে তাকালো তাঁর দিকে। জোর পূর্বক হেসে বললো,
—- আসলে এখুনি এসব ভাবছিনা। মুরাদ ঠিক হোক আগে ওকে করাবো তাঁর পর আমার চিন্তা।
—- কিন্তু আব্বা তোমার মায়ের কথাও তো চিন্তা করতে হবে। একটা মাএ সন্তান তুমি তাঁর সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকো যতো তারাতাড়ি সম্ভব বিয়েটা করে ফেলো৷ তুমি বললে মেয়ে দেখা এখুনি শুরু করে দেবো। দরকার পড়লে দুজনকে একসাথে বিয়ে করাবো৷ তোমরা দুই বন্ধুই তে পিছনে পড়ে রইলা। মায়েদের কষ্ট তোমরা কবে বুঝবা গো?
ইমন পড়ে গেলো মহাবিপদে। মুখ ফুটে বলতে ইচ্ছে করলো ‘তোমার মেয়েকে দিয়ে দাও। এখুনি এই মূহুর্তে বিয়ে করি’ কিন্তু বললো না। গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো সে।
মরিয়ম আক্তার ইমনকে চিন্তিত দেখে বললো,
—- আব্বা? কি চিন্তা করো তোমার কি কোন পছন্দ আছে? কোন সমস্যা কি?
ইমন অসহায় মুখে তাকালো মরিয়ম আক্তারের দিকে মনে মনে বললো,
—- আহারে আর আব্বা আব্বা করোনা প্লিজ। তোমার এই আব্বা ডাকের জন্য আজ আমার এই করুন অবস্থা। তোমার বাবা নাই আমাকে আব্বা বলো ঠিক আছে কিন্তু তোমার ঐ ডাকের জন্য তোমার মেয়ে যে নানাভাই নানাভাই করে বুড়োর খাতায় নাম দিয়ে দিচ্ছে এটা কি মানা যায়? আগে মানলেও এখন তো মানতে পারছিনা। মুখে বললো,
—- না না কোন পছন্দ নেই। কি যে বলো না বলেই খেতে শুরু করলো।
মরিয়ম আক্তার আরো কিছু কথাবার্তা বলে মুরাদকে খাবার দিয়ে এলো। মুসকান রেডি হয়ে বাইরে আসতেই দেখলো ইমন খাচ্ছে। তা দেখে তাঁর চলার গতি ধীর করে ফেললো। ধীর পায়ে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো৷ নিচের দিকে চেয়েই প্লেটে একটা রুটি এক টুকরো মাংস আর ঝোল নিয়ে খেতে লাগলো। ইমন খাচ্ছে আর চেয়ে আছে মুসকানের দিকে। কিছু সময় পর বললো,
—- কয়টা ক্লাস আছে?
মুসকান যেনো চমকে ওঠলো। ইমন বিরক্তি নিয়ে বললো,
—- তোর কি কোন রোগ আছে? এমন চমকাস কেনো ?
মুসকান থতমত হয়ে মাথা নিচু করে রুটি ছিঁড়তে নিলো৷ তা দেখে ইমন ধমকে বললো,
—- এমনভাবে রুটি ছিঁড়ছিস মনে হয় রুটি ব্যাথা পাচ্ছে হাতে জোর নাই? ইডিয়ট! এদিকে দে আমি ছিঁড়ে দেই। কয়টা ক্লাস আছো বললি না তো?
মুসকানের চোখ টলমল হয়ে গেলো৷ ইমন হাত বাড়িয়ে রুটি নিতে যাবে তখনি মরিয়ম আক্তার এসে পড়লো। মুসকান কে দেখে বললো,
—- একটা রুটি নিছিস কেনো? দুপুর অবদি একটা রুটি খেয়ে থাকতে পারবি? আর কতো জ্বালাবি খাবার নিয়ে? বলতে বলতে আরেকটা রুটি দিলো প্লেটে৷
ইমন চুপ হয়ে গেলো। তাঁর আর জানা হলো না কয়টা ক্লাস আছে? মুসুও কি বেয়াদব কথার উত্তর দিলো না ভেবেই চোখ কটমট করে তাকালো।
ইমন খাচ্ছে আর মা, মেয়ের কান্ড দেখছে। ইমন না থাকলে মুসকান জোর করেই ওঠে যেতো। কিন্তু ইমন থাকায় তাঁর সব কিছু যেনো থমকে রয়েছে। মা কে কিছু বলতেও পারছে না। এদিকে আর খেতেও পারছেনা। মরিয়ম আক্তার নিজেও খেতে বসলো আর ইমনের সাথে হাবি জাবি কথা বলতে শুরু করলো৷ ইমন কথা বলছে আর মুসকানকে বেশ লক্ষ করছে। ইমন খাওয়া শেষে বললো,
—- কাকি মা, মা ফোন করে বলেছে মুসকানকে বাসায় নিয়ে যেতে। সায়রী আর মুসকান নাকি অনেকদিন যায় না তাই রাগ করেছে খুব।
—- সে কি ইরা আপা রাগ করছে? আল্লাহ আমি তো মুসুকে বলে দেই টিফিন টাইম তোমাদের বাসায় গিয়ে খেয়ে রেষ্ট নিতে। মুসু লজ্জায়ই যায় না। এতো করে বলি আমি টিফিন দেই সেটাই নিয়ে ও বাসায় খাবি সাথে একটু রেষ্টও নিয়ে নিবি। কিন্তু ও তো লজ্জা পেয়ে যায়ই না৷
ইমন মুসকানের দিকে গভীর দৃষ্টি ফেললো। মুসকান আরো জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো। মুখে রুটি গুঁজে রেগে মায়ের দিকে এক পলক চেয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেললো৷ তাঁর মা তাঁর প্রেস্টিজের তেরোটা বাজিয়ে ফেলছে। সে লজ্জা পায় বলে ও বাসায় যায় না তাঁর মা কে কে বললো? তাঁর নানাভাই কে এখন এসব বলেই তো দ্বিগুণ লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। রাগের চুটে প্লেট খানিকটা শব্দ করে ধাক্কা দিয়ে গটগট করে চলে গেলো৷ মরিয়ম আক্তার কথা থামিয়ে চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,
—- মুসু দাঁড়া যাবিনা। এভাবে খেলে পেটে পিত্তি পড়ে যাবে। তোর বান্ধবী গুলা রে দেখ কেমন গাম্বুস গাম্বুস চেহেরা। ঐ বাড়ির লিলি এক বাটি করে ভাত খায়। ওদের চেহেরা কেমন আর তোর চেহেরা দেখেছিস তোকে দেখে মনে হয় শুটকি মাছের পোনা।
কথাটা শুনে ইমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো শুটকি মাছের পোনা? ব্যাপারটা কেমন যেনো শোনালো না?
.
গাড়িতে বসে আছে ইমন। মরিয়ম আক্তার মুসকানকে গাড়ি অবদি এগিয়ে দিলো। ইমন সামনের ডোর খুলতেই মুসকান ওঠে বসলো। পুরো রাস্তায় মুসকান চোখ তুলে উপরে আর তাকায়নি। একদম মাথা নিচু করে বসে ছিলো৷ ইমন টুকটাক প্রশ্ন করলে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিয়েছে। এমন আচরনে ইমনের স্বভাব অনুযায়ী রেগে কয়েকটা ধমক দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু না সে নিজেই এতোটা নার্ভাস ফিল করছিলো যে কথা বলতেই গলা কাঁপছিলে, বুক কাঁপছিলো৷ নিজের অনুভূতির সাথে যেনো প্রতিটা সেকেন্ড যুদ্ধ করে চলতে হচ্ছে তাঁকে।
.
স্কুলের সামনে গাড়ি থামিয়ে ডোর খুলে শান্ত গলায় বললো,
—- নেমে দাঁড়া আমি আসছি৷
মুসকান চুপচাপ নেমে গেটের সাইটে দাঁড়ালো। ইমন গাড়ি লক করে মুসকানের কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। মুসকান চমকে তাকালো তাঁর বুকের ভিতর টা কেমন যেনো শব্দ করে ধকধক করছে মনে হয়৷ কান্না পাচ্ছে খুব৷ মুসকানের অমন মুখোভঙ্গি দেখে ইমন নিজেই তাঁর হাত চেপে ধরে গেটের ভিতর চলে গেলো৷ মুসকানের ছোট্ট নরম হাতটাও যেনো দূর্বলতায় আরো নরম হয়ে গেছে। ইমনের বড়সড় শক্ত, খসখসে হাতের ছোঁয়া দিচ্ছে অন্যরকম এক অনুভূতি। এদিকে ইমনতো কনফিউজড হয়ে গেছে এতো নরম, সফট কারো হাত হতে পারে জানা ছিলো না তাঁর। কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে ইমন বললো,
—- কোন দিকে তোর ক্লাস?
মুসকান কথা বলার শক্তি টুকুও পেলো না৷ তাঁর গলাও যেনো অবশ হয়ে গেছে। ইমন পিছন দিক চেয়ে আবার সামনে হাঁটা ধরলো। মাঠে আশে পাশে আরো অনেক স্টুডেন্ট ছিলো। একদল মেয়েরা চেয়ে আছে তাঁদের দিকে। অফিসের সামনে সায়রী এক স্টুডেন্টের সাথে কথা বলছিলো৷ ইমন আর মুসকান কে দেখে সে হাত নাড়ালো৷ স্টুডেন্ট কে বিদায়ও করে দিলো। ইমন সায়রীকে দেখে এগিয়ে গেলো সেদিকে। সায়রীর সামনে গিয়ে মুসকানের হাত ছাড়লো সে। সাথে সাথে মুসকান সায়রীর পাশে গিয়ে চুপ করে দাঁড়ালো। ইমন বললো,
—- এটাই কি মুসুরে সায়রী? আমি খুব কনফিউজড।
—- বাব্বাহ ভালো মন্দ না জিগ্যেস করেই ডিরেক্ট এই কথা? কেনো তোর চোখে কি পাওয়ার কমে গেছে নাকি?
—- পাওয়ার ঠিকি আছে। তোরা মেয়েরাও যে গরু,ছাগলের মতো বেড়ে ওঠিস তা তো জানতাম না। তাই আর কি।
—- কিহ! ঐ ফাজিল কি বললি তুই?
—- কিছুনা তুইও তো দিন দিন বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস। শশুড় বাড়ির ভাত হিসেব ছাড়া খাস নিশ্চিত।
সায়রী হেসে ওঠলো। কিছু বলতে নিবে তাঁর আগেই মুসকান বললো,
—- আপু আমি ক্লাসে গেলাম।
—- আচ্ছা যা ছুটির পর এখানে এসে দাঁড়াবি একটু লেট হতে পারে আজ তুই এসে ওয়েট করিস।
মুসকান মাথা নেড়ে চলে গেলো। ইমন শীতল চোখে তাঁর যাওয়ার পানে চেয়ে ছিলো কিছুক্ষণ। মুসকানের স্কার্ফ ভেদ করে বেরিয়ে থাকা ব্রাউন কালার স্টেট চুলগুলোর প্রতি আকর্ষণ কাজ করছে খুব। সেই ছোট্ট মুসকান যে কোনদিন তাঁকে একের পর এক এমন বড় বড় ঝটকা দিবে ভাবতেও পারেনি সে। গভীর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সায়রীর দিকে তাকালো। সায়রী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে ইমনকে। ইমন থতমত খেয়ে বললো,
—- ওদিকটায় চল কফি খাওয়াই তোকে।
সায়রী পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
—- কাহিনী কি বলতো? তোর চোখ,মুখ এমন লাগছে কেনো? এনিথিং রং?
—- স্বাদে কি আর বলি তোর উকিল হওয়া প্রয়োজন ছিলো?
—- তাঁর মানে সত্যি কিছু হয়েছে?
—- আজকে ছুটির পর মা যেতে বলেছে। পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও মুসুকে নিয়ে যাবি।
—- কথা ঘুরালি কেনো সত্যি করে বল তোর কি হয়েছে?
—- সব বলবো তাঁর আগে বাসায় আয় ওকে?
—- আচ্ছা। চিন্তিত মুখে বললো সায়রী।
.
ক্লাস শেষে ছুটির পর মুসকান বারান্দা দিয়ে হাঁটছিলো পাশে লিলি আর পূজা মেয়েটা হিন্দু। কথায় কথায় পূজা বললো,
—- মুসু তোর সাথে সকালে ঐ ছেলেটা কে ছিলোরে?
—- আমার নানাভাই। খুশিতে গদগদ হয়ে বললো মুসকান।
—- ওমা অমন কিউট, হ্যান্ডসাম বয় তোর নানাভাই কি করে হলো? তুই জানিস টেনের আপুরাতো ওনাকে দেখে হেব্বি ক্রাশ খেয়েছে। ওরা বলাবলি করছিলো। হেড স্যারের মেয়ে কি বলেছে জানিস?
মুসকানের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এসব কথা শুনতে। ইচ্ছে করছে পূজাকে গিলে খেতে তবুও দাঁত চেপে বললো,
—- কি বলেছে?
—- বলেছে বিয়ে করলে এই ছেলেকেই করবে। সাদা শার্টে যেনো সাদা রাজকুমারের আগমন ঘটেছিলো আজ আমাদের স্কুলে। এতো সুদর্শন পুরুষকে নাকি হাত ছাড়া করা যাবে না৷ তোর সাথে কথা বলে নাম্বারও নেবে বলেছে।
পূজার কথা শেষ হতে না হতেই মুসকান ল্যাং মেরে ফেলে দিলো পূজাকে। রাগটা কোনভাবেই সামলাতে না পেরে কাজটা করলো সে। তাঁর নানাভাই কে নিয়ে অন্যকোন মেয়ের মুখে এমন প্রশংসা সে কোনদিন সহ্য করেও নি করবেওনা৷ এইসবের জন্যই তিনবছর আগে কম ধমক, কম বকা খায়নি। দরকার পড়লে মার খেয়ে মরে যাবে। তবুও কোন মেয়ের মুখে নানাভাইয়ের প্রশংসা সে শুনবে না৷ কেউ যদি করতে আসে তাহলে তাঁর অবস্থা এমনই হবে।
পূজা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—- আমি পড়লাম কি করে?
লিলি পূজাকে ধরে ওঠালো আর বললো,
—- কি জানি শুকনা পথে আছাড় পড়লি আমরা তো পড়লাম না৷ আর তুই জানিস ইমন ভাই বয়সে কতো বড় এক কালে আমার আপুর ক্রাশ ছিলো ওনি। হেড স্যারেরে মেয়েকে বলে দিস কথাটা।
—- পরপুরুষকে নিয়ে আরো প্রশংসার ঝুড়ি খোল দেখবি একবারে উপরে উঠাই নিবে আল্লাহ৷ বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো মুসকান।
______________________
সেদিন সায়রী আর মুসকান ইমনদের বাড়ি যাওয়ার পরই কথা হয় সামনে সপ্তাহে বৃহস্পতিবার সায়রী, মুসকান আর দিহান ইমনদের বাড়ি যাবে। রাতে পিকনিক খাবে তাঁরা। ইরাবতী আর সায়রী নিজ হাতে রান্না করবে। মুরাদের জন্য খাবার পাঠিয়েও দেওয়া হবে৷ প্ল্যান মাফিক স্কুল থেকে সায়রী মুসকান কে নিয়ে চলে যায় ইমনদের বাড়ি। কলিং বেল বাজাতেই ইরাবতী দরজা খুলে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
—- এইতো আমার সায়ু মা আর আমার ছেলের একমাএ নাতনী হাজির।
সায়রী উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। তারপর ওরা দুজন গিয়ে সোফায় বসে। ইরাবতী দুজনকে দুগ্লাস সরবত দিয়ে বলে খেয়ে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে কাপড় পাল্টে নিতে।
.
বিকেলের দিকে সায়রী ফোনে কথা বলছিলো দিহানের সাথে। কখন আসবে আসার সময় কি নিয়ে আসবে এসব বিষয়েই আলোচনা করছিলো। মুসকান চুল আঁচড়ে কোনরকমে বেঁধে বিছনায় বসবে তখনি ইরাবতী রুমে আসে। তাঁকে দেখে সায়রী ফোন কেটে দেয়। ইরাবতী রুমে ঢুকে দরজার ছিটকেরী লাগিয়ে দেয়। তাঁর ভাব দেখে বোঝা যায় সে গোপন কিছু বলতে এসেছে। সায়রী আর মুসকান একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছিলো। ইরাবতী মুচকি হেসে আঁচলের নিচ থেকে পাঁচটা ছবি বের করলেন৷ তাঁদের দুজনের সামনে ধরে বললেন,
—- পাঁচটা সুন্দরী সুন্দরী মেয়ের ছবি কালেক্ট করেছি। এখান থেকে একটা চয়েজ করো দুজন মিলে তারপর মেয়ের বাড়ির সাথে কথা বলবো।
—- ইমনের জন্য পাএী দেখা শুরু করে দিয়েছো আন্টি? খুশিতে চিল্লিয়ে বললো সায়রী।
ইরাবতী আঙুল মুখের সামনে ধরে বললো,
—- চুপ চুপ ইমন শুনে ফেলবে। আগেই কিছু জানাবোনা ঐ ফাজিলকে। আগে মেয়ে দেখবো তারপরে মেয়ের সাথে ওকে আলাপ করাবো। বলবোই না যে বিয়ের জন্য অন্যভাবে আলাপ করাবো। ওরা ওদের মতো নিজেদের মধ্যে ভালো বন্ডিং তৈরী করবে৷ তারপর ইমনকে বলবো বিয়ের কথাটা। তখন নিশ্চয়ই ওর আপত্তি থাকবেনা?
—- ওয়াও গ্রেট আন্টি! তোমার মতো মায়েরই তো দরকার। কি আইডিয়া বললে আমি শিহরিত।
উচ্চস্বরে হেসে ওঠলো ইরাবতী। আফসোসের স্বরে বললো,
—- আর বলোনা একটামাএ ছেলে আমার বয়স ২৮ চলছে এখন তো বিয়ে করাটা উচিত। তা না বিয়ের কথা উঠলেই বলে,’আমাকে দেখে এখনো তেইশ, চব্বিশ বছরের যুবক লাগে বুঝছো মা তোমার কোন চিন্তা নেই এমন সুদর্শন ছেলের জন্য বউ পেতে তোমার কোন অসুবিধা হবেনা বিয়ে যখন করতেই হবে আরেকটু সময় নিয়েই করি’।
সায়রী হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এদিকে মুসকানের অন্তরটা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ছোট্ট মেয়েটার ছোট্ট হৃদয়ে এমন আঘাত কেউ করে?ইচ্ছে করছে সায়রীর চুলগুলো টেনে টেনে ছিঁড়তে তাঁর এতো কান্না পাচ্ছে আর সায়রী কেনো এতো হাসবে? ইরাবতীর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে মনে মনে বলতে থাকলো,’ ছিঃ আন্টি তুমি এতো স্বার্থপর? এভাবে ডেকে এনে আমাকে কষ্ট দিচ্ছো’?
সত্যি সত্যি চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়তে লাগলো তাঁর। ইরাবতী আর সায়রী অন্য তালে ছিলো তাই তাঁর কান্না দেখলো না। মুসকানও বিছানা ছেড়ে ওঠে রুমের দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
এ বাড়ির প্রতিটা কোনা তাঁর পরিচিত তাই এ সময় ছাদ ছাড়া আর কোন জায়গা পেলো না যাওয়ার। সে যখন ছাদে যায় ইমন তাঁর রুমের জানালা থেকেই তা দেখতে পায়৷ ভ্রু কুঁচকে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে সেও চলে যায় ছাদে।
চলবে।
ভুলত্রুটি ক্ষমা করে ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন।