#হৃদপিন্ড_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পার্ট_১১
_________________
সকালে ব্রেকফাস্ট করার পর মুসকানকে পড়তে বসিয়েছে সায়রী৷ মুসকান বিছানায় বসে পড়ছে। সায়রী তাঁর পাশে বসে কফি খাচ্ছে আর ফোন ঘাটাঘাটি করছে৷ পড়ার ফাঁকে মুসকান একটু পর পর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। মনটা তাঁর ভীষণ খচখচ করছে। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে এখন অবদি ইমনকে সে দেখতে পায়নি৷ খাওয়ার সময়ও ইমন ছিলো না। ইরাবতী কথার ফাঁকে বলেছে, ইমন কি একটা কাজে বাইরে গেছে ব্যাস এটুকুই। মুসকানের ছটফট করাটা সায়রীর চোখ এড়ায়নি। সে বেশ বুঝতে পারছে মুসকানের মনে এখন কি চলছে। সায়রী ভাবলো “মুসকানের সাথে কথা বলতে হবে। ওকে বোঝাতে হবে এসব আবেগ থেকে বেরিয়ে আসতে। ভালো, মন্দ বোঝার বয়স মুসকানের হয়নি তাই তাঁকে ভালো মন্দ বোঝানোটা আমার কর্তব্য”।
.
দিহান রুমে এসে মুসকানকে এক ব্যাগ চকোলেট দিলো৷ তারপর সায়রীর সাথে পায়ে পা বাজিয়ে ঝগরা করতে লাগলো। মুসকান মুখটা গোমড়া করে বসে আছে। মনে মনে অসংখ্য অভিযোগ করতে থাকলো তাঁর নানাভাইকে নিয়ে৷ সে কেনো একটিবারও তাঁর সাথে দেখা করছেনা? এ বাড়িতে সে আছে অথচ তাঁর নানাভাইয়ের সাথে তাঁর একটুও দেখা হচ্ছেনা তা কি মানা যায়?
দুপুর অবদি বাইরে ছিলো ইমন৷ নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে৷ নিজের সব অনুভূতিগুলো কে গলা টিপে হত্যা করেছে । এবং নিজের মা কে জানিয়েছে তাঁর জন্য মেয়ে দেখতে। যতো তারাতাড়ি সম্ভব বিয়ে করবে সে। মুসকান নামক যে ভয়ংকর অনুভূতি আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে আছে তাঁকে সেই অনুভূতি ছাড়াতে নিজের লাইফে কাউকে আনা খুব প্রয়োজন। কিছুদিনের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিয়ে এতো বছরের বন্ধুত্ব সে ধ্বংস করতে পারবেনা ৷ বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে বন্ধুত্বকে বেছে নিয়েছে সে। মুরাদের বলা কথাগুলো তাঁকে খুব কড়াভাবেই আঘাত করেছে।
বেলকনিতে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর নানারকম চিন্তা করে যাচ্ছে ইমন৷ সচরাচর সে সিগারেট খায় না। মাঝে, সাঝে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে খাওয়া হতো। অথচ আজ মুরাদের বলা কথা গুলো শোনার পর বাড়ি থেকে বের হয়ে সিগারেটের উপরেই আছে ৷ বাড়ি ফিরেও একি অবস্থা তাঁর মা এতো বার খাওয়ার জন্য আকুতি, মিনতি করলো অথচ সে বাইরে খেয়েছে বলে মিথ্যা স্বান্তনা দিয়ে পাঠিয়ে দিলো মা কে।
ইমন বাড়ি ফিরেছে প্রায় এিশ মিনিট হয়ে এলো। এতোক্ষণ মুসকান অপেক্ষা করছিলো তাঁর জন্য। ভেবেছিলো একবার হলেও দেখা করতে আসবে। কিন্তু না ইমন একবারের জন্যও আসেনি। বুকের ভিতর খুব অস্থির করছে তাঁর। ফাঁপর লাগছে খুব৷ কেনো আসছে না? একবার দেখা করলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? সেদিন তো খুব বললো ‘মুসু তোকে একটা দিন না দেখে থাকাও যেন দায়, মুসু তোর এই মুখটা তে কি আছে বল তো? উপরওয়ালা কি পৃথিবীর সব মায়া তোর এই মুখটায় ঢেলে দিয়েছে? আমি খুব বেহায়া হয়ে গেছিরে। আমি খুব বেহায়াপনা করছি তোর সাথে৷ তুই কি আমার এই বেহায়া মনের চাওয়াতে সাড়া দিবিনা’? উত্তরে মুসকান কিছু বলতে পারেনি। লজ্জায় মিইয়ে গিয়েছিলো সে। হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল ঝড়ের বেগে৷ কাঁপা গলায় শুধু বলেছিলো ‘রাখছি’।
অথচ আজ এক দুপুর না দেখেই দিব্বি কাটিয়ে দিলো। রাগে,দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করলো তাঁর। তাঁর বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড যখন তাঁর বান্ধবীর সাথে মিট না করে,কথা না বলে তখন বান্ধবী হাত কাটে। ঘুমের টেবলেট খায়। ইমনকেও তো সে ভালোবাসে খুব ভালোবাসে। ইমনও তো তাঁর বয়ফ্রেন্ড তাহলে ইমন যে সকাল থেকে দুপুর অবদি তাঁর সাথে কথা বলেনি,দেখা করেনি তাহলে তাঁরও তো উচিত হাত কাটা,বা ঘুমের টেবলেট খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকা। তাহলে কি সেটাই করবে? কিন্তু হাত কাটার জন্য ব্লেট কোথায় পাবে? এ বাড়ির কোথায় ব্লেট থাকে সে তো জানেনা। পরোক্ষণেই ভাবলো হাত কাটলে কাল পরীক্ষা দেবে কি করে? তাছাড়া সে যদি খুব ব্যাথা পায়? তাহলে কি ঘুমের টেবলেট খাবে? হ্যাঁ এটা করা যায়। এখন খাবে কাল সকাল অবদি ঠিক ঘুম ছেড়ে যাবে। পরীক্ষা তো দুপুর দুটায় শুরু। কিন্তু ঘুমের টেবলেট কোথায় পাবে? বাথরুমে দরজার দিকে চেয়ে রইলো কতোক্ষন। সায়রী বাথরুমে তাই পুরো রুম খোঁজে দেখলো কোন ওষুধ আছে কিনা? কিন্তু ঘুমের ওষুধ সে চিনবেই বা কি করে? কে হেল্প করবে এখন তাঁকে? রুম ছেড়ে বেরিয়ে নিচে ওকি দিলো। কাজের মেয়ে পারুল দুপুরের খাবার রেডি করছে। ইরাবতীর রুমে গিয়ে দেখলো সে ঘুমাচ্ছে। তাই ভাবলো ইমনের রুমে যাবে। ইমনের ড্রয়ারে একদিন বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেখেছিলো। ঘুমের ওষুধ না পেলে সামনে যা পাবে সব খাবে৷ ইমন তো বাড়ি নেই রুম নিশ্চয়ই ফাঁকা?
ইমনের রুমে গিয়ে ড্রয়ার ঘাটাঘাটি করে বেশ কিছু ওষুধ পেলো৷ কয়েকটা পরিচিত কয়েকটা অপরিচিত। গ্যাস্ট্রিক এর ওষুধ খেলে ক্ষুধা লাগবে বেশী বেশী তাই সেটা বাদ রেখে ঠান্ডার ওষুধ মোনাস আর নাপা এক্সট্রা হাতে নিলো। খুব মনোযোগ সহকারে প্রতিটি টেবলেট গুলো এক এক করে হাতের মুঠোয় নিতে লাগলো। এগারোটা হয়ে গেছে তাই আর নিলো না। টেবিলে চেয়ে দেখলো গ্লাসে পানি ভরাই আছে তাই পানির গ্লাস নিতে যাবে তখনি ইমন গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো,
—- এসব দিয়ে কি করবি?
—- এগুলো খাবো৷ ঘোরের মধ্যে থেকে কথাটা বলেই চমকে পিছনে তাকালো। ইমনকে দেখে আরো দ্বিগুণ চমকে গেলো। পা থেকে শুরু করে মাথা অবদি কেমন করে যেনো কেঁপে ওঠলো।
—- খাবি মানে? এসব কি পাগলামি মুসু তুই এতোগুলো ওষুধ খাবি? কি ওষুধ নিয়েছিস দেখি মাথা ঠিক আছে তোর?
কাঁধে চেপে ধরে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো ইমন। মুসকান কয়েকবার চোখের পলক ফেললো। কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
—- তুমি কোথায় ছিলে নানাভাই?
—- চুপপ। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে? এসব কি করছিলি তুই?
ধমক খেয়ে কেঁদে দিলো মুসকান। ভয়ে ভয়ে বললো,
—- তুমি আমার সাথে সকাল থেকে দেখা করোনি। কথা বলোনি তাই হাত কাটতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখানে ব্লেট পাবো কোথায়? তাই ঘুমের টেবলেট খুঁজছিলাম কোনটা কি জানিনা তাই এগুলোই নিলাম।
বিস্ময় চোখে চেয়ে ধমকে ওঠলো ইমন।
—- কিহ! এসব কি কথা ? এগুলো কার থেকে শিখেছিস? আমি দেখা করছিনা, কথা বলছিনা তাঁর সাথে এটার কি সম্পর্ক?
—- বয়ফ্রেন্ড যদি গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা না করে কথা না বলে তাহলে গার্লফ্রেন্ড রা তো হাত কাটেই। ঘুমের টেবলেটও খায় এটাই তো ভালোবাসা।
—- কে বলেছে এগুলো?
—- আমার বান্ধবী দের থেকে শুনেছি৷
মেজাজ চরম পর্যায়ে খারাপ হয়ে গেলো ইমনের। ইচ্ছে করলো থাপড়িয়ে সবকয়টা দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু পারলোনা শুধু হাত থেকে সবগুলো টেবলেট নিয়ে মুসকান কে শাসিয়ে বললো,
—- চুপ করে এখানে বসে থাক আমি আসছি।
ওষুধ গুলো ফেলে দিয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো ইমন৷ হাসবে না কাঁদবে না রাগবে বুঝে ওঠতে পারছেনা৷ তবে এটুকু বুঝেছে সায়রী ঠিক বলেছে। আর যাইহোক তাঁর মতো অনুভূতি মুসকানের হয়নি। হবে কি করে? এটুকু বয়সে এরা সত্যি প্রেম কি?ভালোবাসা কি? বোঝে? এসব বোঝার জন্য হলেও তো নির্দিষ্ট একটা বয়সের প্রয়োজন। সে বয়সে আসতেও তো অনেক দেরী। এ বয়সে এদের যা অনুভূতি এগুলো না প্রেমের পর্যায়ে পড়ে না ভালোবাসার পর্যায়ে পড়ে৷ বয়ফ্রেন্ড কথা না বললে দেখা না করলেই হাত কাটতে হবে এক গাদা ওষুধ খেয়ে মরতে হবে বাহরে বাহ। কি যুগ এলো রে। হাঁটুর বয়সি পোলাপান প্রেমের নতুন নিয়ম, ভালোবাসার আজগুবি নিয়ম তৈরী করছে। এরা তাহলে স্কুলে গিয়ে এসব অপকর্ম শেখে? ইচ্ছে করলো আজ থেকেই মুসকানের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে৷ স্কুল যেতে হবেনা তাঁর বাসায় রেখে নিজে পড়াবে। কিন্তু তাঁর তো সে অধিকার নেই। তাহলে কি হবে? সায়রীকে বলে স্কুলের মেয়েদের কি শাসন করা উচিত? নাকি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে? কিন্তু মুসকানকে তো শাসন করা উচিত। কি করে করবে? ধমক দিলেই তো কান্না করে দেয়। মেয়েটা এই বিশ্রি জিনিসটা না শিখলেই কি হতো না? ধমক দিলে কাঁদতে হয় এটা ওকে কে শেখালো? কে বোঝালো? তাঁকে এ মূহুর্তে সামনে পেলে গর্দান নেওয়া হতো বোধহয়।
.
মুসকানের পাশে গিয়ে বসলো ইমন। মুসকান জড়োসড়ো হয়ে নিজের ওড়না চেপে ধরে বসে রইলো। ইমনের দম বন্ধ লাগছে। নিজের অনুভূতি কে তো গলা টিপে হত্যা করেছে তাহলে সেই অনুভূতি আবারো তাঁকে নাড়াচাড়া কেনো করছে? এই মেয়েটা কেনো তাঁর পৃথিবী উলটপালট করে দিচ্ছে? সকাল থেকে দেখা করেনি কথা বলেনি তাই বলে বোকার মতো কি কান্ড টাই না করতে যাচ্ছিলো। ভাগ্যিস সে ছিলো নয়তো কি হতো? বড় বড় করে মুসকানের দিকে তাকালো ইমন। বললো,
—- আর কখনো এমন পাগলামি করবি না মুসু।
—- তাহলে তুমিও আর কখনো আমাকে ছেড়ে দূরে থাকবেনা বলো?
বড়সড় ধাক্কা খেলো ইমন। আচমকাই খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো মুসকান কে। মুসকান চমকে গেলো ভীষণ। জড়োসড়ো হয়ে রইলো সে।
—- দূরে গেলে তোর কষ্ট হয়?
—- হুম আমার বুকের ভিতরটা শুকিয়ে যায়, ফাঁপর লাগে। নিঃশ্বাস নিতে পারিনা। বুকের ভিতর গরম বাতাস বইতে থাকে। মন চায় বুকের মাঝখানে ব্লেট দিয়ে কেটে এক গ্লাস পানি ঢেলে ঠান্ডা করি।
কথাটা শুনতেই ইমন চমকে গেলো। কারণ তাঁরও তো একি অনুভূতি হয়। তাহলে কি মুসকানের ভিতর সত্যি তাঁর জন্য স্ট্রং একটা অনুভূতি রয়েছে?
সবকিছু ভুলে গিয়ে ইমন কথা দিলো কখনো দূরে যাবেনা সে৷ খুশিতে মুসকানও ইমনকে জরিয়ে ধরলো। ঘোরের মধ্যে রয়েছে ইমন সেই ঘোর থেকেই সে একটা ভুল করে ফেললো। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে মুসকানের৷ মনের সব অনুভূতি বিলীন হয়ে একরাশ ভয় আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলো তাঁকে। কোনভাবেই ইমনের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা৷ ইমনের দুটো রূপের সাথে সে পরিচিত ছিলো আজ যেনো আরেকটা রূপ যোগ হলো৷
মুসকান যখন শব্দ করে কেঁদে ওঠে চমকে ছেড়ে দেয় ইমন৷ পুরো শরীর,মাথা ঝিম ধরে গেছে তাঁর। মূহুর্তেই মুরাদের বলা কথাগুলো কানে বাজতে থাকে ঢোলের মতো। তাঁর মানে কি সত্যি ইমন চৌধুরী বেঈমান হয়ে গেলো? ইমন চৌধুরীর ব্যাক্তিত্বে বেঈমান,বিশ্বাসঘাতক উপাধি কি যোগ হয়ে যাবে? চরিএেও কি দাগ পড়ে গেলো তাঁর?
.
চোখ বুজে ইমনের দু পিঠ খামচে ধরে বুকে মাথা রেখে কাঁপছে মুসকান। ইমন মুসকানের মাথাটা একহাতে চেপে ধরে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে৷ মাথা কাজ করছে না তাঁর। ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় গুলি করে মরে যেতে। ইচ্ছে করছে বুকের ভিতর শত ছুড়ির আঘাত করতে৷ কি থেকে কি হয়ে গেলো৷ এই বাচ্চা মেয়েটার থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কেনো রাখতে পারেনা সে? ছিঃ।
_________________________
সেদিনের পর দুমাস কেটে যায়। ইমন আর মুসকানের কাছাকাছি যায়নি৷ মুসকানও ভয়ে একা তাঁর কাছে যাওয়ার সাহস পায়নি। তবে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়েছে তাঁদের। ইমনের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছিল আবেগের বশে মুসকান যদি নিজের ক্ষতি করে ফেলে?
.
কোর্ট থেকে ফিরেছে সবেমাএ। তখনি ইরাবতী কয়েকটা মেয়ের ছবি সামনে ধরলো। ইমন শার্ট খুলে তয়ালে গলায় ঝুলিয়ে বাথরুম যাচ্ছিলো। তখনি তাঁর মা সামনে এসে পড়ে।
—- বাবা এবার কিন্তু চোখ, মুখ খিচবা না৷ এবারের সবগুলা মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী এবং শিক্ষিত। এর মধ্যে দুজন এডভোকেটও।
ইমন মাকে দেখানোর জন্য খপ করে ছবিগুলো নিয়ে এক পলক দেখে বললো,
—- ইশ মা সবগুলো দেখেই ময়দা সুন্দরী লাগছে। ঠোঁটের লিপস্টিক দেখেছো মনে হচ্ছে মানুষের রক্ত খেয়ে ঠোঁট লাল করেছে। এসব চলবে না।
ইরাবতী আহত গলায় বলে,
—- বাবা তোমার ঠিক কেমন মেয়ে চাই একবার মুখ ফুটে বলে আমাকে ধন্য করবা?
ইমন করুণ চোখে তাকায় মায়ের দিকে। ‘তোমাদের চোখের সামনেই তো আছে মা। যার শরীরের দুটো তিল তীরের মতো আমার হৃদপিন্ডে আঘাত করেছে, যাকে দেখার জন্য আমার মনটা সর্বক্ষণ ব্যাকুলতায় ভোগে, যার চোখে,মুখে উপরওয়ালা দুনিয়ার সব মায়া ঢেলে দিয়েছেন, আমার বন্ধু নামক চরম শত্রু, গোপন শত্রুর একমাএ আদরের বোন আমার মুসুরানী’। মনের কথা মনে রেখেই বললো,
—- ক্ষুধা লাগছে খাবার বাড়ো গিয়ে এসব নিয়ে পরে কথা বলবো।
.
মুরাদের চাচার শরীরটা বেশী ভালো না। সবাই আতঙ্কে থাকে মুরাদের বাবার মতো হুট করে যদি ওনিও দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নেন? বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে যতো চিন্তা ছোট মেয়েকে নিয়েই। এবার ছোট মেয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এ কথা বড় মেয়ে রুমার হাজব্যান্ড রাতুল শুনতেই বলে,
—- আব্বা আপনার এক মেয়েকে দূরে বিয়ে দিয়েছেন। এবার রিমি চলে গেলে আপনি আর আম্মা একদমই একা হয়ে পড়বেন। আমি বলছিলাম ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকুক৷ আপনি মরিয়ম চাচির সাথে কথা বলেন। মুরাদের জন্যও তো মেয়ে খোঁজা হচ্ছে শুনলাম।
মেয়ে জামাই তাঁর খুবই জ্ঞানী, বুদ্ধিমান তাঁর এই সিদ্ধান্তে খুশি না হয়ে পারলো না। নিজের ভাইয়ের ছেলেকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেন তিনি।
বাড়ির সকলের মধ্যে আলোচনা চললো পুরো এক দুপুর। এবং সিদ্ধান্ত হলো সামনে সপ্তাহে মুরাদ আর রিমির বিয়ে৷ মায়ের মুখের ওপর কথা কোনদিনই বলেনি মুরাদ। চাচাকেও সে যথেষ্ট সম্মান করে। বিয়ে নিয়ে কথা ওঠার পরই মুরাদের মনে যে প্রশ্নটা জাগে তা হলো ‘রিমি কারো সাথে রিলেশনশীপে নেই তো’?
রিমির সাথে একা কথা বলে মুরাদ। নিজের বাড়ির মেয়েদের যথেষ্ট ভালো করেই চিনে সে। তবুও মনের ভিতর তো আর ঢুকতে পারেনা তাই সিওর হয়ে নেয়।
এবং বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলে।
.
ইমনকেও ফোন করে জানিয়ে দেয়। বিয়ের তিনদিন আগে থেকে যেনো তাঁদের বাড়িতে উপস্থিত থাকে সে। প্রিয় বন্ধুর বিয়ে নিয়ে কতশত প্ল্যান ইমনের। সব থেকে বেশি আশ্চর্য হয়েছে রিমির সাথে বিয়ে শুনে তাঁর মানে এক হিসেবে মুসকান মুরাদের শালিকাও তো হবে। যাক হাসি তামাসার ছলে মুরাদের কাছে তাঁর শালিকাকে চাওয়া যাবে। মুরাদের রিয়্যাকশনও বোঝা যাবে।তৎক্ষনাৎ অনেক প্ল্যান করে ফেললো ইমন। প্রতিটা সেকেন্ড কল্পনা করতে লাগলো সে কি করবে না করবে। কিভাবে পটাবে মুরাদকে। সেই সাথে মুসকান কেও দেখে নেবে। সেদিনের পর মুসকান ইমনের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে। যা একদম ভালো ঠেকছে না তাঁর কাছে। একবার একা পেলে সেদিনেরটা রিটার্ন হবে ভেবেই মুচকি হাসলো।
এতো খুশি এতো আনন্দ আগাম পরিকল্পনা সব ঠিক থাকবে তো? কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত খুশি হলে সেই খুশি নাকি কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়ায়? মুরাদের নতুন জীবনে পা দেওয়াতে ইমনের জীবনও কি নতুন মোড় নেবে? যদি তাই হয় সে জীবনে মুসকান থাকবে তো?
চলবে।
প্রিয় পাঠকবর্গ সকলকেই জানাই ঈদ মোবারক ★। সকলেই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুক, সুন্দর জীবন কাটান এই কামনাই করি। যেহেতু আগামীকাল কাল ঈদ সেহেতু কাল গল্প আসবে না।