হৃদপিন্ড পর্ব ৪

0
653

#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-৪

কিসের কষ্ট এতো এইটুকু বয়সে এতো কষ্ট কিসের।
জীবনের তো সূচনাই ঘটেনি,,,
মুসকান ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো ইমনের মুখ পানে,, কেমন যেনো বুক ফেটে কান্না এলো তাঁর। ইচ্ছে করলো লোকটা কে জাবটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে,, বাচ্চা মন ইচ্ছে টা কে নিজের মধ্যে বন্দি করে রাখতে পারলো না। ঠোঁট বাঁকিয়ে কেঁদেই ফেললো আচমকাই ইমনকে জাবটে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো,,,
মুসকানের এমন কান্ডে ইমন অবাক হয়ে গেলো।
নিজের থেকে ছাড়াতে গিয়েও থমকে গেলো,,,
যখন মেয়েটার কান্নার আওয়াজ কানে গেলো,,,
আওয়াজ টা শুধু কানেই নয় বুকের ভিতর কেমন চিনচিন ব্যাথার সৃষ্টি করলো।
এই কান্নায় যেনো গভীর কোন ব্যাথা লুকিয়ে আছে, এই কান্নায় যেনো তীব্র কোন যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে,
কিন্তু কি,,,সেই যন্ত্রণা কি আমার যন্ত্রণার থেকেও প্রখর???

বেশ কয়েক মিনিট কান্না করে হালকা হলো মুসকান।
কান্না কিছুটা থামিয়ে ইমনকে ছেড়ে দিলো,,,
বলতে শুরু করলো তাঁর জীবনের এক কঠিন বাস্তবতার কথা।
কেনো বলছে সে জানেনা,,, মনের ভিতর থেকেই কথা গুলো আসতে চাইছে,,,
ইমন ভাবলো বাচ্চা মেয়ে, অবুঝ মন, কতোটা সরল মনের তা বোঝাই যাচ্ছে নয়তো নেশা গ্রস্থ একজন পুরুষ মানুষ কে এভাবে জাবটে ধরে কান্না করা মনের কষ্ট গুলো বলতে চাওয়া সত্যি অবাক করার মতোই।
,
আম্মা মইরা গেছে আমি তখন ফাইভে পড়ি।
আব্বায় আবার বিয়া করে, এই আম্মা আমারে একটুও আদর করে না,আব্বারে খালি কয় বিয়া দিয়া দেও বিয়া দিয়া দেও।আব্বাও আম্মার মুখের ওপর কথা কয়না। চাচা,চাচীরাও ওতো ভালোবাসেনা আমারে, দাদী একটু ভালোবাসে এক খালা আছে সেও বাসে কিন্তু কেউ তো তাগোর কাছে রাখেনা আমারে। আব্বায় ও আমারে দেখতে পারেনা কেমন জানি করে। কয়দিন আগে এক বুড়া বেটা আইলো বাড়িতে।আব্বায় আমারে আদর কইরা বেটার কাছে নিয়া গেলো। বেটা আমারে দেইখা খালি হাসে, খালি হাসে। তাঁরপরে আমার এই হাত টিপা, টিপা দেখলো তারপর আব্বারে কইলো মেয়েডারে নিয়ে শহরে যামু ওনেই বিয়া পড়ামু। এনে পড়াইলে পুলিশ ধরবো আবার। তারপর আব্বা আমারে কইলো শহরে যাইতাছে আমারে নিয়া। আমারে বিয়া দিবো, শশুর বাড়ি হবো,স্বামী হবো আমারে ভালো খাবাড় খাওয়াবো তারা অনেক আদর করবো, ভালো জামা কাপড় পড়তে দিবো।
আমি ভাবলাম আম্মা তো নাই,আব্বাও আমারে আদর করে না এই আম্মা ঠিক ভাবে খাইতেও দেয় না। তাইলে বিয়া করি তাই আমি ঠিক ভাবে খাওন পামু,ভালা জামা কাপড় পামু।

মুসকানের মুখের দিকে অপলক ভাবে চেয়ে কথা গুলো শুনছিলো ইমন। ভালো খাওন পামু,ভালো জামা-কাপড় পামু কথাটা বলার সময় মুসকানের মুখোভঙ্গি এমন ছিলো যে ইমনের বুকের ভিতর এক ধাক্কা খেলো। তাঁর মনে তীব্র ইচ্ছা জাগলো মেয়েটা কে ভালো খাবাড় দেওয়ার ভালো কাপড় দেওয়ার।তারপর মেয়েটার মনোভাব কি হয় খুব কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে হলো। কেনো হলো সে জানে না শুধু জানে এই মেয়ের ইচ্ছে গুলো পূরন করার পর তাঁর মনোভাব উপভোগ করাটা খুবই দরকার।
এতো এতো স্মার্ট মেয়ে দেখেছে এই শহড়ে,,,ভার্সিটির কতো স্মার্ট,সুন্দরী মেয়েরা তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করেছে,,,নানা রকম ভনিতা করে কথা বলেছে,কতো প্রকার ন্যাকামো করতেই না দেখেছে মেয়েদের। সব বিরক্ত লাগতো তাঁর কাছে ওসব মেয়েদের আচরন, স্বভাব সবকিছুই তাঁর কাছে মনে হতো কৃএিম।
এই মেয়েটার কথাগুলো বুকে কেমন শান্তি দিচ্ছে,,,
মনে হচ্ছে একটা নিষ্পাপ প্রান আমার পাশে বসে আছে,মনের ভিতরের সব সত্যি যেনো আমাকে বলে দিচ্ছে। না আছে কোন মিথ্যা,না আছে কোন ভনিতা না আছে ইমপ্রেস করার চেষ্টা।
তবে কি আমি একটা খাঁটি প্রান পেলাম।
যার কথা মন ভরে শোনা যায়,যার সাথে প্রান খুলে মনের কথা শেয়ার করা যায়।
পরোক্ষনেই ভাবলো কি ভাবছি এসব আমার কি নেশা হয়ে গেলো,,,আজ কি বেশী নেশা করে ফেলেছি। এইটুকুন একটা মেয়ের সাথে আমি কি কথা বলবো কিই বা শেয়ার করবো।মেয়েটা বাচ্চা হতে পারে তাই সব বলছে আপন মনে আমিতো আর বাচ্চা নই।

,
আব্বার সাথে ঢাকা আইলাম,দেয়াল করা বাড়িতে এক রাত থাকলাম। পরেরদিন আব্বা কইলো মুসকান ভালো ভাবে থাকিস এরা যেভাবে বলবে সেভাবেই চলবি। আমি আব্বা রে কইলাম আব্বা তুমি কই যাও। আব্বা কয় বাড়ি যামু।
আমি কইলাম আমারে বিয়া দিয়া যাবানা, আব্বা কইলো বিয়া নাকি দুইদিন পর হবো।এই দুইদিন একটা বয়স্ক মহিলার সাথে থাকতে হবো আমার।
আমার আত্মা টা কেমন কইরা ওঠলো, আব্বারে কইলাম আব্বা আমি একা কেমনে থাকমু। আমারে একা রাইখা যাইওনা।
আব্বা রাগ কইরা কইলো ওমনি থাকবি।
বুঝলাম আব্বা অসন্তুষ্ট হইছে তাই আর কিছু কইলাম না। আব্বা চইলা গেলো।
দিনটা একা একাই কাটাইলাম।
রাতের বেলা ঐ মহিলাটা আমারে দুইটা রুটি দিলো আলু ভাজা দিয়া খাইয়া নিলাম। তারপর কাছে আইয়া একটা ওষুধ দিলো, আমি কইলাম কিসের ওষুধ ওনি কয় খাও এইডা খাইলে কোন ভয় থাকবো না। ভয় করতাছে তাই ভাবলাম এইটা খাইলে ভয় দূর হইলে তো ভালাই হবো। আমি ওষুধটা খাইয়া নিলাম খাওনের পর মাথা টা কেমন করতে শুরু করলো।
ওমনি শুইয়া রইলাম।
হঠাৎ কইরা দরজার বাইরে থেকে পুরুষ মাইনশের কথা শুনলাম। কয় সব ঠিকঠাক তো,,,
মহিলাডা কয় হ খাওয়াই দিছি যাও,,,
আমার আত্মা টা কাঁইপা ওঠলো শুয়া থিকা ওইঠা বসলাম দরজার কাছে যাইয়া কান পাততেই শুনলাম।
ছোট মাইয়া আইজ রাত দেখেন কেমন চলে কিনা তারপর কাল বেঁইচা দিবেন। এতো টাকা দিয়া মেয়েডার বাপের কাছ থিকা কিনা নিলেন নিজে একটু টেষ্ট নিবাইন না।
লোকটা হোহো করে হেসে ওঠলো। মাইয়ার বাপ কি লোভী আর কি বোকা, লোভে পড়ে বোধবুদ্ধি সব লোপ পাইছে। এতো টাকা কেও পোলার বউ নেওয়ার জন্য খরচ করে,,,
মহিলাটা কইলো তা তো বটেই এই প্রথম কোন বাপ আইসা আমগো পাড়ায় মেয়া দিয়া গেলো।
লোকটা কইলো মেয়ার মায় তো সব জানে,সৎ মাও।
বাপ জানে না জানলে এমন কাম করবার পাইতো না।
আমি সব শুনলাম ভয় ও পাইলাম তারপর লোকটা ঘরে ঢুকলো আমি ভয়ে কয়েক পা পিছাই গেলাম।
আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকলাম কাঁনতে শুরু করলাম।
লোকটা আমার দিকে তাকাইয়া কেমন কইরা হাসলো। কতো বড় বড় দাঁড়ি বলেই ইমনের দিকে চেয়ে বললো আপনার থিকাও বড়। ইয়া বড় পেট গোপাল ভাঁড় এর মতো।

ইমন বেশ,বুঝতে পারলো মুসকানের কথা মন দিয়ে শুনতে থাকলো। কেনো জানি তার সব জানার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।
,
আমার কাছে আইয়া হাতে ধরলো আমি ছাড়াতে নিলেও ছাড়েনা।
কেমন কইরা জানি ধরে, কেমন কইরা জানি চায়।
খাটের কাছে নিয়া শার্ট খুইলা ফালাইলো আমার খুব স্বরম করলো আমি অন্যদিক চাইয়া রইলাম।
হঠাৎ কইরা আমার ওড়নায় টান দিলো আমি ভয় পাইয়া গেলাম। সরতে নিলেই জোর কইরা খাটের ওপর ঠাইশা ধরলো,আমার ওপর পড়তেই আমার দম বন্ধ হইয়া আইলো,হায়রে ভাড় আমি কিছু কইতে যামু কইতে পারিনা, গলা দিয়া আওয়াজ বাইর হয় না, এতো ভাড়ে নড়া চড়াও করতে পারিনা। খালি হাত দিয়া সরাবার চাই সরে না।

পরে দেহি আমার শরীরে কেমন কইরা ধরে,
বুকের ওপর হাত দিতেই আমার শরীর শির শির কইরা ওঠলো।রাগ ওইঠা গেলো কি করমু বুঝতাছিলাম না পাশের টেবিলে আপেল আর ছুরি রাখা আছিলো, আমি ছুরিটা নিয়া বেটার পিঠের মধ্যে ঘাও দিলাম।
আমার গলা থিকা মুখ তুইলা আহ কইরা বুকে থিকা হাত তুইলা নিজের পিঠে চাইপা ধরলো।
আমার ওপর থিকা সইরা গেলো। আমি ছুঁরিটা শক্ত করে হাতে চাইপা ওড়নাটা গলায় চাইপা দরজা,খুইলা দিলাম দৌঁড়।
অন্ধকারে হালকা আলো পরছিলো পুরা বাড়িতে চোখ বুলাইয়া নিলাম সব ঘর বন্ধ। পাশের ঘর গুলা থিকা কেমন শব্দ আইতাছিলো,কারো আবার কান্নার শব্দ আইতাছিলো, আমি এক ঢোক গিলা গেটের দিকে গেলাম। গেট টা তালা দেওয়া আছিলো আমি গেট টপকাইয়া বাইর হইছি। লোকটা চিৎকার চেচামেচি করতাছিলো মেলা দূর আগানোর পর পিছনে চাইয়া দেহি গেট খুইলা কয়েকজন বাইর হইছে।রাস্তার আলোতে দৌড়াইতে সুবিধা হইছে।
দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে আইসাই আপনার সাথে বাইজা পড়লাম।

মুসকানের কথাগুলো শুনে ইমনের প্রচন্ড রাগ ওঠে গেলো। তাঁর বুঝতে অসুবিধা হলোনা মুসকান কোথায় আর কি পরিস্থিতি তে ছিলো। তাঁর থেকেও বেশী অবাক হলো তাঁর সাথে কি ঘটেছে না ঘটেছে সব এভাবে কি করে বলতে পারছে,,,নেহাতই বাচ্চা মেয়ে বলে এভাবে বলছে ম্যাচিওর থাকলে হয়তো এভাবে বলতে পারতো না ।
দুনিয়ার মানুষ গুলো কতোটা স্বার্থপর কতোটা জঘন্য মনের হতে পারে,,, এইটুকু একটা মেয়েকেও তাঁরা ছাড় দিতে চায় নি।
এই মেয়েকে তাঁর বাবার কাছে ফেরত দিলে আবার তো সেইম ঘটনাও হতে পারে। ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটার জীবন এমন নরকে ফেলে দিতে চাইনা আমি।
তাহলে কি করবো কোথায় রাখবো ওকে। এখন বয়সটা কম যখন আরেকটু বড় হবে কিশোরী নাম ঘুচিয়ে যৌবনে পা দিবে তখন কি পরিচয়ে থাকবে,,,
নাহ কি ভাবছি আমি, আমি রাখতে চাইলেই কি ও থাকবে আমার কাছে, যত্তসব অদ্ভুত ভাবনা ভাবছি।
এইটুকু একটা মেয়ের পেছনে এতো ভাবনা ব্যয় করার কোন অর্থই খুঁজে পাচ্ছি না।

মূহুর্তেই চমকে গেলো ইমন। মেয়েটা আর কথা বলছে না যে চলে গেলো,,, বুকের ভিতর টা শূন্যতায় ভরে গেলো। ভালোভাবে সামনে তাকালো ফ্লোরেই গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।
শুকনো বুকে যেনো কয়েকফোঁটা পানি পড়লো।
ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো।
এই মূহুর্তে তাঁর বয়সটা যেনো দ্বিগুণ কমে গেছে।
মনটাও যেনো নতুন করে জন্ম নিচ্ছে।
একটু এগিয়ে মুসকানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো।
বুকের ভিতর কেমন যেনো প্রশান্তি তে ভরে গেলো তাঁর।
এতো ভালোলাগা তাঁর মনজুরে ছুঁয়ে যাচ্ছে কেনো।

“এই আলো ছায়ার শহড়ে আমার শূন্য হৃদয়ে
নতুন রূপকথা সাজাতেই কি তাঁর আগমন ঘটলো,,

মুসকানের ঘুমন্ত মুখটায় গভীর চোখে চেয়ে রইলো ইমন।
হঠাৎ ই দমকা হাওয়ারা ছুঁয়ে গেলো দুজন কে,,,
হাওয়ার সাথে বিন্দু জলকোনারাও ছুঁয়ে গেলো,,,
আকাশের দিকে তাকাতেই বেশ অবাক হলো ইমন
এতো তাঁরার মেলা অথচ বৃষ্টির আগমনি বার্তা বড্ড অদ্ভুত তো,,,
ভাবতে দেরী জলকোনা গায়ে ছুঁয়ে দিতে দেরী হলো না। তীব্র বেগে বাতাস বইছে সেই সাথে বৃষ্টির পানির ফোঁটাও দ্বিগুণ হতে শুরু করেছে।
কোনকিছু ভাবার সময় না নিয়ে মুসকানকে পাজাকোল করে নিয়ে রুমে চলে গেলো। নিজের বিছানায় ঘুমন্ত মুসকান একটু ঝুঁকে শুইয়িে দিয়ে ওঠতে নিতেই থেমে গেলো।
চোখের পাপড়িগুলোতে চোখ আঁটকে গেলো তাঁর।
ঘন কালো বড় বড় পাঁপড়ি জোরা ভ্রুঁ চেহেরায় নেই কোন কৃএিমতা। প্রাকৃতিক সকল সৌন্দর্যই যেনো মেয়েটার মাঝে ফুটে ওঠেছে। মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো ইমন। এইটুকু মেয়ের মাঝেও এতোটা মুগ্ধতা থাকতে পারে,,,যা এই ইমন চৌধুরীর মন গভীরভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে।
ইমন নিজের দূর্বলতা নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে মুসকানের থেকে দূরে সরে গেলো।
কি ভাবছি এসব ছিঃ এসব ভাবনা কি করে আসতে পারে আমার মনে। এই বয়সে এসে এতো আবেগপ্রবণ হওয়া মানায় না। তাও যদি হতো নিজের সাথে মানান সই কোন মেয়ে বা নিজের বয়সের সাথে মানান সই কোন মেয়ের জন্য আবেগ।
এই মেয়ের জন্য হোয়াট দা,,, ইমন রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

সারারাত রুম জুরে পাইচারি করতে লাগলো।
নিজের মন কে বড্ড অচেনা লাগছে তাঁর,,,
বড্ড অবাধ্যতা করছে তাঁর আবেগগুলো।
কিন্তু এটা কি ঠিক,,,
২৯বছর বয়সের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ কি একটা অপ্রাপ্ত বয়সের, ১৪বছরের কিশোরী মেয়ের প্রেমে পড়তে পারে???

“বয়স হিসাব করে কি ভালোবাসা হয়? ভালোবাসা তো স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করেও হয় না সব সময়। ভালোবাসার সম্মোহনী শক্তি সব প্রতিকূলতাকেই হার মানায়। সমাজের চোখে যা অসংগতিপূর্ণ, প্রেমের ক্ষেত্রে তা খুব সহজেই আশকারা পায়,,

চমকে ওঠলো ইমন,,, নিজের মনের ভাবনা গুলোই যেনো বার বার তাঁকে চমকে দিচ্ছে।
ভালোবাসা,,, একদিনেই ভালোবাসা হয় কি করে?
ভালোবাসা কি একদিনেই হতে পারে,,,
,

“ভালোবাসা জিনিসটা দমকা হাওয়ার মতোই হুট করে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে দেয়।
মানুষের মন এমন একটা জিনিস কখন কিভাবে কার ওপর বা কোন জিনিসের ওপর ভালোলাগা বা ভালোবাসা তৈরী হয়ে যায় মানুষ টা নিজেও টের পায় না,,
“কার মন কখন কিভাবে কারো মাঝে আটকে যায় তাঁ হয়তো কোন হিসেব নিকেশ করে মেলানো সম্ভব হয় না,,
“হুট করেও প্রেমে পড়া যায়,কিন্তু সেই হুট করে প্রেমে পড়ে যাওয়া মনটা কে দীর্ঘস্থায়ী কেবল আসল প্রেমিক -প্রেমিকারাই করতে পারে,,
ঠিক যেমন হুট করে পৃথিবীর বুকে বৃষ্টির আগমন ঘটে, মানুষের হৃদয়েও হুট করে প্রেম ভালোবাসার আগমন ঘটে।
“ভালবাসা একদিনেও হতে পারে যদি সেই ভালোবাসা কে একজনম আঁকড়ে ধরে বাঁচার ক্ষমতা রাখো,,
(জান্নাতুল নাঈমা)

,
সায়রীর ফোনে ঘুম ভেঙে গেলো ইমনের।
শেষ রাতে চোখ লেগে আসায় রুমে এসে সোফায়ই ঘুমিয়ে পরেছিলো। সায়রী ফোন করেই বললো ইমন আমার আসতে বিকাল হবে,মেয়েটার কি অবস্থা।
ইমন আড় চোখে মুসকানের দিকে তাকালো।
ইমন বললো কি
আর অবস্থা আমার রুম, আমার বিছানা দখল করে বসে আছে।
সায়রী হকচকিয়ে গেলো ইমনের কথা শুনে। গম্ভীর গলার স্বর শুনে অভ্যস্ত হতে হতে এমন স্বাভাবিক স্বর যেনো হজম হলো না সায়রীর।
কিরে কি হয়েছে বল তো,,,এনি থিং রং,,,
ইমন সোফা থেকে ওঠে বেলকুনির দরজা খুলে বেলকুনির রেলিং এ ভর করে দূরপানে চেয়ে বললো এভরিথিং ইজ রং,,,
সায়রী ভয় পেয়ে গেলো, পরোক্ষনেই ভাবলো সব রং হলে ও এতো স্বাভাবিক কেনো?
ইমন বললো তারাতারি চলে আয় তোর স্কুল আছে তো আসতে হবেই, তখন কথা হবে।
সায়রী অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো।
ইমনের বিহেইভ তাঁর স্বাভাবিক লাগছে না। আর না কোন হিসেব মিলছে।

,
ঘুম ভাঙতেই মুসকান ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসলো।
হাঁপাতে লাগলো বেশ,,,
ইমন রেডি হয়ে ফাইল হাতে নিয়ে দাঁড়াতেই ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে তাকালো।
এমন করছে কেনো, দুঃস্বপ্ন দেখেছে নাকি।
বিছানার কাছে গিয়ে বললো কোন সমস্যা,,, পানি খাবে???
মুসকান চোখ, মুখ খিঁচে বসা অবস্থায় ই ইমনের দিকে একটু চেপে জাবটে ধরে কাঁপতে শুরু করলো।
ইমন হতভম্ব হয়ে গেলো,,, বেশ বুঝতে পারলো ভীষন ভয়ে আছে। বুকের সাথে মাথা দুহাতে পিঠ শক্ত করে জরিয়ে আছে মুসকান।
ইমন যতো ছারাতে চাচ্ছে মুসকান ততো শক্ত করে চেপে ধরছে। অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছিলো।
এভাবে জাবটে ধরায় ড্রেসআপ খানিকটা নষ্টও হয়ে গেলো।। ইমনের মুখে বিরক্তির ছাপ পড়লো,,,
চোখের পানিতে কোর্ট টা ভিজে যাচ্ছে,,, মেয়েটা তবুও ছাড়ছে না।
ইমন রাগ টা নিয়ন্ত্রণে রেখে ফাইলগুলো একহাতে বিছানায় রাখলো।
দুহাতে আলতো করে মাথায় ধরে ওঠিয়ে ভেজা চোখ, ভেজা গাল গুলোর দিকে তাকালো।
কান্নার ফলে পাপড়ি গুলো লেপ্টে আছে ডাগর ডাগর চোখ গুলোর সৌন্দর্য যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেছে।
ভয়ে, কান্নার ফলে হেচকি ওঠে গেছে মুসকানের।
ইমন টেবিলে থাকা এক গ্লাস পানি যেটা নিজের জন্য এনেছিলো বেরুনোর আগে পানি পান করে বের হওয়া স্বভাব তাঁর। সেই পানিটাই মুসকানকে এগিয়ে দিলো।
মুসকান পানিটা নিয়ে ডগডগ করে খেয়ে নিলো।
ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে প্রচন্ড পানি পিপাসা পায় তাঁর ও পেয়েছে।
জোরে জোরে কয়েক দফা নিঃশ্বাস নিয়ে ইমনের দিকে তাকালো, ইমন গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করছে মুসকান কে।
মুসকান ইমনের অমন চাহনীতে আরেকটু ভয় পেয়ে গেলো,কিছুক্ষন আগে ভয়ে তাকে জরিয়ে ধরার কথা মনে পড়তেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
মিনমিন করে বললো আমারে মাফ কইরা দেন, আর এমন হবো না,,,

ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো কেমন???

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here