#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-১৭
দিলিপ খন্দকার এবং তাহিয়া বেগম এর সামনে বসে আছে ইমন।
তাহিয়া বেগম কান্না করে দিবে প্রায়,,,
ইমন বললো কাকি মা, কাকা চিন্তা করবেন না।
দিহান আসুক ওর সাথে আমি কথা বলবো। আশা করছি ভালো কিছুই হবে।
তাহিয়া বললো বাবা ইমন তোমাকে আমি যতোটা ভরসা করি অন্যকাউকে ততোটা করিনা, দিহানকেও আমি সেই ভরসা করিনা যে ভরসা তোমাকে করি।
দিহানের বাবার এখন বয়স হয়েছে একমাএ ছেলে যখন দেশ ছেড়েছে তখন থেকেই মানুষ টা যেনো শেষ হয়ে যাচ্ছে। রিটায়ার করার পর থেকেই নানারকম রোগ বেঁধেছে শরীরে কতোগুলো বছর ধরে ছেলেটা দেশ ছাড়া ফোনে যোগাযোগ অবদি রাখে না। সেদিন তিন্নি কে ফোন করে শুধু আসার কথাটা জানালো। তাই শুনে তোমার কাকা এতো খুশি সাথে সাথে বললো দিহানের মা ইমনকে একবার খবড় দাও।
দিলিপ বললেন ইমন আমি চাই তোমার বন্ধু একটা সুন্দর, সুগঠিত জীবন উপভোগ করুক।
শুধু দিহান নয় আমি চাই তুমিও এবার সংসারমুখী হও। আমি চাই মরার আগে তোমাদের দুজনের সুখের একটা সংসার দেখে যেতে।
ইমন হালকা কেশে কাকা দিহান আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ওর জন্য আমি সর্বোচ্চ ভালোটাই চেষ্টা করবো।
তবে হে আশা করি দিহান যদি পজেটিভ সিদ্ধান্তে আসে আপনারা কোনভাবে আর কোন কিছু নিয়ে আপত্তি করবেন না।
ইমনের কথার অর্থ দিলিপ বুঝতে না পারলেও তাহিয়া ঠিক বুঝতে পারলো সাথে সাথেই বলে ফেললো আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।
কতো বড় ভুল করেছি আমরা তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছি আর কোন ভুল করবো না। তোমার কাকাও আর কোন আপত্তি করবে না আশা করি।
নাই মা চেয়ে কানা মা অনেক ভালো ।
আমরা শুধু চাই ছেলেটা বউ, বাচ্চা নিয়ে সংসার করুক। এই ফাঁকা বাড়িটা খুশিতে হৈ হট্রগোলে ভরে ওঠুক।
ইমন মৃদু হাসলো।
–তিন্নি কোথায়,,,
–কলেজে বাবা।
–ওহ কোন কলেজে পড়ছে,,
তাহিয়া কলেজের নাম বলতেই ইমন ভাবলো মুসকানকেও তো কলেজ ভর্তি করাতে হবে।
তিন্নির সাথে একি কলেজে ভর্তি করানো হলেই ভালো হবে যেহেতু গার্লস কলেজ কোন চিন্তা নেই। ইয়ানা বয়েস কলেজে পড়ে তাই ইমন তিন্নি যে কলেজে পড়ে সেখানে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেললো।
তাহিয়া বললো তা বাবা তুমি দিহানের টা ভাবার পাশাপাশি নিজের টা ভাবলেও তো পারো।
নাকি আমি আর তোমার কাকা মিলে মেয়ে দেখবো।
ইমন হকচকিয়ে গেলো।
মেয়ে দেখতে হবে না কাকি। বরং আপনাদের সামনেই আমার মুগ্ধময়ীকে একদিন হাজির করবো।
–কি হলো, দেখো বাবা অতীত টা সবার ভালো হয় না।
তাই বলে অতীতকে ঘিরে সারাজীবন বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও বোকামি। দিহান আর তুমি আমার কাছে আলাদা নয়, দিহান যেমন আমার সন্তান তুমিও আমার আরেক সন্তান। তাই আমি শুধু দিহানের কথা ভাববো আর তোমার টা ভাববো না এটা হতে পারে না।
–ইনশাআল্লাহ কাকি আপনার দুই ছেলের থেকে যা যা আশা করছেন সব এবার পাবেন।
দিলিপ বললো তুমি কি গল্পই করবে নাকি ছেলেটাকে খেতে দিবে এতোদিন পর ছেলেটা বাড়ি এসেছে কতোরকমের রান্না করেছো সেই ভোরে ওঠে। খেতে দাও আমারো খিদে পেয়েছে ভীষন।
তাহিয়া হাসতে হাসতে ওঠে দাঁড়ালো।
–খেতে তো দিবোই আমি জানিতো আমার এই ছেলেটা সকালে না খেয়েই বেরিয়েছে। সেই ছোটবেলার অভ্যেস কি ভুলতে পারে।
যখনি এ বাড়ি আসার জন্য খবড় পাঠাতাম দেখতাম সকাল সকাল এসে পড়েছে। আসবে নাই বা কেনো আমাদের যে যোগসূত্র রয়েছে আত্মিক যোগসূএ।
ইমন মৃদু হাসলো।
,
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি ওঠে গেছে মুসকানের।
দাদী বললো তুই যদি এভাবে কাঁদিস সব টা কিভাবে শুনবি। সব টা শুনে তারপর যতো কাঁদার কাঁদিস আমি নিষেধ করবো না এমনও হতে পারে সবটা শুনে তুই নিজেই ইমনকে আপন করে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে যাবি।
সেদিন ওই ঘটনার পর ইমন বেশ বড় সড় ঝটকা খায়। সেই সাথে ওর মনের ভিতর সন্দেহ তৈরী হয় রিতিশা কে নিয়ে। নিজের ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ছিলো ওর যে রিতিশা সম্পূর্ণ মিথ্যা একটা দোষ চাপাচ্ছে। হতে পারে এটা ইমনকে বিয়ে করার জন্য ওর কোন চাল বা হতে পারে অন্য কোন রহস্য।
সবাই মিলে সকালের নাস্তা করতে বসেছি। রিতিশাও ছিলো খাওয়ার মাঝ পথে হঠাৎ রিতিশা ওঠে দৌড়ে বেসিনে চলো যায়। বমি হয় অনেক আর এটা যে স্বাভাবিক ছিলোনা তা অন্তত আমি হারে হারে টের পাই। ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করি কিগো মেয়ে সব ঠিকঠাক তো,,,
রিতিশা লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে যায়,যাওয়ার আগে ইমনের দিকে কেমন যেনো এক চাহনীতে তাকায়।
ইমন সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতো খেয়ে চলে যায়।
সাজিয়া মুচকি হাসে,,,
–বৌ মা হাসছো কেনো এইভাবে।
–মা আপনার নাতী তো এমন ভান করে যে ভাঁজা মাছ টা ওলটে খেতে জানে না। অথচ আমার বোন ঝি কে অনেক আগেই সে নিজের করে নিয়েছে।
সবাই জানাজানি হওয়ার আগে বিয়েটা পড়িয়ে দিলেই ভালো হবে। নয়তো আপনার নাতীর গায়ে কালি পড়বে মা। তারাতারি বিয়ের বন্দবস্ত করুন।
আপনার ছেলেকে আমি এখুনি গিয়ে সবটা বলছি।
সাজিয়ার কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
এক ধমক দিয়ে বলি বৌ মা মুখ সামলে কথা বলো।
–মুখ সামলে কথা মানে, মেয়েদের শরীর দেখলে তো আপনার নাতীর হুশ থাকে না। বাড়াবাড়ি না করে বিয়ের বন্দবস্ত করুন নয়তো ফল ভালো হবে না। মিডিয়ার কানে এসব কথা গেলে ভাবতে পারছেন কি হবে। রিতিশা কিন্তু হেরে যাওয়ার মেয়ে নয়। ওর অধিকার ওকে না দিলে ওর বাচ্চার দায়িত্ব না নিলে ধ্বংস লীলা শুরু করবে এই বলে দিলাম।
বাড়িতে শুরু হয়ে গেলো বড়সড় ঝামেলা।
ইমন ক্ষেপে গিয়ে রিতিশার গালে কয়েক থাপ্পড় দিতেই সাজিয়া তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে থ্রেট দেওয়া শুরু করে মিডিয়ার লোকের কাছে সব প্রকাশ করবে যদি ইমন রিতিশা কে বিয়ে না করে।
তা শুনে একরা ঘাবড়ে গেলেও ইমন শক্ত থাকে।
একরা ইমনকে হাতজোর করে বলে বাবা বিয়েটা মেনে নে তোর সন্তানের জন্য হলেও মেনে নে। নিজের বংশধর কে অন্তত আমি অস্বীকার করতে পারবো না।
–ব্যাস বাবা ব্যাস, আর একটা কথাও না।
বিয়ে করতে তো আমি রাজি হয়েই গিয়েছিলাম। এই বিয়েটা আমি করেও নিতাম। কিন্তু এই সব নাটক এর কি প্রয়োজন পড়লো তা তো আমাকে জানতেই হবে। আর রিতিশাকে বিয়ে মাই ফুট,,,
এইরকম একজন ক্যারেকটার লেস মেয়ে কে অন্তত আমি বিয়ে করবো না।
রিতিশা, সাজিয়া ভয়ে এক ঢোক গিললো।
নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো –ইমন প্লিজ কেনো নিজের সন্তান কে অস্বীকার করছো,, ভুলে গেছো তুমি সেদিন রাতের কথা।
–স্যাট আপ, নির্লজ্জ মেয়ে। ঘৃনায় আমার থুথু ফেলতে ইচ্ছে করছে তোর দিকে। ভালো ক্যারেক্টারের মেয়েরা কখনো নিজের গায়ে নিজেই কলংকের দাগ লাগায় না। তাহলে তুই কতোটা জঘন্য, কতো টা নিচু জাতের ভেবে দেখ।
–ইমন,,,
–চুলের মুঠী ধরে যে তোকে এখনো এ বাড়ি থেকে বের করিনি সেটা তোর ভাগ্য।
ইমন চৌধুরীর গায়ে দাগ লাগাতে এসেছিস এবার দেখ ইমন চৌধুরী তোর কি হাল করে।
বলেই ইমন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
সাজিয়া বলে দেখেছো দেখেছো তোমার ছেলে কতোটা নীচ হয়ে গেছে নিজেই অপরাধ করে এখন নিজেই অস্বীকার করছে,,,
একরা সাজিয়ার গালে কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয়।
সাজিয়া গিয়ে পড়ে রিতিশার কাঁধে।
–আমার ছেলে অপরাধ করেছে তোমার বোনের মেয়ে কি কচি খুকি, অবুঝ শিশু সে কিছু বুঝেনা,মনে রেখ ইমন পুরুষ মানুষ ওর গায়ে এসব নোংরামির আঙুল তুললে আজ বাদে কাল মানুষ সেটা ভুলে যাবে আর যেহেতু ইমন চৌধুরী সেহেতু এমন কিছু রেকর্ড থাকলেও পাবলিকের কিছু জায় আসবে না।
কতো মেয়ের বাবারা লাইন দিয়ে রাখে ইমনের কাছে তাঁদের মেয়ে দেওয়ার জন্য,কতো মেয়ে আমার কাছে এসে চোখের পানি ফেলেছে আমার পুএবধূ হওয়ার জন্য আশা করি সব খবড়ই তুমি পেয়েছো।
যা ক্ষতি হওয়ার যা বদনাম হওয়ার তোমার বোনের মেয়েরই হবে তাই সময় থাকতে আসল ঘটনা কি সেটা বলো এতেই মঙ্গল।
রিতিশা, সাজিয়া দুজনই ভয়ার্ত চোখে একরার দিকে চাইতেই একরা ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে গেলো।
সবারই ইমনের ওপর বিশ্বাস ছিলো তাই সবাই অপেক্ষা করতে লাগলো সঠিক সময়ের। এদিকে রিতিশাও পাগল হয়ে গেলো ইমনের সন্তান তাঁর গর্ভে এটা প্রমান করার জন্য।
আমার মনে প্রশ্ন ঘুরতে থাকলো হঠাৎ রিতিশা এমন কথা বলছে কেনো। ইমন তো বিয়েতে রাজিই হয়েছিলো। সভ্য ভাবে থাকলেই বিয়েটা সহজেই করতে পারতো। তাহলে এইরকম পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে রহস্য টা কি??
বাচ্চা যে পেটে আছে এটা সত্যি তাহলে বাচ্চা টা কার??
অন্য কারো পাপের বোঝা ইমনের ওপর চাপাচ্ছে না তো,,,
পরের দিন ড্রয়িং রুমে সবাইকে হাজির করলো ইমন।
সাজিয়া, রিতিশা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
বাড়ির ছেলে, মেয়েদের ইমন নিচে আসতে বারন করায় কেউ নিচে আসেনি। নিচে শুধু কাজের লোক,একরা, আমার ছোট ছেলে এনামুল, সাজিয়া আর আমি।
ল্যাপটব চালু করতেই কিছু দৃশ্য চোখে ভেসে এলো।
–জান তোমার সন্তান আমার গর্ভে তুমি কেনো ভয় পাচ্ছো, আমি তোমাকেই ভালোবাসি। শুধু কয়েকটা মাস ওয়েট করো। বিয়েটা হবে,আর আমি জাষ্ট কয়েকটা মাসই থাকবো ইমন চৌধুরীর বউ হয়ে।
চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির অর্ধেক মালিকানাই ইমন চৌধুরীর জাষ্ট সেটা আমার ছোট ভাই ইভানের করে দিবো যেভাবেই হোক। তারপর আবার আমাদের গন্তব্য স্থলে পারি জমাবো। জানোই তো জান আমার নিজের কোন ভাই নেই আমরা দুবোন ইভান কে নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসি। কিন্তু খালামুনির বর শুধু ইমন ইমন করে ইভানের দিকে তাঁর কোন খেয়ালই নেই।
–বুকের ওপর মাথা রেখে কথা গুলো বলছিলো রিতিশা,,, ছেলেটা রিতিশার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ধীর গলায় বললো নিজের জিনিস কে অন্যকারো ঘরে দেখা যে খুবই যন্ত্রণার সোনা বুঝোনা,,,
সাজিয়া সহ রিতিশা ভয়ে কুঁকড়িয়ে গেলো।
রিতিশা চিৎকার করে বললো এসব মিথ্যা, এগুলো বানোয়াট।
একরা ঘৃনায় মাথা নিচু করে ফেললো।
আমি ভিডিওটার বলা সব কথা শুনলাম।
–জান নো টেনশন জান তোমার ভালোবাসার গভীর ছোঁয়া গুলো আমার শরীরে একে দাও তো,, আমিও অনেকদিন পর তোমায় ফিল করি সেইসাথে একটা ক্যালমাও হয়ে যাক।
–ছেলেটা রিতিশার সাথে অন্তরঙ্গ হতে নিতেই ইমন ভিডিও টা অফ করে ফেললো।
রিতিশা নানা ভাবে সবাইকে বোঝাতে লাগলো।
ইমন হাতে তালি বাজিয়ে জোরে হাসতে লাগলো।
–বাহ! কি খেলোয়ার ভাবা যায়। নষ্টামি করবি বয়ফ্রেন্ডর সাথে পাপের ফল চাপাবি আমার ঘারে।
কি ভেবেছিস ইমন চৌধুরী এতোটাই বোকা।
রিতিশা ভয়ে এক ঢোক গিললো।
সাজিয়া একরা কে বললো কোথাও ভুল হচ্ছে রিতিশা নয় এটা।
একরা বললো ছিঃ এতোটা জঘন্য তোমরা। ইভান আমারো সন্তান, ইভানের জন্য তোমাদের ভাবতে হবে না। ইভানকে নিয়ে ভাবার ওর বাবা, বড় ভাই আছে বলেই ইমনকে বললো — আমি যাচ্ছি তোমার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত।
আমি ইমনকে বললাম দাদু ভাই এসব তুই কিভাবে পেলি।
–দাদী তোমার নাতীর সম্পর্কে আর কারো ধারনা থাকুক বা না থাকুক তোমার নিশ্চয়ই আছে।
সেদিন বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান থেকে রিতিশা বেরিয়ে আসার পর কোথায় গিয়েছিলো কতোক্ষন লেট করেছে সব এ টু জেট আমি জানি। প্রুফ সহ সবাইকে দেখালাম এর পরও আমার ক্ষমতা সম্পর্কে কারো সন্দেহ আছে,,,
মিস রিতিশা জাষ্ট এক ঘন্টা টাইম দিলাম এর মধ্যে এ বাড়ি থেকে না বেরুলে পুলিশের হাতে দিতে বাধ্য হবো।
,
মুসকান নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।
–তাঁর পর থেকেই দাদুভাই আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা। নিজের মায়ের করা বেঈমানী গুলো, রিতিশার করা বেঈমানী দেখে ওর মনটা বিষিয়ে যায়। তাই সিদ্ধান্ত নেয় এসবে জরাবে না।
সারাজীবন একাই পার করে দিবে।
আমরা কেউ ওকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারিনি। আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম ছেলেটা বোধ হয় নিঃসঙ্গ জীবন ই পার করবে।
কিন্তু যখন ওর মুখে তোর কথা শুনলাম তখন যেনো আশার আলো দেখতে পেলাম।
মুসকান চোখ তুলে তাকালো। গাল দুটো নোনাজলে ভরে ওঠেছে।
দাদী মাথা নাড়িয়ে বললো হ্যাঁ রে,,,
তোর এই নমনীয়তা, তোর দায়িত্ব বোধ, তোর সহনশীলতা সবটাতেই মোহিত হয়েছে তিনি।
মুসকান লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
–দাদু ভাই মুখে না বললেও দাদু ভাই যে তোকে খুব করে চায়,সেটা আমরা সবাই জানি। তোকে সারাজীবনের সাথী করতে চায়। কিন্তু কাল কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না।
মুসকান কান্না মিশ্রিত গলায় বললো ওনিতো আমাকে এসব বলেনি। আর ওনি আমার থেকে কিছু শুনেনও নি। বলেই কাঁদতে লাগলো।
–দাদু ভাই কেমন জানিসই তো অল্প কথার মানুষ।
অল্পতেই বোঝাতে চেয়েছে। তা তুই কি বলিস দাদু ভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী হবি তো,,,বলেই মুসকানের মুখের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো।
মুসকান লজ্জায় ওঠে পড়লো। চলে যেতে নিয়েও ফিরে চেয়ে বললো ও দাদী ওনার মত কি পাল্টে গেছে,,,
–তোর কর্তার মত পাল্টেছে নাকি তুই জিগ্যাস কর না ছুড়ি,,,
–আমি তো মরেই যাবো লজ্জায়।
–আহা গো লজ্জা লজ্জা পাইয়া লাভ নাই। যতো তারাতারি পারো নিজের কর্তাকে
নিজের দখলে নিয়ে নাও। নয়তো রিতিশার মতো আরো বিষধারী মাইয়ারা ভাগ বসাইতে আসবো।
হাজার হলেও নাতী আমার লাখে একটাই।
মুসকান আঁতকে ওঠলো।
,
–কিরে দাদীদের দিয়ে আসলি যে,,মুসকান কতোটা মন খারাপ করেছে দেখেছিস।
–সুপ্তি ঘুমিয়েছে।
–হ্যাঁ। ঘুম পাড়িয়েই আসলাম। তুই আগে বল তো কি চাস তুই। বাচ্চা মেয়ে মনটাও বাচ্চা ওর মুড দেখে আমারই খারাপ লাগছে।
–এতো খারাপ লেগে কাজ নেই যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড় তো ওকে আমি দেখে নিবো।
–বিয়েটা করে নিলেই ভালো হতো ইমন। তুই যে কি বুঝিস না,,,
–বিয়ে তো করবোই এতো চিন্তা কিসের। একজনের অপেক্ষায় আছি দেরী যখন একটু হলোই সে আসলেই না হয় বিয়েটা হবে। উপরওয়ালা হয়তো এটাই চায়। সবই তাঁর ইচ্ছা, জানিস তো মুসকান আমাদের জন্য খুব লাকি।
–তোর জন্য লাকি এটা আমরা সবাই জানি।
–শুধু আমি না আরো অনেকের জন্যই।
–মানে,,,
–কিছুনা যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।
,
ইমনকে খাবাড় গুছিয়ে দিয়ে মুসকান চুপচাপ বসে রইলো।
ইমন খাবাড় মুখে দিয়ে গম্ভীর গলায় বললো খাবেনা??
মুসকান মলিন মুখে নিচু স্বরে বললো খেয়েছি আপনি খেয়ে নিন বলেই মাথা নিচু করে রাখলো।
ইমন ভ্রু বাঁকিয়ে মুসকানের দিকে চেয়ে ভাবলো সাহসের তো সীমা নেই দেখছি, আমার আগেই খেয়ে নিয়েছো।মুখ দেখে তো সবটাই বুঝতে পারছি।
মিথ্যা বলেছো তো বলেছো তাও আবার বিশাল সাহসীকতার মিথ্যা।
চুপচাপ খেয়ে ইমন ওঠে পড়লো।
মুসকান সব গুছিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘুরতেই ইমনের মুখোমুখি হলো।
মুসকান একবার ইমনের দিকে চেয়ে মুখ ফিরিয়ে ওদিক সেদিক চেয়ে বললো কিছু লাগবে,,,
ইমন এক হাতে মুসকানকে পেঁচিয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো।
আচমকাই ইমন এমনটা করে ফেলবে মুসকান ভাবতে পারেনি৷ তাঁর হৃদস্পন্দন ১০০ গতিতে বেড়ে গেলো। এক ঢোক গিলে মিনমিনে স্বরে বললো কি করছেন,,,
ইমন একটু ঝুঁকে মুখের কাছে মুখ নিয়ে গাঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সেই দৃষ্টি তে চোখ রাখার সাহস মুসকানের নেই। চোখ ফিরিয়ে নিলো।
–মিথ্যা কেনো বললে,,,
–মুসকান তুতলাতে তুতলাতে বললো কইই না তো,,,
–ওহ তাই, তাঁর মানে আমার আগেই খাওয়া হয়ে গেছে রাইট বলেই আরেকটু শক্ত করে নিজের সাথে চেপে নিলো।
মুসকান ভয়ে মিইয়ে গেলো কেমন। বুকের ভিতর তাঁর ধকধক করতে শুরু করেছে। ইমনের এতো কাছে আসায় তাঁর সম্পূর্ণ শ্বাস সে অনুভব করতে পারছে। প্রত্যেকটা শ্বাস যেনো তাঁর শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছাচ্ছে গিয়ে।
–বড্ড সাহস বেড়েছে তাইনা, পেটের ভিতর কি ইঁদুর ছুটছিলো যে আমার আগেই খেয়ে নিলে। এতোগুলো দিন যেটা হয়নি আজ তাই হয়েছে। এর শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে বলেই একহাতে মুসকানের ঘাড় চেপে ঠোঁট এগিয়ে নিলো।
মুসকান ভয়ে সড়তে গিয়েও সড়তে পারলো না।
চোখ দুটো বন্ধ করে এক হাতে ইমনের ঠোঁটে বাঁধা দিয়ে বললো আমি খাইনি এমনি বলেছিলাম।
ইমন বাঁকা হাসলো সাথে সাথেই মুখটা কঠোর করে নিয়ে বললো ওহ তাই, মিথ্যা বলার শাস্তি টা না হয় পরেই দিবো। তাঁর আগে আমার সামনে প্লেট ভর্তি খাবাড় নিয়ে সম্পূর্ণ খাবাড় শেষ করবে নয়তো আজ তোমাকে আমি কি করবো ভাবতেও পারবে না।
মুসকান ভয়ে এক ঢোক গিললো।
ইমন মুসকানকে ছেড়ে দিয়ে কঠোর দৃষ্টি দিয়ে ইশারা করলো ডায়নিং টেবিলের দিকে।
মুসকান বাঁধ্য মেয়ের মতো গিয়ে খাবাড় বেড়ে খেতে শুরু করলো। ইমন সামনের চেয়ার টেনে বসে মুসকানের খাওয়া দেখতে লাগলো।
মুসকান লজ্জায়,অভিমানে খেতে পারছিলো না।
তবুও ইমনের ভয়ে ভাত মুখে পুড়ে পানি দিয়ে দিয়ে গিললো।
যা দেখে ইমন বেশ মজা পাচ্ছিলো।
,
কয়েকদিন পর-
রাত আটটা বাজে সুপ্তি আজ তারাতারিই ঘুমিয়ে গেছে। সায়রী রুমে বসে পরীক্ষার খাতা দেখছিলো।
ঘুম ঘুম পাচ্ছে তাই রান্না ঘরে চলে গেলো কফি বানাতে কফি বানিয়ে রুমে আসতে নিতেই হঠাৎ কেউ তাঁকে কোমড় পেঁচিয়ে একদম পাশের রুমের দেয়ালে নিয়ে ঠেকালো। কফি টা সায়রীর রুমের সামনেই পড়ে গেছে।
সায়রীর একটা চিৎকার ই কানে ভেসে এলো সাথে সাথে মুসকান দৌড়ে বেরুলো রুম থেকে।
–আপা কি হয়েছে কে ওখানে।
আর কোন সাড়া পেলো না৷ রুমেও সায়রী নেই।
পাশের রুম থেকে দরজায় হাতরাহাতরির আওয়াজ পেতেই মুসকান ভয় পেয়ে যায় আপা আপা করে যেতে নিতেই দেখলো পিছন থেকে সায়রীর মুখ চেপে ধরে আছে। কিসব বলছে বুঝতে পারলো না। তবে এটা ঠিক বুঝলো বাড়িতে ডাকাত পড়েছে দৌড়ে গিয়ে রান্না ঘর থেকে একটা লাঠি নিয়ে এলো।
দরজার কাছে আসতেই দেখলো সায়রীর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ে যাচ্ছে। সামনের লোকটার দিকে অদ্ভুত ভাবে চেয়ে আছে।
কালো শার্ট, কালো প্যান্ট গলায় সাদা কাপড় মাপলারের মতো পেঁচানো। লম্বা,চওড়া লোক দেখেই মুসকান কয়েক পা এগুলো উদ্দেশ্য মাথা বরাবর এক বাড়ি দেওয়া।
কিন্তু তাঁর কাজে ইমন বেগরা দিলো।
পিছন থেকে এক হাতে পেটে পেঁচিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। মুসকান চেঁচাতে শুরু করলো আল্লাহ গো ডাকাত ডাকাত বাড়িতে দুইটা ডাকাত পড়েছে,,,
চলবে…………
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।