হৃদপিন্ড পর্ব ১৪+১৫

0
547

#হৃদপিন্ড
#জান্নাতুল নাঈমা
#পর্ব-১৪+১৫

পোশাক পালটে নাও।
মুসকান দু পা পিছিয়ে গেলো। চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রুকনা ঝড়তে লাগলো। বুকের ভিতর যেনো কেউ পাথর চেপে ধরেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তাঁর। কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো। অজানা এক বাঁধায় চুপ রইলো সে।

ইমন পিছন দিক ঘোরার আর প্রয়োজন মনে করলো না। দ্রুত রুম ত্যাগ করলো।
,
দাদী কান্নায় ভেঙে পড়েছে। সায়রী, রিক্তা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। পুরো বাড়িটা থমথমে পরিবেশ। একরামুল চৌধুরী তাঁর মা কে বলে গেছেন ইমনকে আরেকবার বোঝাতে বাচ্চা মেয়ের পিছনে না ছুটে নিজের যোগ্যতার কোন মেয়েকে যেনো বিয়ে করে। শুধু ইমনকে রাজি করাতে বলেছে বাকিটা সে দেখে নেবে। এ বাড়িতে শোক দিবস পালন হলেও ঐ বাড়িতে যেনো খুশির ঢেউ ওঠে গেলো।
ইভান বললো বেশ হয়েছে চাকরানির বাচ্চা চৌধুরী বাড়ির বউ হবি সখ কতো।
যে মেয়ের জন্য আমার এতো অপমান হয়েছে এতো আঘাত হয়েছে ঐ মেয়েকে এ বাড়ির বউ এর চোখে দেখার মতো যন্ত্রণা আর কিছু হতে পারে না।
পতিতা পল্লী থেকে ওঠে এসেছে,ইমন চৌধুরীর রক্ষিতা হয়ে থাকাটা মেনে নেওয়া যায় অর্ধাঙ্গিনী না।
সাজিয়া বেগম হাসলেন ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বললেন বাবা চল খেতে দেই। রাগের মাথায় সকাল থেকে কিছু খাস না।
ইয়াশফা বললো আমি ইয়ানা কে ফোন করে জেনে নেই কি খবড় ওদিকের।
,
দাদী বললেন সায়রী আমি মুসকানের সাথে একবার কথা বলতে চাই উপরে নিয়ে চলো আমাকে।
রিক্তা বললো মেয়েটার অবস্থা ভালো না। মেঝেতে বসে কেঁদে চলেছে। এতো বড় সত্যি টা মেনে নিতে পারছে না হয়তো। আজি কেনো জানাতে হবে সব। হয় আগে জানাতো নয়তো পরে। এই ইমন টা যে কি করে না।
দাদু ভাই কোথায়,,,
ছাদে আছে মদের বোতল কয়টা নিয়ে মাতলামো করছে হয়তো। বলেই রিক্তা সোফায় বসলো বিরক্তি মুখ নিয়ে। দাদী এবার এতো ভেঙে পড়লো যে তাঁর শরীর খারাপ হয়ে গেলো। প্রেশার বেড়ে গেলো। সায়রী তারাতারি দাদীকে তাঁর রুমে নিয়ে গিয়ে ওষুধ খাওয়িয়ে দিলো। দাদী বললো সায়রী আমি মুসকানের সাথে কথা বলতে চাই আমার বিশ্বাস সব সত্যি জানার পর ও ইমনকে ছাড়ার কথা ভাবতেও পারবে না।
সায়রী বললো ঠিক বলেছেন। আমার মনে হয় ইমন সবটা ঠিক ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারে নি। সবটা হয়তো বলেওনি। দাদী আপনার শরীর খারাপ রাত হয়ে গেছে আপনি ঘুমান। মুসকান তো চলে যায়নি সবটা ওকে বলা যাবে। কাল বলবেন আপনি আজ রেষ্ট নিন, চিন্তা করবেন না।
অভ্রর কোলেই সুপ্তি ঘুমিয়ে গেছে। সায়রী গিয়ে সুপ্তিকে নিয়ে শুইয়িয়ে দিলো। রিক্তা, সায়রী, সুপ্তি একসাথেই শুয়ে পড়লো।

অভ্র মুসকানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভিতরে যাবে কি যাবে না দ্বিধায় আছে সে।
নাহ থাক যাবো না, মনের অবস্থা হয়তো ঠিক নেই।
একা থাকতে দেওয়াই উচিত।
ইয়ানা মুসকানের রুমের দিকেই আসছিলো।
অভ্রকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো কিরে ভাই তুই এখানে কেনো?
তুই কোথায় যাচ্ছিস।
দাদী বললো ওর কাছে যেতে তাই এলাম ওর সাথেই ঘুমাবো আমি।
ওহ আচ্ছা তাহলে তুই যা। আমি ভাবলাম মেয়েটাকে সান্ত্বনা দিয়ে আসি আবার ভাবলাম থাক।
ইয়ানা অবাক হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অভ্রু মৃদু হেসে চলে গেলো।
ইয়ানা ভ্রু কুঁচকেই রুমে পা বাড়ালো।

জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে মুসকান। দৃষ্টি মেঝেতেই স্থির রয়েছে তাঁর।
একি মুসকান তুমি এখনো এভাবে বসে আছো। ওঠো শাড়ি পালটাতে হবে তো। মুসকান,,,
কাধে হালকা ধাক্কা দিতেই হুশে ফিরলো।
ইয়ানার দিকে এক নজর চেয়ে আবারো মুখ ফিরিয়ে নিলো।
ইশ কেঁদে কি অবস্থা করেছো নিজের। বোকা মেয়ে এভাবে কাঁদছো কেনো,,, যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো তারপর কি হয়েছে শুনবো আমি ওঠো।
মুসকান ইয়ানার দিকে তাকালো।
ইশ কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা করেছো নিজের। এভাবে কেউ কাঁদে বলেই হাত দিয়ে গাল মুছে দিতে লাগলো।
মুসকানের গলার স্বর বেরুচ্ছে না তবুও খুব কষ্টে শুধু একটা কথাই বললো আপু ওনি কোথায়,,,
ইয়ানা প্রশ্ন টা শুনতেই চুপ হয়ে গেলো।
হাঁটু ভাজ করে বসা সে ওঠে দাঁড়িয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।
মুসকান প্রশ্নবিদ্ধ চোখে চেয়ে রইলো।
মুসকানের অসহায় মুখটা দেখে ইয়ানার বড্ড মায়া হলো। তাঁর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কতোটা যন্ত্রণায় ভুগছে কতোটা আহত হয়েছে তাঁর মন।
এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো দাদাভাই রোজ রাতে যা করে তাই করছে ছাদে আছে কেউ ভয়ে সেখানে আর যাই নি আমরা। দাদীও অসুস্থ হয়ে পড়েছে ওষুধ খাওয়িয়ে সায়রী আপু শুইয়িয়ে দিয়েছে।
বিয়েটা না ভাঙলেও হতো দাদাভাই হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেনো নিলো। আজকের দিনেই বা কেনো।
আর তুমিও কিছু বলছো না এভবে কান্নাকাটি করছো। ওদিকে দাদা ভাই নিজের ক্ষতি করছে। এভবে রোজ রোজ নেশা করলে একজন মানুষ কি করে সুস্থ থাকবে। এমন অবস্থায় মানুষ নিজের ক্ষতি করতেও দুবার ভাবে না। জানিনা কি হবে কিচ্ছু জানিনা। এই ভাইটাকে নিয়ে দাদী চিন্তা করতে করতে কতো রোগ যে বাঁধিয়েছে। যাও একটু সুখের মুখ দেখেছিলো সেটাও শেষ হয়ে গেলো।
,
মুসকান ওঠে দাঁড়ালো ডানহাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।
ইয়ানা বললো কোথায় যাচ্ছো,,
মুসকান থেমে গেলো পিছন ঘুরে বললো ওনি তো রাতে কিছু খায় নি,আজ তো ওনার ঘুম হবে না, মাথা টিপে না দিলে ওনি সারারাত ছটফট করবে। আমাকে ওনার প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন বলেই ছুটে বেরিয়ে গেলো।
ইয়ানা অবাক চোখে চেয়ে রইলো। মুসকানের কথা গুলো তে কি যেনো ছিলো যা তাঁকে বুঝিয়ে দিলো এই মেয়েটাকে দাদাভাইয়ের জন্যই উপরওয়ালা এখানে পাঠিয়েছে।
” হোক না একটু দেরী
ক্ষতি কি তাঁতে?
“দুটো হৃদয় এক হবেই আজ হোক কাল হোক ”

এক বোতল শেষ করেই আরেক বোতলে হাত দিতেই মুসকান বোতলটা ছিনিয়ে নিলো।
ইমন ঢুলোঢুলো চোখে তাকালো। মুসকান বোতলটা দুহাতে চেপে দাঁড়িয়ে আছে। ইমন পা থেকে মাথা অবদি চোখ বুলিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো বাঁকা হেসে বললো এখনো পোশাক পালটাও নি,,,
মুসকান ইমনের কথাটা শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো।
বোতলটা নিচে রেখে দুপা এগিয়ে গেলো।
আপনি এখানে কি করছেন চলুন, নিচে চলুন।
খেয়েছেন আপনি?

ইমন অন্যদিক তাকিয়েই বললো নিচে যাও, পোশাক পালটে নাও।

আপনিও চলুন আপনার মাথা ব্যাথা হচ্ছে তাইনা।
আমি টিপে দিবো মাথা আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন চলুন।

ইমনের গলার স্বর কঠিন হয়ে এলো শ্বাস চলছে দ্রুতগতিতে। অন্যদিক চেয়েই বললো চলে যাও এখান থেকে।

মুসকান মুখ টা ভাড় করেই ইমনের সামনে গিয়ে বসলো।
আমি কোথাও যাবো না, গেলে আপনাকে নিয়েই যাবো নয়তো সারারাত এখানেই থাকবো আপনার সাথে। আপনার হাত অন্য কেউ ধরেছে,আপনার বুকে অন্য কেউ মাথা রেখেছে, আমি না হয় সেসব নাই পেলাম আমি শুধু আপনার পাশে থাকতে চাই।
নাই বা হলাম আপনার অর্ধাঙ্গিনী।

ইমনের চোখ দুটো যেনো দ্বিগুন লাল হয়ে এলো।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছে সে কিন্তু এবার রাগটা যেনো কমছেই না। মুসকান সামনে থাকলে এখন হয়তো অস্বাভাবিক কিছু ঘটে যাবে তাই সেখান থেকে ওঠে মদের বোতল টা নিয়ে ওপাশে চলে গেলো।

মুসকানের চোখ বেয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না এই মূহুর্তে তাঁর ঠিক কি করা উচিত।
শুধু তাঁর মন বলছে তুই যেভাবে ছিলি সেভাবেই না হয় থাক। মানুষটার সেবা করার সুযোগ পেলেই হলো। এ বাড়ির কাজের লোক ছাড়া আর কোন দ্বিতীয় পরিচয়ের দরকার নেই।

কাঁচ ভাঙার শব্দে চমকে গেলো মুসকান।
শাড়ি ধরে ছুটে গেলো ছাদের ঐ পাশে।
চিৎকার করে বললো আপনার কি হয়েছে,,,
কাচ গুলো টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে ইমন নিচে হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে আছে।
মুসকান গিয়ে ইমনের মুখে স্পর্শ করতেই ইমন বললো কেনো এলে তুমি,,, কেনো এলে। আমি তো বেশ ভালোই ছিলাম, আমার জীবনটা কেনো এলো মেলো করে দিলে।
মুসকান কেঁপে ওঠলো।
ভয়ে ভয়ে বললো আপনার শরীর খারাপ লাগছে আপনি নিচে চলুন।
ইমন চোখ টেনে মুসকানের দিকে তাকালো।
আমার শরীর খারাপ তুমি ঠিক করতে পারবে,আমার মনের অসুস্থতা তুমি দূর করতে পারবে।
কেনো এসেছো এখানে চলে যাও।

মুসকান এবার জোরেই কেঁদে ফেললো। হাত জোর করে বললো প্লিজ চলুন না আমার সাথে,,,
পায়ে পড়ি আপনার এমন করবেন না। আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না, কোথাও না।
আমি আপনার থেকে দূরে যেতে চাইনা।
আপনার এমন অবস্থা আমি সহ্য করতে পারছিনা।
কেনো বুঝছেন না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার বুকের ভিতর খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার দম বন্ধ লাগছে।
আপনি এমন করবেন না আমার সাথে চলুন না,,,
বলেই অঝড়ে কাঁদতে লাগলো।

এভাবে কাঁদায় ইমন চুপ হয়ে গেলো।
নেশাধরা চোখে চেয়ে রইলো। অদ্ভুত ভাবে হাসলো।
ভাঙা গলায় বললো বোকা মেয়ে,,, কাঁদার কি আছে।

মুসকান কিছু বললো না চোখ মুখ মুছে নিয়ে তাঁকে ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলো।

ইমন হাত দিয়ে বাঁধা দিলো ওয়েট,,, আমি ওঠছি।
ওঠে দাঁড়ালো ইমন মুসকানের দিকে চেয়ে আঙুল দেখিয়ে বললো চলো।মুসকান একটু স্বাভাবিক হয়ে নিয়ে ওঠে দাঁড়ালো।

ইমন দুপা যেতেই পড়ে যেতে নিলো মুসকান ধরে ফেললো, পেটের দিকে দুহাতে ধরে নিলো।
ইমন চোখ টেনে টেনে একবার মুসকানকে দেখে নিয়ে আবার এগুতে লাগলো। মুসকান ইমনকে ধরে ধরে তাঁর রুমে নিয়ে গেলো।

ইমনের এক হাত মুসকানের কাঁধে, ইমন এতোটাই লম্বা তাঁর থেকে যে ভালোভাবে ধরতেই পারছে না। খুব কষ্টে পেটের দিকে ধরে বিছানায় বসাতে নিলেই ইমন শরীর ছেড়ে দিলো যার ফলে মুসকান পড়লো নিচে ইমন উপরে। সাথে সাথে মুসকান ওমা গো বলে কেঁদে ওঠলো।
আজ একটু বেশীই নেশা করে ফেলেছে তাই নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে সে। সে যে কারো উপরে পড়েছে তাও বুঝতে পারছে না।
মুসকান কান্না করে দিয়ে বললো আপনি একটু ওঠুন না। আমার কষ্ট হচ্ছে বলেই হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করলো।
মদের গন্ধে পেট ফুলতে গিয়েও বোধহয় ফুললো না।
মুসকান বহু কষ্টে ইমনের থেকে একটু সরে কান্না করতে করতে বললো একটু ওঠুন আমি চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছি।
ইমন খুব কষ্টে চোখ টেনে তুললো।
ভারী নিঃশ্বাস আসছে তাঁর,,, মাথাটা মুসকানের কাঁধে রেখে বললো চলে যাও আমি এখন ওঠতে পারবো না।
মুসকান ছটফট করতে করতে বললো আপনি বিছনায় শুয়ে পড়ুন আমাকে ওঠতে দিন। দেখুন এই যে তাকান আমি নিচে পড়েছি দেখুন না বলেই কেঁদে ফেললো।
ইমন চোখ বন্ধ রেখেই বিরক্ত হয়ে বললো আমাকে বিরক্ত করো না বলছি না কথা কানে যায় না।

ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। কোন উপায় না পেয়ে দুহাতে ইমনের গাল বেশ জোরে চেপে ধরলো।
আপনি হুশে নেই, একটু তাকান প্লিজ এই দেখুন আমি ওঠতে পারছি না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আপনি এতো ভারী কেনো বলেই কাঁদতে লাগলো।
ইমনের কানে যেনো কেউ ঘন্টা বাজাচ্ছে,,,
কেউ যেনো তাঁর গালে এমন ভাবে চেপে চিৎকার করছে যে তাঁর রাগ হলো ভীষন।
নেশায় থাকলে সব কিছু বেশী বেশী মনে হয় অল্প আওয়াজে বেশী আওয়াজ শোনায়। ইমনেরও ঠিক তাই হলো।
বহু কষ্টে চোখ দুটো খুললো। চোখ খুলতেই মুসকানের মুখটা ভেসে এলো। মুসকান কে অবাক করে দিয়ে ইমন হেসে ফেললো।
মুসকান মুখটা অসহায়ের ভঙ্গিতে রেখে বললো আপনি হাসছেন। পেটটা ব্যাথা হয়ে গেলো আমার ওঠুন না।
ইমন তাঁর কথা শুনেছে কিনা, বুঝেছে কিনা বুঝা গেলো না। সে যে এখন তাঁর জগতে, এক ঘোরে রয়েছে বেশ বুঝলো মুসকান।
ভয়ে তাঁর হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। এক ঢোক গিলে বললো কি করছেন,,,
গলায় ঠোঁটের গভীর স্পর্শে পুরো শরীরে আলাদা এক কম্পন সৃষ্টি হলো। চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। হাতটা ইমনের শক্ত হাতের বাঁধনে রয়েছে। পুরো শরীরটাই আবদ্ধ রয়েছে তাঁর ।

মুগ্ধময়ী তুমি সত্যি আমার কাছে এসেছো,,,
সত্যি এভাবে আমার ভালোবাসা চাইছো,,,
সত্যি কবে আসবে আমার কাছে আমি যে অপেক্ষায় আছি।
মুসকান চমকে ওঠলো। মাথাটা তাঁর ঘুরে এলো।
মুগ্ধময়ী কে??
ওনি যার কথা বলেছিলো সেই।
তাঁর মানে ওনি হুশে নেই,ওনি অন্যকাউকে ভেবে এমন করছে। বুক ফেটে কান্না এলো মুসকানের।
সর্বশক্তি দিয়ে ইমনকে ধাক্কাতে শুরু করলো।
পাগলের মতো ছটফট করছে সে।
ইমন মুসকানের দুহাত বিছানায় চেপে রাগী চোখে তাকালো।
মুখের কাছে মুখ নিয়ে ভয়ংকর কন্ঠে বললো আমার মুগ্ধময়ী এমন ছটফট করে না। আমার মুগ্ধময়ী আমার সাথে এমন বেয়াদবি করার সাহস কখনো দেখায় না। তুই কে এতো রাতে আমার কাছে এসেছিস। এতো বড় সাহস তোর।
বলেই গাল দুটো চেপে ধরলো।
মুসকান ব্যাথায় কান্না করে দিলো।
বুকের ভিতর এক চাপা আর্তনাদ হলো।
” আপনার মুগ্ধময়ী খুব ভাগ্যবান,,, নেশার ঘোরে তাকে ভুলে যাননি। অথচ আমাকে ঠিকি ভুলে গেছেন”।

আপনি আমাকে ছাড়ুন, আমি মুসকান চিনতে পারছেন না আমায় । আমি আপনাকে রুমে দিতে এসেছি শুধু বিশ্বাস করুন।

ইমন চোখ টেনে গভীর ভাবে চেয়ে রইলো।
গাল ছেড়ে বুক ওঠিয়ে মুসকানের দিকে এক নজর চোখ বুলালো।
মুসকান যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তারাতারি ওঠতে নিতেই ইমন মুসকানকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে নিলো।
একহাতে জরিয়ে আরেক হাতে গালে স্পর্শ করলো।
মুসকান ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো।
ইমন দু আঙুলে গালটা চেপে বললো কোথায় যাচ্ছো। আজকে কোথাও যেতে দেবো না।
বলেই বুড়ো আঙুল দিয়ে ঠোঁট স্পর্শ করলো।
মুসকান চমকে ওঠলো। ইমনের হাভভাব তাঁর ভালো ঠেকছে না। কান্না করে দিলো আবারো।
“ওহ আল্লাহ কিসব হচ্ছে। ওনি এমনটা কেন করছে আজ ”
মুসকানের ভাবনায় ছেদ পড়লো ইমনের নাক তাঁর নাকে স্পর্শ হতেই।
ধীরে ধীরে ঠোঁট এগুচ্ছে ইমন।
মুসকান নিজেকে সরাতে চেয়েও পারলো না।
শক্ত করে পিঠ চেপে ধরে আছে ইমন।
মুসকানের চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝড়ছে। এছাড়া তাঁর আর কিছু করার নেই।
শরীরটা অবশ হয়ে এসেছে তাঁর শুধু হালকা নড়লো একবার। ইমন মুসকানকে জরিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লো।
,
সারারাত শক্ত করে জরিয়েই ঘুমিয়েছে ইমন।
সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম আলগা হয়ে এলো। চোখ দুটো বেশ লেগে আছে টেনে চোখ তুলতেই বুঝতে পারলো তাঁর সাথে কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। শাড়িতে হাত লেগে আছে চোখ খুলতেই মুসকানকে দেখে ভড়কে গেলো। মুসকানের গলার কাছে তাঁর মুখ, হাতদিয়ে তাকে নিজের সাথে চেপে ধরে আছে বুঝেই ছেড়ে দিলো।
হাউ দিস পসিবল!
ও এখানে কেনো?
শাড়ি পড়া অবস্থায় এখানে কেনো?
ইমন নিজের দিকে চেয়ে দেখলো পান্জাবি পড়াই আছে কিন্তু বেশ এলো মেলো। মদের গন্ধ পাচ্ছে বেশ।
রাতের সব ঘটনা মনে পড়ে গেলো। কিন্তু মুসকানের এখানে আসাটা মনে করতে পারলো না।
ছাদে ছিলো ও আমি রেগে চলে যাই তারপর,,,

মুসকানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো। ঠোঁট জোরা রক্ত জমাট বেঁধে আছে দেখে বেশ চমকে গেলো,রেগে গেলো ভীষন।
মুসকান বলে এক চিৎকার দিলো।
মুসকান ভয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।

ইমনের রাগি লুক,রাতের ঘটনা সব কিছু মিলিয়েই
ইমনের দিকে চেয়ে ডুঁকড়ে কেঁদে ওঠলো।
যা দেখে ইমনের রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।
দু কাধে শক্ত করে চেপে বললো কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে।
মুসকান আরো জোরে কেঁদে ফেললো।
গলায় চোখ পড়তেই গোল হওয়া জখম দাগটা স্পষ্ট দেখতে পেলো।
মুসকানকে ছেড়ে মাথার চুল খামচে ধরলো।
ওহ গড এসব কি,,,
বলেই আবারো মুসকানের কাঁধ চেপে ধরলো।
মুসকান টেল মি,,, কি হয়েছে বলো আমাকে।
মুসকান কেঁদেই যাচ্ছে।
ইমন রাগটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না।
চিৎকার করে বললো আমি বলছিতো কি হয়েছে বলো আমায়, কেনো কথা শুনলে না বার বার বলেছিলাম চলে যাও, চলে যাও। কেনো শুনলে না।
বলেই মুসকানকে নিজের কাছে নিয়ে নিলো।
দুগালে ধরে শান্ত গলায় বললো মুসকান তুমি ভয় পেয়েছো,,,কি হয়েছে আমাকে বলো। আমি কি করেছি? কোন ভয় নেই চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে কানে গুজে কপালে চুমু খেয়ে বললো কি হয়েছে বলো আমায়।

মুসকান এবার একটু শান্ত হলো। কন্নাটা খানিক কমেছে তাঁর । ভয়ে ভয়ে সবটা বললো।

সব শুনে ইমন স্বস্থির এক শ্বাস ছেড়ে মুসকানকে ছেড়ে দিলো।

মুসকান একটু পিছিয়ে গেলো।
ইমন বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো।
রুমে গিয়ে পোশাক পাল্টে নাও মুসকান।
মুসকান বিছানা ছেড়ে ওঠলো।
ভয়ে ভয়ে ইমনের দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বললো।
কাল যার কথা বলছিলেন তাঁর নাম কি” মুগ্ধময়ী”
ইমন হকচকিয়ে গেলো। মুসকানের মুখের দিকে তাকালো। মুসকান ইমনকে এক নজর দেখেই ছুটে বেরিয়ে গেলো।
ইমন অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। তয়ালেটা নিয়ে বাথরুম ঢুকতে গিয়েও পিছন ঘুরলো মুসকানের প্রশ্নটা কানে বাজতে লাগলো। বুকের ভিতর কেমন ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো বাঁকা হেসে বললো নিজেকে নিজেই চিনতে পারছো না। বোকা মেয়ে ভেবেই বাথরুমে ঢুকে গেলো।
,
দাদী সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুসকান কে অতীতে ঘটে যাওয়া সব সত্যি আজ জানাবে। ইমন কখন বেরিয়ে যায় সেই অপেক্ষায় আছে সে। মুসকান কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। ইয়ানা বললো তোমার এখানে কি হয়েছে।
মুসকান ইয়ানার দিকে তাকালো ইয়ানার ইশারা তাঁর ঠোঁটের দিকে। মুসকান ভয়ে ভয়ে বললো একটু লেগেছে আর কি। ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো।
মুসকান বললো আমি নিচে যাই কেমন বলেই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রুম থেকে বেরুতেই দেখতে পেলো ইমব হনহন করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে ফুল ড্রেসআপ পড়া।
মুসকান দ্রুত নিচে নেমে এলো ইমন তখন দরজার বাইরে এক পা দিয়েছে।
আপনি খেয়ে যাবেন না,,,
ইমন পিছন ঘুরে ব্যাস্ত গলায় বললো কাজ আছে আমার।
বুক ফেটে কান্না এলো দুফোটা পানিও গড়িয়ে পড়লো। প্রতিদিনের নিয়ম একদিনেই কেমন পাল্টে গেলো। কষ্ট হচ্ছে, ভীষন কষ্ট হচ্ছে আমার সহ্য করতে পারছিনা আমি।

দাদীর ডাকে পিছন ঘুরলো মুসকান।
,
২৮বছর আগের কথা ইমন তখন দু বছরের।
ইমনের একবছর বয়স থেকেই ইরিনা কেমন পাল্টে যায়। অস্বাভাবিক আচরন করে ইমনকে নিজের কাছে রাখতো না। আমার কাছে দিয়ে সারাদিন নিজের মতো থাকতো। কখনো এমন হয়েছে যে আমার কাছে রেখে বেরিয়েছে রাত আটটা, নয়টা পার হয়ে গেছে তবুও আসেনি। ছোট ছেলেটা মাকে খুজতো সারাদিন মায়ের বুকের দুধ টুকুও পেতো না। ফিটার খাওয়াতে হতো। একরামুল তখন দেশের বাইরে।
ততোদিনেও সব ঠিক ছিলো। বাড়িতে এতো কাজের লোক ছিলো আমার মেয়েরা ছিলো। তোর দাদা মশাই ছিলো এক ইমনকে আমরা সবাই সামলে নিতাম। কিন্তু মায়ের অভাব তো পূরন করতে পারতাম না।
কিন্তু ঝড় শুরু হলো যখন একরামুল দেশে ফিরে এলো।
অশান্তির সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেলো ছেলেটা সেই সাথে আমরা সকলেই। তবুও একরামুল মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। ইরিনা কে বোঝাতে লাগলো। যাতে বাচ্চাটার কথা একবার ভাবে। কিন্তু না তাঁর সংসারে মন ছিলো না আর না ছিলো স্বামী, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা।
সেদিন একরামুলের সাথে ঝগরা করেই বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
ইরিনার বাবার কাছে ফোন করে জানতে পারলাম সে তাঁর ওখানে গিয়েছে। বেশ ভালো কথা। একরামুল কে বোঝালাম যেনো কিছুদিন পর গিয়ে নিয়ে আসে।
মন মেজাজ ঠিক হোক একরামুল ও তাই করলো পনেরো দিন পর সে গেলো ইরিনার বাবার বাসায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারলো ইরিনা নাকি ইমনকে রেখে দুদিন যাবৎ তাঁর বান্ধবীর বাসায় রয়েছে।
ছেলেটা কেঁদে কেঁদে অস্থির ঠিকভাবে দুদিন খওয়া পড়েনি চোখ, মুখ শুকিয়ে গেছে কপালের নীল রগ টা ভেসে ওঠেছে। যা দেখে বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে ওঠলো। একরামুলের চোখে পানি এসে পড়লো ছেলের মুখ দেখে। আর এক মূহুর্ত সেখানে দেরী না করে ইমনকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। বাড়ি এসে ইমনকে আমার কাছে দিয়ে পাগলের মতো বেরিয়ে পড়লো ছেলেটা।
কেউ একজন ফোন করে একটা ঠিকানা দেয় সে অনুযায়ী একরামুল সেখানে গিয়ে পৌঁছায়।
সেখানে গিয়ে এমন কিছু শুনতে পায় যা ওর ভাবার বাইরে ছিলো পাঁচ বছরের ভালোবাসার সম্পর্কের পর বিয়ে, বিয়ের বয়স তিনবছর, বাচ্চার বয়স দুই বছর।এতগুলো বছর একসাথে থাকার পর সে জানতে পারে যে মানুষ টার সাথে ছিলো সে পরকীয়ায় লিপ্ত। শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য স্বামী, সন্তান সব ছেড়ে হোটেল ভাড়া করে থাকছে এক ভিন্ন পুরুষের সাথে।

এতো বছরের সম্পর্কে থাকার পর ও মানুষ চিনতে এতো বড় ভুল কি করে করতে পারি আমি বলেই দরজায় কয়েকটা লাথি দিতেই দরজা খুলে যায়।
সাথে সাথে কিছু নোংরা চিএ ভেসে আসে চোখে।
ঐ দুজনের চোখে, মুখে ভয়ের ছাপ। নিজেদের নগ্ন শরীর ঢাকার প্রানপন চেষ্টা। যা দেখে একরামুল এক চিৎকার দিয়ে ইরিনার চুলের মুঠী ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে মারতে শুরু করে।
একরামুলের বাকি লোকেরা ঐ ভিন্ন পুরুষকে মারধর করে। সব শেষে ডিভোর্স পেপার রেডি করে ঐদিনেই ঐ লোকটার সাথে ইরিনার বিয়ে দেয়।
চুলের মুঠী ধরে সকলের সম্মুখে বলে বাজারি মেয়ে তোর হওয়ার শখ থাকলেও তুই হতে পারবি না ।
তোর ভাগ্য ভালো তুই একরামুল চৌধুরীর সন্তান জন্ম দিয়েছিস নয়তো তোর সাথে কি ঘটতো তুই কল্পনাও করতে পারতিস না। আর শোন যে পুরুষের স্বাদ পাওয়ার জন্য তুই আমার ছেলে কে ত্যাগ করতে দ্বিধা করিসনি ঐ পুরুষ ছাড়া কোনদিন তোকে দেখলে সেদিনই দুনিয়াতে তোর শেষ দিন হবে।

ধীরে ধীরে মা ছাড়া বেড়ে ওঠছিলো ইমন।
যখন কিছুটা বোঝে স্কুলে ভর্তি করানো হয় তখন থেকেই ছেলেটা কেমন গুম ধরে থাকতো।
এতটুকু বাচ্চা ছেলের এমন নিশ্চুপ স্বভাব আমরা কেউ স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারতাম না।
আমার বড় মেয়ে নদী কলেজ থেকে ফেরার সময় একদিন দেখতে পায় ইমন হেঁটে আসছে। কাঁধে স্কুল ব্যাগ পাশে ওর বয়সী কয়েকটা ছেলে। তাঁদের মায়ের সাথে ওরই পাশে হাঁটছে।ইমন সেদিকে চেয়ে চেয়ে হেঁটে যাচ্ছে ।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here