#হীরকচূর্ণ_ভালোবাসা
#পর্ব২৫ (বোনাস পার্ট)
#রাউফুন
শাড়ী পরে হয়ে নিচে নামলো তুলিকা। এখন সবার সামনে যেতেও কেমন যেনো লজ্জা লাগছে তার। আশফি নিশ্চিত তাকে লেকপুল করবে। যেমন সে করেছিলো তার বাসর রাতের পরেরদিন। এই সুযোগ নিশ্চয়ই কাজে লাগাবে ওই শা’ক’চুন্নীটা। আশফি তুলিকাকে দেখেই ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। তাকে রান্ন ঘরে টেনে নিয়ে বললো, ‘ভাবি দেখেছো কতো লজ্জা পাচ্ছে তুলিকা? এই তোর কান লাল কেন? মনে হচ্ছে—!’
তুলিকা কনুই দিয়ে গু’তো দিলো আশফিকে। কটমট করে তাকাতেই আশফি নিভে যাওয়া গলায় বলে, ‘বারে তুই যখন আমাকে জ্বালিয়েছিস তখন?’
‘তাই বলে তুই রিভেঞ্জ নিবি শাক’চুন্নী কোথাকার।’
‘পাই টু পাই হিসেব রেখেছি। ওই তো মাইজিন ভাই এসেছে। কি মাইজিন ভাই আমার বান্ধবীর চুল ভেজা কেন?’
‘তোমার বান্ধবীর চুল ভেজা কেন আমি কেমনে জানবো ছোট ভাবি!’
‘কি দেবরজি রান্না ঘরে কি? বউকে চোখে হারাচ্ছো নাকি বলো, বলো?’ বললো নীতি।
আশফি বললো, ‘সেকি গো তুমি কি আমার বান্ধবীকে***!’
‘ছোট ভাবি পেছনে লাগো কেন?’ ফোস ফোস করে উঠলো মাইজিন। সে এক লহমায় চটে যাওয়ার নাটক করে কে’টে পরলো।
পাশ থেকে নীতি অপ্রসন্ন সুরে বললো, ‘সবই বুঝলাম! কিন্তু মাইজিন চটে গেল কেন?’
‘কি আর হবে ভাবি? আমার বান্ধবী ঠিক সামলে নেবে আমাদের মাইজিন ভাইকে।’ বলেই হো হো করে হেসে উঠলো আশফি। এদিকে লজ্জায় মাথা কা’টা যাচ্ছে তুলিকার। সে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে শুধু। ভাগ্যিস এখানে সাইমুম ভাইয়া আর নীরব ভাইয়া নেই। কি যে হতো এখানে থাকলে।
মিষ্টি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। তার মন-মেজাজ সকাল সকাল তুঙ্গে উঠে গেছে। সে গুমরা মুখে সোফায় বসলো। সকাল সকাল নাফিসের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। লু’চ্চা লোক চোখ যেনো আকাশে রেখে হাঁটে। মনে মনে হাজার টা গা’লি দিয়েও ক্ষান্ত হতে পারছে না সে। নাফিস সে-সময় আবারও তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সব সময় অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে ব’দ লোক। স্কুলে আসার সময় পিছু পিছু আসে। আবার সুযোগ পেলেই এটা সেটা বলে। ওসব কথা বার্তা তার ভালো লাগে না। সে কারোর সঙ্গে কোনো কথা না বলে টিভি ছেড়ে কার্টুন দেখাই মনোযোগ দিলো। সবাই মিষ্টির মন খারাপ টা লক্ষ্য করেছে। হুট করেই নাফিস এসে তার পাশে বসে। মিষ্টি তাকে দেখে খেয়ে ফেলবে সেভাবে তাকালো তার দিকে। নাফিস দমে যায় ওমন ভয়ংকর রকমের চাহনীতে। সে শুকনো ঢুক গিলে বলে,
‘ওই বাচ্চা মরিচ ওইভাবে তাকাও কেন?’
‘খবরদার আরেকবার বাচ্চা মরিচ বলেছেন তো!’
‘তো তুমি তো বাচ্চায়!’
‘আপনি এখানে বসলেন কোন সাহসে? এমন ছোক ছোক ব্যাপার স্যাপার কেন আপনার মধ্যে শুনি?’
‘নাউযুবিল্লাহ! তওবা তওবা। আমার মতো ইনোসেন্ট একটা পোলারে ছোক ছোক পোলা বানাই দিলা? এই বাচ্চা মরিচ এমন ঝাল ভাবে কথা না বলে একটু ভালো ভাবেও তো কথা বলা যায়!’
‘আপনার মতলব ভালো না তাই ভালো কথা আসে না। আপনাকে দেখলেই আমার অসহ্য লাগে। ভালো কথা লুকিয়ে এইভাবেই কথা বেরিয়ে আসে সুরসুরী দিয়ে। আমার ভেতরে আ’গু’ন লাগে আপনার কথা শুনলে।’
‘আল্লাহ কেন যে এই মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।এখন তার ফল ভুগছি!’
‘এই কি বললেন?’ মিষ্টি ক্ষুব্ধ হয়ে কটমট করে তাকাই নাফিসের দিকে। নাফিস ঝট করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। এই বুঝি এই মেয়ে গায়ে হাত তুলে।
‘এখন আমি কি করবো বলো? আমার যদি তোমাকে ভালো লাগে আমার তো কিছু করার নেই! তাই আই লাভ ইউ!’
মিষ্টি ফট করে সোফায় উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। কিছুটা ছুটে গিয়ে নাফিসের গলা টি’পে ধরলো। নাফিসের চোখ মুখ উলটে আসছে ওইভাবে মিষ্টির গলা টি’পে ধরাই। এসব কিছু আবার চুপচাপ অবলোকন করছিলো নীতি, আশফি, তুলিকা। ঘটনা কতদুর যায় দেখার জন্য। কিছু কিছু কথা কানে এলেও লাস্ট কথা গুলো শুনতে পাইনি কেউ-ই। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা ছুটে এসে মিষ্টিকে ছাড়িয়ে নিলো। নাফিসের চেঁচানোতে সবাই এসে হাজির। সাইমুম, নীরব, মাইজিন তারাও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। নীতি জলদি পানি এনে নাফিসের দিকে বারিয়ে দিলো। মিষ্টি এখনো ফোসফাস করছে। নাক ফুলিয়ে তেড়ে আসতে চাইছে নাফিসের দিকে। তুলিকা আর আশফি তার দুই হাত ধরে তাকে আটকে ধরে রেখেছে।
‘আরে নাফিস তুই মিষ্টিকে কি বলেছিস? এভাবে ক্ষেপলো কেন মিষ্টি?’
‘আপনার বন্ধু একটা ব’জ্জা’ত লোক মাইজিন ভাই। তার চরিত্রের দোষ আছে।’ জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বললো মিষ্টি।
হা করে তাকিয়ে থাকে সবাই নাফিসের দিকে। নাফিস খুক খুক করে কেশে কাচুমাচু করছে। কোনো রকমে বলে, ‘আমি তো কিছুই করিনি!’
‘তাহলে মিষ্টি ওইভাবে হামলা কেন করলো?’
‘ হ্যাঁ গো নাফিস তোমাকে দেখে তো মনে হয় না তুমি এমন মানুষ!’
‘বিশ্বাস করেন নীতি ভাবি আমি কিছুই করিনি!’
‘নাফিস ভাই মিষ্টিকে দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি তাকে এমন কিছু করেছেন বা বলেছেন যার দরুন সে এমন রে’গে গেছে!’ বললো আশফি।
‘আমি কিছুই করিনি তুলিকা ভাবি আমাকে বিশ্বাস করুন!’
‘এই বুবুজান ওই লোক মিথ্যা বলছে! নজর সহ চরিত্রও খারাপ এই লোকের! হাড়ে হাড়ে বদ’মাই’শি!’
সবাই অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে নাফিসের দিকে। মাইজিন এবার সিরিয়াস হলো। এতো বছর নাফিসের সঙ্গে তার সম্পর্ক। কই কোনো দিন তো কোনো মেয়ের কাছ ঘেঁষতে দেখেনি নাফিসকে। বরং মেয়েরাই তার সঙ্গে চিপকানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু নাফিস সে-সব মেয়েদের দিকে ভালো ভাবে তাকিয়েও দেখেনি। তার বন্ধুর যে নজর খারাপ না সেটা সে মানে এবং বিশ্বাস করে। তবে আজ কি হলো? তবে মিষ্টিই বা কেন মিথ্যা বলবে? বাচ্চা একটা মেয়ে হঠাৎ ওমন করার তো কোনো কারণ নেই। তাছাড়া মিষ্টির মতো শান্তশিষ্ট মেয়ে এমন আগুনের ফুল্কির মতো ফুসে উঠার তো কথা না কারণ ছাড়া। সে গম্ভীর মুখে বললো, ‘নাফিস তুই আমার বন্ধু। অনেক দিন থেকে তোকে চিনি, জানি। সত্যি করে বল তো মিষ্টি হঠাৎই এমন আক্রমনাত্মক কেন হলো?’
‘মাইজিন আপনি নাফিস ভাইয়াকে কিছু বলবেন না। আমি মানুষ চিনি! উনার চোখে আমি কখনোই ওরকম নোং’রা দৃষ্টি দেখিনি। আমি একটা মেয়ে কোন ছেলের চাহনী কেমন সেটা খুব ভালো ভাবে জানি। আমার মনে হয় কোনো ভুল হচ্ছে! এই মিষ্টি মিথ্যা বলছিস তুই?’
‘বুবুজান তুমি জানো আমি মিথ্যা বলিনা। তুমি জানো না ওই লোক আমাকে একটু আগে কি বলেছে!’
‘কি বলেছে?’ সবাই এক সাথে জিজ্ঞেস করলো।
‘বলে কি আই লাভ ইউ!’
নাফিস ইশারায় মানা করা সত্ত্বেও মিষ্টি বলে দিলো। যা ভয় পাচ্ছিলো তাই হলো। বেফাঁস কথাটা বলেই দিলো ওই বাচ্চা মরিচ। নাফিস নিজেই নিজেকে বলে, “নাফিস রে তুই ফেসে গেছিস!”
সবাই নাফিসের দিকে তাকিয়ে এক সাথে আশ্চর্য হয়ে বলে, ‘কিহ!’
‘আমি বলতে চাইছিলাম না কিন্তু স্কুলে থেকে আসার সময় ওই লোক আমার পিছনে পিছনে আসে। আর এই একটু আগে বলে আমার তোমাকে ভালো লাগে। আই লাভ ইউ!’
‘শেষে তোমার এমন অধঃপতন!’ আবারও সবাই এক সাথে বলে উঠলো!
নাফিস সোফায় বসে পরলো। সবাই তাকে ঘিরে ধরে গোল হয়ে। নাফিস সবাইকে দেখে বলে,
‘আমি কি করবো আমার যদি একটা বাচ্চা মরিচকে ভালো লাগে!’
‘ওওওও বাচ্চা মরিচ!’ সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো। যেই সেই হাসি না পেট ফাঁটা হাসি যাকে বলে। এদিকে তাদের এমন অবস্থা দেখে মিষ্টি রাগে ক্ষোভে গর্জে উঠে। তার চেচানোতে সবাই চুপসে গিয়ে সটকে পরে।
নিকষ কালো আকাশের একপ্রান্তে মেঘের আড়াল থেকে বারবার উঁকি দিচ্ছে এক ফালি চাঁদ। ক্ষণে ক্ষণে ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। রাত বাড়তেই তুলিকা আস্তে আস্তে নিবিড় পায়ে এগিয়ে গেলো রুমের দিকে। বাবু নিশ্চিত রে’গে ব’ম্ব হয়ে আছে। সারাদিন সে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছে। ভুল করেও আর সামনে পরেনি তুলিকা। কি যে হবে সেটা ভেবেই হাত পা ঠান্ডা আসছে তার।
সে গিয়ে দেখলো মাইজিন শুয়ে আছে। আজকে কেনো যে যেতে দিলো না আশফি তাকে। মাইজিন ঘুমিয়ে গেছে ভেবে বিড়াল পায়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো। তম্বন্ধে মাইজিন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। তার গলায় মুখ ডুবিয়ে বললো,
‘এতো দিন তো অনেক দূরে দূরে থেকেছো আমার থেকে। এখন কেন পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছিলে সারাদিন? এখন শাস্তি ডাবল করা হলো!’
‘কি শ-শা-স্তি?’
‘তুমি যেটা ভাবছেন সেই শাস্তি!’
‘নাহ! আজ না!’
‘ উঁহু বারণ তো শুনবো না। আরও আমার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেরাবে?’
সটান হয়ে শুয়ে থাকে তুলিকা। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রাখে। মাইজিন আরও কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়ে বললো, ‘শাস্তির ব্যবস্থা করি তবে মিসেস সুলতান?’
তুলিকা মাইজিনের হাত সরানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু মাইজিন খুব শক্ত করে ধরেছে যার দরুন এক ফোটাও নড়াতে পারলো না মাইজিনের হাত।
‘আমার হাত সরানোর চেষ্টা করে নিজের যেটুকু শক্তি আছে সেটাও খোয়া গেলো তাই না?’
‘আজকে আমাকে এমন জ্বালাতন করছেন কেন মাইজিন?’
‘শিহ! যা হচ্ছে মেনে নাও।একটা করে কথা বলবা আর শাস্তি বাড়বে!’
#চলবে