হারানো_সুর-৮ম পর্ব ©শাহরিয়ার

0
5797

#হারানো_সুর-৮ম পর্ব
©শাহরিয়ার

— সময় নষ্ট না করে প্রেমা দ্রুত পায়ে কিচেনে চলে আসলো। চুলা জ্বালিয়ে দিলো চায়ের পানি বসিয়ে দিলো চুলোতে। গ্যাসের চুলায় খুব বেশী সময় লাগে না চা হতে তবুও প্রেমা ভালো করেই বুঝতে পারলো এতো সময়ে হৃদয়ের গোসল শেষ হয়ে গিয়েছে। ভাবতে ভাবতে চায়ের মগটা নিয়ে রুমে চলে আসতেই, ওয়াশ রুমের দরজা খুলে বের হলো হৃদয়। হৃদয়কে ওয়াশ রুম থেকে বের হতে দেখে একটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো প্রিয়া। হৃদয় তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে কাছে আসতেই চায়ের মগ এগিয়ে দিলো প্রিয়া। চায়ের মগ হাতে নিয়ে ব্যালকনির দিকে হাঁটা শুরু করলো হৃদয়। প্রেমাও হৃদয়ের পিছু পিছু হেঁটে যেয়ে দাঁড়ালো। হৃদয় ধোয়া উঠা চায়ের মগ চুমুক দিয়ে প্রেমার দিকে তাকালো।

হৃদয়:- মা উঠেনি এখনো?

প্রেমা:- মনে হয় এখনো উঠেনি কেন কিছু বলবেন? আমি যেয়ে ডাক দিবো?

হৃদয়:- আরে না এমনি তোমাকে জিজ্ঞাসা করলাম। চা খুব ভালো হয়েছে,

প্রেমা:- হুম,

হৃদয়:- হুম কি তুমি কি খেয়ে দেখেছো?

প্রেমা:- না তবে আমি বানিয়েছি যেহেতু সেহেতু আমি জানি।

হৃদয়:- আর কি জানো তুমি? আচ্ছা বলতো এখন আমার মন কি চাচ্ছে?

প্রেমা:- আমি কি করে জানবো আমি কি আপনার মনের ভিতর ঢুকেছি নাকি?

— প্রেমার ভেজা চুল দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পরছে,
হৃদয় অনেকটা সময় অপলক চেয়ে থেকে হঠাৎ করেই, হৃদয় প্রেমার চুলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই প্রেমা চোখ বন্ধ করে নিলো। হৃদয় প্রেমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো তোমাকে দারুণ লাগছে, প্রেমা চোখ খুলে তাকানোর আগেই হৃদয়ের একটা হাতে শক্ত করে প্রেমার কোমড় চেঁপে ধরলো।

প্রেমা:- লাজুক চোখে তাকিয়ে কি করছেন?

হৃদয়:- রাতের রেশটা এখনো রয়েছে গেছে।

— বলেই প্রেমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পাজা কোলে তুলে নিয়ে রুমের ভিতর ঢুকে পরলো। ভেজা চুলে হৃদয়ের মুখ ঢেকে গেলো। হৃদয় হেঁটে সোজা প্রেমাকে নিয়ে খাটের উপর শুয়িয়ে দিলো। অপলক প্রেমা চেয়ে রইলো হৃদয়ের দিকে। হৃদয়ের ঠোঁট নেমে আসলো প্রেমার ঠোঁটের উপর। এমন সময় ঘরের দরজায় থাপ্পরের আওয়াজে হৃদয় উঠে দাঁড়ালো। প্রেমা শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে যেয়ে দরজা খুলতেই মিহি ঘরের ভিতর ঢুকে পরলো। ছুটে যেয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।

হৃদয়:- আমার মামুনির আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো।

মিহি:- হুম বাবা আজতো আমি মামুনির সাথে নানু বাড়ি যাবো তাইতো উঠে পরেছি, মামুনি আমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবে। বলেই প্রেমার দিকে তাকালো মিহি।

— প্রেমা হাত বাড়িয়ে দিতেই মিহি বাবাকে ছেড়ে প্রেমার কোলে চলে আসলো। প্রেমা মিহির কপালে আলতো করে চুমু এটে দিয়ে। আমার মামুনিকে একদম প্রিন্সেস বানিয়ে সঙে করে নিয়ে যাবো। মিহি প্রেমার কথায় খুশি হয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

হৃদয়:- ঠিক আছে এখন ফ্রেস হয়ে নাও। সকলে নাস্তা করবো একসাথে।

— মিহি বাবার কথা শুনে প্রেমার কোল থেকে নেমে সোজা ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো। হৃদয় প্রেমার দিকে তাকিয়ে হেসে রুম থেকে বের হয়ে পরলো। কিছুক্ষণের ভিতর মিহি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলে। প্রেমা মিহিকে নিয়ে ডাইনিং এ চলে আসে। কিন্তু ডাইনিং এ এসে মিহি হৃদয়কে দেখতে পেলো না। হঠাৎ এই সকাল সকাল কোথায় গেলো বুঝতে পারলো না। একে একে সকলে ডাইনিং এ চলে আসলো। প্রেমা সবাইকে নাস্তা দিয়ে মিহির মুখে তুলে নাস্তা খায়িয়ে দিতে থাকলো। সেই সাথে সবার সাথে টুকটাক কথা বলছে। এমন সময় প্রেমার বাবা প্রেমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো হৃদয় কোথায়?

প্রেমা:- সম্ভবত বাহিরে গেছে আমাকেও কিছু বলে বের হয়নি।

বাবা:- আমরা বের হবো ও জানতে না?

প্রেমা:- জানবে না কেন বাবা, হয়তো কোন প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে এখুনি চলে আসবে।

— টুকটাক কথা বলতে বলতে হৃদয় বাড়িতে চলে আসলো। ফ্রেস হয়ে সবার সাথে নাস্তা খেতে বসলো। প্রেমার বাবা বললো নাস্তা খেয়েই বের হয়ে যাবে হৃদয়কেও সাথে যাবার জন্য। হৃদয় বললো দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে যাবার জন্য। বাবা জানালো না তাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে। এভাবেই কথায় কথায় নাস্তার পর্ব শেষ হলে হৃদয় প্রেমা আর মিহি রুমে চলে আসে। প্রেমা মিহিকে রেডি করছে, হৃদয় প্রেমার দিকে অপলক চেয়ে আছে, প্রেমা তা বুঝতে পেরেও না বুঝার মত করে মিহিকে রেডি করে চলছে। মিহি রেডি হয়ে গেলে হৃদয় মিহিকে বললো এখন তুমি যেয়ে দাদুর সাথে গল্প করো মামুনি রেডি হলেই তোমাকে নিয়ে রওনা হবে। মিহি দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। হৃদয় প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো শাড়ি পরে যাবার জন্য।

প্রেমা:- করুণ দৃষ্টিতে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে এতো ভারী শাড়ি পরে কি করে যাবো এতো দূরের রাস্তা? আর তাছাড়া আপনিতো জানেন আমি ভালো শাড়ি পরতে পারি না।

হৃদয়:- ড্রয়ার খুলে নতুন একটা নীল রঙের শাড়ি বের করে দিয়ে এটা পরো। বলেই প্রেমার দিকে শাড়িটা বাড়িয়ে দিলো।

–প্রেমা শাড়িটা হাতে নিয়ে কিন্তু পরবো কি করে?

হৃদয়:- হাসতে হাসতে শিখে নিতে হবে বুঝছো, শাড়িতে বাঙালি নারী বলে একটা কথা আছে তা কি তুমি কখনো শুননি?

প্রেমা:- মাথা নিচু করে হুম কিন্তু শিখতেতো সময় লাগবে তাই না বলেন?

হৃদয়:- আচ্ছা বাকি যা যা আছে পরে নাও শাড়ি পরতে আমি সাহায্য করছি।

— হৃদয়ের কথা মত শাড়িটা হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো। কয়েক মিনিট পর পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে তার উপর শাড়িটা পেঁচিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলো। আবির তখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলো। প্রেমা ঘরের ভিতর থেকে ডাক দিয়ে বললো একটু আসবেন তাড়াতাড়ি। হৃদয় সিগারেটটা ফেলে রুমের ভিতর ঢুকলো। প্রেমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। প্রেমা লজ্জা পেয়ে বললো অমন কইরা কি দেখতাছেন?

— হৃদয় প্রেমার সামনে থেকে পেছন দিকে যেয়ে পুরো শাড়িটা হাতে তুলে নিতেই প্রেমা হৃদয়ে দিকে ঘুরে তাকালো। দু’জনের চোখাচোখিতে চোখ নামিয়ে নিলো প্রেমা। হৃদয় হাঁটু গেড়ে বসলো প্রেমাে সামনে। আস্তে আস্তে প্রেমাকে শাড়ি পরিয়ে দিতে শুরু করলো। হৃদয়ের স্পর্শে প্রেমা যে শক্তিহীন হয়ে পরছিলো। চোখ দু’টো যেন কোন ভাবেই খুলে রাখতে পারছিলো না। নিজের কাছেই ভীষণ লজ্জা লাগছিলো। চোখ বন্ধ অবস্থায় কখন যে শাড়ি পরানো হয়ে গেছে প্রেমা তা খেয়াল করেনি। হৃদয় উঠে দাঁড়িয়ে প্রেমার কাঁধে হাত রাখতেই প্রেমা চমকে চোখ মেলে তাকালো।

হৃদয়:- আয়না যেয়ে দেখো সব ঠিক আছে কিনা?

–প্রেমা লাজুক মুখে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই হৃদয় বিছানায় শুয়ে বললো ড্রয়ার খুলে দেখ কি কি আছে, ওগুলো এখন তোমার লাগবে। প্রেমা অবাক হয়ে ড্রয়ার খুলতেই অনেক গুলো নীল রঙের কাঁচের চুড়ি, একটা টিপের পাতা আর একটা কাজল বের হয়ে আসলো। প্রেমা খুশি হয়ে গেলো। কাজলটা নিয়ে চোখে লাগিয়ে নিলো গাঢ় করে, কপালের মাঝ বরাবর একটা টিপ পরে নিলো। কিন্তু চুড়ি গুলো একা এক পরতে ভীষণ ভয় লাগছিলো প্রেমার। তাই বিছানায় বসে থাকা হৃদয়ের কাছে চুড়ি গুলো নিয়ে যেয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো আপনি পরিয়ে দিন। আমার ভয় লাগে।

— হৃদয় মুচকি হেসে হাতে চুড়ি গুলো নিয়ে পরিয়ে দিতে শুরু করলো। চুড়ি গুলো পরানো শেষ হতেই হৃদয় বলে উঠলো মেয়েদের নরম হওয়া ঠিক আছে কিন্তু এতো ভিতু হলে চলে না।

–প্রেমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে দু’হাতের চুড়ি গুলো ঝনঝন শব্দ করতে করতে আরেক বার যেয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে আজ অন্যরকম লাগছে একদম অন্য রকম ঠিক যেন নীল পরী। যখন প্রেমা এসব ভাবছিলো ঠিক তখনি হৃদয় পেছন থেকে বলে উঠলো সব কিছুই ঠিক আছে কিন্তু কি যেন কমকম লাগছে একটা।

প্রেমা:- অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো কি?

হৃদয়:- নিজের পকেটে হাত দিয়ে বেলী ফুলের মালাটা বের করে প্রেমার খোঁপায় পরিয়ে দিয়ে এখন ঠিক আছে।

— প্রেমা আরেক বার অবাক হয়ে নিজেকে দেখলো আয়নাতে। নিজেকে নিজেই বললেো ফুলটা খোঁপায় বেশ মানিয়েছে। হৃদয়ের দিকে তাকাতেই হৃদয় মৃদু হেসে দিলো। প্রেমা ব্যাগ গুছিয়ে হৃদয়ের সাথে নিচে নেমে আসলো। প্রেমাকে দেখে মিহি দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। সবাই মিলে বেশ কিছুটা সময় গল্প করলো। প্রেমা হৃদয়কে বললো, আপনার অফিসে যাবার সব কিছু আমি গুছিয়ে রেখেছি। যাতে আপনার কোন কষ্ট না হয়। হৃদয় হুম বলে সম্মতি দিলো। প্রেমার বাবা সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো। প্রেমা হৃদয়ের দিকে চেয়ে রইলো।

হৃদয়:- সাবধানে যেও। যে কোন দরকারে ফোন দিও।

প্রেমা:- হ্যাঁ আপনারও কোন কিছু দরকার হলে ফোন দিয়েন।

— প্রেমা মিহির হাত ধরে তার বাবার সাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো। পিছু পিছু হৃদয়ও হেঁটে আসলো। গাড়িতে উঠে হৃদয়ের দিকে তাকাতেই হৃদয় হাত নেড়ে বিদায় জানালো। প্রেমার চোখের কোনে জল জমে আসলো তা লুকানোর জন্য সে গাড়ির সামনের দিকে তাকালো। গাড়ি চলতে শুরু করলো প্রেমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here