#হারানো_সুর-১৬তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— হৃদয় প্রেমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমিও চাই সারা জীবন এমনি করে তোমাকে বুকের মাঝে রেখে আনন্দে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে।
প্রেমা:- চলেন ঘুমাবেন, আজ এমনিতে অনেক জার্নি হয়েছে।
হৃদয়:- হুম যাবো তবে
প্রেমা:- তবে কি?
— হৃদয় প্রেমাকে কোলে তুলে নিয়ে, তবে এভাবে যাবো।
প্রেমা:- আস্তে মিহি ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারে।
হৃদয়:- কাল সকালের আগে আর ও উঠবে না।
প্রেমা:- হয়েছে নামিয়ে দেন তো, এতো ভালোবাসা রাখবো কোথায়?
— হৃদয় প্রেমাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে মিহিকে কোলে নিয়ে এক সাইড করে দিয়ে নিজেও শুয়ে পরলো। দু’জন খুব আস্তে আস্তে গল্প করতে শুরু করলো। যাতে মিহির ঘুমে কোন ডিস্ট্রার্ব না হয়। এক সময় দু’জনেরর ক্লান্ত চোখ আর চেয়ে থাকতে পারলো না। ঘুমিয়ে পরলো দু’জনেই।
— সকাল সকাল রিমির ডাকে প্রেমা ঘুম থেকে জেগে উঠলো। চোখ ঢলতে ঢলতে যেয়ে দরজা খুলতেই রিমি বলে উঠলো আর কত ঘুমাবে নয়টা বেজে গেছে।
প্রেমা:- রিমির হাত ধরে ভিতরে আয়।
— রিমি বোনের সাথে ভিতরে ঢুকলো, প্রেমা রিমিকে বললো মিহি আর তোর ভাইয়াকে ডেকে তুল আমি ফ্রেস হয়ে নিচ্ছি। রিমি মিহিকে কোলে নিয়ে ডেকে তুললো তারপর হৃদয়কে কয়েকবার ডাক দিতেই হৃদয় চোখ মেলে তাকালো।
রিমি:- জিজুর কি ঘুম ভাঙতে চায় না নাকি?
হৃদয়:- মুখে হাসি ফুটিয়ে সুন্দরি শালিকা যদি ডেকে না তুলে তাহলে কি আর চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছে করে?
রিমি:- হয়েছে হয়েছে আমার বোন আমার চেয়ে অনেক বেশী সুন্দরি কাজেই ডাকার আগে উঠে পরবেন। আর আপু বের হলে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ চলে আসবেন। আমি মিহিকে নিয়ে যাচ্ছি ওকে রেডি করে ডাইনিং এ নিয়ে আসছি।
— রিমি মিহিকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যেতেই প্রেমা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলো। হৃদয়কে বললো তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিতে। হৃদয় বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। কিছুক্ষণের ভিতর দু’জন রেডি হয়ে এক সাথে ডাইনিং এ চলে আসলো। নাস্তার টেবিলে চাচা সুমনের দিকে চেয়ে বললো নাস্তা শেষ করে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে গ্রাম ঘুরে দেখাবি।
সুমন:- বাবাকে বললো কোন সমস্যা নেই, আমি ঘুরে দেখাবো।
— নাস্তা খাওয়া শেষ হতে প্রেমা সুমনকে বললো একটু অপেক্ষা করো, আমরা রেডি হয়ে আছি, মিহি রিমি আর প্রেমা হাঁটা শুরু করলো রুমের দিতে হৃদয় বসে রইলো ডাইনিং এ প্রায় ৩০ মিনিট পর রেডি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলো ওরা তিনজন, প্রেমার দিকে তাকিয়ে যেন চোখ সরানো যাচ্ছে না। নতুন একটা শাড়ি পরেছে রংধনু রঙের। অপূর্ব সুন্দর লাগছে। দু’হাত ভর্তি বেশ কয়েক রঙের চুড়ি কপালে কালো টিপ সব কিছু মিলিয়ে সুন্দরি প্রেমা আরও অনেক বেশী রূপবতী হয়ে উঠেছে। সকলে হাসতে হাসতে উপর থেকে নেমে আসলো। সুমন বললো ভাইয়া চলুন বের হই।
হৃদয়:- হ্যাঁ চলো,
— সুমনের সাথে সামনে রিমি আর মিহি হাঁটছে পেছনে প্রেমার সাথে হৃদয়, হৃদয় প্রেমার একটা হাত টেনে ধরে হাঁটছে, কাঁচের চুড়ির রিমঝিম শব্দ আর সবুজের সমারোহে যেন মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে হৃদয়। প্রেমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে হৃদয় বলে উঠে সুন্দর প্রকৃতির মাঝে এতো সুন্দরি রূপবতী বউ নিয়ে ঘুরে বেড়াতেও ভাগ্য লাগে।
প্রেমা:- ইস কি সব বলেন চুপ করে হাঁটেনতো ওরা শুনলে কি ভাববে?
হৃদয়:- কি ভাববে?
— বলেই হৃদয় হাত ছেড়ে কোমর জড়িয়ে ধরলো।
প্রেমা:- তা ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছে আর বলছে গ্রামের মানুষজন দেখে ফেলবে আমার লজ্জা লাগছে ছাড়ুণ।
— হৃদয় ছেড়ে দিয়ে আবার হাত ধরে হাঁটতে থাকে, গ্রামের মাটির ঘর, ছোট ছোট পুকুর, গাছ ভর্তি ফলমূল দেখে মুগ্ধ হয় হৃদয়। প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলে এই আমরাও একটা মাটির ঘর বানাই এখানে? তারপর ছোট সেই ঘরে সারা জীবন কাটিয়ে দিবো। প্রেমা কিছু বলোনা শুধু হাসে, হৃদয় সে হাসিতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়। মাঠ ঘাট নদী সব জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে গেলো। প্রেমা সুমনকে বললো আর ঘুরতে হবেনা এবার বাড়ি ফিরে চল। সবার খিদে লেগেছে।
সুমন:- আচ্ছা আপু চলো।
— সবাই গল্প করতে করতে বাড়ির দিকে রওনা হলো। দুপুর তিনটার দিকে বাড়িতে ফিরে আসলো, হাঁটার কারণে সবাই ক্লান্ত এবং অনেকটা ঘেমে গেছে। এদিকে বাড়িতে ফুপুও চলে এসেছে। প্রেমা ফুপুর সাথে হৃদয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়। হৃদয় ফুপুর সাথে কুশল বিনিময় করে প্রেমাকে নিয়ে রুমে চলে আসলো ফ্রেস হবার জন্য। রুমে আসতেই প্রেমা বললো আপনি যেয়ে ফ্রেস হয়ে আসুন পরে আমি যাচ্ছি।
হৃদয়:- তুমি আগে যাও শাড়ি পরে আছো তোমার কষ্ট হচ্ছে।
প্রেমা:- ইহু আমার কোন সমস্যা নেই আপনি যান।
— হৃদয় খাট থেকে এক টানে প্রেমাকে কোলে তুলে নিতেই, প্রেমা এ কি করছেন? হৃদয় দু’জন না হয় আজ এক সাথেই যাই। হৃদয় ইস বলে দু’হাতে নিজের মুখ চেঁপে ধরলো। হৃদয় প্রেমাকে কোলে নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো। আধ ঘন্টার ভিতর সকলে ফ্রেস হয়ে ডাইনিং এ চলে আসলো। সকলে এক সাথে খাবার খেতে শুরু করলো। টুকটাক গল্পে খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই হৃদয় মিহিকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো রুমে যাবার জন্য। প্রেমা উঠতে যাবে এমন সময় ফুপু বললো প্রেমা মা আমার সাথে একটু আসতো একটা কাজ আছে। প্রেমা ফুপুর সাথে এগিয়ে যেতে শুরু করলো হৃদয় মিহিকে নিয়ে উপরে উঠে গেলো। ফুপু প্রেমাকে নিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে গেলো। ঘাটে বসে ফুপু প্রেমার মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো জামাইতো মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর। তোকে একটা কথা বলি, যদিও কথাটা কেমন দেখায় তবুও বলি।
প্রেমা:- কি কথা ফুপু বলো।
ফুপু:- যেহেতু তোর বরের বয়সটা একটু বেশী আর একটা বেবীও আছে তাই আমি বলছিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুইও এক বেবী নিয়ে নে। এতে করে তোদের সম্পর্কটা আরও শক্ত ও মজবুত হবে।
— ফুপুর কথায় প্রেমা হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারলো না, এসব নিয়ে প্রেমা কখনো চিন্তাই করে নাই। ফুপু আরও অনেক সময় প্রেমার সাথে বসে থেকে উঠে বাড়ির ভিতর যেতে শুরু করলো। বিকেলে পুকুরের পানিতে বড় বড় নাড়িকেল গাছের ছায়া পরেছে, হালকা হালকা বাতাস বইছে। প্রেমা ফোনটা হাতে নিয়ে হৃদয়কে ফোন দিলো। রিং হতেই হৃদয় ফোন রিসিভ করে নিলো। মপ্রেমা বললো বাহিরে পুকুরের ঘাটে আসতে, দারুণ লাগছে পরিবেশটা। ফোনটা কেটে পুকুরের সিঁড়ি দিয়ে আরও কয়েক পা নিচে নেমে পা ভিজিয়ে সেখানে বসে রইলো প্রেমা। অল্প সময়ের ভিতর হৃদয় চলে আসলো। সিঁড়ি দিয়ে নেমে প্রেমার পাশে বসে বাহ জায়গাটাতো বেশ সুন্দর।
প্রেমা:- হৃদয়ের কাঁধে মাথা রেখে হ্যাঁ তাইতো আপনাকে ডেকে নিয়ে এসেছি।
হৃদয়:- শুধু কি সে জন্যই?
প্রেমা:- না শুধু সে জন্য হবে কেন? আপনার সাথে বসে সময় পার করবো বলে। কেন আপনার কি ভালো লাগছে না?
হৃদয়:- প্রেমার মাথায় হাত রেখে ভালো লাগবে না কেন? এতো সুন্দর পরিবেশ সাথে সুন্দরি স্ত্রী ভালো কেন লাগবে না?
প্রেমা:- আচ্ছা আমি যদি সুন্দর না হতাম তাহলে বিয়ে করতেন না?
হৃদয়:- হাসতে হাসতে এটাতো ভেবে দেখিনি।
প্রেমা:- ওহ তাই বুঝি তাহলে কি আমার মনের থেকে শরীরের সুন্দর্য্যই আপনার কাছে সব কিছু?
হৃদয়:- আমি কিন্তু এমনটা বলিনি।
প্রেমা:- যখন আমার বয়স হবে আমি বৃদ্ধ হবো তখন কি আমায় আপনি ভালোবাসবেন?
হৃদয়:- ভালোবাসার কোন বয়স লাগে না। ভালোবাসার জন্য মনের প্রয়োজন, যেমন এখন তুমি আমায় ভালোবাসো।
প্রেমা:- আমিতো আপনার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই। বৃদ্ধ কালেও আপনার কাধে মাথা রেখে এভাবেই বসে থাকতে চাই।
হৃদয়:- তোমার হাতে হাত রেখে আমি হেঁটে বেড়াতে চাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
প্রেমা:- কখনো শিশির ভেজা ঘাস কখনো ঝুম বৃষ্টিতে আপনার পাশে আপনার সাথে আমি হেঁটে বেড়াতে চাই।
হৃদয়:- আমি মুগ্ধ হতে চাই তোমাতে, তোমার মায়াবী চোখে চেয়ে পার করতে চাই অনন্তকাল।
প্রেমা:- রাগে অভিমানে, ভালোবাসায় সব খানে আমি যে আপনাকেই চাই।
হৃদয়:- তোমার মাঝেই নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।
— দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে কথা বলছে হঠাৎ শুকনো পাতা পারিয়ে কারো আসার শব্দে প্রেমা হুদয়ের কাধ থেকে মাথা সরিয়ে নিলো। রিমি উপর থেকে বলে উঠলো এতো সুন্দর জায়গায় আমাকে রেখে এসে দু’জন খুব মজা করছেন তাতো হতে দিবো না। প্রেমা আর হৃদয দু’জন এক সাথে হেসে উঠলো।
হৃদয়:- রিমির দিকে তাকিয়ে কখনোতো আমাদের একা থাকতে দাও।
রিমি:- তা কি করে হয় জিজু, দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র শালিকা আপনার। আপনি চাইলেও আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেন না।
— বলতে বলতে রিমি নিচের দিকে নামতে শুরু করলো। প্রেমা হাসতে হাসতে বললো তুই আর শুধরাবি না?
রিমি:- ইহু তুই যেখানে আমি সেখানে।
হৃদয়:- ইস আমার একটা ছোট ভাই থাকলে ভালো হতো।
— হৃদয়ের কথা শুনে প্রেমা আর রিমি দু’জন হো হো করে হেসে দিলো।
#চলবে…