#হারানো_সুর-১৫ তম পর্ব
©শাহরিয়ার
— প্রেমা দারুণ উপভোগ করছে মুহুর্ত গুলো, মিহি বলে উঠলো মামুনি আমার চুল কবে তোমার মত বড় হবে?
প্রেমা:- যখন তুমি আমার মত বড় হবে তখন তোমার চুল আমার মত বড় হবে।
মিহি:- তখন কি আমার চুল তোমার মতো করে বাতাসে উড়বে?
— মিহির কথা শুনে সকলে হেসে দিলো।
রিমি:- হ্যাঁ মামুনি তখন তোমার চুল এমন ভাবে উড়বে। আর তুমি গাড়ির সামনের সিটে বসে থাকবে আর তোমার ড্রাইভার হবে খুব রোমান্টিক।
মিহি:- রোমান্টিক কি?
— মিহির কথা শুনে সবাই আরেকবার হেসে দিলো।
প্রেমা:- ঐতো তুমি বড় হলেই বুঝবে।
মিহি:- আমি কবে বড় হবো?
হৃদয়:- বেশী বেশী পড়ালেখা করলেই তুমি বড় হয়ে যাবে।
মিহি:- তাহলে এখন থেকে আমি অনেক অনেক পড়াশোনা করবো।
— সকলে গল্প করছে আর গাড়ি এগিয়ে চলছে শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে। দুপুর শেষে বিকেল বিকেল শেষে সন্ধ্যায় গাড়ি এসে দাঁড়ালো বিশাল বড় এক দোতলা বাড়ির সামনে। গাড়ির হর্ণ শুনে বাড়ির ভিতর থেকে একজন বের হয়ে আসলো।
প্রেমা:- গাড়ি থেকে নেমে যেয়ে জড়িয়ে ধরে চাচী কেমন আছো?
চাচী:- আমরা ভালো আছি তোরা সকলে কেমন আছিস, কই গো তাড়াতাড়ি আসো দেখ কে এসেছে।
— চাচীর ডাকে বাড়ির ভিতর থেকে চাচা বের হয়ে হয়ে আসে। সাথে চাচাত ভাই সুমন ও বের হয়ে আসে। হৃদয় রিমি আর মিহি গাড়ি থেকে নেমে আসে। হৃদয় সকলকে সালাম জানায়। চাচা সবাইকে নিয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে। বাড়ির ভিতর ঢুকতেই চাচী সবাইকে বলে ফ্রেস হয়ে নিতে। সকলে ফ্রেস হতে চলে গেলো। চাচী আগে থেকেই সকলের জন্য রুম গুছিয়ে রেখেছিলো। মিহি আর রিমির জন্য একটা রুম প্রেমা আর হৃদয়ের জন্য এক রুম। হৃদয় ফ্রেস হয়ে বের হতেই হৃদয় ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো। প্রেমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করতে শুরু করলো। অল্প সময়ের ভিতর হৃদয় ফ্রেস হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলো। প্রেমাকে ড্রেসিং টিবিলের সামনে বসে থাকতে দেখে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো।
প্রেমা:- হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে কি করছেন? কেউ চলে আসবে।
হৃদয়:- কে আসবে আর দরজাতো লাগিয়ে দেয়াই আছে।
প্রেমা:- তাতে কি চলুন বের হই, চাচী নিশ্চই নাস্তা রেডি করেছে।
হৃদয়:- এই তুমি কি আমাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছো নাকি?
প্রেমা:- চোখ বড় বড় করে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে কি বললেন?
— কথাটা বলেই জোরে ধাক্কা দিয়ে হৃদয়কে সরিয়ে দিলো। হৃদয় কিছু বুঝতে পারলো না, প্রেমা রাগি চোখে হৃদয়ের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। হৃদয় কিছুটা ভয় পেয়ে পেছনে যেতে শুরু করলো। প্রেমা যতই এগিয়ে যাচ্ছে হৃদয় ততই পেছনে যাচ্ছে। পেছনে যেতে যেতে হৃদয় দেয়ালের সাথে যেয়ে আটকে গেলো। প্রেমা যেয়ে হৃদয়ের জামার কলার টেনে ধরে কি বললেন আপনি? আমি আপনাকে এড়িয়ে চলছি? হৃদয় কিছু বলতে যাবার আগেই পায়ের আঙ্গুলে ভর করে উচু হয়ে হৃদয়ের ঠোঁটের মাঝে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। হৃদয়ের দেহে যেন প্রাণ ফিরে আসলো। দরজায় কেউ ধাক্কা দিতেই প্রেমা ঠোঁট সরিয়ে নিলো। হৃদয়কে ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেয়ে দরজা খুলে দিতেই রিমি ঘরে ঢুকে পরলো।
রিমি:- চলো চলো নাস্তা রেডি।
— কথাটা বলতে বলতে রুমের ভিতর ঢুকে হৃদয়ের সামনে যেয়ে হাসতে শুরু করলো। হৃদয় কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। মনে মনে বলতে শুরু করলো এক সাথে কি দুই বোন পাগল হলো নাকি? এক বোন ভয় দেখিয়ে প্রাণ বের করে দিচ্ছিলো আরেক বোন এসে হাসছে। রিমির হাসির শব্দ শুনে প্রেমাও এগিয়ে আসলো।
হৃদয়:- এতো হাসির কি হলো?
রিমি:- আপনাকে বলা যাবে না।
— হৃদয়ের মাথায় কিছুই ঢুকছে না এ বাড়িতে এসে সবাই পাগল হয়ে গেলো নাকি। রিমি মিটমিট করে হেসে প্রেমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কিছু বলে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। প্রেমাও হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। হৃদয় অবাক হয়ে গেলো এমন কাণ্ড দেখে।
হৃদয়:- কি হলো তোমার জ্বর আসলো নাকি? বলেই প্রেমার কপালে হাত দিলো হৃদয়। না জ্বরতো আসেনি তাহলে সমস্যা কি?
প্রেমা:- হৃদয়ের হাত সরিয়ে দিয়ে, কোমর থেকে শাড়ির আঁচল খুলে হৃদয়ের ঠোঁট থেকে লিপিস্টিকের দাগ মুছে দিতে দিতে কিছুই হয়নি শুধু আপনার ঠোঁট দু’টো বেশীই লাল হয়ে গিয়েছিলো। তা দেখেই রিমি হাসতে ছিলো।
— হৃদয় এতো সময় পর বুঝলো ওদের দু’বোনের হাসির আসল কারণ। হৃদয় টান দিয়ে প্রেমাকে বুকের সাথে মিলিয়ে প্রথমে ঠোঁট লাল করবে এরপর হাসবে তারপর আবার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিবে। আর আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবো ভাবছো?
প্রেমা:- হৃদয়ের ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রেখে তো কি করবেন?
— হৃদয় প্রেমার দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যেতেই, প্রেমা হাত দিয়ে ঠোঁট চেঁপে ধরে এবার কিন্তু মুছে দিবো না। চলেন এখন ভালোবেসে কিন্তু আমাকে বিয়ে করেন নাই। পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেছেন। অতএব এখন আপনি শ্বশুড় বাড়িতে আছেন আর তাই নম্রভদ্র ভাবে আমার সাথে চলুন।
হৃদয়:- প্রেমাকে ছেড়ে দিয়ে জ্বি ম্যাডাম চলুন।
— দু’জন হাঁটতে শুরু করলো, হৃদয় আস্তে করে প্রেমাকে বললো এরেঞ্জ ম্যারেজ করলে কি কাউকে ভালোবাসা যায়না নাকি? প্রেমা শুধু হাসলো হাসতে হাসতে দু’জন ডাইনিং টেবিলে এসে সবার সাথে যোগ দিলো। সকলে মিলে গল্প করতে শুরু করলো নানান রকম গল্প।
চাচা:- সুমনের দিকে তাকিয়ে কাল সকালে তোর ভাইয়াকে নিয়ে বের হবি পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাবি।
সুমন:- ঠিক আছে বাবা তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।
চাচা:- হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বললো বাবা যে কোন প্রয়োজনে তুমি সুমনকে বলবা নয়তো আমাকে।
হৃদয়:- জ্বি চাচা আপনারা চিন্তা করবেন না।
— টুকটাক কথা বলতে বলতে খাওয়ার পর্ব শেষ হয়ে গেলো। মিহি প্রেমা কোলো উঠে বসলো। রিমি প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো আম্মু তুমি খালা মনির কাছে আসো।
মিহি:- না আমি মামুনির সাথে যাবো।
প্রেমা:- মিহিকে কোলে নিয়ে বললো আচ্ছা ও আমার সাথে যাক পরে না হয় তোর সাথে যেয়ে ঘুমাবে।
— রিমি আর কিছু বললো না, সকলে যে যার রুমে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। রুমে এসে প্রেমা মিহিকে নিয়ে বিছানায় বসলো, হৃদয় চলে গেলো ব্যালকনিতে। হালকা বাতাস বইছে মিহি প্রেমাকে বললো মামুনি গল্প শুনবো। প্রেমা মিহির মাথা নিজের কোলে নিয়ে গল্প বলতে শুরু করলো, সেই সাথে মিহির মাথা হাতিয়ে দিতে লাগলো। এক সময় মিহি গল্প শুনতে শুনতে মিহি প্রেমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলো। প্রেমা মিহির মাথা বালিশে রেখে বিছানা ছেড়ে উঠে এগিয়ে যেয়ে ব্যালকনিতে হৃদয়ের পাশে দাঁড়ালো। তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হলো।
হৃদয়:- মিহি ঘুমিয়ে পরলো নাকি?
প্রেমা:- বাহিরের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ ঘুমিয়ে পরেছে। আপনার ক্লান্ত লাগছে না আপনিও একটু বিশ্রাম করে নিতেন।
হৃদয়:- আরে লাগবে না, তুমি আমার পাশে দাঁড়িয়েছো আমার সাথে আছো এতেই আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছে।
প্রেমা:- হেসে দিয়ে কি যে বলেন না?
হৃদয়:- কেন তোমার ক্লান্তি লাগছে?
প্রেমা:- আরে না কি বলছেন? আমি একদম ঠিক আছি।
হৃদয়:- তুমি কি জানে যখন মা তোমার আমার বিয়ের কথা বলেছিলো তখন আমি মাকে সরাসরি মানা করে দিয়েছিলাম।
প্রেমা:- কেন?
হৃদয়:- প্রেমার হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে আমি ভেবে ছিলাম কোন দিনও রোদেলাকে ভুলে অন্য কাউকে আপন করে নিতে পারবো না। তখন মা বললো মানুষ চাইলে সবই সম্ভব। আর ভালোবাসা এমন এক জিনিস যা যেকোন সময় যে কোন মুহুর্তে হয়ে যাবে। আমি মাকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি মা তোমার ছবি দেখায় আমাকে, আমি মাকে বলি তুমিতো অনেক ছোট, আর আমার একটা বেবী আছে তোমার আমার মাঝে না হলেও সতের থেকে আঠারো বছরের পার্থক্য। মা তখন বললো আমরাতো কোন কিছু লুকিয়ে বিয়ে দিবো না। তাছাড়া মায়ের তোমাকে খুব পছন্দ হয়। সেভাবেই তোমার পরিবারের সাথে আমার পরিবার কথা বলে। আমি তোমাকে ঠকাতে চাইনি। তাই সৃষ্টিকর্তা তোমার প্রতি আমার মায়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তাইতো না চাইতেও তোমাকে অনেক বেশী ভালোবেসে ফেলেছি।
— হৃদয়ের কথা শেষ হতেই প্রেমা হৃদয়কে জড়িয়ে ধরলো। প্রেমা হৃদয়ের বুকে মাথা রেখে বলতে শুরু করলো আপনি সত্যি বলেছেন সৃষ্টিকর্তা চেয়েছেন বলেই আমরা এতোটা কাছে আসতে পেরেছি। আমি এতোটা ভালোবাসা পাবো তা কোন দিনও কল্পনাও করিনি। সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবতী।
হৃদয় প্রেমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, প্রেমা বলতে শুরু করলো আসলে বিয়ের আগের ভালোবাসা বেশী দিন টিকে না, হয়তো ভাগ্য গুনে কিছু টিকে, কিন্তু এই যে বিয়ের পর আমাদের ভালোবাসা তা সারা জীবন থেকে যাবে, এটা সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে সব চেয়ে বড় উপহার।
হৃদয় মুগ্ধ হয়ে প্রেমার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।
#চলবে…