হারানো_সুর-১৪ তম পর্ব ©শাহরিয়ার

0
4729

#হারানো_সুর-১৪ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

রিমি:- কাছে আসতে আসতে এখুনি বৃষ্টি নামবে আর তোমরা এখনো এখানেই দাঁড়িয়ে আছো? তাড়াতাড়ি নিচে নামো আব্বু আম্মু ডাইনিং এ তোমাদের জন্য বসে আছে।

— হৃদয় প্রেমার দিকে তাকাতেই প্রেমা বলে উঠলো চলুন। রিমি কি জিজু কেমর সারপ্রাইজ হলো আজ?

হৃদয়:- তোমার আপুকে জিজ্ঞাসা করো তার কেমন লাগলো?

প্রেমা:- হেসে আপনি আয়োজন করেছেন আর তা পছন্দ না হয়ে পারে?

হৃদয়:- আমি মোটেও না, পুরো আয়োজন করেছে রিমি।

রিমি:- মোটেও না জিজু সব প্লান আপনার আমিতো শুধু আপনাকে সহযোগিতা করেছি।

— তিনজন কথা বলতে বলতে ডাইনিং এ চলে আসলো। ডাইনিং এ আগে থেকেই বাবা আর মা বসে ছিলো। ওরা তিনজন বসতেই বাবা হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো গ্রামের বাড়িতে কবে যাবে?

হৃদয়:- বাবা যদি কোন অসুবিদা না হয় তবে আমরা আগামিকালকেই রওনা হতে চাই।

বাবা:- কিসের অসুবিদা, আমি এখুনি ফোন করে গ্রামে জানিয়ে দিচ্ছি।

— খেতে বসেই বাবা ফোন করে গ্রামে জানিয়ে দিলো তার ভাই বোনদের। তারা অনেক খুশি হলো। ওদের যাবার কথা শুনে। সকলে মিলে রাতের খাবার শেষ করলো, হৃদয় রিমির দিকে তাকিয়ে বললো সব কিছু গুছিয়ে রাখতে। কাল ভোরেই ওরা রওনা হবে প্রথমে হৃদয়দের বাড়িতে যাবে সেখান থেকে হৃদয় মিহি আর প্রেমার প্রয়োজনিয় জিনিস নিয়ে রওনা হবে গ্রামের উদ্দেশ্যে। রিমি মাথা নেড়ে জানালো ঠিক আছে সব গুছিয়ে রাখবে। প্রেমা আর হৃদয় নিজেদের রুমে চলে আসলো। ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে হৃদয় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালিয়েছে, প্রেমা পাশে এসে দাঁড়িয়ে ভিজে যাবেনতো।

হৃদয়:- কিছু হবে না অল্প সময়ের ব্যাপার তুমি যেয়ে শুয়ে পরো আমি আসছি।

প্রেমা:- তা হবে না দু’জন এক সাথে যাবো।

হৃদয়:- বৃষ্টির পানি হাতে নিয়ে প্রেমার দিকে ছিঁটিয়ে দিয়ে, তাহলে কি আর ভিজো।

প্রেমা:- কি করছেন সত্যি সত্যি ভিজে যাবোতো।

হৃদয়:- হাতে থাকা সিগারেটটা ফেলে দিয়ে প্রেমাকে জড়িয়ে ধরে তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।

প্রেমা:- আমাকে প্রতিদিনই সুন্দর লাগে, আর আজ আপনার পছন্দের ড্রেস পরছি সুন্দর না লেগে পারে।

— দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে, হৃদয় প্রেমার হাত ধরে ঘরের ভিতর ঢুকতে শুরু করলো। রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে হৃদয় বলতে শুরু করলো ইদানিং কেমন জানি প্রেমিক প্রেমিক হয়ে গেছি।

প্রেমা:- কেন আপনার শহরে কি প্রেমে পরা বারণ?

হৃদয়:- প্রেমে পরা বারণ কিনা জানি না তবে কারো মায়ায় যে গভীর ভাবে জড়িয়ে গিয়েছি এটা খুব করে বুঝতে পারছি।

প্রেমা:- আমি যে কারো মায়ায় বন্দী হয়ে গিয়েছি তা কি করে বুঝাই? মুক্ত পাখি হয়ে উড়ে বেড়ানো পাখি হবার ইচ্ছেটা যে মরে গেছে কারো ভালোবাসায় বন্দী হয়ে সে কথা আমি কি করে বলি?

হৃদয়:- কিছু কথা চোখ দেখে বুঝে নিতে আমিও যে শিখে গেছি।

— রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে প্রেমা হৃদয়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরুণ কাল আবার ভোরে উঠতে হবে। হৃদয় প্রেমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে তুমিও ঘুমিয়ে পরো। দু’জনের কারো মুখে কোন কথা নেই পুরো ঘরে শুধু দু’জনের হৃৎকম্পনের শব্দ হচ্ছে।

— খুব ভোরে রিমির ডাকে প্রেমার ঘুম ভেঙে যায়। বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলতেই রিমি দুই মগ চা এগিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠো মা নাস্তা বানাচ্ছে রেডি হতে সময় লাগবে।

প্রেমা:- চায়ের মগ হাতে নিয়ে হ্যাঁ তুই যেয়ে রেডি হয়ে নে আর মিহিকে রেডি কর। আমরা রেডি হয়ে বের হচ্ছি।

— রিমি চলে যেতে প্রেমা দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা হৃদয়ের কাছে যেয়ে কয়েকবার ডাক দিতেই চোখ মেলে তাকালো হৃদয়।

প্রেমা:- উঠেন সকাল হয়ে গেছে ফ্রেস হয়ে বের হতে হবে আমাদের।

— হৃদয় কোন কথা না বলে প্রেমাকে টান দিয়ে বুকের উপর নিয়ে আলতো করে কপালে চুমু দিয়ে, আর এক শুয়ে থাকো না আমার বুকে।

প্রেমা:- ইস উঠেনতো বাসার সবাই জেগে উঠেছে, মা নাস্তা বানাচ্ছে রিমি এসে চা দিয়ে গেছে, এখন আর শুয়ে থাকার সময় নেই।

হৃদয়:- প্রেমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাহলেতো সত্যিই আর শুয়ে থাকা যাবে না।

— দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে হেসে দিলো, প্রেমা হৃদয়ের বুকে মাথা রেখেই এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে উঠবেন কি করে?

হৃদয়:- প্রেমাকে ছেড়ে দিয়ে কি করবো বলো? মানুষ বিয়ের আগে প্রেমে পরে আর আমি বিয়ের পর পরেছি।

— প্রেমা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়িয়ে এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিন। কখন আবার রিমি চলে আসে, তখনো এভাবে শুয়ে থাকতে দেখলে কি মনে করবে?

হৃদয়:- কিছুই মনে করবে না। সেতো আর ছোট মানুষ নয়।

— কথাটা বলতে বলতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো হৃদয়। ওয়াশ রুমের দিকে যেতে যেতে একবার প্রেমার দিকে তাকালো। প্রেমা লাজুক হাসি দিয়ে বিছানা গুছাতে শুরু করলো।

— সকলে এক সাথে নাস্তা খেতে বসলো, নাস্তা করা শেষ হতেই হৃদয় প্রেমার বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলো। প্রেমা মাকে জড়িয়ে ধরে কিছু সময় কান্নাকাটি করে তারপর সকলে মিলে বের হয়ে আসলো বাড়ি থেকে। গাড়ি এগিয়ে চলতে শুরু করলো হৃদয়দের বাড়ির উদ্দেশ্যে, প্রেমা সামনেে সিটে হৃদয়ের পাসে বসেছে মিহি আর রিমি পেছনের সিটে বসেছে। হৃদয় ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে প্রেমার দিকে তাকিয়ে দেখছে। পেছনের সিটে বসে তা খুব ভালো ভাবেই লক্ষ করছে রিমি।

রিমি:- হেসে হেসে ভাইয়া সব সময় শুধু পাশেই তাকিয়ে থাকবেন না, সামনের দিকেও তাকাইয়েন। না হলে আবার কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায় বলাতো যায় না।

হৃদয়:- পাশে এতো সুন্দর রমণী থাকলে চোখ কি আর অন্য কোথাও যেতে চায় বলো?

— সকলে এক সাথে হেসে উঠলো। গাড়ি এগিয়ে চলছে শহরের ব্যস্ততম রাস্তা দিয়ে। অল্প সময়ের ভিতর গাড়ি চলে আসলো হৃদয়দের বাড়িতে। কলিং বেল চাঁপ দিতেই হৃদয়ের মা এসে দরজা খুলে দিলো। প্রেমা আর রিমি দু’জনেই মাকে সালাম জানালো। মা ওদের দেখে অনেক খুশি হলো। হৃদয় মাকে বললো তাড়াতাড়ি খাবার রেডি করতে ওরা কিছুক্ষণের ভিতর আবার বের হয়ে যাবে।

মা:- সে কি মাত্রই আসলি এখুনি আবার কোথায় যাবি?

হৃদয়:- প্রেমাদের গ্রামের বাড়িতে যাবো। তুমিও চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারো।

মা:- মিহিকে কোলে তুলে নিয়ে তোরাই যা যেয়ে ঘুরে দেখে আয়, আমি আর তোর বাবা না হয়ে পরে কোন এক সময় যাবো।

হৃদয়:- প্রেমা আর রিমিকে সঙ্গে নিয়ে দু’তলায় উঠতে উঠতে আচ্ছা তাহলে আমরা ফ্রেস হতে যাচ্ছি তুমি খাবার রেডি করো।

মা:- মিহিকে কোলে নিয়ে রওনা হলো রান্না ঘরের দিকে। দাদী নাতনী গল্পে মজে রান্না বসিয়ে দিলো।

— হৃদয় ওয়াশ রুমে চলে যেতেই রিমি প্রেমাকে জড়িয়ে ধরে ওয়াও আপু কত সুন্দর বাড়ি আর তোমাদের রুমটাতো আরও সুন্দর।

প্রেমা:- চল ছাঁদে যাই এ বাড়ির ছাঁদটা আরও সুন্দর।

রিমি:- ভাইয়া বের হয়ে খুঁজে না পেলে?

— প্রেমা রিমির হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে খুঁজে না পেলে সোজা ছাঁদে উঠে যাবে তোকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। দুই বোন গল্প করতে করতে ছাঁদে উঠে আসলো। ছাঁদের মাঝের দোলনায় বসে দুই বোন দোল খাচ্ছে আর গল্প করে চলেছে।

রিমি:- আপু সত্যিই ভাইয়া অসাধারণ একজন মানুষ যদিও আমার প্রথম প্রথম মনে হয়েছিলো বয়স বেশী একজন মানুষ বদমেজাজি আর গম্ভীর হবে কিন্তু উনার সাথে মিশে বুঝতে পেরেছি উনি খুবি ভালো আর মিশুক একজন মানুষ।

প্রেমা:- আমিতো তোকে বলেই ছিলাম উনি অনেক ভালো একজন মানুষ।

— দু’জন গল্প করতে করতে হৃদয় ছাঁদে উঠে এসে দোলনায় ধাক্কা দিয়ে কি দুই বোন আমাকে না বলেই ছাঁদে চলে এসেছো?

রিমি:- পিছনে ফিরে তাকিয়ে আমার বোনকে না দেখলে বুঝে ঘরে মন টিকে না?

হৃদয়:- হেসে দিয়ে শুধুই কি ওর জন্য এসেছি? এই যে আমার এতো সুন্দরি একটা শালিকা তার জন্য কি আমি আসিনি?

রিমি:- ওসব আমার বুঝা আছে, আপনারা বসুন আমি নিচে যেয়ে আন্টিকে সাহায্য করি।

হৃদয়:- বলে কি এসব তুমি মেহমান তুমি কেন রান্না ঘরে যাবে? আর তাছাড়া রান্না হয়ে এসেছে। চলো সবাই নিচে নামবো।

— তিনজন গল্প করতে করতে নিচে নেমে আসলো, অল্প সময়ের ভিতর রান্না হয়ে যেতেই মনি এসে সবাইকে খেতে ডাকলো। খাবার টেবিলে প্রেমা রিমিকে ওর শ্বশুড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। হৃদয় বাবাকে বললো গ্রামে বেড়াতে যাবে বাবা খুব খুশি হলো। খাওয়া শেষ হতেই প্রেমা যেয়ে হৃদয় আর মিহির জামা কাপড় গুছিয়ে নিলো। সকাল এগাড়োটার দিকে বাবা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা রওনা হলো গ্রামেে বাড়ির উদ্দেশ্যে। লাল শাড়ি, মুঠো ভর্তি কাঁচের চুড়ি কপালে কালো টিপে পাশে বসে থাকা প্রেমাকে ঠিক যেন মায়াবতী লাগছিলো। হৃদয় গাড়ির এসি বন্ধ করে সব গুলো জানালার গ্লাস নামিয়ে দিতেই প্রেমা খোলা চুল গুলো উড়তে শুরু করলো।

#চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here