#হারানো_সুর-১৩ তম পর্ব(সারপ্রাইজ-২)
©শাহরিয়ার
হৃদয়:- প্রেমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে আরে তুমি কান্না করছো কেন? এতো রাতে যদি কান্না কাটি করো, তোমার বাবা মা ছুটে আসবে। তারা ভাববে তোমাকে মেরেছি তুমি কি এটা চাও?
প্রেমা:- ফিক করে হেসে দিয়ে হৃদয়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথাটা বুকের সাথে মিশিয়ে না তা কেন চাইবো। আপনি অনেক ভালো মানুষ। আর আমি অনেক ভাগ্যবতী যে আপনার মত এতো ভালো মানুষকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।
— গভীর রাত পর্যন্ত দু’জন শুয়ে শুয়ে গল্প করলো। আজ যেন কথারা ফুরাতেই চাচ্ছে না। এক সময় দু’জন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলো। সকালে প্রেমার ঘুম ভেঙে গেলে প্রেমা উঠে ওয়াশ রুমে চলে যায়, শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে খাটের দিকে তাকিয়ে দেখে হৃদয় তখনো গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে, প্রেমা হৃদয়ের কাছে যেয়ে কয়েকবার ডাক দিতেই হৃদয় চোখ মেলে তাকায়। খোলা চুল দিয়ে পানি টপটপ করে পানি পরছে। হৃদয় প্রেমার হাত ধরে টান দিতেই প্রেমার মুখ হৃদয়ের মুখের কাছে চলে আসে। ভেজা চুল গুলো দিয়ে হৃদয়ের পুরো মুখ ডেকে যায়। প্রেমা কি করছেন ছাড়ুণ, আমি আপনার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসি।
হৃদয়:- এতো মিষ্টি একটা পিচ্চি বউ তাকে কি আর ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে?
প্রেমা:- ইস কি বলেন? এসব উঠেনতো।
হৃদয়:- প্রেমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, আরও কিছুক্ষণ থাকো না। রাতেতো ঘুম হয়নি ভালো তারপরেও কেন এতো তাড়াতাড়ি উঠতে হবে?
প্রেমা:- কি করবো মেয়ে মানুষ সংসারে অনেক কাজ থাকে এসব মেয়েদেরকেই করতে হয় বুঝলেন? আজ না হয় মায়ের বাড়িতে আছি কিন্তু আগামি কাল শ্বশুড় বাড়িতে যেতে হবে। তখন নিশ্চই এতো সুবিদা করতে পারবো না।
হৃদয়:- কেন আমার মা বুঝি দজ্জাল শাশুড়ি?
প্রেমা:- আঙ্গুল দিয়ে হৃদয়ের মুখ চেঁপে ধরে, ছি ছি, কি বলছেন এসব? আম্মা খুবি ভালো একজন মানুষ।ঐ বাড়িতে থাকা কালিন আমিতো ভুলেই যেতাম যে আমি শ্বশুড় বাড়িতে আছি। আমার কাছে মনে হতো আমি আমার বাড়িতেই আছি।এখন উঠেনতো দেরী হয়ে যাচ্ছে সবাই উঠে পরবে। বলেই প্রেমা উঠে দাঁড়ালো। হৃদয়ও উঠে বসলো। প্রেমা হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন বলে বাহিরের দিকে হাঁটা শুরু করলো। হৃদয় উঠে চলে গেলো ওয়াশ রুমের দিকে। কিছু সময় পর প্রেমা চা নিয়ে আসলো হৃদয়ের দিকে চায়ের মগ এগিয়ে দিলো।
হৃদয়:- মা বাবা উঠেনি?
প্রেমা:- হ্যাঁ সবাই উঠেছে মা আর রিমি নাস্তা বানাচ্ছে, বাবা আর মিহি গল্প করছে। আপনি রেস্ট করেন আমি যেয়ে নাস্তা বানাতে সাহায্য করি।
— হৃদয় মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতেই প্রেমা সেখান থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আধঘন্টার ভিতর নাস্তা রেডি হতেই প্রেমা এসে হৃদয়কে ডাক দিলো। প্রেমার সাথে হৃদয় রুম থেকে বের হয়ে, ডাইনিং এ যেয়ে বসলো। সকলের সাথে মিলে মিশে নাস্তা করলো। নাস্তা শেষে প্রেমা আর তার মা সব গুছিয়ে রাখতে শুরু করলো। বাবা উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। হৃদয় রিমিকে ইশারা করে বললো আজ একটা সারপ্রাইজ পার্টির আয়োজন করবে প্রেমার জন্মদিন উপলক্ষে। রিমি তাতে রাজী হলো এবং সব রকম সহযোগিতা করবে বলে জানালো। হৃদয় উঠে মিহিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে গেলো। প্রেমা সব কিছু গুছিয়ে চলে আসলো হৃদয়ের কাছে। তিনজন বিছানায় শুয়ে গল্প করতে করতে দুপুর হয়ে আসলো। ততক্ষণে দুপুরের রান্না রেডি হয়ে গেলো। রিমি এসে সবাইকে ডেকে নিয়ে গেলো। খাওয়ার মাঝেই ইশারায় রিমিকে বুঝালো কিছুক্ষণ পর বাহিরে যাবে তাকে রেডি হওয়ার জন্য। খাওয়া শেষ হলে রিমি মিহিকে নিয়ে চলে গেলো। প্রেমা আর হৃদয় নিজেদের রুমে চলে আসলো।বিছানায় শুয়ে ঘুমের বান ধরে শুয়ে রইলো হৃদয়। কিছুক্ষণের ভিতর যখন বুঝতে পারলো প্রেমা ঘুমিয়ে পরেছে তখন আস্তে করে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে হৃদয় ঘর থেকে বের হয়ে এসে রিমিকে ডাক দিলো। রিমি ততক্ষণে রেডি হয়ে বের রুম থেকে বের হয়ে আসলো।
হৃদয়:- মিহি কি ঘুমিয়েছে?
রিমি:- হ্যাঁ ঘুমিয়ে গিয়েছে,
— দু’জন কথা বলতে বলতে বের হয়ে গেলো। প্রথমে একটা শপিং মল থেকে হৃদয় দুই বোনের জন্য দু’টো পার্টি গ্রাউন কিনলো, তারপর সোজা চলে গেলো কেক কিনার জন্য কেক কিনে কেউ ঘুম থেকে উঠার আগেই বাড়ি ফিরে আসলো। রিমিকে বললো কাউকে কিছু না জানিয়ে ছাঁদে পার্টির আয়োজন করতে। রিমি জানালো কোন রকম টেনশন না করার জন্য। সন্ধ্যা সাতটার সময় ছাঁদে চলে যাবার জন্য। হৃদয় যেয়ে প্রেমার পাশে শুয়ে পরলো। সন্ধ্যার দিকে প্রেমার ঘুম ভেঙে গেলে যেয়ে চা বানিয়ে নিয়ে এসে হৃদয়কে ডাক দিতেই হৃদয় চোখ মেলে তাকালো। চায়ের মগ এগিয়ে দিলো। প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো কি ব্যাপার তোমার মন খারাপ নাকি?
প্রেমা:- ফিকে হাসি দিয়ে কই নাতো।
হৃদয়:- উহু কিছুতো একটা নিশ্চই হয়েছে, কি হয়েছে আমাকে বলো।
প্রেমা:- এমনি কিছু হয়নি, আসলে বিয়ের পর মেয়েরা বাবা মায়ের পর হয়ে যায় বুঝলেন।
হৃদয়:- এমন কেন বলছো? হয়তো আমি আসাতে তারা ভুলে গেছেন কারণ আমার জন্য নানান রকম আয়োজন করতে তারা ব্যস্ত মন খারাপ করো না প্লীজ।
প্রেমা:- মুখে মিথ্যা হাসির চেষ্টা করে না না মন খারাপ করবো কেন?
— বলে উঠে দাঁড়াতেই প্রেমার চোখ আটকে যায় ড্রেসিং টেবিলের উপর থাকা একটা প্যাকেটের উপর। হৃদয়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো এটা কি?
হৃদয়:- আমি কি করে জানবো খুলে দেখ কি আছে, আমিতো তোমার সাথেই ঘুমিয়ি ছিলাম।
— প্রেমা ড্রেসিং এর উপর থেকে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে খুলতেই চমকে উঠলো। লাল টকটকে একটা পার্টি গ্রাউন বেরিয়ে আসলো। অবাক হয়ে হৃদয়ের দিকে তাকালো। হৃদয় কোন কিছু না বুঝার ভান ধরে বসে রইলো। প্রেমা হৃদয়ের দিকে এগিয়ে এসে নিশ্চই এটা রিমির কাজ।
হৃদয়:- হতে পারে তোমাকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য। যাই হোক পরে নাও। চলো তোমাদের বাড়ির ছাঁদে যাই।
— প্রেমা ড্রেসটা হাতে নিয়ে হাসি মুখে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। অল্প সময়ের ভিতর ড্রেসটা পরে বের হয়ে আসলো। হৃদয় অপলক প্রেমার দিকে চেয়ে রয়েছে নজর যেন আজ সরানো ভীষণ কষ্ট কর।
হৃদয় গুনগুন করে বলেই উঠলো চোখ যে সরাতে পারছি না, আসমান থেকে যেন নেমে এসেছে আমার ঘরে পূর্ণিমার ও চাঁদ। লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো প্রেমা। হৃদয় হেঁটে যেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে প্রেমার চিবুক ধরে চোখে চোখ রাখলো।
হৃদয়:- এই মায়াময় মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কাটিয়ে দিবো হাজারো নির্ঘুম রাত।
প্রেমা:- একদিনেই সব ভালোবাসা উড়িয়ে দিবেন? আমিতো চাই ভালোবাসাটা মন্থরগতিতে এগিয়ে চলুক আমাদের জীবনে। যেন কখনো কোন কারণে কমে যাবার সুযোগ না আসে।
হৃদয়:- একটু একটু করেই কখন জানি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি তোমার মাঝে। তোমার লাল টুকটুকে ঠোঁট লজ্জায় রাঙা চোখ সব কিছুর মায়ায় পরে গেছি।
— প্রেমা হাসতে হাসতে এমনি কথা বলে কত রমণীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন? হৃদয়ও প্রেমার হাসির সাথে যোগ দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো প্রেমার দিকে। সে হাতে ভরসা রেখে প্রেমাও শক্ত করে চেঁপে ধরলো হৃদয়ের হাত। একপা দু’পা করে এগিয়ে চললো দু’জন ছাঁদের সিঁড়ি ধরে উপরের দিকে। দু’জন ছাঁদে উঠে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো আকাশ মেঘলা। হঠাৎ করেই চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠলো, ছাঁদের ঠিক মাঝ বরাবর একটা টেবিল রাখা তার উপর সুন্দর করে একটি কেক আর তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে, রিমি, মিহি আর মা বাবা। এমন দৃশ্য দেখে চোখের কোনে পানি জমে গেলো প্রেমার না এটা কষ্টের নয় আনন্দের পানি। টপ করে গাল বেয়ে পানি পরার ঠিক আগ মুহুর্তে হৃদয় প্রেমার গালে হাত দিয়ে সে পানি মুছে দিয়ে ইশারায় বললো এটা কান্না করার মুহুর্ত নয়। দু’জন এগিয়ে গেলো সে টেবিলের দিকে। কেক কাটার জন্য ফু দিয়ে মোমবাতি নিভাবেই সকলে এক সাথে হাত তালি দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো প্রেমাকে। প্রেমার কাছে সব কিছু যেন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। কেক কেটে একে একে সবার মুখে তুলে দিচ্ছে প্রেমা। তবে সে সময় যেন তার হাতটা কেঁপে উঠছে। হৃদয় শক্ত করে তার হাতটা চেঁপে ধরে সাহস যোগায়। একে একে ছাঁদ থেকে সবাই নেমে যায়, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকে প্রেমা আর হৃদয়। প্রেমা হঠাৎই শক্ত করে হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করে। এক জীবনে এর চেয়ে বেশী কিছু পাবার নেই আর আমার।
হৃদয়:- প্রেমার পিঠের উপর হাত রেখে এখনো আমাদের সারা জীবন পরে রয়েছে।
— রাতের আঁধার যেন বেড়েই চলেছে, চারিপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে, এই বুঝি বৃষ্টি নামে। তবুও আজ নিচে নামতে ইচ্ছে করছে না প্রেমার। হঠাৎ করেই ছাঁদের দরজার সামনে থেকে রিমি ডেকে উঠলো। প্রেমা হৃদয়ের বুক থেকে নিজেকে সরিয়ে তার দিকে তাকালো।
#চলবে…