হারানো_সুর-১২তম পর্ব(ভ্রমণ+সারপ্রাইজ নাইট) ©শাহরিয়ার44এএতত্ত্ত্ত্ত্ত্ত্ৎT

0
4976

#হারানো_সুর-১২তম পর্ব(ভ্রমণ+সারপ্রাইজ নাইট)
©শাহরিয়ার

প্রেমা রিমির দিকে রাগী রাগী চোখে তাকালো। হৃদয় ঘাটে থাকা মাঝিকে বললো তারা কিছু সময় নৌকায় ঘুরবে। মাঝি নৌকা রেডি করতেই সকলে উঠে বসলো নৌকাতে। প্রেমা কখনোই নৌকায় উঠেনি। পাল বিহীন নৌকা বাতাসে দোল খাচ্ছে। প্রেমা ভয়ে শক্ত করে হৃদয়ের হাত চেঁপে ধরে রেখেছে। রিমি বসে এক হাতে পানি নিয়ে খেলা করছে। মাঝে মাঝে মেঘেদের দল মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য আর দৃশ্য আরও সুন্দর উপভোগ্য করে তুলেছে প্রেমার আকাশি রঙের শাড়িটা, আকাশ যেন আজ নিচে নেমে এসে হৃদয়ের বুকের সাথে মিশে রয়েছে, মাঝে মাঝেই বাতাসে দোল খাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’হাত মেলে ধরছে প্রেমা হৃদয়ের বুকের সাথে নিজের মাথা লাগিয়ে। রিমি সে সময়ের সে দৃশ্য গুলো ক্যামেরা বন্দী করতে একটুও কার্পণ্য করছে না। মাঝি অনেকটা দূরে নৌকা ঘুরিয়ে আবার পাড়ের দিকে আসতে শুরু করেছে। তখন গোধূলিলগ্ন। দূরে ছেলে মেয়েরা গরু ছাগল নিয়ে নীড়ে ফেরার পথে দৌড়ে চলছে, শহরের জন বহুল আর বিলাস বহুল জীবনে এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পরে না। হৃদয় একবার দূরের ছেলে মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে একবার প্রেমার দিকে তাকাচ্ছে। এদিকে মিহি আর রিমি পানিতে নানান রকম খেলায় মেতে উঠেছে। বাতাসে প্রেমার খোলা চুল এসে মাঝে মাঝে হৃদয়ের মুখ স্পর্শ করে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হৃদয় বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রেমার চুল গুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করে দিচ্ছে। প্রেমা দারুণ উপভোগ করছে মুহুর্ত গুলো আজ নিজেকে অনেক বেশী সুখি মানুষ মনে হচ্ছে নিজেে কাছে নিজেকে। খুব ইচ্ছে করছে হৃদয়কে জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু পারছে না নৌকার মাঝি আর রিমির দিকে তাকিয়ে কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে। দু’জন টুকটাক কথা বলছে প্রেমা লাজুক লাজুক হাসি দিচ্ছে মাঝে মাঝে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে। পরিবেশটা খুব বেশীই উপভোগ্য লাগছে হৃদয়ের কাছে। হৃদয় প্রেমার কানে কানে বলে উঠলো সুন্দর একটা গ্রাম থেকে বেড়াইয়া আসলে কেমন হয়?

প্রেমা:- মন্দ হয়না কিন্তু কোথায় যাবেন কোন গ্রামে?

হৃদয়:- সেটাই ভাবছি আমি ঠিক কখনো কোন গ্রামে যাইনি ঐভাবে। তাছাড়া আমার সকল আত্মীয় স্বজণদের বাড়িও এই শহরেরই।

প্রেমা:- ওহ মা তাতে কি? আমার দাদা বাড়িতে যেতে পারি। গ্রামে চাচারা আছেন, যদি যাই তাহলে তারা অনেক খুশিই হবে।

হৃদয়:- এই বুড়ো জামাই নিয়ে গেলে তারা খুশি হবে?

প্রেমা:- হৃদয়ের বুকে মাথা গুজে দিয়ে সব সময় এভাবে কথা বলে আমাকে কষ্ট দিতে আপনার খুব ভালো লাগে বুঝি?

হৃদয়:- প্রেমার চুল হাত বুলাতে বুলাতে কষ্ট দিবো কেন? আচ্ছা প্লার করো কবে যাওয়া যায়।

— কথা বলতে বলতে এক সময় নৌকা ঘাটে এসে ভীরলে সকলে নেমে গাড়িতে যেয়ে বসে। গাড়ি বসে হৃদয় রিমিকে বলে তোমাদের গ্রামে বেড়াতে যাবো।

রিমি:- সত্যি জিজু কবে যাবেন?

হৃদয়:- দু একদিনের ভিতর, তুমিও যাবে আমাদের সাথে।

রিমি:- এ আমি কেন? কাবাবের ভিতর হাড্ডি বানাবেন নাকি আমাকে?

হৃদয়:- আরে না তা কেন হবে? বরং তুমি আমাদের সাথে গেলে মিহিকে তোমার সাথে রাখবো। এতে করে আমাদের ঘুরতে সুবিদা হবে।

রিমি:- ওহ কাজের মেয়ে হয়ে যাবো আমি বুঝি?

হৃদয়:- হাসতে হাসতে তা কেন হবে? ছোট গিন্নি হয়ে যাবে।

— হৃদয়ের কথা শুনে প্রেমা আর রিমি দু’জনেই হেসে ফেলে। গল্প করতে করতে সকলে বাড়ি ফিরে আসে। যে যার রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার খেতে চলে আসে ডাইনিং এ। খেতে খেতে প্রেমা বলে যে গ্রামের বাড়িতে যাবে। প্রেমার কথা শুনে বাবা মা দু’জনই খুব খুশি হয়।

বাবা:- ভালোই হবে, কবে যাবি আমাকে জানা, আমি তোর চাচা ফুপুদের ফোন করে বলে দিবো তারা অনেক খুশি হবে।

হৃদয়:- দু’দিন পরেই আমি যেতে চাচ্ছি আপাতত আমার অফিসে কাজ একটু কম পরে আবার কাজের চাঁপ বেড়ে যাবে।

বাবা:- বেশতো তাই হবে আমি ফোন দিয়ে বলে দিবো।

— টুকটাক কথার মাঝে খাবারের পর্ব শেষ হতে, রিমি মিহিকে নিয়ে চলে যায় তার রুমে। প্রেমা আর হৃদয় চলে আসে প্রেমার রুমে। হৃদয় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালাতেই প্রেমা সেখানে এসে দাঁড়ালো। হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে চা খাবেন?

হৃদয়:- না এখন তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। আমার পাশে দাঁড়াও।

প্রেমা:- কষ্টের কিছু নেই, স্বামীর জন্য কোন কিছু তৈরী করতে স্ত্রীদের কষ্ট হয়না।

হৃদয়:- কষ্ট না হলেও আমি চাচ্ছি না তুমি এখন আমার থেকে দূরে যাও।

প্রেমা:- দূরে যাবো কেন? চা বানিয়ে নিয়েই চলে আসবো।

হৃদয়:- কেন আমার পাশে দাঁড়াতে তোমার খারাপ লাগছে বুঝি?

প্রেমা:- হৃদয়ের বুকে মাথা রেখে তা কেন হবে? বরং আমার ভীষণ ভালো লাগে আপনার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত। আপনার বুকে মাথা রাখলে মনে হয় আমি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি নারী।

হৃদয়:- হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে, তাই আর কি কি মনে হয় তোমার?

প্রেমা:- অনেক কিছুই মনে হয় আমার, মনে হয় সারা জীবন এমনি করে আপনার বুকে মাথা গুজে রাখি। ইচ্ছে করে সব সময় আপনার চোখের মাঝে নিজের চোখ রেখে কথা বলি। কেন জানি মনে হয় আপনার চোখের মায়ায় পরে গেছি। আপনার চোখের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাই।

হৃদয়:- আমার চোখে চোখ পরলেইতো তুমি লজ্জায় সে চোখ সরিয়ে নাও।

প্রেমা:- হেসে দিয়ে এটা সত্যি বলেছেন কেন জানি আমি শত চেষ্টা করেও আপনার চোখের দিকে খুব বেশী সময় তাকিয়ে থাকতে পারি না।

— দু’জন গল্প করতে করতে টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। প্রেমা হৃদয়ের বুকে মাথা রেখেই বললো ঘুমাবেন না? এখানে বেশী সময় দাঁড়িয়ে থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে যাবেনতো।

হৃদয়:- ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজলে ক্ষতি কি?

প্রেমা:- ইস কিভাবে বলেন এগুলো আমার ভীষণ লজ্জা করে।

হৃদয়:- ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে প্রেমার ঠোঁটে স্পর্শ করে কোথায় থাকে তোমার এতো লজ্জা? এই যে আমার বুকে মাথা রেখে সুখ খুঁজে পাও তবে লজ্জা আসে কোথায় থেকে?

প্রেমা:- তাতো জানি না, তবে কেন জানি আপনার মুখ থেকে রোমান্টিক কথা শুনলে সত্যিই আমার খুব বেশী লজ্জা লাগে।

— হৃদয় প্রেমার কথা শুনে হেসে দিয়ে তার ঠোঁট থেকে হাতটা সরিয়ে কোমরের উপর রেখে জোরে চাঁপ দিয়ে মুখটা কপাল পর্যন্ত নামিয়ে নিয়ে এসে আজ তোমার সব লজ্জা দূর করে দিবো। বৃষ্টি যেন মুহুর্তে বেড়ে গিয়ে বাতাসে দু’জন কে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। প্রেমা লজ্জায় নিজের মুখটা খুব শক্ত করে হৃদয়ের বুকের মাঝে চেঁপে ধরে। হৃদয় নিজের ঠোঁট নামিয়ে নিয়ে আসে প্রেমার ঠোঁটে। দু’জন হারিয়ে যায় ভালোবাসার এক অন্য ভুবণে, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হলে প্রেমা নিজেকে সারিয়ে নেবের চেষ্টা করে হৃদয়ের কাছ থেকে হৃদয় প্রেমাে হাত ধরে টান দিতেই আবার প্রেমা তার বুকের সাথে মিশে যায়। হৃদয় দু’হাতে প্রেমার কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নেয়। প্রেমা হৃদয়ের কাঁধের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে এই কি করছেন?

হৃদয়:- তেমন কিছুই না, আপাতত তোমাকে নিয়ে ঘরে যাচ্ছি। তারপর তোমার লজ্জা তারাবো।

প্রেমা:- ইস, বলে নিজের মুখ দু’হাত দিয়ে চেঁপে ধরলো।

— হৃদয় প্রেমাকে নিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে বিছানায় শুয়িয়ে দিতেই প্রেমা হাত সরিয়ে নিলো মুখের উপর থেকে। হৃদয় প্রেমার দিকে চেয়ে রইলো, প্রেমা চোখ সরিয়ে নিতে যাবে ঠিক তখনি, হৃদয় হাত বাড়িয়ে প্রেমার মুখের পাশে হাত দিলো, প্রেমা নিজের চোখ সরিয়ে নিতে পারলো না। হৃদয় নিজের মুখ প্রেমার দিকে নামিয়ে নিয়ে আসতেই প্রেমা চোখ বন্ধ করে নিলো। হৃদয় প্রেমার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর আলতো করে চুমু দিয়ে প্রেমার ঠিক কপাল থেকে ঠোঁট পর্যন্ত নিজের একটা হাতের আঙ্গুল নিয়ে আসলো। বাহির থেকে শোঁ শোঁ শব্দ করে ঘরেে ভিতর বাতাস ঢুকছে, বাতাসে পুরো মুহুর্তেই যেন পুরো ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টির গতি যেন প্রতি মুহুর্তে বেড়েই চলেছে, এক মধুময় সময় পার করছে প্রেমা, প্রথম রাতের সে ভয় আজ আর নেই, আজ আর হৃদয়কে প্রেমার অপরিচিত কেউ মনে হচ্ছে না। বরং সব চেয়ে আপনজন মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সব চাওয়া পাওয়া সমস্ত ভালোবাসা এই মানুষটাকে ঘিরে প্রেমার। কোন ভাবেই এই মানুষটাকে হারাতে চায় না প্রেমা। রাতের গভীরতা আর আষাঢ়ের বৃষ্টি দু’টোই বেড়ে চলেছে, বেড়ে চলেছে প্রেমা আর হৃদয়ের ভালোবাসাও।

— হঠাৎ করেই হৃদয় প্রেমার কপালে চুমু এটে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুভ জন্মদিন প্রেমা।

প্রেমা:- চমকে চোখ মেলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঠিক বারোটা বেজে এক মিনিট। অথচ প্রেমা ভেবেছিলো হয়তো অনেক রাক হয়ে গিয়েছে আর আজ তার জন্মদিন এটাও ভুলে গিয়েছিলো। প্রেমা হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এটা আমার জীবনের সব চেয়ে স্পেশ্যাল জন্মদিন হয়ে থাকবে আমি যতদিন বেঁচে থাকবো।

হৃদয়:- বিছানার বালিশের নিচে থেকে এক জোড়া নুপুর নিয়ে নিজ হাতে প্রেমার পায়ে পরিয়ে দিতে দিতে তোমার জন্য নিয়ে এসেছিলাম।

— এতোটা ভালোবাসা দেখে প্রেমার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরতে শুরু করলো।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here