#হারানো_সুর-১০ পর্ব (সারপ্রাইজ)
©শাহরিয়ার
হৃদয়:- বৃষ্টিতে ভিজবে?
প্রেমা:- বৃষ্টি কোথায় পেলেন? আমাদের এখানে আকাশ থমথমে তবে বৃষ্টি শুরু হয়নি।
প্রেমা:- আমার এখানে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, আমি হাত বাড়িয়ে দেই বৃষ্টিতে তুমি ভিজে নিও।
প্রেমা:- ইস কি ঢং,
হৃদয়:- উহু ঢং হবে কেন সত্যি বলছি।
প্রেমা:- কিছুটা সময় চুপ থেকে খেয়েছেন রাতে?
হৃদয়:- না কিছুক্ষণ আগেই বাসায় ফিরলাম ফ্রেস হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হতেই ঝুম বৃষ্টির শব্দ কানে আসলো। তাইতো এসে ব্যালকনিতে দাঁড়ালাম।
প্রেমা:- শুধু কি এই জন্যই ফোন দিয়েছেন?
হৃদয়:- হ্যাঁ কেন আর কি কোন কারণ থাকার কথা?
প্রেমা:- না তা হবে কেন? এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।
হৃদয়:- আচ্ছা মিহি কোথায়?
প্রেমা:- মিহি ঘুমিয়ে আছে, জার্নি করে এসে এতো সময় খেলা করেছে তাই হয়তো ক্লান্ত লাগছে। ঢেকে দিবো ওকে?
হৃদয়:- না না থাক।
প্রেমা:- আচ্ছা ঠিক আছে,
হৃদয়:- আর হ্যাঁ মিহিকে দেখে রেখ সাথে নিজের ও খেয়াল রেখ।
প্রেমা:- জ্বি আপনিও নিজের আর বাবা মায়ের খেয়াল রাখবেন।
হৃদয়:- হ্যাঁ তাতো অবশ্যই, তোমাকে খুব মিস করছিলাম।
প্রেমা:- ওহ মা কেন? কেবল মাত্রইতো আসলাম।
হৃদয়:- কেন এর কোন উত্তর নেই, হয়তো বৃষ্টি হচ্ছে আর তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করো তাই হয়তো মিস করছি। নয়তো খুব অল্পতেই তুমি আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছো সেই জন্য তোমাকে মিস করছি। হয়তো আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। কিংবা কোন কারণ ছাড়াই তোমাকে মিস করছি।
প্রেমা:- হুম হয়েছে বুঝতে পেরেছি, কারণে হোক আর অকারণে হোক মিসতো করছেন এটাই হলো কথা।
হৃদয়:- হ্যাঁ,
— দু’জন ফোনে কথা বলতে বলতে প্রেমার এখানেও বৃষ্টি শুরু হলো। প্রেমা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করে বললো ভিজতে শুরু করেছি। অনেকটা সময় দু’জন ফোনে কথা বলে একটা সময় ফোন রেখে দিলো হৃদয়। প্রেমা মনে মনে অনেক খুশি হলো, নিজেকেই নিজে বললো হৃদয়ের মনের কোথাওতো আমার জন্য জায়গা আছে। আমার অনুপস্থিতি তাকে আমাকে নিয়ে ভাবায় আর এই ভাবনাটাই এক সময় ভালোবাসায় পরিণত করতে হবে আমাকে। দু’হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করে তা নিজের মুখে ছিটিয়ে দেয় প্রেমা। কিছুক্ষণ পর রিমি রুমের ভিতর ঢুকে কিরে আপি ডিনার করবি না?
প্রেমা:- হ্যাঁ করবো, তার আগে বল তুই আমার সম্পর্কে কি কি বলেছিস উনাকে?
রিমি:- উনাকে মানে কাকে?
প্রেমা:- রিমির কান টেনে ধরে কাকে তুই জানিস না?
রিমি:- আপু লাগছে ছেড়ে দে বলছি,
— প্রেমা রিমির কান ছেড়ে দেয়, রিমি প্রেমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে জিজুকে কি বলছি কেন তোকে কিছু বলছে নাকি?
প্রেমা:- হ্যাঁ বলছেইতো, তুই নাকি বলেছিস আমি নাচতে পারি গাইতে পারি?
রিমি:- না ইয়ে মানে হ্যাঁ ভুল করে বলে ফেলেছিলাম। এখন তাড়াতাড়ি মিহিকে নিয়ে চলো ডিনার করে এসে ঘুমাবে।
প্রেমা:- হ্যাঁ চল,
— প্রেমা মিহিকে ঘুম থেকে তুলে তিনজন এক সাথে ডিনার করে নিলো। ডিনার শেষে মিহিকে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পরলো। মিহির চুল গুলো হাত দিয়ে নেড়ে দিচ্ছে প্রেমা, কেন জানি ঘুম আসছে না। বার বার শুধু হৃদয়ের কথা মনে পরছে। এদিকে বিছানায় শুয়ে হৃদয়ও ছটফট করছে পুরো বিছানা শূন্য শূন্য লাগছে হৃদয়ের কাছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই। হৃদয় বুঝতে পারছে প্রেমা ঘর এবং মন দুই জায়গায় দখল করে নিতে শুরু করেছে। দু’জন দু’জনকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে গভীর রাত হয়ে গেলো। হৃদয় আর বিছানায় শুয়ে থাকতে পারলো না। উঠে চলে গেলো সেই রুমটায় সারা রাত জেগে ছবি আর্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে। এদিকে প্রেমা বিছানার এপাশ ওপাশ করছে কতক্ষণ, কতক্ষণ প্রেমার চুল হাতিয়ে দিচ্ছে। শেষ রাতের দিকে গভীর ঘুম এসে দু’চোখ বন্ধ হয়ে গেলো প্রেমার।
— সকাল আটটা তখনো বাড়ির সকলে ঘুমে, একের পর এক কলিং বেল বেজেই চলেছে, প্রচণ্ড বিরক্ত নিয়ে চোখ মেলে তাকালো প্রেমা। ইচ্ছে না থাকার পরেও মিহিকে হাতের উপর থেকে নামিয়ে রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলো দরজা খুলে দেবার উদ্দেশ্যে। যদিও শরীরটা চলতে চাচ্ছে না তবুও জোর করে হাঁটা শুরু করলো সে। দরজা খুলতেই যেন শরীর থেকে সব ক্লান্তি মুহুর্তেই হারিয়ে গেলো। বিশাল বড় সাইজের দু’টো রুই মাস নিয়ে হৃদয় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে আনন্দের হাসি নিয়ে প্রেমা হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো আপনি এতো সকালে এখানে?
হৃদয়:- এখানে দাঁড়িয়েই বললো? নাকি ভিতরেও ঢুকতে বলবে? নাকি আমি আসাতে বিরক্ত হয়েছো?
প্রেমা:- সরি সরি ভিতরে আসুন। বিরক্ত হবো কেন বরং আমি সারপ্রাইজড হয়েছি। কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
— হৃদয় ভিতরে ঢুকতেই রিমি দরজা খুলে বের হলো। হৃদয় কে দেখে চিৎকার করে মা বাবাকে ডাকতে শুরু করলো। রিমির চিৎকার শুনে মা বাবা তাড়াতাড়ি ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসলো। জামাইকে দেখে দু’জনে অনেক খুশি হলো। প্রেমার মা চলে গেলেন রান্না ঘরে তাড়াতাড়ি নাস্তা বানানোর জন্য। প্রেমাও মায়ের পিছু রান্না ঘরে ঢুকতেই মা রাগানিত কণ্ঠে বলে উঠলেন তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে হৃদয়কে সময় দেবার জন্য। সে আজ প্রথমবার এ বাড়িতে এসেছে। প্রেমা কিছু বলতে চেয়েও আবার ফিরে আসলো হৃদয়ের কাছে। হৃদয়েরর এক পাশের সোফায় রিমি বসেছে আরেক পাশে প্রেমা।
রিমি:- ভাইয়া এতো সকাল সকাল এতো বড় মাছ কোথায় পেলেন?
হৃদয়:- এইতো তোমাদের গাজিপুরেই পেয়েছি আড়ৎ এর সামনে দিয়ে আসার সময় চোখে পরলো তাই নিয়ে আসলাম।
রিমি:- হুট করে কাউকে না জানিয়ে চলে আসলেন?
হৃদয়:- তোমাদের সারপ্রাইজ দিবো বলে।
— কথাটা বলেই হৃদয় প্রেমাে দিকে তাকালো।
রিমি:- বুঝি বুঝি সারপ্রাইজ না কি আসলে সত্যি হলো আমার বোনকে ছাড়া এক রাত থাকতেই আপনার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে।
— কথাটা বলেই হাসতে শুরু করলো রিমি, প্রেমা একটা দমক দিলো রিমিকে। হৃদয় বলে উঠলো ওকে দমক দিয়ে কি হবে, আসলেই হয়তো আমার কষ্ট হচ্ছিলো, না হলে সেই ভোরে সত্যিই কি আমি রওনা হতাম?
প্রেমা:- হয়েছে আপনারা বসে গল্প করেন আমি মিহিকে তুলে নিয়ে আসছি। আপনাকে দেখলে মিহি অনেক খুশি হবে।
— বলে প্রেমা উঠে রওনা হলো নিজের রুমের দিকে। রিমি আর হৃদয় বসে গল্প করছে। অল্প সময়ের ভিতর নাস্তা রেডি হয়ে গেলেই মা রিমিকে ডাক দিলো। ততক্ষণে প্রেমা মিহিকে তুলে ফ্রেস করিয়ে নিয়ে আসলো ডাইনিং এ। বাবাকে দেখে মিহি অনেক খুশি হলো। সকলে মিলে এক সাথে নাস্তা করে নিলো। নাস্তা শেষে প্রেমার বাবা উঠে বাজারের জন্য বাহিরে চলে গেলেন। রিমি মিহিকে নিয়ে নিজের রুমে আর মা রান্না ঘরে চলে গেলেন। সবার উদ্দেশ্য প্রেমা আর হৃদয়কে একান্তে কথা বলার জন্য সুযোগ করে দেয়া। দু’জনেই ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।
প্রেমা:- এখানেই বসে থাকবেন?
হৃদয়:- তো কি করবো?
প্রেমা:- আমার রুমে চলুন জার্নি করে এসেছেন রেস্ট করবেন।
— বলে উঠে দাঁড়ালো প্রেমা হাঁটা শুরু করলো নিজের রুমের দিকে। হৃদয়ও প্রেমাকে অনুসরণ করে ওর রুমের দিকে রওনা হলো। রুমে আসতেই চারিদিকে তাকিয়ে গুছানো রুমটা দেখে আনন্দে মন ভরে উঠলো হৃদয়ের। বুক সেল্ফ ভর্তি করা নানান রকম বই। ব্যালকনিতে ছোট ছোট টবে ফুল গাছের চাড়া লাগানো। সেখানে নানান রকম বাহারি ফুল ফুটে রয়েছে। মুগ্ধ হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে হৃদয়।
হৃদয়:- তোমার পছন্দ আছে বলতে হবে। এতো এতো সুন্দর পছন্দের জিনিসের ভিতর একমাত্র আমিই মনে হয় তোমার অপছন্দের হয়ে গেলাম।
প্রেমা:- হেসে দিয়ে আমি কি বলেছি আপনি আমার পছন্দের নন।
হৃদয়:- সরাসরি না বললেও প্রথম রাতেই কিন্তু বলেছো খবরদার আমার সাথে জোর করে কিছু করতে আসবেন না।
— কথাটা বলেই হৃদয় হেসে দিলো, তার হাসির সাথে প্রেমাও হাসতে শুরু করলো। দু’জন দু’জনের দিকে চেয়ে হেসে চলেছে। যেন দু’জন দু’জনার জনম জনমের আপনজন।
প্রেমা:- হাসি থামিয়ে হুম বলেছিলাম, তখন আপনাকে দেখে খুব ভয় ভয় লাগছিলো।
হৃদয়:- কেন এখন ভয় লাগে না?
প্রেমা:- ইহু, মানুষটা যে এতো ভালো তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি।
হৃদয়:- বুড়ো মানুষতো তাই বুঝতে হয়তো কষ্ট হচ্ছে তোমার।
প্রেমা:- শুনেন ভালোবাসার কোন বয়স লাগে না। আর আপনার এমন কি বা বয়স হয়েছে যে নিজেকে বুড়ো ভাবছেন?
— প্রেমার কথা শুনে হৃদয় অপলক হৃদয় চেয়ে রইলো প্রেমার দিকে। অমন চাহনিতে প্রেমা অনেকটা লজ্জা পেয়ে গেলো। হৃদয়ের চোখে খুব বেশী সময় তাকিয়ে থাকতে পারলো না। এর মাঝে ঘরের ভিতর ঢুকে পরলো মিহি প্রেমা উঠে মিহিকে নিয়ে রওনা হলো ব্যালকনির দিকে। হৃদয় অপলক চেয়ে রইলো প্রেমার দিকে, এমন সময় রিমি এসে হৃদয়কে বললো কি জিজু মন খারাপ নাকি?
হৃদয়:- হেসে দিয়ে এতো সুন্দরি শালিকা আছে যার সে কি মন খারাপ করে বসে থাকতে পারে?
— বলতেই দু’জন হেসে দিলো।
#চলবে…