#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_৮(নতুন অধ্যায়)
#লেখক_দিগন্ত
মেঘলা আজ অনেকদিন পর বেলকনিতে বসে তৃপ্তির শ্বাস নিচ্ছে।আজ তার আর কোন চিন্তা নেই, কোন বিপদের আশংকা নেই।এই নিশ্চিত জীবনের আশায়ই তো নিজের প্রাণপ্রিয় মানুষটাকে কারাগারে পাঠিয়েছে সে।মেঘলা উপর উপর যতই ভালো থাকার চেষ্টা করুক।ভিতরে ভিতরে নিলয়ের স্মৃতি তাকে কষ্ট, তাকে অনুভব করায় হারানোর বেদনা।
কিন্তু মেঘলা তার আবেগকে খুব ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে গেছে।এখন আর সেই অপরাধী মানুষটার জন্য তার আগের মতো কষ্ট হয়না।হ্যাঁ তার কথা মনে পড়লে মন খা খা করে।তবে তাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছে মেঘলা।
লামিহার সাথে সারাক্ষণ খেলাধুলা করে সময় চলে যায় নিলার।খালার সাথে এই কয়দিনে তার বেশ ভালোই ভাব হয়ে গেছে।বাবার কথা মনে পড়লে নিলাও মাঝে মাঝে কষ্ট পায়।তবে সেও মেঘলার মেয়ে।এক অপরাধীর জন্য কষ্ট পেয়ে নিজের সুন্দর মুহুর্তগুলো নষ্ট করতে চায়না নিলা।
_________
নিলয়ের সাথে কারাগারে কেউ দেখা করতে আসে।তাকে দেখেই নিলয়ের মুখে হাসি দেখা যায়।
নিলয় সেই লোকটিকে বলে,
-“সব পরিকল্পনামাফিক চলছে তো?”
-“জ্বি।ওনার নির্দেশেই সব চলছে।উনি আমাদের যেভাবে সবকিছু করতে বলছে আমরা সেভাবেই সব করছি।”
-“এবার মেঘলা আর রুদ্র টের পাবে তারা কতবড় ভুল করেছে।এইসব কাজে আমি একা নই আমার সবথেকে বড় অংশীদারও আছে।সে আমাকে নিজের প্রয়োজনে হলেও বাঁচাবে।আর সাথে তোমাদের দুজনের ব্যবস্থ্যাও করবে। হা হা হা।”
অট্টহাসিতে ফে*টে পড়ে নিলয়।
__________
আজ নিলার জন্মদিন তাই বাড়িতে সবাই আয়োজনে ব্যস্ত।মেঘলাও অনেক খুশিমনে সব আয়োজন করতে থাকে।রুদ্র,রুশা,সুমি,মেহেদী,মরিয়ম,লতিফা বেগম,লামিহা সবাই উপস্থিত।
লতিফা বেগম এখন মেঘলার সাথেই থাকে।নিজের স্বামী আর সন্তানের ব্যাপারে সব জানতে পেরে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন।তার স্বামী যে ভালো মানুষ নয় সেটা তিনি জানতেন।কিন্তু তাই বলে যে তিনি এত খারাপ সেটাও তিনি কল্পনা করতে পারেন নি।আর নিজের ছেলের উপর তার ছিল অগাধ বিশ্বাস।নিলয় যে তার বাবার মতো হবে সেটা লতিফার কাছে অবিশ্বাস্য।
এখন অবশ্য নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছেন তিনি।ভেবে রেখেছেন আর কুপুত্রের কথা ভেবে কাঁদবেন না।
মেঘলা রান্নাবান্নায় ব্যস্ত ছিল হঠাৎ তার কাছে একটি উড়ো চিঠি আসে।কেউ একজন জানালা দিয়ে তার দিকে একটি চিঠি ছু*ড়ে মা*রে।চিঠিতে স্পষ্ট লেখা,
-“নিজের সবথেকে বড় শত্রুর ব্যাপারে জানতে চাইলে চুপচাপ আজ রাতে পুরাতন ব্রিজের পাশে চলে এসো।যদি না আসো তাহলে কিন্তু নিজের অনেক বড় ক্ষতি করবে।”
চিঠিটা পেয়ে মেঘলা ভয়ে কাপতে থাকে।এ আবার কোন নতুন বিপদ এসে উদয় হলো? মেঘলা তো ভেবেছিল তার সামনে আর কোন বিপদ নেই।কিন্তু বিপদ যেন কোনভাবেই তার পিছু ছাড়তে নারাজ।তাই নিজের মনকে শান্ত করল সে।চিঠিতে তাকে একা যেতে বলা হয়েছে।তাই মেঘলা সিদ্ধান্ত নেয় আজ রাতে একা একা যাবে।তারপর জানতো পারে কে তার সবথেকে বড় শত্রু।মেঘলা জানত দেশে বিদেশে নিলয়ের অনেক সহযোগী আছে।নিলয় এখনো কারো নাম বলেনি।তাদের মধ্যে কেউ হয়তোবা।তার পরিচয় জানাটা খুবই জরুরি।
_______
রাতে একা একা পুরাতন ব্রিজের কাছে এসে কাউকে দেখতে না পেয়ে মেঘলা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে।তারপরেও কাউকে দেখতে না পেয়ে মেঘলা সেখান থেকে চলে যেতে ধরে তখনই কেউ হঠাৎ এসে ব্রিজের সামনে একটা বস্তাবন্দি লা*শ ফেলে যায়।
মেঘলা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর তড়িঘড়ি করে কোথাও লুকানোর চেষ্টা করে।কিন্তু কোন লাভ হয়না।লোকটি তাকে দেখে ফেলে এবং প্রমাণ লোপাট করার জন্য তারদিকে তেড়ে আসে।
মেঘলা ছুটতে থাকে।আজ তার নিজের জীবনের কথা ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে।সবকিছু কি তাহলে তাকে হারাতে হবে? আজই কি তার শেষ দিন? নিলাকে শেষবারের মতো কি দেখতেও পারবে না?
মেঘলা একটি পুরাতন বাড়িতে ঢুকে বসে থাকে।এটাই তার শেষ আশা।হয়তো লোকটি তাকে দেখতে না পেয়ে পালিয়ে যাবে আর নাহলে আজই এই পৃথিবীতে তার শেষ দিন।সবকিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দিল মেঘলা।এখন আল্লাহ যা চান তাই সে মেনে নেবে।শুধু আল্লাহর কাছে নিজের মেয়ের জন্য দোয়া করতে থাকে মেঘলা।
অন্যদিকে>>>
জেলে বসে অট্টহাসিতে ফে*টে পড়ে নিলয়।মেঘলাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘নিশ্চয়ই খুব করে নিজের জীবন ভিক্ষা চাচ্ছ এখন মেঘলা।তুমি কোন চিন্তা করোনা তোমার জীবনের এই চাওয়াটা আমি অপূর্ণ রাখব না।বাঁচবে তুমি কিন্তু আর কিছুক্ষণ মাত্র।তারপরেই চিরকালের মতো তোমার জীবন থমকে যাবে।’
___________
মেঘলাকে অনেকক্ষণ খুঁজে না পেয়ে বাড়িতে সবাই খুব চিন্তিত।নিলাও জেদ ধরে বসে আছে তার মা না আসলে সে কেক কা*টবে না।
মেহেদী আর রুদ্র তখন মেঘলাকে খুঁজতে বেরিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ খুঁজে মেহেদী বাড়িতে ফিরে আসে।তখনই ঘটে যায় এক অঘটন বাড়িতে হঠাৎ করে কিছু সন্ত্রা*সী ঢুকে পড়ে।
মেহেদী তাদের আটকানোর চেষ্টা করে।মেহেদী তাদের বলে,
‘কে তোমরা? কি চাও?’
একজন এগিয়ে এসে মেহেদীর পেটে ছু*রি ঢুকিয়ে দেয়।সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মেহেদী।মেহেদীর এই অবস্থা দেখে সুমি ছুটে আসে।তখন কয়েকজন মিলে সুমিকে জোর করে ধরে একটি রুমে চলে যায়।তারপর সুমির সাথে জোর জবরদস্তি করতে থাকে।
মরিয়ম,লতিফা,লামিহা আর নিলা এই অবস্থা দেখে বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে।
মরিয়ম আর লামিহা লতিফাকে বলে,
-“আপনি নিলাকে নিয়ে চলে যান।আমরা এদের সামলাচ্ছি।”
লতিফা নিলাকে নিয়ে পালিয়ে যায়।কয়েকজন তাদের পিছু করতে থাকে।
সন্ত্রা*সীরা মরিয়মের বুকেও ছু*রি চালিয়ে দেয়।লামিহা চিৎকার করে বলে ওঠে,
-“আম্মু।”
এরপর সন্ত্রাসীরা লামিহার সাথেও জোর জবরদস্তি করতে থাকে।
_________
মেঘলা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর নিরাপদ বোধ করে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।
বাড়িতে এসে যা দেখে তা মেঘলাকে অবাক করে দেয়।সে দেখে পুলিশ রুদ্রকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।মেঘলা এগিয়ে যেতে ধরবে তখনই কেউ তাকে টেনে নেয়।
মেঘলাকে টেনে একটি গাড়িতে তোলে নিলয়।তারপর তাকে আবার সেই পুরাতন ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়।
মেঘলা নিলয়কে জিজ্ঞাসা করে,
-“আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন? আর রুদ্রকেও বা পুলিশ ধরল কেন?”
নিলয় জোরে জোরে হাসতে হাসতে বলে,
-“আমি তোর পুরো পরিবারকে খু*ন করিয়েছি।এখন তোর পরিবারের কেউ আর জীবিত নয়।রুদ্রকে ওর মেয়েকে মে*রে ফেলার ভয় দেখিয়ে সব দোষ স্বীকার করে নিতে বাধ্য করেছি।তার সাথে আমার সব অন্যায়ের দায়ও রুদ্র নিয়েছে।তাহলে বলো কেমন প্রতিশোধ নিলাম।এবার তোমার পালা মেঘলা।তুমি তো নিজের পুরো পরিবারকে হারিয়ে হারানোর বেদনা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছ।এবার তোমাকেও ম*রতে হবে।আর তোমায় কে মা*রবে জানো? আমার পার্টনার।তাকে দেখতে চাওনা।”
আড়াল থেকে নিলয়ের পার্টনার বেরিয়ে আসে।মেঘলা এতটা অবাক হয় যে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেনা।
-“লামিহা তুই?”
লামিহাও হেসে বলে,
-“হ্যাঁ আমি।আমিই নিলয়ের পার্টনার।নিলয়ের সাথে মিলে আমি সব চ*ক্রান্ত করেছি।এবার তোকে মে*রে আমার ষোলকলা পূর্ণ করব।”
কথাটা বলে মেঘলাকে গু*লি করে দেয় লামিহা।মেঘলার আর কিছু বিশ্বাস হচ্ছিল না।এভাবে আবার আপনজন ধোকা দিল।মেঘলা সাথে সাথে ব্রিজ থেকে পড়ে যায়।
লামিহা হেসে হেসে বলে,
-“আজ তোর মৃত্যুর মাধ্যমে একটা অধ্যায় শেষ হলো।”
নিলয় বলে,
-“আর এখান থেকেই শুরু হলো নতুন অধ্যায়।”
(চলবে)