হারানোর বেদনা পর্ব ১৬

0
540

#হারানোর_বেদনা
#পর্ব_১৬(মহাধামাকা পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
-“সব সত্য জানার জন্য আপনাকে আমায় বিয়ে করতে হবে।”
নিহানের প্রস্তাবটা শুনে নিলা অবাক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-“তাহলে তাই করবো।”

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,
নিলার আগে একটি ভিডিও ম্যাসেজ আছে।যেখানে দেখা যায় নিহান ইরিনার মাথায় বন্দু*ক ধরে বলছে,
-“কেন ঠকালে তুমি আমায়? আমাকে ঠকানোর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।”

তারপর শুধু একটা গু*লির শব্দ শোনা যায়।ভিডিওটা দেখে নিলা কাঁদতে থাকে।তারমানে নিহান চৌধুরীই ইরিনার খু*নী।নিলা আর একমুহূর্ত দেরি না করে নিহানের কাছে চলে যায়।নিহানকে গিয়েই ঠাস করে একটা থা*প্পড় মা*রে।নিহান রেগে গিয়ে নিলাকেও একটা থা*প্পড় মারে।যার ফলে নিলার ফোনটা পানিতে পড়ে যায়।নিলা তখন নিহানের কলার ধরে বলে,
-“আপনি যে ইরিনাকে গু*লি করেছেন সেই প্রমাণ আমার কাছে ছিল।আমার ফোনে একটা ভিডিও ছিল।আপনি আমার ফোন ভেঙে কোন লাভ পাবেন না।আমি আবার নতুন প্রমাণ নিয়ে আসবো।”

তখনই নিহান নিলাকে বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়ে বসে।

বর্তমানে,
কাজী ডাকা হয়েছে।নিলা আর নিহান বসে আছে।নিলার মনে আজ অনেক প্রশ্ন ঘুরছে।সেইসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বিয়েটা করা জরুরি।নিলা যে ইরিনার বৃদ্ধা মাকে মৃত্যুর আগে কথা দিয়েছিল ইরিনাকে খুঁজে বের করবে আর যদি ইরিনার কোন ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে ইরিনার যে ক্ষতি করেছে তাকে শাস্তি দেবে।সেই কথা রাখার জন্য নিলা প্রয়োজনে নিজের জীবন দিয়ে দেবে।সেখানে এই বিয়ে তো কিছুই না।নিহান আকাশকে ফোন করে ডাকে বিয়ের সাক্ষী হওয়ার জন্য।আকাশ তো প্রথমে অনেক খুশি হয় নিহানের বিয়ের খবর শুনে।

কিন্তু যখন এসে দেখে পাত্রী আর কেউ নয় নিলা তখন তার সব খুশি মিলিয়ে যায়।আকাশের যেন সবটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না।আকাশ বাকরুদ্ধ হয়ে নিলার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর নীরবতা ভেঙে নিলাকে প্রশ্ন করে,
-“তুমি কি এই বিয়েতে রাজি নাকি বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছ?”

নিলা মুচকি হেসে বলে,
-“আমি নিজের ইচ্ছেতেই সব করছি।”

আকাশ আর কিছু বলে না।তার মনের না বলা অনুভূতিগুলো হয়তো আজীবন মনেই গোপনে আগলে রাখতে হবে।কিন্তু একটা কথা আকাশ কিছুতেই বুঝতে পারছে না।নিহান হঠাৎ করে নিলাকে বিয়ে করতে চাইছে কেন?

নিলাকে প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই।কারণ আকাশ ভালো করেই জানে নিলা কিছু বলবে না।তাই সে নিহানকে গিয়ে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে।নিহানও বলে,
-“আমরা দুজন একে অপরকে পছন্দ করেই বিয়ে করছি।আর কিছুই না।ঐ তো কাজী সাহেব এসে গেছেন।আসুন ভেতরে আসুন।”

কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করেন।আকাশ হয় এই বিয়ের সাক্ষী।সাথে নিহানের আরো কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ও কলিগরাও এসেছিল।নিলার দিকে তাকিয়ে সবার অলক্ষ্যে দু ফোটা চোখের জল ফেলে আকাশ।সে যে নিলাকে পছন্দ করতো।আর আজ কিনা তাকে নিলারই বিয়ের সাক্ষী হতে হচ্ছে।ভাগ্য সত্যিই বড় নিষ্ঠুর।

কাজী সাহেব কবুল বলতে বললে নিহান স্বাভাবিক ভাবে কবুল বলে দেয়।কিন্তু নিলা বেশ থেমে থেকে অনেকক্ষণ চুপ থেকে তারপর কবুল বলে।
কাজী সাহেব বলেন,
-“বিয়ে পড়ানো শেষ।”

সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে মিষ্টি বিলানো শুরু করে।
_______________
রুশার চোখ খুলতেই সে নিজেকে একটি বদ্ধ ঘরে আবিষ্কার করে।রুশার মনে পড়ে হসপিটালের বাইরে আসতেই কেউ একজন তাকে কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে আসে।রুশা চোখ খুলে “help, help” বলে চিৎকার করতে থাকে।

মেঘা তখন তার সামনে এসে বলে,
-“এই মেয়ে এত চিল্লাচ্ছিস কেন? তখন তো আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করলি।এখন তার শাস্তি ভোগ কর।”

রুশা মেঘার দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে 😏 বলে,
-“তুমি কি আমাকে শাস্তি দেবে।আমি দেখো আগে তোমার সাথে কি করি।”

-“কি করবি তুই?”

রুশা বলে,
-“আমি আগে থেকেই জানতাম তুমি আমার ক্ষতি করতে পারো তাই পুলিশকে জানিয়ে রেখেছিলাম এই ব্যাপারে।তারা এসে পড়লো বলে।”

পুলিশের কথা শুনে মেঘা ভয় পেয়ে এদিক ওদিক তাকায়।কিছুক্ষণ পর পুলিশের গাড়ির সাইরেন বেজে ওঠে।রুশা তো এতে অবাক হয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
-“আমি তো পুলিশকে জানাই নি।এমনি ওকে ভয় দেখানোর জন্য মিথ্যা বললাম তাহলে পুলিশ এলো কোথা থেকে?”

এদিকে পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনে মেঘার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।তখনই পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে।সাথে সাথে রোহানও ভেতরে এসে বলে,
-“আমি আগেই এটা সন্দেহ করেছিলাম।মেঘা তুমি আর কোথাও পালাতে পারবে না।মিরাজ স্যার আমি আপনাকে বলেছিলাম না আপনার মেয়ে এসবের সাথে যুক্ত।এখন নিজেই তো প্রমাণ পেলেন।”

মিরাজ খান দৌড়ে এসে মেঘার গালে একটা থা*প্পড় মে*রে বলেন,
-“তোমাকে আমি এই শিক্ষা দিয়েছি? তুমি কেন ডক্টর আহানের সাথে মিলে নকল ওষুধের ব্যবসা করেছ?”

মিরাজ খানের কথা শুনে রুশা অবাক হয়ে যায়।সে জিজ্ঞাসা করে,
-“মানে? এসব কি বলছেন আপনারা?”

রোহান বলতে শুরু করে,
-“পুলিশ ডক্টর আহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে তার এইসব অন্যায় কাজের ভাগিদার মেঘা।এই কারণেই হসপিটালের প্রেসের লোক এসেছিল।আমি আগে থেকেই ওর উপর পুলিশ দিয়ে নজর রাখছিলাম।ইন্সপেক্টর এরেস্ট হার।”

পুলিশ মেঘাকে এরেস্ট করে নিয়ে যায়।মেঘা যাওয়ার সময় রোহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তোমায় আমি ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু আজ সব ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হলো।এতদিন আমার ভালোবাসা দেখেছ এখন ঘৃণা দেখবে।”

মেঘাকে নিয়ে যাওয়ার পর রোহান এসে রুশাকে বলে,
-“তুমি ঠিক আছো তো?”

-“জি, আমি একদম ঠিক আছি।”

-“চলো আমার সাথে।”

রুশা একবাক্যে রোহানের সাথে চলে যায়।আজকাল তার প্রতি ভালো লাগাটাও অনেক বেড়ে গেছে
___________
সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে আসল নিহান।নিহানের মা আঁখি বেগম তো এই দৃশ্য দেখে কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।তিনি অনেকদিন থেকে নিহানকে বিয়ের জন্য জোরাজুরি করলেও সে বিয়ে করেনি।আর আজ একটা মেয়েকে বিয়ে কিরে এনে ঘিরে তুলেছে।তিনি নিহানকে বলেন,
-“তোর বাবা এখন বাইরে আছেন।আমাকে অন্তত জানাতে পারতি।এভাবে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলি।”

-“জানানোর সময় বা পরিস্থিতি কোনটাই ছিল না আম্মু।”

-“আচ্ছা বিয়েটা যখন হয়েছে তখন তোর বউকে নিয়ে আয়।এই মেয়ে এসো।তোমার নাম কি?”

-“আমার নাম নিলা।”

-“বাহ বেশ সুন্দর নাম।তা তুমি কি করো?”

-“আমি বর্তমানে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছি।”

-“ও তোমার মা-বাবা কি এই বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানে?”

নিলা বলে,
-“আমার মা-বাবা কেউ নেই।বাবা অনেক আগেই মারা গেছে আর বাবা থেকেও নেই।আপন বলতে শুধু দাদী,আঙ্কেল আর একটা বোন আছে।”

-“তারা কিছু জানে না?”

-“না।”

-“তুমি কোন চিন্তা করোনা।নিহানের বাবাকে ফিরতে দাও তারপর আমরা সবাই মিলে ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে দেব।”

নিলা একটা মিথ্যে হাসি দেয়।তার যে এসব ভালো লাগছিল না।নিহান নিলার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়।নিলা এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে বলে,
-“একদম আমায় স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না।হাউ ডেয়ার ইউ?”

-“এখন আমি কিন্তু তোমার স্বামী।তাই আরো অনেক সাহস দেখাতি পারি।”

-“শুনুন বেশি বাজে কথা বলবেন না।আপনার সাথে বাজে কথা বলে নষ্ট করার মতো সময় আমার নেই।সামনে আমার পরীক্ষা সেইজন্য পড়তে হবে।তাছাড়া অনেক রহস্যের সমাধানও করতে হবে।”

কথাটা বলে নিলা বাতরুমের দিকে যায় তখনই তার ফোনে কারো কল চলে আসে।নিলা ফোনটা নিয়ে দেখে রুদ্রর কল।কলটা রিসিভ করতেই রুদ্রর হাপানোর আওয়াজ শুনতে পায়।নিলা ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি হয়েছে আঙ্কেল তুমি এরকম হাপাচ্ছো কেন?”

-“নিলা কোথায় তুমি? তোমাকে একটা কথা জানানোর ছিল।”

-“আমি একটু বাইরে আছি।কি বলবে বলো?”

-“মেঘলা মারা গেছে।”
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here