#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১০ #মান_অভিমান
#নবনী_নীলা
“আমি কারোর উপর রাগ করিনি। আমি কেনো রাগ করতে যাবো?”,বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
“সত্যিই রাগ করোনি?”, প্রশ্ন করলো অভি।
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
অভি বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” এতো কথা শুনার পরও রিয়েক্ট করছো না। তোমার এসবের পর রাগ হচ্ছে না।”
” আমি রাগ করে কি করবো। আপনার জীবন আপনি যা ইচ্ছে করুন।”, নিচু স্বরে বললাম আমি।
” ওকে done। সেটাই করবো।”বলে অভি উঠে চলে গেলো। অভি রেগে গেছে। হটাৎ আমি কি এমন বললাম যে রাগ করলো।এভাবে রাগ দেখিয়ে গেলো কেন?
সকালে আমি ভার্সিটির জন্যে তৈরী হয়ে রওনা দিলাম। অভি সকালেও দরকারের বাহিরে একটাও কথা বললো না। ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস করতেও ভাল্লাগছে না। দুইটা ক্লাস করে আমি বাসায় চলে আসি।
আমি অনেক সময় ধরে রান্না করলাম। তাও সময় কাটছে না।
সারাদিন অভির জন্য অপেক্ষা করলাম অভি এলো অনেক রাতে তার নাকি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিলো।
আমি আর কিছু বললাম না। সারাদিনে একবার আমাকে ফোনও দেয়নি হটাৎ এমন পরিবর্তন। মন মরা করে আমি পড়ার রুমে এসে বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করলাম।
এই রুমটায় একটা সিঙ্গেল খাট, পড়ার টেবিল বিশাল এক বুকশেলফ। বুকশেলফ এ এতো বই যে আমার চুল পেকে যাবে সবগুলো বই পড়ে শেষ করতে।
আগে প্রথম প্রথম আমি এই রুমে থাকতাম। একদিন ঘুমের মাঝে একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুমের মাঝে চিৎকার করেছিলাম। অভি ছুটে নিজের রুম থেকে চলে এসেছিল। ভাগ্যিস সেদিন সে জেগে ছিলো। সারারাত কান্না করে কাটিয়েছিলাম আমি। স্বপ্নটা ভুতের স্বপ্ন ছিলো। পুরো ফ্ল্যাট এ বাতি জ্বালানোর পর আমি একটু শান্ত হয়েছিলাম।
আমি রুমের খাটে শরীর ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। কালকে থেকে আমি ঐ রুমে কম যাচ্ছি। হয়তো সোফার রুমে নয়তো এখানে আসি।
এই রুমটায় অনেক সুন্দর একটা গাছের পেইন্টিং আছে। গাছটার পাতাগুলো নীল এজন্যই পাইন্টিংটা আমার ভালো লাগে।
অভির রাগ কখন ভাঙবে? আমার কি উচিত ওর রাগ কমানোর চেষ্টা করা, জড়িয়ে ধরবো গিয়ে?যদি আমার হাত সরিয়ে দেয় অভি।
কি করেছি সেটাই বুঝতে পারছি না রাগ ভাঙ্গবো কিভাবে? আমি কি রেগে কথা বলেছি? না আমিতো শান্ত ছিলাম। তাহলে……..?
“নওরীন! নওরীন!”অভির গলা, অভি ডাকছে। আমি লাফ মেরে উঠে বসি। তাহলে কি রাগ কমেছে। যাই হোক আমাকে ডেকেছে এই ভেবেই আনন্দ লাগছে। আমার কথা মনে পড়েছে তাহলে।
আমি গিয়ে দেখি অভি পানির জগ থেকে গ্লাস এ পানি ঢালছে। আমি গিয়ে ডায়নিং টেবিলের একটা চেয়ার ধরে দাঁড়ালাম।
অভি ইশারায় জগের পাশে আমার ফোন দেখিয়ে বললো,” তোমার ফোন বাজছে।” আমি ফোনটা এইখানে রেখে হয়তো ভুলে গেছি।
ভাইব্রেশনের কারণে শুনতেও পাইনি। অভি আমাকে ফোনের জন্যে ডেকেছে ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ফোনটা বেজে না উঠলে কি ডাকতো না আমাকে। আমি ফোনটা নিয়ে আগের জায়গায় চলে এলাম।
ভেবেছিলাম অভি কিছু বলবে কিন্তু সে আর কিছুই বলেনি।
অভি নওরীনকে খুঁজতেই এসেছিলো। কারন বাসায় আসার পর থেকে নওরীন অভির আসে পাশে নেই।
অন্যদিন সোফায় বসে টিভি দেখতো আজ তাও করছেনা। রান্না ঘরে আছে কিনা দেখতে এসে দেখে নওরীনের মোবাইল ভাইব্রেট করছে।
নওরীনকে ডাকার ভালো একটা অজুহাত পাওয়া গেছে।
অভি কথা বলছেনা কারণ অভিমান হয়েছে। অথৈ নওরীনকে কম কিছু বলেনি এরপরও নওরীন শান্ত ছিলো।অন্য মেয়ে হলে হয়তো অভিকে নাকানি চুবানি দেওয়াত। অভি নওরীনকে ভালোবেসে ফেলেছে হয়তো কিন্তু নওরীন কি পেরেছে।
অভির একটু অভিমান হয়েছে। কারন সারাদিনে নওরীন তার আসে পাশে ঘুরেনি। টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে অভিকে বিরক্ত করেনি। উল্টা পাল্টা কান্ড কারখানা কিছুই সে করেনি। শান্ত হয়ে আছে।
অভি ফোনটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে গেলো। ইমন ফোন করেছে। একবার না ৭টা মিসড কল উঠে আছে।
নওরীনের ফ্রেন্ড রচনা বলেছিলো ইমন নামের এই ছেলের নওরীনের প্রতি দুর্বলতা আছে, নওরীন ওর ভালো ফেন্ড তাই সে প্রকাশ করেনি। রচনা অভিকে প্রায়
এমন কথা জ্বালানোর জন্যে বলে।
অভি নওরীনকে এতক্ষনে ডেকেও ফেলেছে আগে এই নাম দেখলে সেটা হয়তো করতো না। নওরীনকে আসতে দেখে পানির জগ হাতে নেয়।
নওরীনকে ফোন হাতে অন্য রুমে যেতে দেখে অভির রাগ লাগলো। দুই গ্লাস পানি খেয়ে অভি রুমে চলে যাচ্ছিলো। যাওয়ার আগে নওরীনের রুমে যেতে ইচ্ছে হলো। কি এমন কথা যার জন্য ফোন রুমে নিয়ে যেতে হলো।
আমি রুমে বসে বিরক্তি নিয়ে ইমনকে ফোন দিলাম। ইমন সঙ্গে সঙ্গে ফোন ধরলো।
” কিরে ফোন ধরিসনি কেনো এতক্ষন?”, ওপাশ থেকে বললো ইমন।
” কি জন্য ফোন দিয়েছিস সেটা বল।”
” ৩দিন পর আমাদের একটা অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। তুই তো ক্লাস না করে চলে গেছিস তাই জানানোর জন্য ফোন দিয়েছি। তোর ইমেইল চেক করলে পেয়ে যাবি সব।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”, নিচের ঠোঁট উল্টে বললাম।
অভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিকে জানালার দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নওরীন বসে আছে। ইমন কথা বলছে, ইমন মাঝে মাঝে মজার কথা বলে।
কথাগুলো সত্যি না মিথ্যা নওরীন জানে না কিন্তু শুনে হাসি থামানো যায় না।
ইমন বলছে,” জানিস আজকে কি হয়েছে? আজকে রিক্সাওয়ালার টায়ার গেলো ফুটো হয়ে। বাধ্য হয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম জানিসই তো আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাটি। ইটের সাথে ঊষ্ঠা খেয়ে একটা মহিলা কুকুরের লেজে একটু পারা পরে। বিশ্বাস করবি না বউ জামাই মিলে আমাকে তাড়া করেছে। ১০ মিনিটের রাস্তা ৪মিনিটে এসেছি। বউয়ের প্রতি কুকুরের ভালোবাসা দেখে আমি বিমোহিত।”
নওরীন হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুয়ে পড়তেই তার চোখ গেলো দরজার দিকে অভি বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
নওরীন হাসি থামিয়ে উঠে বসলো। অভির চোখ মুখ শক্ত।
অভির কথায় নওরীনকে সে এভাবে কখনো হাসতে দেখেনি। অভির রাগ হচ্ছে কিন্তু রাগ সে দেখাতে পারছে না বলে আরো রাগ হচ্ছে। নওরীন ফোন কেটে দিয়ে উঠে দাড়ালো।
নওরীন বুঝতে পারছেনা অভি কখন থেকে এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
অভি ভারী গলায় বললো,” কালকে রাতের বাসে আমরা বাড়ি যাচ্ছি। জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখো অফিস থেকে ফিরে তোমাকে নিয়ে যাবো।”
নওরীন ক্ষীণ গলায় বললো,” হটাৎ কালকে!”
” জানি না মা যেতে বলেছে।”
” কয়দিনের জন্য যাচ্ছি?”
” দুইদিন “, বলেই অভি মুখ ঘুরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
নওরীন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না কারণ অভি নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। নওরীনের কান্না পাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে অভির সামনে বসে কাদতেঁ তখনও কি সে রাগ করে থাকবে?
[চলবে]