স্বর্ণলতা part 6

0
605

#স্বর্ণলতা
পর্বঃ০৬
________________________________
রূপককের মা কিছুতেই মানতে চাচ্ছেন না এটা তার ছেলের সন্তান।সে তার ফোনে আসা প্রত্যেকটা মেসেজ তার ছেলের ফোনে আসা প্রত্যেকটা মেসেজ উন্মুক্ত করলো।সে দেখতে চায় এ মেসেজ কেনো তাদের দেওয়া হয়েছে।এবার স্বর্ণলতা চুপ করে থাকতে পারলো না।তার নিশ্চুপ থাকা আর শোভা পাচ্ছেনা।

—“আম্মা আপনার ফোন টা আমাকে দেন তো।
আমি দেখবো কি মেসেজ আসছে।আর আম্মা ওনার ফোনে কি মেসেজ আসছে আমি তা দেখেছি।”
এ কথা শোনা মাত্রই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো রূপকের মা।ঝংকার দিয়ে বললো-
—“তুমি দেখেছো?আর তারপর কি করছো?এতোদিন চুপ করে ছিলে কেনো?ওহ্ মানে কি বলবা আর!কিছু বলার মুখ তো নাই।”

—”আম্মা আমি যখন এ বাড়িতে আসি আপনি আমাকে বলেছিলেন আমি আপনার সংসারের খাঁটি স্বর্ণ।আমি খাঁটি স্বর্ণ ছিলাম না হয়তো বা।কিন্তু আমি কোন পাপ কাজ করিনি আম্মা।

আর ওনার ফোনে মেসেজ দেখে আমি ওনাকে বহুবার বলার চেষ্টা করেছি।কিন্তু ওনার আমার প্রতি অগাধ আস্থা,বিশ্বাস,ভালোবাসা দেখে আমি ওনাকে কিছু বলিনি।
আর ভেবেছি উনি…..”

—“চুপ করোতো।তুমি অনেক নাটক জানো।নাটক করে আমার ছেলেটাকে আটকে রেখেছো।আমার ভাই আসেনা তোমার জন্য।”

রূপক তার মায়ের এমন কথায় ভীষণ অবাক হলো।কপাল ভাঁজ করে বললো-
—“মা,স্বর্ণের জন্য মামা আসতে পারছেনা?বিষয় টা কেমন?মামা আসবে। এখানে স্বর্ণের কি দোষ?ও কি করেছে?”

—“তুই বুঝবিনা।ও তোর যাওয়া আটকেছে।”

—“না মা ও কিছুই করেনি।আমি নিজেই পিছিয়েছি।আর তোমার এতো সন্দেহ যখন বাচ্চা নিয়ে তাহলে আমি তোমাকে আজকে কথা দিচ্ছি আমি প্রমান করে দিবো স্বর্ণ নির্দোষ।ও পবিত্র।
প্লিজ এগুলো নিয়ে আর কথা বাড়িও না।মানুষ শুনলে ছিঃ ছিঃ করবে।”

রূপককের মা বিলাপ করতে করতে চলে গেলো—
আমার পোড়া কপাল।আমার নাতি আসার সুঃসংবাদে আমি খুশি হতে পারিনা।কোন কালনাগিনী ঘরে তুলেছি আল্লাহ জানে।

—“স্বর্ণ!তুমি চিন্তা করোনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।বাচ্চার প্রতি মনোযোগী হও।তোমাকে শক্ত হতে হবে।আমি বড়জোর আর এক মাস আছি। এই একমাসে আমি সবকিছু প্রমান করে দিবো।আর যখন চলে যাবো তখন তো তোমার দায়িত্ব তোমার নিতে হবে।
শোন স্বর্ণ—
এই পৃথিবীতে আমরা সবাই একা।আমাদের পরিবার আছে তবুও আমরা একাই।সবার নিজস্ব সত্তা,নিজস্ব আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই আমাদের একার ই করতে হয়।
মানুষ বলেনা আমি একা বাঁচবো না।ভুল কথা।মানুষ সবচেয়ে ভালো একাই বাঁচতে পারে।মানুষের সাথে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে সেটা ছায়া।
একমাত্র ছায়াই আমাদের বন্ধু।আমি যখন যাবো তখন তুমি শক্ত থেকে সবকিছু সামলে নিবে।এখন রেস্ট করো।মা ঠান্ডা হলে একাই তোমার কাছে আসবে।”

রূপককের কথাগুলো শুনে স্বর্ণলতা স্বস্তি ফিরে পেলো।সে শান্তি চায়।
কোন মানুষকে জীবন্ত লাশ বানাতে হলে তার শান্তিকে কেড়ে নিতে হবে।সে মনে মনে দোয়া করতে লাগলো
আল্লাহ যাতে তার শান্তি টা ফিরিয়ে দেয়।

আসলে আমরা যতসহজ ভাবি তত সহজ কি হয়?রূপকের মা তো ছেড়ে দেবার পাত্রী না।সে জাফর কে খবর পাঠালো দ্রুত যেনো তার সাথে এসে দেখা করে।
জাফর ও তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে আসে।
জাফর রূপকের একমাত্র মামা।
বয়স ৪০ এর কোঠায় গেলেও এখনো সংসার পাতেনি।এ বাড়ির নাম শুনলে আসার জন্য অস্থির হয়ে যায়।যেহেতু রূপকের বাবা নেই, তাই যতদিন থাকে এ বাড়ির কর্তা হয়ে থাকে।
এ বাড়িতেই দুটো ভালো মন্দ যা খেতে পায়।খুব ধার্মিক টাইপ ভাবসাব, পোশাক আশাক।কিন্তু ততটা সে নয় যতটা সে দেখায়।
কথায় আছেনা,”যত গর্জে তত বর্ষে না”

জাফরকে তার বোন কল করেছে আর সে দ্বিতীয় বার ভাববে?সেদিন রাতেই এসে হাজির।

মাত্র ১ মিনিটেই কলিং বেলে কয়েকশ প্রেস করা হয়ে গেছে।
স্বর্ণলতা দ্রুত দরজা খুলে জাফরকে দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলো।অজানা ভয় কাজ করছে।তার সাথে কি খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে!
জাফর সন্দেহের চোখ দিয়ে স্বর্ণলতার আপাদমস্তক পরখ করে নিলো।
বেশ সুন্দরী বধূ।বিয়ের দিন যেমন দেখেছে তার চেয়েও বেশি সুন্দর।

এরপর চাটুকারিতার সহিত জিজ্ঞেস করলো-
—”কিগো স্বর্ণলতা ভালো আছো?তোমার নাকি পোলাপান হইবো।হেই খবরেই আইলাম।
তা তোমার শাউরি কই?ডাক দাও হেরে।”

—“আম্মা ভেতরে আছে।আপনি ভেতরে আসুন মামা।”

—“হ তাতো অবশ্যই। তা তো অবশ্যই।
আচ্ছা বাইরে বড্ড গরম।আমারে একটু তেঁতুলের শরবত কইরা দিতে পারবা?”

—“মামা,ঘরে তো তেঁতুল নেই।আচ্ছা সমস্যা নেই আমি ওনাকে বাইরে গিয়ে আনতে বলছি।”

—“সেই,ভালো। সেই ভালো।”

সে সোজা তার বোনের ঘরে চলে গেলো।
—“কেমন আছো বুবু?”
এতো চিন্তা করলে কিছু করন যায়?”

—“তুই জানিস না জাফর।”

—“কি জানিনা?তুমি তো সব কইলাই ফোনে।”

—“বলেছি সব কিন্তু……”

—“শোন বুবু,আমার কথা ঠান্ডা মেজাজে শোনো।ভাগনেরে বাইরে পাঠাইছি তেঁতুল আনবার।কইছি শরবত খামু।আমি জানি তোমগো বাসায় টক থাকেনা।তাই এই কামডা করছি।
ঘর ফাঁকা।
কইয়াও শান্তি পামু।আমার মাইকের মতোন গলা।আস্তে কথাও জোরে হইয়া যায়।আবার তোমার পোলার মাশাল্লাহ কান।আমার আস্তে কথাও ধইরা ফেলায়।সে যাক গিয়া শোনো,
পোলা বাড়িত আছে আর কয় মাস?১ মাস!
পোলা গেলে বাড়ির রাজত্ব কার হাতে?
তোমার হাতে।
বউডার লগে ভালা ব্যবহার করো।পোলারে বুঝাও ক্যান তুমি কি চাও?
পোলাডা যাক।তারপর আমাদের কাজ আমরা শুরু করমু।”

—“কিন্তু পূর্নিমা তো চলে যাবে।”

—“আরেহু বুবু এক পূর্নিমা যাইবো আরেক পূনির্মা আইবো।
তোমার ঘরের পূর্নিমা একবার গেলে কিন্তু আর আইবো না!”
—“ও তো প্রেগনেন্ট!”

—“এইডা তো আরও ভালা।মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।”

—”মানে কি?বাচ্চা’র দরকার তো এখন ছিলোনা।ওকে আগে…….

—“মানে তোমারে নিরিবিলিতে বুঝামো।ওহন আমারে খাওন দাও।
যাই দেহি পোলা তেঁতুল পাইলো নাকি।”

জাফর মানুষ টা বড্ড খামখেয়ালি। কোন কাজ সিরিয়াস নেয়না।সব কাজ রয়ে সয়ে করে।কিন্তু আবার তার মতো পাকা মাথার খেলোয়াড় লাখে ১ টা হয়।

(যারা গল্প পড়বেন তারা রেসপন্স করবেন?)
রিয়্যাক্ট,কমেন্ট করবেন।এতে লেখার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।)
চলবে
?️Sharmin Sumi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here