স্বর্ণলতা part 46

0
390

#স্বর্ণলতা
পর্বঃ৪৬
_____________
জাফরের ঘুম ভাঙলো। কিন্তু আশেপাশের পরিবেশ বড্ড গোলমেলে লাগছে।এতো শুনশান নীরবতা কেনো!
ঘুমের ঘোরে নানা আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে।এখন চোখ মেলতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
এক লাফে হুট করে বিছানা থেকে উঠতে গেলো।একি! বিছানা থেকে উঠতে যাবে এর মধ্যেই পা কিছু একটার সাথে আটকে আছে মনে হচ্ছে।
দুহাত দিয়ে চোখ ডলতে লাগলো।ডলতে ডলতে লক্ষ্য করলো তার দু পা খাটের সাথে বাঁধা।

এই দৃশ্য দেখে জাফর পুরো হতবম্ব হয়ে গেলো।চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুললো।
—”কেডা……কার এতো বড় সাহস যে আমারে বানছে।সামনে আয়।কলিজা ছিড়ে রাস্তার কুত্তাদের খাওয়ামু।সামনে আয়।”
স্নেহা দ্রুত দৌড়ে আসলো।হাঁপাতে হাঁপাতে জাফর কে বললো-
—”মামা সর্বনাশ হয়ে গেছে।”

—”কি হইছে?আর আমারে এমনে বানছে কেডা?”

—”আশু কাকা বানছে।”

—”মানে!হে আমারে বানবো ক্যান?”

—”শুধু তোমাকে না বাড়ির সবাই কে একটা ঘরে বন্দী করে রাখছে।”

—”তোরে কিছু করে নাই?”

—”আমাকেও বেঁধে রাখছিলো।কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই স্বর্ণলতা আর আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।কারন আজ রাতে সে নাকি স্বর্ণলতার সাথে রাত কাটাবে।আর আমাকে স্বর্ণলতাকে সাজিয়ে দিতে হবে।যদি সাজিয়ে না দেই তাহলে সবার আগে সৈকত কে খু*ন করবে।এরপর খু*ন করবে মা কে।আর ঐ লাশ দিয়ে……..”
কথাটা শেষ না করতে করতেই হু হু করে কেঁদে উঠলো স্নেহা।

সবকিছু জাফরের মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছিলো।হঠাৎ করে এমন হামলা।আবার রণক স্নেহার কাহিনী।হঠাৎ করে আশু সর্দার এমন হামলা কেনো করলো!
জাফর জোরে জোরে চিৎকার করে আশু সর্দার কে ডাকা শুরু করলো।
—”কি করছো মামা!! চুপ চুপ! এতো চিৎকার করলে আশু কাকা চলে আসবে তো! তখন তোমার হাত চোখ ও বেঁধে দিবে।সে জানে তুমি এখনো ঘুমিয়ে আছো।”

—”আমারে হে কি করতে চায়?”

—”মামা,তার পরিকল্পনা অনুযায়ী আজকে সে স্বর্ণলতার সাথে রাত কাটাবে।তার আগে তোমাকে খু*ন করবে।কিভাবে খু*ন করবে জানো?জীবন্ত ছাগল থেকে যেভাবে চামড়া কেটে নেওয়া হয় ঠিক সেভাবে।সে চায় তুমি মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করো।তুমি ঘুমিয়ে আছো তাই সে তোমার পা শুধু বেঁধেছে।তোমাকে খু*ন করার পর রণক,মা,খালা সবাইকে খু*ন করবে।আর আমাকে শর্ত দিয়েছে যে যদি আমি স্বর্ণলতাকে রাজী করাতে পারি এবং কোন চালাকি না করি তাহলে সৈকত কে সে বাঁচিয়ে রাখবে।আর আমাদের দুজন কে মুক্ত করে দিবে।”

—”আশু চরম মিথ্যাবাদী।ও সৈকতরেও মাইরা ফেলবো।”

—”আমি জানি সে সৈকত কেও মেরে ফেলবে।তাই আমি চাই এখুনি পুলিশ আসুক।পুলিশ ছাড়া আমাদের কেউ উদ্ধার করতে পারবে না।”

স্নেহার চোখেমুখে আতঙ্ক দেখলো জাফর।সে ক্রমাগত ঘামছে।আর কথা বলার সময় বারবার হেচকি তুলছে।চোখ দুটো ফোলা লাগছে।বোধহয় কান্না করেছে।জাফর কোন ঘটনাই মাথায় সাজাতে পারছে না।এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কোনদিন ও সে মুখোমুখি হয়নি।সবাই তার সাথে খাতির জমিয়ে চলেছে।এখন সে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।অপরদিকে মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।

স্নেহা জাফরের হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে বললো-
—”কি ভাবছো মামা?এখন কি অত ভাবার সময় আছে!একটু পর ই খু*ন শুরু হবে।মৃত্যুপুরী তে পরিনিত হবে এই বাড়ি।”

—”আশু সর্দার কে আমার সাথে একবার দেখা করতে বল।”

—”সে তোমার সাথে দেখা করেই তোমাকে খু*ন করবে।আর তোমার ছবি নিয়ে আশে পাশে কিসের যেনো সাধন ও শুরু করেছে।”

—”চারপাশে মোমবাতি আর গরুর তাজা র*ক্ত দেখছোস?”

—”হ্যাঁ মামা।তুমি জানো এগুলো তে কি হয়?”

—”সে আমারে উৎসর্গ করছে।আজকে আমারে বলি দিবো।তাই এগুলা বলি দেওয়ার আগ মূহুর্তের আয়োজন।”

স্নেহার চোখ কপালে উঠে গেলো।আর বললো-
—“দেখেছো মামা! কি শয়তান!”

—”আচ্ছা নীরব কই? নীরব রেও কি বাইন্ধা রাখছে?”

—”ভালো কথা বলেছে তো মামা,নীরব কে তো দেখিনি।ও তো ঘরেই ছিলো।আশু কাকা আসার পর পর-ই উধাও হয়ে গেলো।আবার আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে কাকা নীরবের একবারও খোঁজ করেনি।”

—”হ বুঝবার পারছি রণক যা কইছিলো সব তাইলে সত্যি কথা।”

স্নেহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
—”রণক কি বলেছিলো মামা!”
মামা কিছু না বলে স্নেহা কে বললো-
—”আমার ফোনটা কই আছে দেখতো।ঐ তো টেবিলডার ওপর।ঐটা আইনা দে।আর তুই একটু বাইরে যা।”

—”ফোন দিয়ে কি করবে তুমি?পুলিশ কে কল করবে?আমি আমাদের পরিচিত পুলিশ কে কল করি?”

—”নাহ্ পুলিশি মামলা তে যাওয়া যাইবো না।তুই যা আমি দেখতাছি।ফোনডা দিয়া যা।আর স্বর্ণলতারে তৈরী কর।তোরে যে কামে ছাড়ছে তুই হেই কাম কর।”

স্নেহা কোন কথা না বাড়িয়ে ফোনটা টেবিল থেকে এনে জাফরের হাতে ধরিয়ে দিলো।আর বললো-
—”যা করার সাবধানে করো।”
স্নেহা চলে যাওয়ার পর জাফর পুরো মোবাইল তন্নতন্ন করে খুঁজেও কারও সেইভ করা নাম্বার পেলো না।
তার মানে সে যখন ঘুমিয়ে ছিলো তখন কেউ একজন তার জরুরি সব নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছে।এবার জাফর মনে মনে বলতে শুরু করলো-
‘রণক যা বলছিলো তাই সত্যি। নীরবরে আটকাইলো না।আবার স্নেহারে ছাইড়া দিলো!এরা সবাই ১০০% আশুর লগে জড়িত।স্নেহা বারবার আমারে পুলিশে কল দিতে কইতাছে।তাও তার পরিচিত পুলিশ।নাহ্! হে কি আদৌ পুলিশ!রণক কইছিলো সবাই এ কান্ডে জড়িত।আমাগো মারার পরিকল্পনা সবার!স্নেহা এতোক্ষণ যা আমারে শুনাইয়া গেলো তা ৯০% মিথ্যা।ওরে রাখছেই আমারে উস্কানোর জন্য।কিন্তু ও যারে কল দিতে কইতাছে হে তো পুলিশ না।পুলিশ হইলে তো হেরে কল দিতে কইতো না।তয় কে হে!’

জাফর এর মাথা ফেটে যাচ্ছিলো।সে কি করবে বুঝতে পারছিলো না।ফোনটা হাতে নিয়ে তার পরিচিত নাম্বার গুলো আবার খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোন নাম্বার খুঁজে পেলো না।
হঠাৎ করে দূর থেকে ভেসে আসা এক কন্ঠ চিৎকার করে বলছে-
—”আশু! ছাড় আমারে।আমার আর মামার ভালো মানুষের সুযোগ নিয়া সবার লগে হাত মিলাইয়া আমগো মারতে চাস?এই বাড়িতে লাশ নিয়া সিদ্ধি করবি?কত লাশ শুয়াইয়া রাখছোস। তাও আবার মামারে আর আমারে মারবি?আমগো খু*ন করলে তুই তো কিছুই পাবিনা!”
এবার আবার জোরে চিৎকার। কিন্তু এ চিৎকার ব্যাথার।মনে হচ্ছে কথা গুলো বলার সাথে সাথে কেউ তাকে আঘাত করছে।আর মুখ চেপে ধরে আছে।গোঙানির শব্দে কান ফেটে যাচ্ছে জাফরের।

জাফরের আর কিছু বুঝতে বাকী রইলো না যে রণক আর তাকেই আজকে খু*ন করা হবে।বাকী সবাই আজ ফূর্তি করবে!মাঝখান থেকে স্বর্ণলতা বেচারীকেও মরতে হবে।কিন্তু মরার আগে চরম শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হবে।
জাফর নিজে বাঁচার আর কোন পথ পেলোনা।
এইজন্য সে ফোনে ‘৯৯৯’ এ ডায়াল করলো।
তাদের সাথে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনার বর্ননা দিলো।এবং বাসার ঠিকানা সহ সবকিছু পাঠিয়ে দিলো।ওপাশ থেকে আসস্ত করলো যে তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো ফোর্স নিয়ে হাজির হবে।

ফোনটা কেটে জাফর মনে মনে পরিকল্পনা করে নিলো-
‘আমারে তোরা খু*ন করবি! এতো সাহস তোগো! তোরা আজকে বাঁচবি না।এইখানে লাশ আছে।আর অহন যদি পুলিশ আসে ফাসবি তোরা।আমারে তো বাইন্ধাই রাখছোস।আমি তো ভুক্তভোগী। আমারে আর ক্যামনে ফাসাবি!তোগোর কাউরে আমি চিনিনা।খালি একবার রণক আর আমি মুক্ত হই তোগো সবারেই জেলের ভাত খাওয়ামু।রণক আর আমি স্বাক্ষী দিমু।আর স্বর্ণলতা! ওরে সামলামু রণক রে দিয়া।আমারে তোরা চিনোস না আমি কেডা!’

পরিস্থিতি জাফরের হাতে বাইরে চলে যাচ্ছে।এই মুহুর্তে পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।আসন্ন মৃত্যু কে সামনে দেখতে পাচ্ছে সে।
একটু পর ঘরে সৈকত আর স্নেহা ঢুকলো।মামার থেকে ফোন কেড়ে নিলো।আর বললো-
—”মামা,রণকের চিৎকার তো শুনেছো নিশ্চয়ই! তুমি রণকের চিৎকার শুনবে না এ হতেই পারেনা।
তুমি তাহলে সব বুঝেই যাচ্ছো।তাহলে তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে আপাতত কোন লাভ নেই।মিথ্যা বলেও লাভ নেই।যা করার এখন সরাসরি করতে হবে।ফোন তো আর হাতে দেওয়াই যাবেনা।কাকে না কাকে ফোন করে বসো।অবশ্য তোমার পরিচিত কারও নাম্বার ই তো খুঁজে পাবেনা।আগে থেকেই সব ডিলিট করে দিয়েছি।আর তোমার এতো ঘুম কোথা থেকে এলো প্রশ্ন আসছে না মনে!!
না থাক থাক এই প্রশ্নে করে তোমার মাথা ব্যাথা করাতে চাইনা।
এমনি তো তোমার মাথা ব্যাথা করছে তাইনা!
কারন হলো তোমাকে কড়া ঘুমের ডোজ দেওয়া হয়েছে যে।
নাস্তার পর জুস খেতে দিয়েছিলাম না?সেটার সাথেই মেশানো ছিলো।”

জাফর রক্তবর্ণ চোখে বললো-
—”আগুন নিয়া খেলতাছোস।হাত পোড়ার খুব শখ!”
স্নেহা হো হো করে হেসে উঠলো-
—”তোমার আগুন আর সেই জলন্ত ফুলকির মতো দাউদাউ করে জলবে না মামা।তোমার ঐ আগুনে অনেক আগেই পানি ঢালা শেষ।এখন তো শুধু তোমার আগুনে ধোঁয়া আর ধোঁয়া। যে ধোঁয়ায় তোমার নিজের চোখ ই জ্বালা করবে।”

জাফর কর্কশ কণ্ঠে বললো-
—”এতোদিন এতকিছু করার পর এই ফলাফল দিলি?তোদের মতো বেঈমান কি আর দুইটা আছে?”
সৈকত এবার মুচকি হেসে বললো-
—”মামা কাকে বেঈমান বলছেন আপনি?এসব তো আপনার থেকেই শেখা।কিভাবে প্রিয়জন কে ঠকাতে হয়।আর স্বার্থের জন্য মানুষকে কিভাবে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হয়।এতোদিন যা করেছেন নিজের স্বার্থের জন্য করেছেন।এই স্বার্থ হাসিলের জন্য কত মানুষ কে না খু*ন করেছেন।বেচারী স্বর্ণলতার বাচ্চা টা!”
এবার স্নেহা আবার বলে উঠলো-
—”তোমাকে আরেকটু চমকে দেই মামা?স্বর্ণলতা ও কিন্তু আমাদের ই দলে।ও ওর বাচ্চা হত্যার প্রতিশোধ নিতে চায়।ও জানে কে রণক আর কে রূপক।তোমাদের প্রতি ওর ঘৃনার জন্য ওকে আমরা আমাদের দলে টেনে নিয়েছি।দিনশেষে ওকেই হয়তো মেরে ফেলা হবে।কে জানে! মারতেও পারি আবার না মারতেও পারি।তবে হ্যাঁ এখন তো ওকে আমাদের খুব প্রয়োজন।”

জাফর আর কিছু বলতে পারলো না।শুধু এতোটুকুই বললো-
—”মনে রাখিস স্নেহা,খেলা ১ সেকেন্ডে ও ঘুইরা যেতে পারে।”

—”বাহ্ ভালো বলেছো তো! তেজ এখনো ঐ আগের মতোই!”
এই বলে স্নেহা আর সৈকত জোরজবরদস্তি করে মামার দুই হাত বেঁধে দিলো।এরপর দুই মুখ বেঁধে তাকে বাইরে বের করে আনলো।”

চলবে……….
Sharmin sumi-শারমিন সুমি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here