স্বর্ণলতা part 30

0
362

#স্বর্ণলতা
পর্বঃ৩০
________________
হাঁটু ভাঁজ করে মাথা হাঁটুর ওপর দিয়ে বসে আছে স্বর্ণলতা।আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।চোখের পানিতে শাড়ি ভিজে যাচ্ছে।এর মধ্যে তার বাচ্চার কথা মনে পড়লো।একবার বলেছিলো মেহুল কে।কিন্তু মেহুল কিছু না বলেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো।
স্বর্ণলতা মনে মনে ভাবতে লাগলো,
‘বাচ্চার প্রতি অবিচার করছি আমি।বাচ্চা টা কি দোষ করেছে?ও তো নিষ্পাপ শিশু।জন্মের পর সব শিশুরা সর্বপ্রথম বাবার স্পর্শ পায়।বাবা তার ছোট্ট সোনামনি কে কোলে নেয়।বাবারা ভয় পায়,আর বলে!
”আমাকে দিচ্ছেন যে!আমি তো কোনদিনও বাচ্চা কোলে নেইনি।আমি কি পারবো?”
অপরজন বলবে,’অবশ্যই পারবেন।বাচ্চার বাবা আপনি।এখন থেকে ওই তো আপনার সাত রাজার ধন।সাত রাজার ধনকে সামলে রাখেন’।

ভয়ে ভয়ে অতি সাবধানে বাচ্চাকে প্রথম কোলে নেওয়া।কোমল দুটি চোখে চেয়ে সুখের কান্নায় দু চোখ ভাসিয়ে দেওয়া।
‘এ আমার সন্তান!এতো ফুটফুটে! এতো নিষ্পাপ! কি সরল তার চোখ দুটো।কি সুন্দর তার ঠোঁট! কি সুন্দর মায়াভরা মুখ!
ওমা!এতো পিচ্চি পিচ্চি হাত!কি সুন্দর হাত গুলো।
বাবার আঙ্গুল শক্ত করে ধরে ফেলা।আর বাবার আনন্দ অশ্রু!
‘দেখো সবাই,আমার বাচ্চা!আমার কলিজার এক অংশ। আমার মিষ্টি সোনামনি আমার হাত ধরেছে।আমার পুরো শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যেঙ্গে শিহরণ জেগে উঠেছে।আমার মন খুশিতে নৃত্য করছে।পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হলো বাবা হওয়ার অনুভূতি। সদ্যজাত আরেকটা প্রান কে কোলে নেওয়ার অনুভূতি। বাহুডোরে কোলে নিয়ে কপালে চুমু একে দেওয়ার অনুভূতি।’

আমার বাচ্চা সেসব থেকে বন্ঞ্চিত হলো!অবাক চোখে তাকালো না বাবার দিকে।হয়তো এই সুন্দর অনুভূতি আরও সুন্দর করে ব্যাখায়িত করা যেতো।যদি রূপক নিজেই তার অনুভূতি গুলোর ব্যাখা দিতো।ধূসর সব দিনগুলোতে রঙ্গীন হয়ে এলো আমার বাচ্চা।আমি ওকে আগলে রাখবো।একটা বার দেখবো আমার সন্তান কে।
চিৎকার করে ডাক দিলো স্বর্ণলতা….

—”মেহুল,মন্টু কই তোমরা এদিকে এসো।আমার বাচ্চাকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
হন্তদন্ত হয়ে মেহুল ঘরে প্রবেশ করলো-
—”আপামনি!আপনে এতো জোরে চিৎকার কইরেন না।আপনে অহনো পুরাপুরি সুস্থ না।”

—”আমার বাচ্চা কোথায়?ওকে এনে দাও।আম্মা আর মামার কাছে আছে নিশ্চয়ই! এনে দাও জলদি।আমি ওকে কোলে নিবো।আদর করবো।আচ্ছা মেহুল তুমি বাচ্চাকে দেখেছো?কেমন হয়েছে?নিশ্চয়ই খুব সুন্দর তাই না?আচ্ছা ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে?কার মতো দেখতে হয়েছে?”
মেহুল নিশ্চুপ…..
—”আরেহ্ চুপ করো আছো কেনো বলো?”

—”আপামনি,বাচ্চা পরে নিয়েন অহন ঘুমান।”

কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো স্বর্ণলতার-
—”পরে নিবো!কেনো পরে নিবো?আর কত পরে নিবো?১ দিন হয়ে গেছে আমার বাচ্চাকে আমি স্পর্শ করিনি।নবজাতক প্রথমে তার বাবার বাহুডোরে শোভা পায়।তারপর তার মা কে দেখে চোখ জুড়িয়ে নেয়।আর আমার সন্তান কারও-ই স্পর্শে শীতল হয়নি।আমার বুকটা খা খা করছে।মরুভূমির মতো হৃদয়ে আমার বাচ্চাকে দেখার তৃষ্ণা চষে বেড়াচ্ছে।ওকে দেখে আমি শীতল হতে চাই। আমার দু চোখ ভরে আমার সন্তান কে দেখবো।”

মেহুল ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।সে হয়তো পাথর হয়ে গেছে।এই অবস্থায় এতো বড় মিথ্যা সে কিভাবে বলে।দেয়াল ঘেষে বসে পড়লো।এই কথা বলার পর নিশ্চিয়ই স্বর্ণলতা মরে যাবে।আর মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো-
”আচ্ছা বাচ্চা টা কি কোনভাবে এনে দেওয়া যায়না!এতে কি মামা আমাকে খুব অত্যাচার করবে!”
এসব ভাবতে লাগলো মেহুল।আর চোখের মনিকোঠায় অশ্রকণা জমাট বেঁধে গেলো।

স্বর্ণলতাও বিছানা থেকে উঠে আসলো।তার সন্দেহ হচ্ছিলো।বাচ্চা দেওয়ার কথা শুনে এভাবে কেনো মেহুল চলে গেলো।তার বাচ্চা সে চেয়েছে।নাগ মনি তো চায়নি।যেটা আনার জন্য এক পাহাড় সমান যুদ্ধ করতে হবে।
—”মেহুল,ফ্লোরে বসে কাঁদছো কেনো?কি সমস্যা?

—”আ-আ-আপামনি!আপনে উঠলেন ক্যান?”

—”আমার বাচ্চা দাও।আমার বাচ্চা কোথায়।”

—”আপামনি শান্ত হন।”

চিৎকার করে উঠলো স্বর্ণলতা।তার গলা ফাটানো চিৎকারে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলো।মামা দৌড়ে ঘরের বাইরে আসলো।স্বর্ণলতা পাগলের মতো বলেই যাচ্ছে-
—”শুনতে পাচ্ছোনা আমার কথা?বলো!!আমার বাচ্চা কে দাও।আমার বাচ্চা কই?”
মামা আক্রোশ ভরা কণ্ঠে বললো-
—”মাইয়া মানুষ হইছো,এতো ত্যাজ ক্যান?কত জোরে গলা ফাটাইয়া চিৎকার করলা।এ বাড়িতে মানুষ থাকে তো নাকি?”
—”গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন কিন্তু বুকের ভেতর দুঃখ নামক বিষাক্ত পোকা কলিজা টা খুবলে খাচ্ছে সেই আত্মচিৎকার শুনতে পাচ্ছেন না?ভিতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে সে আওয়াজ কি মন পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছেনা? কিন্তু গলার আওয়াজ কান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে গেলো!”

—”এতো রং ঢং এর কথা হোনানোর জন্য এমন কাহিনী করছো?”

—”সোজা সাপ্টা,বাংলা ভাষায় কথা বলছি,আমার বাচ্চা কই?আমার বাচ্চা কে দেন।আমি ওকে নিয়ে চলে যাবো।যেদিক দু চোখ যায় চলে যাবো।”

মামা মেহুল দিকে দাঁত কটমট করে তাকালো।মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই মেহুল কে গিলে খেয়ে নিবে।
—”কিরে,তুই ওরে বলোস নাই কিছু?”
মেহুল তোতলাতে তোতলাতে বললো-
—”আ-আ-আমি! কিছু কওয়ার……..
কথা শেষ না করতে দিয়েই ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো মামা-
—”তোরা নাটক শুরু করছোস?নাটক দেহার লিগা বইয়া আছি?”

—”মামা ওকে ধমকাচ্ছেন কেনো?আমার বাচ্চা আমাকে দিন।”

—”হ যাও পাশের বাঁশ গাছের নিচে কবর দেওয়া আছে তুইলা কোলে নাও যাও।”

—”মানে! কি বলছেন এসব!আমার বাচ্চাকে আপনারা মেরে ফেলেছেন?”

—”আমরা মারমু ক্যান?তোমার মতো অপয়া আর কি করবো? মরা বাচ্চা জন্ম দিছো।”

—”মিথ্যা বলবেন না মামা,আমি নিজে বাচ্চার কান্না শুনেছি।”

—”ভুল শুনছো।”

—”মামা,আমার বাচ্চা আমাকে ফেরত দিন।পরিনাম ভালো হবেনা কিন্তু”।

—”তোমার কতবড় সাহস আমারে চোখ রাঙ্গাও!”
স্বর্ণলতার সামনে গিয়ে হাতের বাহুতে শক্ত করে ধরে এক ধাক্কা দিয়ে স্বর্ণলতাকে রুমে ফেলে দিলো।আর দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলো।

চলবে………….
✍️Sharmin Sumi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here