#স্বর্ণলতা
পর্ব-২৩
___________
রূপকের মা এবং মামার ফিসফিস আওয়াজের আলোচনা খুব একটা শোনা যাচ্ছিলো না।তবে কিছু কথা স্বর্ণলতা বুঝতে পারলো।কথা গুলো এমন ছিলো-
—”রূপক তো পাগল করে ফেলছে স্বর্ণলতার সাথে কথা বলার জন্য।কি করবো এখন!আর কত উল্টা পাল্টা বুঝাবো?”
—“বুবু রূপকরে কিছু জানতে দেওন যাইবো না।খারাও আমি কিছু একটা উপায় বের করি।”
স্বর্ণলতা মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো-
রূপককে কি জানতে দিতে চাচ্ছেনা তারা?
চিরকুটে লেখা ছিলো ‘জঙ্গলে যাওয়ার সঙ্গী থেকে দূরে থাকো’।
রূপককে যে বোঝানো হয়েছে তা কিন্তু স্পষ্ট।কিন্তু রূপকের নাম স্পষ্ট করে লেখা ছিলো না কেনো!!
তাহলে এতে কিছুটা বোঝা যাচ্ছে রূপক ও এদের দলে।তবে রূপক কথা বলার জন্য পাগল হচ্ছে,রূপককে আর মানানো যাচ্ছেনা এটা কোন ধরনের কথা!এদের দলে থাকলে এদের কথা কি শুনবে না?
যাওয়ার আগের দিন রূপক কে দেখে মনে হলো সে খুব ভীত হয়ে আছে।
রূপক যাওয়ার আগে মামার হাতে মার পর্যন্ত খেলো।শেষমেশ আমাকে কিচ্ছু না বলেই চলে গেলো।রূপকের এতো সাহস থাকলে সে আমার জন্য যুদ্ধ করতো।আমরা একসাথে না হয় লড়াই করতাম।
আবার জঙ্গলে সে সাহসী হয়ে উঠেছিলো।
কিন্তু সে শেষমেশ ঠিকি চলে গেলো।আবার এদিকে রূপক চলে যাওয়ার পর তার ভয়ে আম্মা এবং মামা ভীত।মামা এতো ভয় পেলে সেদিন কিভাবে রূপকের গায়ে হাত তুললো?
আমি ধীরে ধীরে গোলক ধাঁধার মধ্য প্রান্তে
আটকে যাচ্ছি।না এ পাশ থেকে কোন ক্লু পাচ্ছি না ওপাশ থেকে।
আমি কিভাবে সমাধান করবো এই ধাঁধার!!আমার ধ্যানে জ্ঞানে এখন শুধু একটাই চিন্তা,আমি কি আদৌ বেঁচে থাকবো!আমার বাচ্চার কি হবে!
নিজেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করিনা।ঝরে যাওয়া পাতার মতোন যদি আমিও ঝরে যাই আমার জন্য কেউ শোকে পাথর হবেনা।
আমি এমন কোন পরশ পাথর নই যাকে জয় করার যুদ্ধে মানুষ কোমড় বেঁধে নামবে।কিংবা যে হারিয়ে গেলে তন্নতন্ন করে খুঁজবে।কিংবা কষ্ট পাবে আমার মিলিয়ে যাওয়ায়।
আগে ভাবতাম একমাত্র রূপক ছিলো,যে কিনা আমাকে কখনো হারাতে দিবেনা।আর এখন!!
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে স্বর্ণলতা আবার ভাবলো,
আচ্ছা সে কি এখনো আমাকে ভালোবাসে?
নাকি ভালোবাসার খেলা খেলে।না কি আমি নিজেই কোথাও না কোথাও ভুল তথ্যের জটিল সমীকরনে আটকে গিয়েছি।
স্বর্ণলতা সোজা ড্রয়ং রুমে চলে গেলো।সাবধানী দৃষ্টিতে দুজনকে দেখে নিলো।
—“মামা,কোন সমস্যা হয়েছে?আম্মা আর আপনাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে যে?”
—“না স্বর্ণলতা তেমন কোন সমস্যা না।তুমি এক কাজ করো তুমি গিয়ে ঘর গোছাও।আমি আসছি একটু পর।”
—“বেয়াদবি নিবেন না আম্মা, আসলে আমাকে যদি বলা যেতো সমস্যা টা আমি হয়তো সমাধান করে দিতে পারতাম”।
—“স্বর্ণ,তোমার শ্বাশুড়ি যখন কইছে ঘরে যাইতে তখন ঘরে যাও।
আর হ বড়গো কথার মাঝখানে আইয়া ফোড়ন কাটবা না।বড়দের কথার মাঝে থাকতে নেই।”
স্বর্ণলতা আর একটি কথাও বাড়ালো না।সোজা রুমে চলে –“আসলো।ঘরে এসে মামাকে ভেংচি কেটে বললো-
কিছুদিন পর বাচ্চার মা হবো আর এখন সে আমাকে বাচ্চা ভাবে!
তোমাদের ষড়যন্ত্রের অবসান যেদিন ঘটাবো সেদিন বোঝাবো বাচ্চা মেয়ে কি করতে পারে।
””বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান।
এবার ঘুঘু তোমার বাঁধিব পরান””
মামা এবং রূপকের মা সেখানেই আলোচনার সমাপ্তি ঘটালো।বেশি আলোচনা করে তৃতীয় পক্ষ কে কিছু জানতে দিলে বিপদ তো তাদের ই।মনে রাখতে হবে যে,দেয়ালের ও কান আছে।সাবধানে গুনে গুনে পা ফেলতে হবে।
রূপকের মা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
জাফর যেখানে বলেছে ও নিজেই কিছু একটা ব্যবস্থা করবে সেহেতু আর চিন্তার কোন কারন নেই।
জাফর যেটা বলে সেটার হেরফের হয়না।
থমথমে এক পরিবেশ থাকলেও বাসার সবকিছু আগের মতোই স্বাভাবিক চলছিলো।রূপকের মা বসে তজবি জপসে।সকালে মামা বাইরে থেকে বাজার করে এনেছে।রান্নাবান্না করেও ঠিকঠাক খাওয়াও হয়েছে।এবার সবার মুখ ই উৎফুল্ল।সকালের চিন্তার ছাপ কারও মুখেই আর দৃশ্যমান নেই।
———————————
মধ্যরাতে কলিংবেলের আওয়াজ কানে আসতেই স্বর্ণলতার তন্দ্রা কেটে গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১.০৫ মিনিট।
—“এতো রাতে কে আসবে!নাহ্ ভুল শুনেছি মনে হয়।শুয়ে পড়ি আবার।”
তাকে ভুল প্রমানিত করে দিয়ে কলিং বেল আবার বেজে উঠলো।
—”নাহ্ এবার তো ঠিক ই শুনলাম।কে এলো এতো রাতে?”
বিছানা থেকে উঠে গুটি কয়েক পা হেঁটেই মামার ঘর পড়লো।কলিং বেলের শব্দে তার ঘুম ভাঙে নি?
—“মামা,মামা,একটু উঠুন না।দেখুন কে যেনো এসেছে।”
মামা ঘুমের ঘোরে আবল তাবল বুলি আওরাতে লাগে।
এর মধ্যে বারবার কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে।
স্বর্ণলতা দরজার সামনে গিয়ে লুকিং গ্লাস টায় দেখে নিলো কেউ আছে কিনা।
কিন্তু অদ্ভুত তো! কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।
স্বর্ণলতা আর দরজা খুললো না।সোজা চলে গেলো রূপকের মায়ের ঘরে।
—“মা একটু উঠুন না।মা দেখুন এতো রাতে কে যেনো এসেছে।”
রূপকের মা আড়মোড়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।
হাই তুলতে তুলতে বললো-
“কে এসেছে আবার!”
—“অনেকক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজাচ্ছে।মামা কে ডাকতে গিয়েছিলাম কিন্তু মামা তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।তারপর আমি লুকিং গ্লাসে দেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না।”
এর মধ্যে আবারও কলিং বেল বেজে উঠলো।এখন তো আর বসে থাকা যায়না।একবার দেখা উচিত কে বাইরে।বা কারও কোন আপদ বিপদ হলো কিনা।সাহায্যের জন্য এসেছে কিনা!
—“স্বর্ণলতা আমি আসছি,যাও তুমি গিয়ে দরজা খোলো।হয়তো আমাদের বাসার ই কেউ।কেউ আবার বিপদে আপদে সাহায্য চাইতে এলো কিনা!”
—“জ্বী আম্মা যাচ্ছি।আপনি আসুন আমার সাথে।”
স্বর্ষলতা এক পা এক পা এগিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো।বিসমিল্লাহ বলে বুকে ফুঁ দিয়ে দরজা খুললো।
দরজা খোলার সাথে সাথে ডান পাশ থেকে একজন বেড়িয়ে সামনে আসলো এবং বিচ্ছরি একটা হাসি দিয়ে বললো-
—“স্বর্ণলতা,আমার শয্যাসঙ্গী”
চোখ কপালে তুলে স্বর্ণলতা বললো-
—”নীরব! এতো রাতে তুই? তোর সাথে এরা কারা।আর তোর স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি,তুই আমাকে তোর শয্যাসঙ্গী বললি কোন সাহসে?”
এরপর স্বর্ণলতার কথার উত্তর নীরব মুখে দিলো না।হাত দিয়ে সজোড়ে একটা থাপ্পড় দিলো।
এক ঝটকায় স্বর্ণলতা কিছুটা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়লো।
রূপকের মা চিৎকার দিয়ে বললো-
—“কি করছিস কি তোরা?”
রূপকের মায়ের চিৎকারে জাফর ও ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো।
নীরব কারও কথাই শুনছে না।সবার দিকে তাক করে রিভারবল ধরা হলো।
—”কেউ একটা শব্দ করলেই কন্ঠনালি টেনে ছিড়ে ফেলবো।চুপ চুপ একদম চুপ।আজকে এই রূপসী,সুন্দরী,ভুবনমোহিনী আমার শয্যাসঙ্গী হবে।”
দাঁত কটমট করে স্বর্ণলতা বললো-
—”নীরব তুই আমার হাতে আজকে খুন হবি।সেদিন মারের কথা ভুলে গেছিস?”
স্বর্ণলতার কাছে গিয়ে নীরব তাচ্ছিল্যের সুরে বললো-
—“ভুলিনি দেখেই আজকে তোকে আমার পায়ের কাছে আনতে পেরেছি।”
জাফর গম্ভীর কন্ঠে বললো-
—”নীরব ওরে ছাড়ো।এর পরিনাম ভালা হইবো না কিন্তু।”
—”মামা,মামা,আমার মিষ্টি দুষ্টু মামা,আপনার মোছ টা খুব সুন্দর!যদি মোছ টা না থাকে?মোছ ভেদ করে বুলেট আপনার পুরো মুখমন্ডল ছিন্নভিন্ন করে দেয় তখন?আজকে আপনারা সবাই দর্শক।
আর আমি নায়ক।আমার নায়িকা-স্বর্ণলতা……
হো হো করে হেসে উঠলো নীরব।
স্বর্ণলতাকে টেনে নিয়ে গেলো বেড রুমে।স্বর্ণলতা নীরবের হাত খামচে ধরলো।
কিন্তু নীরবের এতে কোন কিছুই হলো না।
সে সজোরে ধাক্কা দিয়ে তাকে বিছানায় ফেলে দিলো।
শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো-
—”মেহুল কে কিভাবে ভোগ করেছিলাম আজকে তোকে সরাসরি তা দেখাবো।মুখে বলে নয়,তুই আজকে নিজেই বুঝবি।”
স্বর্ণলতার ওপর ঝাপিয়ে পড়তেই স্বর্ণলতা বিছানা খামচে ধরলো।
আর নীরবের অন্ডকোষ বরাবর জোরে একটা লাথি দিলো।
নীরব ব্যাথায় পাশ ফিরে কোকড়াতে লাগলো।
আর অস্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগলো।
—”বেশ্যা মা*****তোরে আজকে জাহান্নাম দেখামু।”
বিছানা থেকে উঠে স্বর্ণলতার হাত পা বাঁধলো।
আর রান্না ঘর থেকে কেরোসিন এনে চারপাশে ঢালতে লাগলো।
রূপকের মা চিৎকার করে বলতে লাগলো-
—”জাফর ও কি করছে! ওকে থামা।এই ছেলে বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।তোর তো সাহস কম না!
—”চুপ বুড়ি একদম চুপ।বেশি চেঁচাবি না।এখন আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়ে গেলে তোরা একটাও বাঁচবি না।”
স্বর্ণলতার চারপাশে আগুন ধরিয়ে দিলো নীরব।দাউ দাউ করে চারপাশে আগুন জ্বলছে।
দরজা বন্ধ-
স্বর্ণলতার হাত পা বাঁধা। জীবন্ত অবস্থায় এ কোন জাহান্নামের দৃশ্য দেখছে সে।এ পাশ ও পাশ তাকিয়েও কোন কিছু খুঁজে পেলো না।হাত পায়ের বাঁধন খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।
আগুন দাওদাও করে জ্বলছে।ধায় এগিয়ে আসছে তার দিকে।
স্বর্ণলতা এবার সহ্য করতে না পেরে সেন্স হারিয়ে ফেললো-
দু চোখ বোজার আগে শুধু একটা কথা শুনতে পাচ্ছিলো-
—“ওর বাচ্চা হইবো,ওর বাচ্চা হইবো।বাচ্চার কিছু হইলে তোরে আমি জানে মাইরা ফেলমু।”……..
চলবে………
✍️ Sharmin Sumi-শারমিন সুমি