#স্বর্ণলতা
পর্বঃ০২
রূপক মাত্র তার বউয়ের নাম জানলো এটা তার বড় বোন স্নেহা কে খুব বেশি বিস্মিত করতে পারেনি।রূপক কি ধরনের ছেলে তা তো স্নেহা জানতোই।তার কাছে বড় আশ্চর্যের বিষয় এটা যে তার ভাই এখনও সুস্থ আছে।
—“রূপক তুই কি একটু বের হবি ঘর থেকে?আমার লতার সাথে কিছু কথা আছে।”
—“আপু,আমি বের হচ্ছি তবে একটা অনুরোধ রাখবে?”
—“অনুরোধ! কি অনুরোধ বল।”
—“এতো সুন্দর নাম টা এতো সংক্ষেপে বললে নামের সৌন্দর্য ম্লান হয়না?তুমি পুরো নাম ডাকবে আর যদি ডাকতে কষ্ট হয় তবে শুধু স্বর্ণ বলবে।লতা না।”
—“আরেহ! লতায় কি সমস্যা? কচুর লতা লাগে?”(অট্টহেসে)
—“না আপু প্লিজ! অনুরোধ করছি রেখো কিন্তু।”
—“বাবা আমার ভাইটার কিছু ঘন্টায় এতো পরিবর্তন! কল্পনা ও করা যায়না।যা এখন বের হ।এবং বাসার যত সব আত্মীয় স্বজন আছে সবাই কে ডেকে আন।”
—“কেনো!!”
—“আরেহ তোর স্বর্ণের জন্মদিন না?সবাই মিলে উৎযাপন করি।”
—“তুমিও জানো আজকে ওর জন্মদিন?”
—“ওমা!শুধু কি তুই ওকে একা ভালোবাসিস নাকি! যা যা দ্রুত যা দেরী করিস না।”
একঝাঁক মেহমান নিয়ে রূপক ঘরে ফিরে এলো।এতোগুলো মানুষকে একসাথে দেখে স্বর্ণলতা লজ্বায় লাল হয়ে যাচ্ছিলো।ভেতরে ভেতরে তার খুশি উপচে পড়ছে।মনে কতশত অজানা আশঙ্কা নিয়ে এসেছিলো এ বাড়িতে।কিন্তু উল্টো হলো সবকিছু।তার খুব আনন্দ হচ্ছে।তার আনন্দ লজ্বামাখা মুখশ্রি দেখে রূপকের খুব ইচ্ছে করছে আলতো করে তাকে ছুঁয়ে দিতে।
সবাই মিলে তার জন্মদিনের কেক কাটলো।তাকে খাইয়ে দিলো।রূপকের মা স্বর্নলতার গালে হাত দিয়ে বললো-
—“মা,তুমি আমার সংসারের খাঁটি স্বর্ণ।রূপক আর আমি একলা এ সংসারে।তুমি এসে আমাদের সজীব,সতেজ করে দিয়েছো।আমি কিন্তু বউ আনিনি,এনেছি একটা মেয়ে।
যে মেয়েকে আমাকে শাসন করবে,ভালোবাসবে।আজ থেকে সংসারের সব দায়িত্ব আমি তোমার হাতে সমর্পন করলাম।সংসারের রানী আজ থেকে তুমি।”
স্বর্ণলতার চোখ ছলছল করে উঠলো।ছোটবেলা থেকে সৎ মায়ের কাছে মানুষ। মা মারা গিয়েছে জন্মের পরপরই।সে এতো ভালোবাসা পাবে আশা করেনি।এতো ভালোবাসার কি যোগ্য সে! ধরে রাখতে পারবে তো এতো ভালোবাসা?
রূপকের মা স্বর্ণলতা কে জড়িয়ে ধরলো।
স্নেহা বলে উঠলো-
—”মা,ওদের এবার ছাড়ো।অনেক রাত হলো যে!”
—“হুম তা তো নিশ্চয়ই। আসি মা।কোনরকম সমস্যা হলে আমাকে জানিও কেমন?”
—“জ্বী আম্মা অবশ্যই জানাবো।”
সবাই চলে গেলো পুরো রুমে এখন রূপক এবং স্বর্ণলতা।স্বর্ণলতা কিছু বলতে যাবে তখন ই রূপক তাকে বললো-
—“স্বর্ণ।আমি তোমাকে এই নামে ডাকবো।আসলে আমি কখনো মেয়েদের সাথে একা কথা বলিনি।আমি আপনি থেকে তুমি করে বলে ফেললাম।তোমাকে তুমি বলতে খুব ইচ্ছে করছে।”
—“জ্বী বলুন।সমস্যা নেই।”
—“তোমাকে আজ অনেক কথা বলবো।আমার কথায় ভুল কিছু হলে আমাকে অবশ্যই বলবে।বলতে পারো আমি একটু নার্ভাস।তুমি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।এর আগে এমন কেউ আমার জীবনে আসেনি যাকে দেখে আমার হৃদস্পন্দন থমকে যাবে।তুমি সেই প্রথম নারী।তুমি যখন চুল খুলে ফ্রেশ হয়ে আমার সামনে এসেছো আমার কাছে মনে হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারীটি আমার সামনে দাড়িয়ে। তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে।পূর্নিমার চাঁদের মতো তুমি।তোমার খোলা চুল আমার কথা বলা থামিয়ে দিতে পারে।আমার সামনে চুল খোলা রাখবে।
তুমি চুল খোলা রেখে কিছু চাইলে আমি কোনদিন না করতে পারবো না।কোন একটা নাটকে দেখেছিলাম নায়ক এই কথাটি নায়িকাকে বলেছে।তবে আমার ক্ষেত্রে কথাগুলো হুবহু সত্যি।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠলো রূপক।এরপর কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবারো বলতে শুরু করলো-
তোমাকে আরও অনেক কিছু বলার ছিলো আমি বলতে পারছিনা।কথার মধ্যে জড়তা কাজ করছে।তোমার সাথে জন্মজন্মান্তর গল্প করবো।আমার শব্দ না ফুরাক।তোমাকে দেখে চোখ না জুড়াক।”
স্বর্ণলতা মুচকি হাসলো।চোখের কোনে অশ্রু চিকচিক করে উঠলো।এতো সুখ কি তার কপালে ছিলো?
এতো সুখ কি সইবে তার?সে সৃষ্টিকর্তা কে ধন্যবাদ দিতে লাগলো তাকে এতোটা সুখী করার জন্য।
সেদিন পুরো রাত তারা গল্প করে কাটালো।স্বর্ণলতার জন্য আনা গিফ্ট সেদিন রূপক দেয়নি।সে চেয়েছিলো তাকে জড়িয়ে ধরে সে তার উপহার তার হাতে দিবে।
দেখতে দেখতে ভোর হয়ে গেলো।সুখের মূহুর্তে গুলো দ্রুত ফুরিয়ে যায়।তাদের এই সুখের মূহুর্তে গুলোর জন্য এক সহস্র রজনী বরাদ্দ করা খুব প্রয়োজন ছিলো।তাহলে এক সহস্র রজনী মিলে ১ টি রজনী হতো।
বাইরে আযানের আওয়াজ স্বর্ণলতার কানে ভেসে আসলো।এরপর সে স্মিত হেসে রূপককে বললো-
—“আযান পড়ে গেছে।নামাজ পড়তে হবে। আপনি যান মসজিদে নামাজ পড়ে আসুন আমি ঘরেই পড়ে নিচ্ছি।”
রূপক বিনয়ের সহিত উত্তর দিলো-
—“আজকে আমি তোমার সাথে ঘরেই পড়ি?”
স্বর্ণলতা লাজুক ভঙ্গিতে মাথার ঘোমটা আরেকটু টেনে নিয়ে উত্তর দিলো-
—“জ্বী আচ্ছা”
নামাজ পড়া শেষ করে স্বর্ণলতা গেলো রান্নাঘরে।সবার জন্য চা বানালো।এর মধ্যে রূপকের মা রান্নাঘরে এসে হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে দিলো।
—“নতুন বউ রান্না ঘরে কেনো! মা যাও একটু বিশ্রাম করো।আজকে তোমার কোন কাজ করতে হবেনা।”
—“না মা আমি পারবো রান্না করতে।”
—“না কোনমতেই না।তোমার রান্না করতে হবেনা।কয়দিন পর যখন রূপক বাইরে চলে যাবে তখন তো সারাদিন ফ্রি। তখন নানারকম রান্না করে আমাকে খাইয়ো।”
স্বর্নলতা বিম্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
—“তিনি বাইরে চলে যাবেন?”
—“হুম ওর তো কানাডাতে জব এপ্লাইএর এপ্রুভাল এসে গেছে।তুমি জানোনা?তোমার বাসা থেকে তোমাকে কিছু বলেনি?”
—”না তো মা।আমাকে এই বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি।”
—“আচ্ছা যাইহোক,জানোনা যখন এখন জেনেছো।সমস্যা নেই।যাও তুমি ঘরে যাও।”
স্বর্ণলতা মন খারাপ করে ঘরে চলে আসলো।সে কখনো চায়নি স্বামী ছাড়া থাকতে।সে মনে মনে নানান বুলি আওরাতে লাগলো-
‘আচ্ছা রূপক কি তাকে নিয়ে যাবে!তাকে নিয়ে গেলো তো মা একা হয়ে যাবে।আর নিয়ে গেলে তো মা বলতো না যে ও চলে যাওয়ার পর বাসায় একা একা থাকতে হবে।
ভালোবাসা,আদর সোহাগ তার কি শুধু গুটিকয়েক দিনের জন্যই বরাদ্দ ছিলো!’
আকাশ পাতাল ভাবতে রূপকের ঘরে এসে বসলো।রূপক ঘুমাচ্ছে।কি নিষ্পাপ লাগছে তাকে।চুলগুলো চোখের ওপর পড়েছে।ইচ্ছে করছে আলতো করে তার মুখশ্রী ছুঁয়ে দিতে।
সে ধীরে ধীরে তার কাছে গেলো।আলতো করে চোখের চুল গুলো সরিয়ে দিতেই রূপকের ঘুম ভেঙে গেলো।
স্বর্ণলতা লজ্বায় ওপাশে ঘুরে গেলো।রূপক বুঝতে পেরেছিলো স্বর্ণলতা এতোক্ষন তার খুব কাছে ছিলো।তার গাঢ় নিঃশ্বাস সে শুনতে পাচ্ছিলো।তার বড্ড আফসোস হচ্ছে কেনো সে জেগে উঠলো!!ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে স্বর্ণলতার দিকে তাকিয়ে বললো
—“স্বর্ণ,বসো আমার পাশে।কোথায় গিয়েছিলে?”
—“রান্নাঘরে গিয়েছিলাম।মা কাজ করতে দিলো না।”
—“আচ্ছা।থাক একটু বিশ্রাম করো সারারাত ঘুমাও নি।”
—“আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
—“হুম বলো।”
—“আপনি কি দেশের বাইরে চলে যাবেন?মা বললো।”
—“হুম চলে যাবো।কানাডাতে একটা ব্যাংকে এপ্লাই করেছিলাম।সেখানে আমার বন্ধু আছে।ভাগ্যক্রমে এপ্রুভাল ও পেয়ে গেছি।
তবে পরিবারকে নিয়ে যাবো টেনশন করোনা।কিছুদিন পর নিতে পারবো।”
স্বর্ণলতা এতো খুশি হলো যে রূপককে জড়িয়ে ধরলো।রূপক কে জড়িয়ে ধরে তার খুশি বহিঃপ্রকাশ করতেই আবার ছিটকে সরে গেলো।
লজ্বায় লাল হয়ে গেলো তার চোখ,মুখ,নাক।
রূপক মুচকি হাসলো।
আর ওপাশ ঘুরে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা নাম্বার থেকে এক অদ্ভুত মেসেজ।
?চলবে?
Sharmin Sumi