স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব ৩

0
1370

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৩

‘আমাদের সুখ তোর সহ্য হয় না মুখপুড়ি? নিজে রাজপ্রাসাদে আস্তানা গেড়ে আমাদের না খাইয়ে মা’র’তে চাইছিস?

– কি হয়েছে মা? কি করেছি আমি?

– আমায় মা ডাকতে নিষেধ করেছি না,ন্যাকামো করিস জানিস না কি হয়েছে? তোর বাবা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে তোর কারণে এখন সংসার চলবে কি করে? বড় ভুল করেছি ছোট থাকতেই যদি তোকে মে’রে ফেলতাম তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না জীবনেও সুখী হবি না তুই দেখে নিস।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে কল কেটে দিল শাহিলী ওয়াজেদ।স্নিগ্ধতার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কথাগুলো বারবার কানে বাজছে শরীরটা দুর্বল লাগছে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছে চোখগুলো বন্ধ হয়ে গেল অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল স্নিগ্ধতা।

কিছু একটা পরার শব্দ পেয়ে সালেহা রান্নাঘর থেকে হল ঘরে আসতেই চমকে গেল সবাইকে চিৎকার করে হাক ডাক দিয়ে স্নিগ্ধতাকে ডাকতে লাগল কিন্তু স্নিগ্ধতার কোনো সাড়াশব্দ নেই কপাল কিছুটা থেতলে গেছে রক্ত জমাট বেঁধে খয়রী রঙ ধারণ করেছে।

সালেহার এমন চেঁচামেচিতে সবাই হল ঘরে চলে আসলো স্তব্ধও বাড়িতে ছিল দ্রুত স্নিগ্ধতার কাছে এসে গালে হাত রেখে ডাকছে,

– এই মেয়ে কি হলো তোমার? শুনছো?এই মেয়ে।

স্নিগ্ধতা অচেতন হয়ে আছে, রাতুল শিকদার এগিয়ে এসে,
– ওকে ঘরে নিয়ে যা আমি ডাক্তারকে কল করছি।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে ঘরে চলে গেল। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কপালে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে, অরিত্রি শিকদার একপাশে দাঁড়িয়ে ছেলে আর ছেলের বউকে দেখছেন। কিছুক্ষণ পর রাতুল শিকদার ডাক্তার নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন, মহিলা ডাক্তার স্নিগ্ধতাকে ভালো করে চেকাপ করে একটা ইঞ্জেকশন দিলেন আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বললেন,

– উনার শরীর দুর্বল মনে হচ্ছে অনেক সময় ধরে না খেয়ে আছেন একটু পরেই জ্ঞান ফিরে আসবে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিবেন।

– অবশ্যই।(অরিত্রি শিকদার)

ডাক্তার উঠতে যাবেন তখনি আবারও বসে স্নিগ্ধতার হাতটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন রাতুল শিকদার জিজ্ঞেস করলেন,

– কি হয়েছে ডাক্তার?

– এই আঘাত গুলো কিসের? মনে হচ্ছে কেউ কিছু দিয়ে মে’রে’ছে।

সবাই এবার সেদিকে নজর দিলো।স্নিগ্ধতার হাতে বেশ কয়েক জায়গায় লম্বা দাগ রয়েছে জায়গা গুলোতে কালচে দাগ পড়ে গেছে। ডাক্তার তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে স্তব্ধের দিকে তাকালো,স্তব্ধ ডাক্তারের চাহনি বুঝতে পেরে বলল,

– আমার দিকে তাকাচ্ছেন কেন? আমি এসব করিনি।

রাতুল শিকদার বললেন,
– ও আমাদের বাড়ির নতুন বউ গতকাল স্তব্ধের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।

ডাক্তার চশমা ঠিক করে দাঁড়িয়ে পড়লেন আর বললেন,
– আজ তাহলে আসি আমার চেম্বারে একদিন ওকে নিয়ে আসবেন পরীক্ষা করে দেখা উচিত পরে এর থেকে বড় কিছু হয়ে যেতে পারে।

বলেই ডাক্তার চলে গেলেন রাতুল শিকদার তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য গেলেন। অরিত্রি শিকদার রেগে বললেন,
– না খেয়ে কি বুঝাতে চাইছে শশুর বাড়ীর লোকেরা খেতে দেয় না।

রাহেলা বেগম বিরক্ত হয়ে,
– আহ বউমা এগুলো কি কথা? নতুন এক পরিবেশে আসলে এমন হয় আমাদের উচিত ছিল ওকে দেখে রাখার।

– হ্যা মা এখন সব দোষ আমাদের এই সালেহা খাবার নিয়ে এসে এখানে রেখে যাও।

সালেহা নিচে চলে গেল খাবার আনতে।অরিত্রি শিকদার স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে,
– বাবু তোর না বন্ধুদের সঙ্গে কোথায় যাওয়ার কথা ছিল তুই যা আমি এখানে আছি।

রাহেলা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে,
– অসুস্থ বউকে রেখে কোনো বন্ধু বান্ধবের কাছে যাওয়ার দরকার নেই দাদুভাই তুমি নাত বউয়ের কাছে থাকো জ্ঞান ফিরলে খাবার আর ওষুধ খাইয়ে দিও আর বউমা তুমি আমার সঙ্গে চলো।

– মা..

– চলো তো।

অরিত্রি শিকদারকে নিয়ে রাহেলা বেগম স্তব্ধের ঘর থেকে চলে গেলেন। সালেহা খাবার দিয়ে গেছে, অরিত্রি শিকদার বললেন,
– মা এভাবে স্তব্ধকে রেখে আসা ঠিক হয়নি।

– ঠিক হবে না কেন? বউকে সেবা করা ওর দায়িত্ব।

– কিসের বউ? এই বিয়ে আমাদের অমতে হয়েছে স্তব্ধ এখনও মানতে পারেনি।

– একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে।

অরিত্রি শিকদার বুঝলেন শাশুড়িকে বললেও কোনো লাভ হবে না তাই থেমে গেলেন।

স্তব্ধ পলকহীন দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আছে কেন তাকিয়ে আছে নিজেও জানে না।স্নিগ্ধতার হাতটা নিজের গালে ছুঁইয়ে আনমনে বলছে,
– গতকাল বিকেল পর্যন্ত সিঙ্গেল ছিলাম আর আজ কিনা এমন জলজ্যান্ত একটা মেয়ের হাজব্যান্ড হয়ে গেলাম।

মুচকি হাসলো স্তব্ধ, স্নিগ্ধতার জ্ঞান ফিরে এসেছে চোখ জোড়া খুলতেই হাস্যজ্জল স্তব্ধকে দেখতে পেল। ভালো করে তাকাতেই দেখলো নিজের হাতটা স্তব্ধের গালে,স্নিগ্ধতা নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতেই স্তব্ধের হুস আসল কপালটা কুঁচকে,

– জ্ঞান ফিরলো তবে।

স্নিগ্ধতা উঠার চেষ্টা করলো স্তব্ধ উঠতে সাহায্য করে বালিশ উঁচু করে বসিয়ে দিল।স্তব্ধ এবার ধমক দিয়ে বলল,
– এই মেয়ে না খেয়ে ছিলে কেন আর অজ্ঞান হলেই বা কেন? তোমার মতো চালের বস্তাকে কত কষ্ট করে কোলে তুলে এখানে আনতে হয়েছে এখন আমার কোমর কি তুমি মালিশ করে দিবে?

– আপনি আমায় কোলে করে নিয়ে এসেছেন।

– হুম।তোমার নাম কি যেন?

স্নিগ্ধতা আহত দৃষ্টিতে স্তব্ধের দিকে তাকালো আর বিড়বিড় করে বলতে লাগল,’এ কেমন ছেলে বিয়ে করা বউয়ের নাম জানে না।’

– কি হলো বলছো না কেন? ভুলে গেছি বলেই নাম জিজ্ঞেস করছি।

– আমার নাম স্নিগ্ধতা।

– স্নি…গ্ধ….তা…. স্তব্ধের বউ স্নিগ্ধতা উহু স্তব্ধের স্নিগ্ধতা গুড নেম যাই হোক আমি তোমায় স্নিগ্ধ বলেই ডাকবো ঠিক আছে।

স্নিগ্ধতা হ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
– আচ্ছা।

স্তব্ধ খাবারের প্লেট স্নিগ্ধতাকে ধরিয়ে দিয়ে,
– খাবারটা খেয়ে নাও।

খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই খিদেটা যেন ম’রে গেছে মায়ের তখনকার কথাগুলো মনে পড়তেই শরীরে কাঁটা দেওয়া শুরু করলো স্তব্ধের ধমকে কিছুটা কেঁপে উঠে বলল,
– খেতে ইচ্ছে করছে না।

– তারপরেও খেতে হবে তাই খেয়ে নাও।

– পরে খেলে হয় না?

– এখন যদি না খাও তাহলে তোমায় নিয়ে তেলাপোকা ভর্তি ড্রামে ফেলে দিয়ে আসব।

স্নিগ্ধতা ভিতু চোখে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলো স্তব্ধ আড়চোখে স্নিগ্ধতাকে দেখে মুচকি হাসছে। খাওয়া শেষ হতেই ওষুধ খাইয়ে দিয়ে,

– তুমি বিশ্রাম নাও কিছু লাগলে সালেহা খালাকে বলবে।

– আপনি কোথায় যাবেন?

– কাজ আছে।

স্তব্ধ রেডি হয়ে চলে গেল।স্নিগ্ধতা বিছানায় বসে বসে শাহিলী ওয়াজেদের কথাগুলো ভাবছে,’বাবা কেন চাকরি ছেড়ে দিল? এখানে আমার অন্যায় কোথায়? বাবার সঙ্গে কথা বলা দরকার কিন্তু কিভাবে বলবো?

রাতুল শিকদার দরজার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
– স্নিগ্ধতা মা ভেতরে আসবো?

– হ্যা বাবা আসুন।

বাবা ডাকটা শুনে মৃদু হাসলেন ঘরে এসে সোফায় বসলেন,
– এখন শরীর কেমন লাগছে মা?

– ভালো।

– নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে তাই কখনও খাবারের প্রতি অবহেলা করবে না দেখলে তো আজ কি একটা দুর্ঘটনা ঘটলো।

স্নিগ্ধতা মাথা নিচু করে হ্যা সূচক জবাব দিল। রাতুল শিকদার বললেন,
– একটা সম্পর্কে যখন বাধা পরলেই এই সম্পর্কটা কখনও শেষ হতে দিও না আমার ছেলেটা খাপছাড়া স্বভাবের মনে হয় না তোমাদের সম্পর্কটা বেশিদিন বয়ে নিতে পারবে ওর মাও তো এখনও তোমায় মেনে নেয়নি কিন্তু তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে যাই হয়ে যাক কখনও স্তব্ধকে ছেড়ে যাবে না।

স্নিগ্ধতা শশুরের দিকে ছলছল চোখে তাকালো একটু ভেবে বলল,
– আপনার কথা রাখার চেষ্টা করবো বাবা।

রাতুল শিকদার তৃপ্তির হাসি হেসে,
– এখন তাহলে আসি তুমি বিশ্রাম নেও।

– একটু ফোনটা দেওয়া যাবে বাবার সঙ্গে কথা বলতাম।

– এই নাও।

স্নিগ্ধতাকে মোবাইলটা দিয়ে চলে গেলেন।ভার্সিটিতে যাওয়ার পর সানজিদ ওয়াজেদ একটা মোবাইল কিনে দিয়েছিল স্নিগ্ধতাকে একদিন রান্না করতে দেরি হওয়ায় শাহিলী ওয়াজেদ মোবাইলটা ভেঙে ফেলে আর তারপর থেকে আর কখনও মোবাইল ব্যবহার করেনি স্নিগ্ধতা।

নাম্বার মুখস্থ ছিল তাই সানজিদ ওয়াজেদকে কল দিল দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হতেই স্নিগ্ধতা সালাম দিল,
– আসসালামু আলাইকুম।

– ওয়া আলাইকুমুসসালাম।স্নিগ্ধা নাকি?

– হ্যা বাবা কেমন আছো?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস?

– আলহামদুলিল্লাহ, বাবা তুমি নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছ? কেন চাকরি ছেড়েছ এই চাকরি দিয়েই তো সংসারটা চলে এখন কি হবে?

– তুই জানলি কিভাবে?

– মা বলেছে।

– শাহিলী তোর কানে কথাটা তুলে দিয়েছে বাহ? এতদিন চাকরিটা করেছি ঠিক আছে কিন্তু এখন রাতুল শিকদার তোর শশুর তোর শশুরের অফিসে চাকরি করলে মানুষ কি ভাববে বল তো তবে তুই চিন্তা করিস না আরেকটা চাকরি আমি পেয়ে যাবো।

– আমার জন্যই তোমাদের এত কষ্ট তাই না আজ চাকরিটাও ছাড়তে হলো?

– এসব মুখেও আনবি না বরং আমি এক অসহায় বাবা যে কিনা সারাজীবন মেয়েকে কষ্ট পেতে দেখেও কিছু করতে পারেনি তুই তোর মায়ের সঙ্গে আর কথা বলবি না চিন্তা করিস না চাকরির জোগাড় হয়ে যাবে।

সানজিদ ওয়াজেদ কল কেটে দিল স্নিগ্ধতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।
_______________

চারিদিকে হরেক রঙের লাইট জ্বলছে,হাই ভলিউমে মিউজিক বাজছে তার তালে তালে কাপলরা ডান্স করছে আবার কেউ কেউ ড্রিংকস করছে।স্তব্ধ বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে এসেছে ওর বন্ধুরা মেয়েদের সঙ্গে নাচতে ব্যস্ত কিছুটা দূরে বসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে দিতে সেই দৃশ্য দেখছে স্তব্ধ।একটা শর্ট ড্রেস পরা মেয়ে স্তব্ধের পাশ ঘেঁষে বসে,

– কাম অন স্তব্ধ সবাই কি সুন্দর ডান্স করছে চলো না আমরাও ওদের সঙ্গ দেই।

– তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যাও এসব ডান্স আমার ভালো লাগে না।

– তাহলে এসেছ কেন?

– সবাইকে দেখতে।

মেয়েটা স্তব্ধের হাত ধরে টেনে,
– কোনো কথা শুনবো না আজ তোমাকে আমার সঙ্গে যেতেই হবে।

– হাতটা ছাড়ো জেসি ধরাধরি আমার একদম পছন্দ নয়।

মেয়েটি স্তব্ধের কোলে বসে পড়লো গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
– আমার তো তোমাকে অনেক পছন্দ এতক্ষণ হাত ধরেছিলাম এখন পুরো তোমাকেই ধরেছি কি করবে জান?

স্তব্ধের রাগটা বেড়ে গেছে জেসির হাতের কব্জি ধরে নিজের থেকে সরিয়ে জোরে একটা চড় লাগিয়ে দিল। সবার দৃষ্টি এখন তাদের দিকে স্তব্ধ কিছুটা ঝুঁকে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল,

– তোমার মতো দুই পয়সার মেয়ের সঙ্গে স্তব্ধ শিকদার ডান্স করবে ভাবলে কি করে? এই চড়টা আমাকে টাচ করার পানিশমেন্ট আশা করি মনে থাকবে ওকেহ বাই বেইবি।

একটা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল স্তব্ধ। জেসি টেবিলে রাখা গ্লাসটা ছুঁড়ে ফেলে দিল তার বান্ধবী মৌনি কাধে হাত রেখে শান্ত করার জন্য বলল,

– জেসি রাগ কন্ট্রোল কর সবাই দেখছে।

– দেখুক, স্তব্ধ শিকদারের এত বড় সাহস জেসির গায়ে হাত তুলে এর শোধ তো আমি নিবোই।

স্তব্ধ ড্রাইভ করছে তার পাশের সিটে বসে আছে তার বন্ধু রাজ। রাজ বলল,
– জেসিকে চড় মা’রাটা কি ঠিক হলো?

– ভুল কিছু হয়নি ইদানিং অনেক বাড়াবাড়ি করছিল আজ তো আমাকে টাচ করেছিল।

– কত মেয়ের সঙ্গে ফ্লাটিং করলি অথচ একটা মেয়ে নিজ থেকে ছুঁয়েছে বলে দোষ।

– দু’টো আলাদা টপিক ফ্লাটিং করা কবেই ছেড়ে দিয়েছি তবে ইউ নো কখনো কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যাইনি ভার্জিনিটিরও তো একটা ব্যাপার আছে।

– শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করেছিস ট্রিট দিলি না বন্ধুদের?

স্তব্ধ ব্রু নাচিয়ে,
– ওইটা একটা এক্সিডেন্ট ট্রাপে পড়ে বাবার কথায় বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে বাই দ্য ওয়ে তুই জানলি কিভাবে?

– আঙ্কেল বলেছে।

– শুধু বিয়ে করিয়েই ক্ষান্ত হয়নি এখন দেখছি ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানাতে ব্যস্ত হয়ে গেছে।

– তেমন না তোকে কল করেছিলাম ফোনটা মেবি আঙ্কেলের কাছে ছিল তোর কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো তুই নাকি বিয়ে করছিস।

গাড়ি থেমে গেল রাজ ব্রু কুঁচকে,
– থামালি কেন?

– তোর বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছিস।

– ওহ।

রাজ গাড়ি থেকে নেমে গেল গাড়ির জানালায় উঁকি দিয়ে বলল,
– ভাবীর সঙ্গে কবে দেখা করাবি? বড় একটা পার্টি চাই কিন্তু আর পার্টিতে ভাবীকেও আনতে হবে।

– যা ফোট।

স্তব্ধ গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। বাড়িতে আসতে আসতে রাত বারোটা বেজে গেছে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।স্তব্ধ সবসময় এমন রাত করেই ফেরে অরিত্রি শিকদারের জন্য রাতুল শিকদার ছেলেকে তেমন কিছু বলতেও পারে না।স্নিগ্ধতা বেশ কিছুক্ষণ জেগে ছিল কিন্তু ওষুধের পাওয়ারের কাছে হার মেনে ঘুমিয়ে গেছে। ঘরে নীল রঙের ডিম লাইট জ্বলছে,স্তব্ধ ঘরে ঢুকে দরজা আটকে আবছা আলোতেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই শরীরে কারো স্পর্শ পেল ভালো করে তাকাতেই স্নিগ্ধতাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু খেল। ধ্যান ফিরতেই নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করলো,’এটা কি করলি স্তব্ধ? একটা মেয়েকে এভাবে চুমু খেলি? এই মেয়েটার মধ্যে কি আছে কে জানে দেখলেই সবকিছু গুলিয়ে যায়, ভাগ্যিস ঘুমিয়ে ছিল দেখে ফেললে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতাম না।

কিছুটা দুরত্ব রেখে স্তব্ধ ঘুমিয়ে গেল।
__________

ফজরের আজান হয়ে গেছে স্নিগ্ধতা উঠে ওযু করে নিল। নামাজ পড়তে যাবে তখনি স্তব্ধের দিকে চোখ গেল কিছু একটা ভেবে বিছানায় বসে,

– এই যে শুনছেন আজান শেষ নামাজ পড়তে হবে তাড়াতাড়ি উঠুন।

স্তব্ধের কোনো সাড়াশব্দ নেই স্নিগ্ধতা হাত ঝাঁকিয়ে,
– উঠছেন না কেন? এখন কি ঘুমের সময় নামাজটা তো পড়ে নিন।

আচমকা স্নিগ্ধতাকে টেনে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,
– আরেকটু ঘুমাতে দাও না।

স্নিগ্ধতা বরফের ন্যায় জমে গেছে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কিছুক্ষণ এমন ভাবেই কেটে গেল স্তব্ধ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।স্নিগ্ধতা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে স্তব্ধ এবার বিরক্ত হয়ে চোখ মেলে নিজের এত নিকটে স্নিগ্ধতাকে দেখে এক লাফে উঠে দূরে সরে গেল, বেচারি স্নিগ্ধতা স্তব্ধের এমন কর্মকাণ্ডে ভরকে গেছে।

স্তব্ধ রাগী স্বরে বলল,
– তুমি আমার কাছে কি করছিলে? লজ্জা করে না অসহায় একটা ছেলেকে একা পেয়ে এভাবে তার কাছে আসতে?

স্নিগ্ধতা উঠে বসলো স্তব্ধের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– আমি তো আপনাকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকলাম কিন্তু আপনি আমায় টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আমার কি দোষ?

– তুমি বললেই বিশ্বাস করতে হবে নাকি? আমি কখনও এমন কাজ করতে পারি না।

– এটা নিয়ে পরে কথা বলা যাবে এখন চলুন নামাজ পড়তে হবে সময় চলে যাচ্ছে।

স্তব্ধ একবার স্নিগ্ধতার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে ওযু করতে চলে গেল। তারপর দু’জনে একসঙ্গে নামাজ আদায় করে নিলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here