সূর্যোদয় পর্ব ৩৬

0
115

#সূর্যোদয়
#পর্ব_৩৬
#কারিমা_দিলশাদ

১০৭.

রাতের বেলা ঐশী বালিশ জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে জয়ের কথা ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। কিভাবে কিভাবে যেন এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে। এই একমাসে জয়ের সাথে তার সম্পর্কটা অনেক ইজি হয়ে গেছে। ইদানীং জয়ের প্রতি তার একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। ভালোলাগা কাজ করছে। তবে সেটা কেবলই শুধু ভালোলাগা পর্যন্তই।

জয়ের করা পাগলামি, জয়ের কেয়ার, ছেলেমানুষী তার বেশ ভালোই লাগে। অন্যরকম একটা ক্যারেক্টার। মাঝে মাঝে এমন এমন সব বিহেভ করে যা তার বয়সের সাথে মোটেই যায় না। হুটহাট বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে, হুটহাট কোনো বিষয় নিয়ে অভিমান করে ফেলবে। কি নিয়ে অভিমান সেটা আবার বলবেও না, যদিও ঐশী কখনোই জয়ের এসব মান-অভিমানের তোয়াক্কা করে না। জয় নিজে নিজেই আবার নিজের রাগ অভিমান ঝেড়ে ফেলে তার কাছে এসে এমনেই সরি বলবে। যেন অভিমান ঐশী করেছিল। হঠাৎ করে একটা ঘটনা মনে পড়লো তার।

হুট করেই জয় একবার ফোন করা দেখা করা একদম বন্ধ করে দেয়। ঐশী বিষয়টা তিনদিন পরে গিয়ে খেয়াল করে। খেয়াল করে জয় গত তিনদিন ধরে ফোন করছে না এবং দেখাও করছে না। সে প্রথমে কিছুটা চিন্তিত হলেও পরে ভাবে হয়তো জয় ব্যস্ত তাই ফোন করার সুযোগ পাচ্ছে না। সে নিজেও তখন ব্যস্ত সময় পার করছে। ঐশী ঠিক করে সে নিজেই একবার কল করে খোঁজ নিবে। তবে কোনো কারণ বশত সেদিন আর ফোনটা করা হয়ে উঠে না। তবে পরেরদিনই দেখে জয় বাইক নিয়ে নৃত্যশৈলির সামনে দাড়িয়ে আছে। এটা জয়ের রোজকার রুটিন। এখন প্রতিদিন বিকেল বেলা জয়ই তাকে নৃত্যশৈলী থেকে নিতে আসে আর বাসায় পৌঁছে দেয়। ঐশী জয়ের কাছে গিয়ে তাকে এতদিন কল না দেওয়ার কারণ আর না আসার কারণ জিজ্ঞেস করে। কিন্তু জয় কোনো উত্তর দেয় না। ঐশী অপেক্ষা করে জবাবের কিন্তু জয় কোনো জবাব না দিয়ে মুখ ফুলিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে। একপর্যায়ে ঐশী বাইকে উঠে পড়ে। সে উঠতেই জয় বাইক স্টার্ট করে একটানে ঐশীর বাসার সামনে এসে পড়ে। ঐশী বাইকে থেকে নামতেই সে কিছু না বলেই চলে যায়। এমনকি ঐশীকেও কিছু বলার সুযোগ দেয় না। ঐশী হতবাক হয়ে জয়ের যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে।

এই কাহিনিই দুইদিন চলতে থাকে। জয় ঐশীকে নিতে তো আসে কিন্তু কোনো কথা বলে না, এমনকি ঐশীর দিকে ভালো করে তাকায়ও না। পরেরদিন ঐশী কঠিনভাবে পাকড়াও করে জয়কে। ঝাঁঝ নিয়ে বলে,

“ কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন? একেতো কয়েকদিন একবারে উধাও হয়ে ছিলেন। না কোনো ফোনকল না কোনো দেখা সাক্ষাৎ। এরপর কই থেকে আবার উদয় হয়ে আমাকে গাড়িতে চড়িয়ে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছেন। কোনো কথা বলছেন না। কেন? আমার সাথে যদি কথা বলতে নাই চান তাহলে আমার কাছে আসেন কেন? আমাকে আনা নেওয়া করা তো আপনার কাজ না। আপনাকে কেউ বলেও নি এসব করার কথা। আমি কি একা একা চলাফেরা করতে পারি না? আমি কি এতোটাই অকর্মা? আমি একাই আমার জন্য যথেষ্ট বুঝেছেন? খবরদার আর আমার সামনে আসবেন না। যত্তসব। ”

ঐশীর কথা শেষ হতেই জয় ঐশীর থেকেও দ্বিগুণ ঝাঁজ নিয়ে গমগমে স্বরে বলে উঠে,

“ হ্যা হ্যা যাও যাও। পারো তো খালি ওটাই। নিজের রাগ দেখাতে পারো খুব। তোমার তো অন্যকারো কোনো পরোয়াই নেই। আমি কি জানি না তুমি একা একা চলতে পারো। তোমার তো দুনিয়ার কাউকেই লাগে না। আমাকে আর কি লাগবে। এই মেয়ে এই আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয় না? হ্যা? আমার কি কোনো ফিলিংস নেই?…..”

জয়কে তার কথা শেষ করতে না দিয়েই ঐশী চোখমুখ কুঁচকে বলে উঠে,

“ এখানে ফিলিংস কোথাথেকে আসলো?”

“ যেখানে থাকে সেখান থেকেই এসেছে। যার আছে তারই আসে। তোমার তো আসবে না। কারণ তোমার মাঝে তো কোনো ফিলিংস নেই। এতদিন ধরে তোমার পিছন পিছন পাগলের মতো ঘুরছি। বিয়ে ঠিক হয়েছে তোমার সাথে আমার। অথচ আমি ফোন না দিলে তুমি কখনো আমাকে ফোন দিয়েছ? মেসেজ দিয়েছ?না তা দিবে কেন। কারণ পৃথিবীর সব পুরুষ তো খারাপ। সবাই এক। ইউজলেস পাষান মেয়ে একটা।”

ঐশী এতক্ষণে বিষয়টা বুঝতে পারে। নিজে থেকে ফোন না দেওয়ায় মশাইয়ের রাগ হয়েছে। ঐশীর এবার খুব জোর হাসি পায়। পাগলটা এটা নিয়ে রাগ করেছে। তাহলে আবার তাকে প্রতিদিন আনা নেওয়া করে কেন?

“ ওহহ। তো আপনি এটা নিয়ে আমার উপর রেগে আছেন?”

“ না না। আমি রাগ করার কে? আমার তো রাগ থাকতে নেই। সব রাগ তো কেবল আপনার জন্য বরাদ্দ ম্যাডাম। আপনি একাই রাগ করতে পারেন।”

ব্যঙ্গ করে কথাগুলো বলে জয়। একটু থেমে এবার নরম সুরে বলে,

“এই এতদিন হয়ে গেল আমাকে কে তুমি এখনো একটুও চিনে উঠতে পারো নি? এতদিনেও কি আমি তোমার বিশ্বাস ভরসা একটুও জিততে পারি নি? আমি কি এতোই খারাপ? আমাকে একটু বিশ্বাস করা যায় না, ভালোবাসা যায় না? তাহলে আমার রাগে কার কি যায় আসে? আমি এভাবেই থাকবো। যা খুশি করবো।”

জয় কাতর হয়ে একরাশ অভিযোগ নিয়ে কথাগুলো বলে। আর ঐশী খুব কষ্ট করে বাহির থেকে নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে। অথচ সে ভিতরে ভিতরে হেসে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। জয় এবার মুখ ফুলিয়ে মাথা নিচু করে বাচ্চাদের মতো বলে,

“ আর কাউকে বাসায় পৌঁছে দেওয়াটা আমি ভালবাসা থেকে করি। নিজেকে ভালো রাখার জন্য করি। এসব অন্যরা কি বুঝবে। এসব বোঝার ক্ষমতা তার আছে নাকি। পাষাণ বেকুব নারী।”

ঐশী এবার নিঃশব্দে হেসে উঠে। জয় আর কিছু না বলে বাইকে উঠে হর্ণ বাজায়। এরমানে যেন ঐশী বাইকে গিয়ে উঠে। ঐশীও হাসিমুখে বিনাবাক্য বাইকে চড়ে বসে। সারাটা রাস্তা জয় মুখ ফুলিয়ে কপাল কুঁচকে রেখেছে। আর পিছন থেকে ঐশী সেই অভিমানে জর্জরিত মুখশ্রীটা আয়নায় দেখতে দেখতে এসেছে। ঐশীর বাসার সামনে এসে জয় বাইক থামিয়ে দেয়। ঐশীও নেমে পড়ে বাইক থেকে। ঐশী নামলেও জয় আজকে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐশী জয়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুষ্টুমি করে বলে উঠে,

“ কি হলো? আজকে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন যে? এই কয়দিন তো আমি নামার সাথে সাথে হুরুশশশ করে চলে যেতেন।”

জয় ঐশীর দিকে রাগী চোখে তাকায়। এরপর বাইক স্টার্ট দিতেই ঐশী খপ করে জয়ের কোমড়ের কাছের শার্ট মুঠো করে ধরে ফেলে। জয় বিরক্তি নিয়ে সেদিকে তাকালেই ঐশী জোরে হেসে ফেলে। ঐশীর মিষ্টি হাসির শব্দে জয় সেদিকে তাকিয়েই মুগ্ধ হয়ে যায়। এতো সুন্দর হাসি দেখে তো পাষানও গলে যেতে বাধ্য। আর সে তো প্রেমিক পুরুষ। জয় মুগ্ধ নয়নে প্রেয়সীর হাসি দেখতে থাকে। ঐশী হাসিমুখে বলে উঠে,

“ আপনার রাগ তো খুব কিউট ডাক্তার সাহেব। এভাবেই কিউট করে রাগ করবেন। আর আমি সরি। শাস্তিস্বরুপ কোনো পাষাণ নারী আজকে নিজে থেকে কল দিবে। নরম পুরুষকে কলটা রিসিভ করতে বলিয়েন। এখন আমি আসি। বাই।”

ঐশী চলে যাওয়ার পরও জয় ঐশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারমুখ এখন হাজার ওয়াটের বাল্বের মতো জ্বলজ্বল করছে। সে খুশি মনে বাসায় রওনা হয়।

১০৮.

রাতে ঐশী কল দেয় জয়কে। জয় ফোন হাতে নিয়ে ঐশীর কলের জন্যই অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তাও একটু সময় নিয়ে কলটা রিসিভ করে। গম্ভীর হওয়ার ভান করে হ্যালো বলে। ওপাশ থেকে ঐশীও সুন্দর করে বলে উঠে,

“ হ্যালো ডাক্তার সাহেব?”

ইশশশ মেয়েটা এতো সুন্দর করে ডাক্তার সাহেব ডাকে। এভাবে ডাকলে কেউ রাগ করে থাকতে পারে বুঝি? এই মেয়ের সাথে রাগ করেও থাকা যায় না। জয়ের সব রাগ ঐশী এক সেকেন্ডেই পানি করে দেয়। জয়ের থেকে জবাব না পেয়ে ঐশী বলে,

“ হ্যালো নরম পুরুষ আপনি আছেন?”

জয় এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠে। ওপাশে ঐশীও জয়ের সাথে তাল মেলায়। সেদিন প্রায় অনেক রাত পর্যন্ত তারা কথা বলে।

এসব ভেবেই ঐশী জোরে হেসে উঠে। লোকটাকে ভীষণ সুইট লাগে। কিন্তু এতো সুন্দর অনুভূতির মাঝেও এখনও কোথাও যেন একটা দ্বিধা কাজ করে, সংশয় কাজ করে। তবে ঐশী সেগুলো নিয়ে এখন অতো ভাবতে চায় না। সে এখন সবকিছু সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। আর আশা রাখে সময়ই সব ঠিক করে দিবে।

#ক্রমশ…….
( কপি করা নিষেধ। কেউ কপি করবেন না।

আপনারা কেউ গঠনমূলক মন্তব্য করেন না। 🙂
কষ্ট লাগে। 🙂🥹 গল্পটা কেমন লাগে জানায়েন কিন্তু। 🥹🥹)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here