#সূর্যোদয়
#পর্ব_২৭
#কারিমা_দিলশাদ
৭৩.
ঐশীদের বাসা এখন থমথমে। তার বড় খালা আজ চুকলি করার আরও সুযোগ পেয়ে গেছে। ঐশীর ইগো বেশি, ঐশী নিজেকে না জানি কিভাবে আরও কত কি। মোটকথা নিজের মেয়ের সুনাম গাইছে আর ঐশীর দূর্নাম। আর ঐশীর বাবা মাকে কানপড়া দিচ্ছে।
ঐশীর বাবা মা তো মারুফের কাকুতিমিনতি দেখে গলে একদম বরফ হয়ে গিয়েছে। তাদের অকর্মা, বে’য়াদব, উড়নচন্ডী, বেগুন মেয়েকে এমন একটা ছেলে এতকিছুর পরও বিয়ে করতে চেয়েছে তাদের জন্য এটা তো স্বপ্নেরও বাইরে। আর সেই ছেলেকে কি না ঐশী না করেছে এটা তারা কিভাবে মেনে নিবে?
ঐশীর মা তো এসে ইতোমধ্যে তাকে উত্তম-মধ্যমও দিয়ে দিয়েছে। এতোক্ষণ ঐশী শাড়ি পড়েই ফ্লোরে বসেছিল। মারুফ চলে যাওয়ার পর থেকে ঐশী ভেবেই চলেছে। কি যে ভাবছে সেই ভাবনার নির্দিষ্ট গন্ডী নেই। কখনো নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবেছে, কখনো তার বর্তমান নিয়ে ভেবেছে, এই যে আত্মীয় স্বজন আর তার বাবা মা’র টুকরো টুকরো কটুক্তি তাচ্ছিল্য তার কানে আসছে এগুলো নিয়েও ভাবছে। আবার মারুফকে নিয়েও ভাবছে।
সত্যি বলতে মারুফের জন্য তার খুব খারাপ লাগছে, খুব বেশি। ঐশী মানুষের চোখের ভাষা বুঝে না। তবে আজকে প্রথমবার কোনো পুরুষের চোখে নিজের জন্য কিছু দেখেছে। বলতে গেলে অনেক কিছু দেখেছে। সে তার ইহজীবনে অন্যকারো চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা কখনো দেখে নি। তার মা বাবার মাঝেও না। তাদের ব্যবহারেও না। তবে আজ মারুফের চোখে তার ব্যবহারে সে মারুফের মাঝে তারজন্য একরাশ ভালোবাসা দেখেছে। তাও আবার পরিপক্ব এক পুরুষের মাঝে। যা খুব গভীর। তবে কেবল এই ভালোবাসা দিয়ে বাকি জীবন চলবে না। কেউ কেউ বলে ভালোবাসা ছাড়াও সংসার করা যায় আবার কেউ কেউ বলে আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো না থাকলেও ভালোবাসা থাকলেই চলে, আবার কেউ কেউ বলে উল্টোটা। আসলে এই সবই ভুল কথা। ভালোবাসা, সম্মান, অর্থ আর মানসিক শান্তি না থাকলে জীবন বা সংসার কোনটাই চলে না। না না ভুল বললাম, চলে। তবে চলার মতো চলে না। দায়সারাভাবে চলে। এগুলোর মধ্যে একটা যদি না থাকে তাহলে জীবন সুখের হয় না। আর সে দায়সারাভাবে কোনোকিছু জীবনে করতে চায় না।এসব ফিল্মের ডায়লগ ফিল্মেই সুন্দর বাস্তবে না।
মারুফের সাথে থাকলে তার সুখটা হয়তো ক্ষণস্থায়ী হতো। তবে মারুফের জন্য তার খারাপ লাগছে। সে মারুফের উপর দূর্বল না। তবে লোকটার অসহায়ত্ব, লোকটার কষ্ট তার মনে লেগেছে। ঐশী আর মারুফ দু’জনেই প্রায় একই ঘাটের মাঝি। পরিবার থেকে অবহেলিত। তাই হয়তো ঐশীর আরও বেশি খারাপ লাগছে।
বসে থাকতে থাকতে কোমড় লেগে গেছে। ঐশী সোজা হতে গিয়ে দেখে ঘাড়ে ব্যা’থা করছে। তার মা ঝাড়ু দিয়ে ঘাড়ে একটা বাড়ি দিয়েছিল, ঝাড়ুর শলাগুলো লোহার একটা চাকতি দিয়ে আটকানো। ওটা ঘাড়ে লাগায় এই ব্যা’থা। ঐশী উঠে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুখচ্ছবি। ঠোঁটের বাম সাইড থেকে থুতনি পর্যন্ত জায়গাটা ছেড়ে ছেড়ে হালকা বেগুনি হয়ে রয়েছে। জ’খম হয়ে গেছে। ধা’ক্কা দিয়েছিল তার মা। তখন টেবিলের কর্ণারে গিয়ে লেগেছিল। সেটাই এখন বেগুনি হয়ে ভ’য়ংকর রুপ নিয়েছে। এরপর ডান হাতটা সামনে ধরে। হাতের এই জায়গাটাতেও কালো দাগ হয়ে রয়েছে। ওবাড়ির লোকেদের সাথে ওভাবে কথা বলার জন্য ওর মা এই জায়গাটার চামড়া টেনে মোচড়ে দিয়েছিল। মা’রগুলো ব্যাথায় টনটন করছে। চোখ বন্ধ করতেই একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে।
যে মা বাবা সব দেখার পরও নিজের সন্তানের ভালোমন্দ বিচার বিবেচনা করে না। এমন বাবা মা থাকার থেকে না থাকায় ভালো। হয় আল্লাহ ওদেরকে উঠিয়ে নিক আর নাহয় ওকে উঠিয়ে নিক। এসব ভেবে শাওয়ার নিতে চলে যায় ঐশী। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে তার। গোসল করে বেরিয়ে এসে একটা প্যারাসিটামল আর একটা ঘুমের বড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ে। সে জানে তাকে কেউ খাওয়ার জন্যও ডাকতে আসবে না। দরজাও বন্ধ করা। তাই সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেল।
৭৪.
সকাল সকাল ঐশী নিজের বাসায় চলে এসছে। এই একটায় তো ওর নিজস্ব জায়গা। এ বাসায় এসে সারাদিন নিজের মতো রান্না করে, খায়, আর শুয়ে থাকে। আজকে আর ঘর থেকে বের হয় নি। খালি ক্লাসগুলো করিয়েছে।
ঠোঁটের জখম নিয়ে সবাই বারবার প্রশ্নও করেছে অনেক। বিশেষ করে স্মৃতি। যখন বলেছে বেখেয়ালিতে লেগে গেছে তখন কি ঝাড়ি। যেন সে স্মৃতির আপন কেউ। মেয়েটাকে তার খুব ভালো লাগে। তার এই অপূর্ণতা ভরা জীবনে কিছু মানুষ তাকে অকারণেই খুব ভালবাসে। আগে কেবল আশা ছিল। ডান্স ক্লাস খোলার পর তার সংখ্যা বেড়েছে। যেমন স্মৃতি। এই মেয়েটাও তাকে অকারণে ভালোবাসে। ফ্লোরিং সেট করা বিছানায় বসে বসে এসবই ভাবছিল সে। এরমধ্যে কলিং বেল বেজে উঠে।
সে অবাক হয়। এখন কে এলো। বিকাল হয়ে এসছে। আর কোনো ব্যাচও নেই তার। ওর ফ্রেন্ডদের মধ্যেও কারো আসার কথা না৷ ও না ডাকলে ওরা অযথা এখানে আসবেও না। তাহলে কে? এসব ভাবতে ভাবতে গিয়ে দরজার হোল দিয়ে দেখে নেয় কে এসেছে। দেখে সে বেশ অবাক হয়। জয়!! উনি এখন এখানে কি করছে?
ঐশী দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই জয়ের ক্লান্ত উৎকন্ঠ চেহারা দৃষ্টিগোচর হয় তার। ঐশী অবাক হয়ে বলে,
“ আপনি?”
জয় তার দিকে কেমন কাতর চোখে তাকিয়ে আছে। এরপর জয় চট করে তার হাত ঐশীর ঠোঁটের দিকে নেয়। ঐশী ভড়কে শরীরটা পিছনে নিয়ে যায়। জয় হাতটা সরিয়ে নেয়। তার দৃষ্টি ঐশীর ঠোঁটের জ’খম হওয়া জায়গায় নিবদ্ধ করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
“ আপনি ব্যা’থা কি করে পেলেন ঐশী?”
“ মানে!”
“ আপনি ব্যা’থা পেয়েছেন ঐশী। ইশশ কতটা জায়গা জুড়ে জ’খম হয়ে আছে। আপনি কি একটু সাবধানে থাকতে পারেন না? সারাক্ষণ লাফালাফি। এতো লাফালাফি করেন কেন আপনি? এখন দেখলেন তো কি হয়ে গেল। এতো কেয়ারলেস কি করে হতে পারেন আপনি৷ আপনি কি কিচ্ছু বুঝেন না, আপনার কিছু হলে আরেকটা মানুষের কতটা কষ্ট হয়। সে বিষয়ে কোনো ধারণা আছে আপনার?” -শেষের কথাগুলো চিল্লিয়ে বলে জয়।
ঐশী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে জয়ের দিকে। এ কোন জয়। আর এটা নিয়ে তার এমন অস্থির হওয়ার কি আছে। জয়ের আজকের এই আচরণ তাকে অন্যকিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। সে কিছুটা শক্ত গলায় বলে,
“ আপনি কিভাবে জানলেন আমি ব্যা’থা পেয়েছি? আর আপনিই বা এখানে কি করছেন? আর আমার যা খুশি হোক তা নিয়ে আপনার এতো টেনশনের কারণ কি?”
ঐশীর প্রশ্ন শুনে জয়ের সব অস্থিরতা ছো হয়ে গেছে। জোঁকের মুখে লবণ পড়ার মতো অবস্থা। সে কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বলে,
“ আসলে স্মৃতি বলেছে। আর স্মৃতি এই ওষুধটাও দিতে বলেছে।” — বলেই পকেট থেকে ওষুধটা বের করে দেয় ঐশীকে।
“ ডাক্তাররা আজকাল ওষুধও সাথে নিয়ে ঘুরে নাকি? যাইহোক আপনি এটা দিতেই এসছিলেন?”
জয় মাথা নিচু করে জবাব দেয়,
“ জ্বি জ্বি। আসলে স্মৃতি দিতে বলল আপনাকে তাই……. আমি আমি আসি। বাই।”
“ দাড়ান ডাক্তার সাহেব। ”
জয় দাঁড়িয়ে যায়। ঐশী ঘুরে জয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। জয় মাথা নিচু করে আছে। ঐশী ঘাড় সম্পূর্ণ উঁচু করে জয়ের দিকে তাকায়। লোকটা ঐশীর থেকে ভীষণ লম্বা। ঐশীকে সবসময় মাথা উঁচু করে কথা বলতে হয়। ঐশী নিরবে কিছুক্ষণ জয়কে পরখ করে।
“ জানি না আমি একটু বেশি ভাবছি কি না। তবুও একটা কথা আগে ভাগেই বলে রাখি। আমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট দেখাবেন না। আমার মনে হয় আপনি বুঝতে পারছেন আমি কোন ইন্টারেস্টের কথা বলছি। আমার উপর কোনরকম দূর্বলতা দেখাবেন না৷ আর যদি একটু দূর্বল আপনি হয়েও থাকেন তবে সেটাও ত্যাগ করুন। কারণ এসব কখনোই সম্ভব না। আপনার আজকের ও বিগত আচরণ আমাকে এমনই কিছুর আভাস দিচ্ছে, তাই বলতে বাধ্য হলাম। সো বি কেয়ারফুল। ” – বলে যেই রুমে ঢুকতে নিবে তখনই জয় পিছন থেকে বলে উঠে,
“ কেন সম্ভব নয়?” — ঐশী থমকে দাঁড়ায়। চট করে পিছু ঘুরে। জয় ঐশীর সামনাসামনি হয়, ঐশী তখন জয়ের লালাভ মুখটা দেখতে পায়। মুখ লাল হওয়ার কারণ রাগ না অন্যকিছু তা তার জানা নেই। ঐশীর ভাবনার মাঝে জয় আবার বলে,
“ কেন সম্ভব নয় বললেন না তো?”
“ মানে…”
“ আমি যদি আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড হই তাহলে আপনার আর আমার মাঝে কোনকিছু কখনো কেন সম্ভব নয়?”
“ কারণ! কারণ… আমি আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড না। আমি….”
“আপনি? ” জয় হুট করে ঐশীর মুখের সামনে এসে যায়। ঐশীর দিকে ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ আর আপনিকি ঐশী? আচ্ছা বলুন আপনি কার প্রতি ইন্টারেস্টেড? কাকে ভালোবাসেন আপনি? ওই এসপি কে?”
৭৫.
ঐশী মহা অবাক। জয় এসপি স্যারের কথা কিভাবে জানে?
“ আপনি কিভাবে তার কথা জানেন?”
“ এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয় ঐশী। বলুন আপনি কাকে ভালোবাসেন? ”
“ তার জবাব আমি আপনাকে কেন দিব?”
রাগে জয়ের মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই মেয়ের ত্যাড়া ত্যাড়া জবাব তার রাগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। এরপর আবার ঐশীর কাছে গিয়ে তার দিকে ঝুঁকে রাগে হিসহিস করতে করতে বলে,
“ তাহলে আমি কি করবো না করবো তা আমি আপনাকে কেন বলবো? আমি যার উপর ইচ্ছা তার উপর ইন্টারেস্ট দেখাবো তাতে আপনার কি? আপনি তো ওই এসপির সাথে ভালোই আছেন। আপনার তো অন্য কারো মনের খোঁজ রাখার দরকার নেই।”
ঐশী হা করে তাকিয়ে আছে জয়ের দিকে।
“ মানে! আপনার মাথার তার ছিঁড়া? আপনি আমার উপর ইন্টারেস্ট দেখালে আমি সেই বিষয়ে না করব না। যেখানে আমি আপনার উপর ইন্টারেস্টেড না। আর কি বারবার……..”
“ কেন আমার উপর ইন্টারেস্ট না আপনি? কি কমতি আছে আমার? সব ইন্টারেস্ট ওই টাকলা এসপির উপর তাই না?”
“ মি. জয় মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। আর ইউ ক্রেজি! আমি আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড না মানে না। এর কারণ কেন আমি আপনাকে দর্শাবো? আর বারবার কেন আপনি উনাকে টেনে আনছেন? ওনার সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই যে আপনি আমাকে আর তাকে নিয়ে বারবার এমন নিচ ধরনের কথাবার্তা বলবেন। আপনার সেই অধিকার নেই।”
ঐশীর একটা কথাই জয়ের সব রাগ এক নিমিষেই পানি করে দিয়েছে। জ্বলন্ত হৃদপিণ্ডে কেউ যেন বরফ গলা পানি ঢেলে দিয়েছে। ওই এসপির সাথে ঐশীর কোনো সম্পর্ক নেই? তারমানে তার রাস্তা ক্লিয়ার? সে ঐশীকে জিজ্ঞেস করে,
“ কি বললেন?”
“ অনেক কিছুই বলেছি। কোনটা বলব?”
“ ওই এসপির সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই? আপনারা রিলেশনশিপে নেই?”
“ না তো। আর আমি যদি তারসাথে রিলেশনশিপে থেকেও থাকি তাতে আপনার কি? ”
“ সত্যি?”
“ হুয়াট…..মিথ্যা কেন বলবো আমি? আর সত্য মিথ্যা যাচাই করার আপনি কে? আপনি কে আমাকে এসব জিগ্যেস করার? নিজের সীমানায় থাকুন। আমি কার সাথে কি করলাম, কার সাথে আমার কি সম্পর্ক সেই সব কৈফিয়ত আমি আপনাকে দিব না। আপনি আমাকে এসব জিগ্যেস করার কেউ না। ডো ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? ”
জয় তো মহাখুশি। সে ঐশীর বাকি কথা মোটেই কানে নেয় নি। সে তো তার খুশি ধরে রাখতে পারছে না। ঐশী জয়ের মুখের ও ভাবভঙ্গির পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারছে। বিরক্তিতে তার মন মস্তিষ্ক ছেঁয়ে আছে। জয় বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে গেটের বাইরে কিছু ভৃঙ্গরাজ ফুল দেখতে পায়। ঐশীকে এক মিনিট বলে সে এগিয়ে যায় সেদিকে।
ঐশী দেখলো হাঁটু ভাজ করে বসে জয় কিছু একটা করছে। তার চরম বিরক্ত লাগছে। একে তো কালকের এই ভেজালে তার মন মেজাজ কিচ্ছু ভালো নেই। তার উপর আবার জয়ের এসব অদ্ভুত ব্যবহার। একটু পর জয় ফিরে এসে তার সামনে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে। একবার ঐশীর দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিচ্ছে। ঐশী বিরক্তি নিয়ে বললো,
“ কি?”
“ আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো। প্লিজ হ্যা না তে উত্তর দিবেন। আমি সব ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। প্লিজ লাস্টবার। ওকে?”
ঐশী ত্যাছড়া নজরে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। জয় নিজের মুখটা কাচুমাচু করে তার কথায় সায় জানাতে বললে ঐশী একটা শ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
জয় এবার একটা ঢুক গিলে বলে,
“ আপনার মানে আপনি কাউকে পছন্দ করেন বা ভালোবাসেন?”
“ এটা কি ধরনের প্রশ্ন? ”
“ আপনি হ্যা না তে জবাব দিবেন বলেছিলেন কিন্তু। প্লিজ আন্সার মি।”
ঐশী একটা গরম নিশ্বাস ফেলে বলে,
“ ওকে। নো…”
জয়ের মুখে স্বস্তির রেখা। সে পিছন থেকে তার ডান হাতটা ঐশীর সামনে বাড়িয়ে ধরে। যেই হাতে রয়েছে ভৃঙ্গরাজ ফুল দিয়ে বানানো একটা রিং। ঐশীর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। জয় বলে,
“ আই লাভ ইউ ঐশী। আমি জানি আপনি আমাকে খুব একটা পছন্দ করেন না। বাট আই লাভ ইউ। কখন কিভাবে জানি না। কেবল এটা জানি। আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর আমার জীবনটা বদলে গেছে। আমি আবার স্বাভাবিক হয়েছি, আমার জীবনে আবার খুশি ফিরে এসেছে। আমিও আপনার জীবনটা খুশিতে ভরিয়ে দিতে চাই। আপনার পথ চলার সঙ্গী হতে চায়। প্রমিজ করছি আপনার হাত কখনো ছাড়বো না। আমি নিজেকে আপনার নামে দলিল করে দিব। আপনি শুধু আমার হয়ে যান প্লিজ।
আসলে আমি ধারণা করেছিলাম আপনি হয়তো ওই পুলিশকে ভালোবাসেন তাই আমি আমার অনুভূতি আপনাকে বলি নি। কিন্তু আজ জানলাম আপনার মনে কেউ নেই। তাহলে প্লিজ আপনার মনের খেয়াল রাখার দায়িত্বসহ আপনার খেয়াল রাখার দায়িত্বটা আমাকে দিয়ে দিন। আপনার জখমে আমি যত্ন করে মলম লাগিয়ে দিব। আই প্রমিজ আপনাকে আর কেউ কখনো আঘাত করবে না। আপনি শুধু আমার হয়ে যান ঐশী। উইল ইউ ম্যারি মি?”
ঐশী অবাকের চরম সীমায়। সে আন্দাজ করেছিল তার উপর জয়ের একটু ইন্টারেস্ট আছে। তবে তা যে এই পর্যায়ের সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। সে যেন এক ঘোরে চলে গিয়েছে। জীবনে কখনো প্রপোজাল পায় নি এমন তো না। তবে এভাবে কেউ কখনো তাকে প্রপোজ করে নি। জয়ের কথাগুলো সে কেবল আবেগ বলেও ফেলে দিতে পারছে না। জয়ের গলায়, জয়ের চোখে কিছু একটা তো আছে যা কেবল আবেগ বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। তার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, সে তার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ সময় নেয় নিজেকে ধাতস্থ করার। এরপর কেবল ‘ নো ’ বলে জয়ের মুখের উপর দরজাটা বন্ধ করে দেয়। আর ধপ করে ফ্লোরে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।
আর জয় ফুলের রিং হাতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখটা ভীষন জ্বালা করছে তার।
#ক্রমশ…….