সূর্যশিশির
৩০.
সোনালি পাড়ের লাল শাড়ি, রূপাকে অর্পণ করেছে এক নতুন রূপ। তার ভেতরকার নারীত্বের সৌন্দর্য বিচ্ছুরণ ছড়াচ্ছে।
অরুনিকা নিজের কানে গুঁজে রাখা লাল জিনিয়া ফুল খুলে রূপাকে পরাতে গেলে রূপা বাধা দিয়ে বলল, “কী করছিস? তোরটা কেন দিচ্ছিস?”
অরুনিকা ভ্রু-বক্র করে বলল, “তোর, আমার আবার কখন থেকে হলো?”
“সেটা বলিনি। আমার এসব পরতে ভালো লাগে না।” বলতে বলতে রূপা হাত খোঁপা করতে লাগল, “আমার খোঁপাই ভালো।”
অরুনিকা সজোরে রূপার হাতে থাপ্পড় মারল। রূপা আর্তনাদ করে চুল থেকে হাত সরিয়ে নিল।
বলল, “মারছিস কেন?”
অরুনিকা বলল, “একদম খোঁপা করবি না। আজ আমি যা বলব তাই হবে। তুই চুপচাপ বসে থাকবি।”
“ভারী মুশকিলে পড়া গেল তো। আচ্ছা, যা ইচ্ছে কর কিন্তু মেকাপ করব না প্লিজ।”
“লিপস্টিক আর কাজলটুকু অন্তত দিতে হবে!”
অরুনিকা কখনো রূপাকে সাজগোজের ব্যাপারে জোরাজোরি করেনি। তার মন্তব্য হলো, প্রতিটি মানুষেরই ভালো লাগা, মন্দ লাগা আছে। আজ যখন জোর করছে, রূপা কী করে প্রতিবাদ করে!
অরুনিকার জন্য হলেও রূপাকে সাজতে হলো।
নিচ তলা থেকে সুমনার হাঁক আসল, “তোদের হলো?”
অরুনিকা চেঁচিয়ে বলল, “আসছি আন্টি।”
রূপা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তার কেশ খোলা, কর্ণে গুঁজে রাখা জিনিয়া ফুল। কী অপরূপ লাগছে! অরুনিকার ঠোঁটের হাসি প্রশস্ত লাভ করে। সে রূপাকে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে দাঁড় করাল।
বলল, “এবার ফাইয়াজ স্যারের সাথে আমার রূপাকে মানাবে তো?”
রূপা আয়নায় দৃষ্টিপাত করল৷ শত শত রাত ক্লান্তি নিয়ে ঘুমানো চোখে প্রথমবারের মতো কাজলের কালি, সিগারেটের বিষাক্ত স্পর্শে ঠোঁটের চারপাশ কালচে বর্ণ ধারণ করা ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, পরনে লাল শাড়ি, লাল ব্লাউজ — সবকিছুতে নিজেকে খুব অচেনা লাগছে!
সৌন্দর্যের থেকে অচেনা শব্দটাই বেশি মস্তিষ্কে চক্রাকারে পরিভ্রমণ করছে।
ছোটবেলা শাড়ি, ফ্রক, সালোয়ার-কামিজসহ সাজগোজের সকল জিনিসপত্রের প্রতি তার অপ্রতিরোধ্য ঝোঁক ছিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একা একা সাজত। চোখেমুখে আঁকিবুঁকি করত। বয়স যখন সাত হলো, সুমনা শার্ট-প্যান্ট পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “আজ থেকে তুই আমার বড় ছেলে। তোর আব্বার সঙ্গে হোটেলে বসবি, কাজ করবি। কর্মচারীকে বেতন দিয়ে পোষায় না, সংসায় চলে না৷”
এই সিদ্ধান্তে বারেক প্রথমে দ্বিমত করলেও পরে নিরুপায় হয়ে মেনে নিলেন৷ রূপা খুব উৎসাহের সঙ্গে জন্মদাতার পাশে দাঁড়াল। কখনো কখনো তার খুব ইচ্ছে করত, রুমির মতো শাড়ি পরতে, সাজতে। সুমনা তা হতে দিতেন না৷ তার এক কথা, “তুই আমাদের ছেলে। পরিবারের দায়িত্ব তোর বাপের যেরকম তোরও সেরকম৷”
ধীরে ধীরে সাজগোজের প্রতি, মেয়েদের বাহারি রঙের পোশাকের প্রতি যে তীব্র ঝোঁক তার ছিল, তা ফিকে হলো। শার্ট-প্যান্টে অভ্যস্ত হয়ে পড়ল রূপা।
“তোকে দেখতে একদম আন্টির মতো লাগছে। যেন জমজ বোন।”
চমৎকৃত কণ্ঠে বলল অরুনিকা।
তার কণ্ঠ রূপার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে। রূপা পুনরায় আয়নায় তাকাল। অরুনিকা ঠিক বলেছে! তার মধ্যে সুমনার চেহারার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আবার সুমনার ডাক আসল, “তোদের এখনো হয়নি?”
অরুনিকা গলার স্বর চড়া করে বলল, ” হয়ে গেছে। আসছি।”
তারপর রূপাকে বলল, “চল, স্যার তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
বলেই সে চোখ টিপল। রূপা হেসে ফেলল।
অরুনিকা আর রূপা একসঙ্গে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে। রূপার জাদুকরী প্রভাব জেসমিনকে বিমোহিত করে তোলে৷ রূপার সৌন্দর্য এভাবে লুকিয়ে ছিল; ছেলেদের বেশভূষার আড়ালে!
রূপা মাথা উঁচু করে ড্রয়িংরুমে ঢুকেছে। সাধারণ মেয়েদের মতো লজ্জা বা জড়তা নেই তার মধ্যে। চোখমুখের প্রতিক্রিয়াও সহজ এবং সাবলীল। শাড়ি পরে হাঁটতে একটু সমস্যা হয়েছে বটে, অরুনিকা সেটা সামলে নিয়েছে।
জেসমিন উঠে এসে রূপার গাল ছুঁয়ে বলল, “ভীষণ সুন্দর লাগছে!”
সে রূপার গালে আলতো করে চুমু খেল। রূপার অস্বস্তি হয় সেই সঙ্গে আনন্দ। জেসমিন অমায়িক, ছোটদের আদর করতে ভালোবাসে। রূপা মিষ্টি করে হাসল।
ফাইয়াজ তখনো রূপার দিকে তাকায়নি। তার হাতে সংবাদপত্র। সে টের পেয়েছে রূপা এসেছে, তবুও তাকাচ্ছে না। একমনে সংবাদপত্র পড়ছে।
জেসমিন রূপাকে টেনে নিয়ে ফাইয়াজের পাশে বসাল। আকস্মিকতায় রূপা আড়ষ্ট হয়ে গেল। ফাইয়াজের চোখ তখনো সংবাদপত্রে। এ অবস্থাতেই সে একটু দূরে সরে বসে। দৃশ্যটি দেখে অরুনিকার কপাল কুঁচকে যায়।
ভাবল, “রূপা বসেছে বলে স্যার সরে গেল কেন?”
মুখ ফুটে প্রশ্নটি করতে পারল না। রূপার হবু বর, তার এক সময়ের ইংরেজি শিক্ষক। ওই ব্যাচের সব ছাত্রছাত্রী ফাইয়াজকে ভয় পেত। অরুনিকাও তেমনি একজন৷ এই সম্পর্ক সহজ হতে সময় লাগবে।
সুমনার সঙ্গে প্রতিবেশী দুই-তিনজন মহিলা আসল সেখানে। সুমনা এসেই বললেন, “জেসমিন, তোমার বর কোথায়? আসেনি কেন?”
জেসমিন বলল, “কোথায় যেন গেল। বলল, আমরা যেন এখানে থাকি, চলে আসবে।”
“কখনো তো বের হয়নি। রাস্তাঘাট চিনবে?”
জেসমিন এ কথার জবাব দিতে পারল না।
সে উদাস হয়ে ভাবে, “সুমনা চাচী ভুল বলেননি। মানুষটা কোথায় গেল?”
ফাইয়াজ সংবাদপত্রটি পাশে রেখে বলল, “ভাইয়া কিছু না চিনলেও, চিনে চিনে চলে আসবে।”
রূপা ঘাড় ঘুরিয়ে ফাইয়াজের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ফাইয়াজ তার দিকে তাকাচ্ছে না। সমস্যা কী লোকটার? রূপা অস্থিরবোধ করে। অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। এতো সাজ কার জন্য? নিজের ভেতরের অনুভূতি টের পেয়ে সে নিজেই অবাক হয়৷
মনে মনে নিজেকে শুধায়, “আমি কেন চাচ্ছি স্যার আমাকে দেখুক?”
তাদের সম্মুখে রাখা সোফায় অরুনিকা বসে আছে৷ সে মন ভরে ফাইয়াজ আর রূপাকে দেখছে। উচ্চতায় কী দারুণ সামঞ্জস্যতা দুজনের! একেই বলে, দুজন দুজনার জন্য সৃষ্টি! তার হঠাৎ মনে হয়, এই মুহূর্তটার ছবি তুলে রাখা দরকার।
অরুনিকা ব্যাগ থেকে তার ছোট ক্যামেরাটা বের করে বলল, “স্যার, আমি কি আপনাদের কিছু ছবি তুলতে পারি?”
জেসমিন পাশ থেকে বলল, “তুমিও ফাইয়াজের স্টুডেন্ট?”
“জি আন…” অরুনিকা থেমে গেল৷ ফাইয়াজের বোন হলে তো রূপার আপা হয়, মানে তারও আপা।
সে বলল, “জি আপা, রূপা আমি একসঙ্গেই পড়েছি।”
জেসমিন বলল, “ও। দেখি, আমি সরছি। তুমি ওদের দুজনের ছবি তুলো। আংটি পরানোর আগের মুহূর্তটা ক্যামেরায় তুলে রাখো।”
সুমনা প্রতিবেশীদের নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলেন। অরুনিকা আশকারা পেয়ে বিভিন্ন কোণ থেকে, বিভিন্নভাবে একের পর এক ক্লিক করতে থাকে। ফাইয়াজ বসে থেকে দুই-তিন রকমের পোজ নিলেও, রূপা দুই পায়ের উরুর উপর দুই হাতের ভর দিয়ে ঝুঁকে বসে আছে ছেলেদের মতো। তার ভাবান্তর নেই৷
বিরক্ত হয়ে অরুনিকা ধমক দিল, “আরে বেক্কল, ঘোমটা টেনে একটু লাজুক হয়ে বস।”
রূপা ঘোমটা টেনে হাসি-হাসি ভাব করার চেষ্টা করে।
অরুনিকা বলল, “হাবলার মতো হাসছিস কেন? ঠিক করে হাস। যেন ন্যাচারাল লাগে।”
রূপা সুন্দর করে হাসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
অরুনিকা নিরাশ ভঙ্গিতে বলল, “তোকে হাসতে হবে না মা৷ চুপচাপ ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাক।”
ফাইয়াজ অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখে। অরুনিকা রূপার গোমড়া মুখের ছবি বিদ্যুতের গতিতে তুলতে থাকল। পর পর এতো ছবি তুলতে দেখে ফাইয়াজ বলল, “এত ছবি তুলছো কেন? বেশি ছবি তোলা কি ভালো? ক্যামেরাটা রাখো।”
জেসমিন পাশ থেকে বলল, “ও মা! এভাবে বলছিস কেন? ও কি এখনো তোর স্টুডেন্ট?”
“যে একবার স্টুডেন্ট হয়, সে সারাজীবনের জন্য স্টুডেন্ট আপা।”
অরুনিকার বলতে ইচ্ছে করল, “ও তাই নাকি! তাহলে রূপার দিকে নজর পড়ল কেন?”
কিন্তু বলল না। থতমত খেয়ে ক্যামেরা রেখে দিল৷ এমন একজনের সঙ্গে তার বন্ধুর বিয়ে হচ্ছে, যার সাথে কখনো মজা করা তো দূর, হেসেখেলেও কথা বলা যাবে না৷ তাতে অবশ্য তার সমস্যা নেই। রূপার উচ্চতার সঙ্গে মানানসই, সব দিক দিয়ে সুদর্শন, গুণী পাত্র পেয়েছে এতেই সে খুশি। রূপার বিয়ের চিন্তা গেল। এখন আর রূপা বেঁটে, কানা, ল্যাংড়া, বধির এসবের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে প্রেম করবে না।
দুপুর তিনটা। বারেকও বাড়ি ফিরেননি। সুমনা বারেকের নাম্বারে কল করলেন, ব্যস্ত পেলেন। এখন আবার কার সাথে কথা বলছে? কখন থেকে জেসমিন আর ফাইয়াজ বসে আছে! সুমনার অপেক্ষা ভালো লাগে না। মেজাজ চড়ে যায়।
তিনি কোনোমতে রাগ সংবরণ করে জেসমিনকে ডেকে বললেন, “ও জেসমিন, তুমি ফাইয়াজকে নিয়ে খেয়ে নাও। কখন থেকে বসে আছো।”
জেসমিন বলল, “এতো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই চাচী। চাচা আসুক, ফাইয়াজের দুলাভাই আসুক, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করা যাবে। বিয়ের মৌসুম মানেই তো খাওয়াদাওয়া।”
রূপা আর অরুনিকা রুমির রুমে বসে অপেক্ষার প্রহর গুণছে৷ রূপা অবাক চোখে দেখছে সুমনার ব্যস্ততা৷ সে তো এটাই চেয়েছিল, তার বিয়েতে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকুক তার মা৷ কী সুন্দর ছুটে ছুটে কাজ করছে, প্রতিবেশীদের সামলাচ্ছে, হাসছে!
কোনো ভূমিকা ছাড়া অরুনিকা বলল, “স্যার, তোর দিকে তাকাচ্ছে না কেন?”
রূপা বিরসমুখে বলল, “কী জানি! এই লোকের মতিগতি আমি বুঝি না।”
“ভয় পাচ্ছে হয়তো।”
“কীসের ভয়?”
“তোর রূপ দেখে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার ভয়।”
কথন শেষ করে ফিক করে হেসে ফেলল সে।
রূপা হেসে বলল, “মজা করিস না!”
সুমনাকে রান্নাঘরে যেতে দেখে অরুনিকা দ্রুত বলল, “দাঁড়া, আসছি।”
সুমনা বরাবরই অরুনিকাকে আদর করেছেন। তার আলমারিতে রাখা সবচেয়ে দামী যে তিনটে শাড়ি সেগুলো অরুনিকার দেয়া।
তিনি অরুনিকাকে রান্নাঘরে আসতে দেখেই বললেন, “তোমার ক্ষুধা লেগেছে? খেয়ে নাও।”
“পরে খাব আন্টি। তুমি চলো না, রূপার সঙ্গে ছবি তুলে দেই।”
“আমি?” সুমনা অবাক হলেন। বললেন, ” ঘেমে-নেয়ে একাকার। এখন ছবি ভালো আসবে না।”
“ঘামে কিছু হয় না৷ তুমি চলো, প্লিজ।”
অরুনিকা সুমনাকে টেনে নিয়ে গেল রূপার নিকটে। মা-মেয়েকে পাশাপাশি বসিয়ে ছবি তুলল।
রূপার পাশে বসে সুমনা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। কখনো এভাবে মেয়ের পাশে তার বসা হয়নি!
ফাইয়াজ আর বসে থাকতে পারছে না। অপেক্ষা করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মাথার উপরে ঘোরা ফ্যানের ঘ্যারঘ্যার শব্দ আরো মাথা খেয়ে ফেলছে। তীব্র বিরক্তি নিয়ে সে উঠে চলে যেতেই চাচ্ছিল, জেসমিন আটকে দিয়ে বলল, “এখন যেও না। তোমার দুলাভাই মেসেজ দিয়েছে, সে আসছে।”
“কোথায় গিয়েছিল?”
“বলেনি। এসে বলবে হয়তো।”
বিশ মিনিটের মাথায় ইশতেহার, বারেক ও এলাকার আরো তিনজন গণ্যমান্য ব্যক্তি এলো। তাদের সঙ্গে টুপি পরা একজন বয়স্ক লোক; দেখতে হুজুরের মতো।
এসেই বারেক সুমনাকে নিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলেন।
ইশতেহার জেসমিনকে বলল, “এখন ফাইয়াজ আর রূপার বিয়ে পড়ানো হবে।”
ফাইয়াজ চকিতে তাকাল। জেসমিনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল৷ পাশের রুম থেকে এই কথাটি শুনে, রূপার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়ল।
সে অবাক সুরে অরুনিকাকে বলল, “মানে কী? আজ কেন বিয়ে?”
হুবহু প্রশ্ন ফাইয়াজও করল।
ইশতেহার বলল, “চাচা চান রূপাকে অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিতে। তার জন্য উনার সময় দরকার। ত্রিশ মে আসতে এখনো এক মাস আঠারো দিন বাকি। এভাবে বিয়েটা ঝুলিয়ে রেখে তো লাভ নেই। বিয়ে পড়িয়ে দেই, দুজন নিজেদের বাড়িতে থাকো। উঠিয়ে নেয়ার পর একসঙ্গে থাকা যাবে। চাচাও তাই চান।”
কথা শেষ করেই ইশতেহার জেসমিনকে এক পলক দর্শন করল। জেসমিন কৃতজ্ঞবোধ থেকে হাসল৷ তার মুখাবয়বে সন্তুষ্টি। সে স্মৃতি রোমন্থন করে পৌঁছে গেল বেশ কয়েক বছর আগের দৃশ্যে৷
ইশতেহার, জেসমিন তখন যুবক-যুবতী। ইশতেহার প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বলেছিল, “তুমি যা চাও, একবার মুখ ফুটে বলবে, আমি জীবন দিয়ে তা পূরণ করব।”
সেদিনের পর থেকে জেসমিনের প্রতিটি ইচ্ছে সে পূরণ করে যাচ্ছে। তেমনি একটা ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে দূর্ঘটনার স্বীকার হয়ে পঙ্গুত্বকে কবুল করেছে৷
জেসমিন ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি, ইশতেহার বলার পরদিনই বারেককে রাজি করিয়ে ফেলবে বিয়ের জন্য! সে একইসঙ্গে আশ্চর্যান্বিত এবং আনন্দিত।
বারেকের মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনে সুমনা বিস্ফোরিত কণ্ঠে বললেন, “এতো তাড়াহুড়ো কেন করছো? আজই কীসের বিয়ে?”
“বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও তো ভেঙে যায়৷ বিয়ে দিয়ে দিলে ব্যাপারটা শেষ হয়ে যায়। শুধু অনুষ্ঠান করা বাকি থাকে। সমস্যা কী বিয়ে দিতে?”
“হঠাৎ কীভাবে বিয়ে হতে পারে?”
“তোমার-আমার কি হঠাৎ বিয়ে হয়নি?”
“সেটা অন্যরকম ছিল।”
“তুমি এখন কথা বলো না। আমি ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজই ফাইয়াজ-রূপার বিয়ে হবে।”
“ও তো আমারও মেয়ে। তুমি আমার মতামত ছাড়া কেন বিয়ে ঠিক করেছো? ইদানীং সবকিছুই আমার অনুমতি ছাড়া করে ফেলছো! রাতে গিয়ে জমানো টাকায় ফাইয়াজের জন্য ডায়মন্ডের আংটি নিয়ে আসলে। বাকি ছেলেমেয়েদের চিন্তা তোমার নেই। এখন আবার —”
বারেক কথার মাঝে আটকে দিয়ে বললেন, “কথা পেঁচিয়ে সময় নষ্ট করো না। আজকের দিনটাও ভালো। আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করে রাজি হয়ে যাও।”
সুমনা অবাক না হয়ে পারছেন না। বারেক শেষ বয়সে এসে তার হাত থেকে ছুটে গেছে! সম্প্রতি সবকিছু নিজের মতো করছেন! কিছু শুনছেন না।
তর্কবিতর্ক শেষে, বিয়ের সিদ্ধান্তেই সবাই উপনীত হয়। ড্রয়িংরুমে পাশাপাশি বসানো হয় ফাইয়াজ-রূপাকে। প্রথমে আংটি বদল হয়। ফাইয়াজ চোখের কোণ দিয়ে রূপাকে আবছা দেখেছে — ব্যাস এইটুকুই! সরাসরি আর তাকায়নি।
তারপর কাজী সাহেব স্বাক্ষীদের নিয়ে বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। নগদ তিন লক্ষ দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ঘোরগ্রস্তের মতো প্রতিটি মানুষ মুহূর্তটির স্বাক্ষী হয়ে থাকে। কিছু বুঝে উঠার পূর্বে, দুটি মানুষ এক বিন্দুতে মিলিত হয়।
চলবে…
(দ্রুত লিখেছি। ক্রুটি থাকলে এড়িয়ে যাবেন।)