সুপ্ত বাসনা পর্ব ৫

0
1402

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৫

ইমান গোলগোল চোখ করে ওর দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে,তার চেহারায় স্পষ্ট রাগের ছাপ,তাহলে কি সে সবটাই শুনে ফেলেছে? ইমান ভাবলেশহীন ভাবে দু’পা এগিয়ে এসে মিমের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিয়ে বলে,
– “আশ্চর্য! মিহ! তোমার কি হয়েছে? গার্লফ্রেন্ড ফোন করেছিল ব্রেকআপ করতে চাইছে?” মিম মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
– “কোই না তো স্যার! তেমন কিছু হয়নি,সে তার মামার বাড়ি বেড়াতে গেছে।”
– “হ্যাঁ,তোমাকে যে ‘আই লাভ ইউ’ বলল, শুনলাম বাহির থেকে।কন্ঠস্বর বেশ পরিচিত মনে হলো আর তাই একটু দুষ্টুমি করলাম তোমার সাথে।” তখন মুবিন হাঁফাতে হাঁফাতে এসে ইমান’কে বলে,
– “একদম পাক্কা খবর স্যার! আপনার ফুফাতো বোন বাংলাদেশে এসেছে আরো ছ’মাস আগে এবং আপনার বাবা-মা সবকিছুই জানতেন, শুধু আপনার কাছ থেকে লুকিয়েছে।” ইমান চোখ বুঝে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
– “আসলে তারা আমার ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে,কিন্তু মিম এখানে থেকেও আমার সাথে দেখা করতে এলো না মুবিন! এটাও সম্ভব! তোমাকে এই….খবর কে দিয়েছে?
– ” স্যার! আমার এক বিশ্বস্ত খোচর,যে নিজের বিশ্বস্ত সুত্র থেকে এই….খবর টা পেয়েছে।” ইমান ড্রায়ার থেকে টাকার একটা বান্ডিল এনে মুবিনের মুখের ওপরে ছুটে মে’রে বলে,
– “এই….এতোটুকু তে আমার কিচ্ছু হবে না মুবিন,তুমি তোমার খোচর’কে বলো আমাকে ওর লেটেস্ট আপডেট এনে দিতে।এই….যেমন ও কি এখনো সিঙ্গেলে আছে,না কি রিলেশনশিপে জড়িয়েছে অন্য কারো সাথে? ওর নেক্সট প্রোজেক্ট কি? কোন মিউজিক কোম্পানির জন্য কাজ করতে চাইছে? এইসব খবর এনে দাও,কথা দিচ্ছি মালামাল করে দেবো দু’জন কে,
আর হ্যাঁ,আমার বাবা যেন কোনোক্রমেই এই… ব্যাপারে জানতে না পারে।জানলে, ডিরেক্ট জাহান্নামের চৌ-রাস্তায় পাঠিয়ে দেবো আমি তোমাদের দু’জন কে আর আমি মোটেও মশকরা করছি না মুবিন!”
– “ঠিক আছে,আপনি চিন্তা করবেননা স্যার! বাহিরে দেখলাম,জামাল ভুঁইয়া আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে।”
– “ওকে ভেতর পাঠিয়ে দাও; আমি ও জানতে চাই,সে হঠাৎ করে এই…সময়ে কেন এসেছে?” জামাল ভুঁইয়া পান চিবোতে চিবোতে এসে চেয়ার টেনে ইমানের পাশে বসে বলে,
– “সাহেব! সগির মিয়া, আইজকে আপনার জন্য একদম কঁচি খুকি আর ভার্জিন মাইয়া খুঁজে আনছে।” ইমান মিটিমিটি হেসে জামাল’কে বলে,
– “ও সব লস প্রোজেক্ট জামাল! আপাতত আমি ওসব ক’দিনের জন্য বাদ দিতে চাই ওঁকে? তুমি এখন আসতে পারো,দয়া করে ক’দিন দেখা সাক্ষাৎ করতে এসোনা আমার সাথে।”
– “কিন্তু,স্যার! মাইয়া ভার্জিন,আপনে তো কইছিলেন আমাকে।” ইমান তৎক্ষনাৎ জামালের হাতে টাকার বান্ডিল গুঁজে দিয়ে বলে,
– “হয়েছে? এবার আপনি আসতে পারেন,আমার এছাড়াও আরো অনেক কাজকর্ম আছে।” মিম ইমানের মনখারাপ দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
– “স্যার! আজ আপনার কি হয়েছে? আপনি কেন মস্তি করতে গেলেন না জামাল ভুঁইয়ার সাথে?” ইমান চোখ তুলে তাকাতেই মিম খেয়াল করে দেখে তার চোখ দু’টো ভীষণ রকমের লাল হয়ে গেছে,মনেমনে বলল,
– “এমন তো আগে কখনো হয়নি? কি কারণে সে আজ এতোটা কষ্ট পেয়েছে?”
ইমান উঠে দাঁড়িয়ে মিনিবার থেকে একটা মদের বোতল হাতে তুলে নিয়ে কিছুটা ঝুঁকে মিম’কে জিজ্ঞেস করে,
– “তুমি কি জানো ‘মিহ’! সে কেন দেখা করতে এলো না আমার সাথে?” মিম অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে,
– “নিশ্চয়ই তার ‘মোহ’ কেটে গেছে? আফটার অল, স্যার! এখন, সে বেশ বড় হয়ে গেছে। কাজেই, এখনো কি তার আবেগ এবং অনুভূতি গুলো কি আগের মতোই আছে? কিছুই হয়তো নেই? সবটা বদলে গেছে” ইমান মদের বোতল টা দেওয়ালের গায়ে ছুড়ে মে’রে বলে,
– “না থাকুক মিহ,তবুও মিম! কি করে বদলে গেছে? ও সারাক্ষণ আমার জন্য তটস্থ হয়ে থাকতো আর আজ ও আমার পর হয়ে গেছে? আমি মানতে পারছিনা,আমি শুধু দু’মিনিট বসে কথা বলতে চাই ওর সাথে।” মিম ওপরের দিকে তাকিয়ে,মনেমনে বলল,
– “অথচ আমার এক মিনিট ও সহ্য হয় না আপনা’কে,মেয়ে বাজ যেন কোথাকার? চরিত্রের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে,দেখলেই গা গিজগিজ করে,অসহ্য লাগে আমার, অসহ্য, একটুও সহ্য হয় না আপনাকে।”

সকালে,
ইমান ঘুম থেকে উঠে দেখে মিম ওর চেইঞ্জ নিয়ে পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে,ও কোনো কথা না বাড়িয়ে পেস্ট লাগানো ব্রাশ টা নিয়ে সোজা গিয়ে বাথরুমে ঢোকে,তারপর মিম ইমানের গলা পেয়ে ওর চেইঞ্জ দিতে গিয়ে সোজা সাবান গোলা জলে স্লিপ করে ইমানের কোলে গিয়ে বসে।ইমান হাসতে হাসতে ফাজলামো করে মিম’কে বলে,
– “কি ব্যাপার ব্রো? না মানে তুমি কি ‘ইন্টিমেট’ হতে চাইছ আমার সাথে?” মিম মুখ ফসকে বলে ফেলে,
– “বা***র হ***কোথার যেন একটা,একদম মুখ ঠিক করে কথা বলবেন আপনি আমার সাথে! ইমান মিমের কাছে ঝাড়ি খেয়ে অবাক হয়ে দু’মিনিট তাকিয়ে থাকে ওর চোখের দিকে,কয়েক মিনিট পরে ইমানের মনে হলো যেন,এই….চোখ দু’টো ওর ভীষণ চেনা,কোনো এক অজানা সম্পর্ক আছে ওর এই…চোখের সাথে।ইমান মুখ ফুটে কিছু না বলতে পারলে ও সে জানে,মিহান’কে বেশ রহস্যময়ী বলে মনে হয় ওর কাছে আর মিহান’কে এতো পছন্দ করার প্রথম কারণ,
ওর স্পর্শ এবং কথা বলার ধরন দু’টোই ইমানের কাছে খুব ভালো লাগে।মাঝেমধ্যে মনে হয় এটা ছেলে না, মেয়ে এর জন্যই ইমানের ‘গে’ বলে মনে হয় নিজেকে।যাগগে সকালে অফিসে এসে নাস্তা করার পর ইমান খেয়াল করে দেখে,
আহনাফ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির সামনে মিমের নতুন মিউজিক ভিডিও বিশাল বড় পোস্টার লাগানো হয়েছে,যাতে মিমের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না,তবে গনের শেষ লাইন দু’টো উল্লেখ করা আছে।তবে হঠাৎ মুবিন ফোন করে ইমান’কে বলে,
– “স্যার! আপডেট খবর আছে,কালকে আপনার ফুফাতো বোনের নতুন মিউজিক ভিডিও’র প্রোমো লঞ্চ হবে আর সাতদিন পর তার এই…গান নিয়ে ঢাকার নভোথিয়েটারে একটা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে এবং আমার খোচরের মতো ‘মিম’ হয়তো সেখানে গান গাইবে অন্যান্য মিউজিশিয়ানদের সাথে।” ইমান উত্তেজিত কন্ঠে মুবিন’কে বলে,
– “তাহলে তুমি আমার একার জন্য দশটা টিকিট অনলাইনে বুক করে নাও সবার আগে।” মুবিন ভয়ে ভয়ে ইমান’কে বলে,
– “তা সম্ভব নয় স্যার! কারণ সব টিকিট আজ ভোররাতেই নাটকীয় ভাবে সেল হয়ে গেছে,তবে আমি দালাল ধরে কাজ হাসিল করার চেষ্টা করছি,আশাকরি একটা পথ বাতলাবে।” ইমান সাথে সাথেই মুবিনের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
– “আমি যদি এই…..শো এর টিকিট না পাই তাহলে তোর খবর আছে।” তখন ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন আজম এসে মুবিন’কে ছাড়ায় ইমানের হাত থেকে। ইমানের ছবি আঁকার হাত খুব ভালো,ও খুব দ্রুতই পোস্টার দেখে হুবহু মিমের ছবি টা আঁকে।তা দেখে ইলহান সাহেব ছেলে’কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
– “এসব করে লাভ কি? তোমার কি মনে হচ্ছে,তুমি এসব করে তাকে পাবে?” ইমান মেকি হাসি দিয়ে বলে,
– “নাই বা পেলাম ড্যাড! একটা ছবি আঁকায় আর কি যায় আসে? আত্মতৃপ্তি বলে একটা কথা আছে,তোমরা অন্তত সেটা করতে দাও আমাকে।আমি জানি,আমি ফেরেশতা নই,তবুও আমার কিছু আশা-আকাঙ্খা আছে।”

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here