#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৬
“মিমের সেফটি আরো দশগুণ বাড়াতে হবে,কারণ ও আর এক মুহূর্ত নিরাপদ নয় ইশানের আশেপাশে।” মিম বিকেলে চুপচাপ নিজের ঘরে বসে ছিলো আর তখন হঠাৎ ইশান পুলিশ নিয়ে এলো চৌধুরী বাড়িতে।আমির সাহেব বেশ অবাক হলেন, ইশান সহ ইলহান সাহেব ও রাইমার থমথমে চেহারা দেখে…তখন ইমানের পক্ষের উকিল আমির সাহেব’কে বললো,
– “আপনার মেয়ের ডিভোর্স কেইস ফাইল হয়নি,কারণ ওদের বিয়ে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।” শোভা বললো,
– “মানে? মানে কি? একটু দয়া করে পুরো বিষয় টা খুলে বলুন আমাদের সবাই’কে।” ইলহান সাহেব নিজের মৌনতা ভেঙে বললেন,
– “রেজিস্ট্রি পেপারে ইমান বা মিমের কারো স্বাক্ষর নেই অথচ ওরা দু’জনেই আমাদের সামনে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারে সাক্ষর করছে।” মিম লিলিপপ চাটতে চাটতে এসে বললো,
– “যাক, তাহলে অবশেষে আমার ভ্যানিসিং ইঙ্ক টা কাজে দিয়েছে?” আমির সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– “মানে?”
– “মানে সিম্পল বাবা! তুমি কি করে ভাবলে আমি বিয়ে করে নেবো এই….অপদার্থ,অকালকুষ্মাণ্ড আর চরিএহীন লোক টা কে? না মানে,আমার রুচি কি এতো টাই খারাপ? যে আমি ঘর করবো ইশান থুড়ি ইমানের মতো একটা লোকের সাথে? এসব আমার প্ল্যান ছিলো বাবা! তুমি চাইলে জেল হাজতে পাঠাতে পারো আমাকে।” মেয়ের কথা শুনে আমির সাহেবের চোখে জল চলে এলো,সে সাথে সাথেই বুকে জড়িয়ে নিলো মেয়ে’কে।ইশান দাঁতে দাঁত চেপে মিম’কে বললো,
– “তুমি কাজ টা একদম ঠিক করলে নাঃ,মিম! এর জন্য একদিন পস্তাতে হবে তোমাকে।” মিম মনেমনে বলে,
– “চোরের মায়ের বড় গলা,এই….তুই কি জানিস কে আছে এসবের পিছে? নেহাৎ আমার হবু জামাই’কে তোর করালগ্রাস থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি,নয়তো এতো বড় ব্লেইম আমি কখনো নিতাম না নিজের কাঁধে।কারণ এতোটুকু আজ আমি নিশ্চিত,আমার মানুষ টা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে।ও যেমন আমাকে বিপদে ফেলতে চাইছে না,তাহলে আমি কেন বিপদে ফেলবো ওকে? প্রথমে একবার নিজের মানুষ টা কে চিনতে ভুল করেছি,এবার আর হেলায় হারাতে চাই না তাকে।তুমি ভুল মানুষের সাথে ময়দানে নেমেছ ইশান এবার এটা তোমাকে ভালো করেই বোঝাতে হবে।কারণ আমি বেশ বুঝতে পারছি,লোকটা দূরে থেকেও নজরে নজরে রেখেছে আমাকে আর সে এই….কাণ্ড টা করেছে যাতে আমি বেঁচে যাই তোমার মতো একটা নোংরা লোকের হাত থেকে।” ইশান কিছুক্ষণ মিমের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
– “কোনো অনুতাপ কিংবা অনুশোচনা দেখতে পাচ্ছি না তোমার মাঝে,মনে হচ্ছে বেশ খুশি হয়েছ তুমি?”
– “হ্যাঁ,অবশ্যই কোনো সন্দেহ আছে? আপনার কখনো নিজেকে দেখে অনুশোচনা হয়েছে মিঃ? যে আপনি এতো বড় বড় কথা বলছেন আমাকে? আমি বরং খুব খুশি যে আমি বেঁচে গেছি আপনার মতো একটা লোকের হাত থেকে…ইনফ্যাক্ট আমার কোনো আক্ষেপ নেই,কারণ আমি এটা করেছি নিজের হাতে।” ইশান মনেমনে বললো,
– “যাক,ভালোই আরাব’কে একটা ভার্জিন মেয়ে গিফট করা যাবে।ও মুখে যতোই বলুক না কেন? আমি ছেলেটির চেহারা দেখে বুঝি,
সে কত পছন্দ করে এই…মেয়ে টাকে আর এমনি তেও প্রতিটি পুরুষের শরীর মনে আবেদনময়ী নারী দেখলে কামনা যাগে,কাজেই আরাব এর উর্ধে নয়।আমার একটা ভালোই ডিল হবে।” মিম হঠাৎ ইশান’কে ধাক্কা মেরে বলে,
– “কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনি! আপনা’কে কি দরজা অব্ধি ছেড়ে আসতে হবে?” ইশান যেতে যেতে মিম’কে বললো,
– “নাঃ,তবে আমাকে ভালোবাসলো আমি রাজ রানী করে রাখতাম তোমাকে।” মিম ভেংচি কেটে বলল,
– “আরে জানজান ভাই! সবশেষ,এখন ড্রামা করে কি হবে?” ইশান মৃদু স্বরে বললো,
– “বেশি কিছু না জান,শুধু তোমাকে পস্তাতে হবে।” পুলিশ অফিসার উম্মে নিহান বললেন,
– “ভালো হয় আপনারা যদি ঝামেলা টা মিটিয়ে নেন পারিবারিক ভাবে।দেখুন,যা হওয়ার হয়ে গেছে টানা হেঁচড়া করে তো লাভ নেই? বরং দুই পরিবারের নাম খারাপ হবে।” আমির সাহেব এবং ইলহান সাহেব বলে উঠলেন,
– “অফিসার,আমরা ও একমত আপনার সাথে।” ইশান কি ভেবে এগিয়ে গেলো মিমের কাছে,তবে মিম ইশান’কে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত চলে গেলো সেখান থেকে।তারপর ও ফোন করে ওর ফ্যাশান ডিজাইনার আলাইনার কাছে।আলাইনা মিমের ফোন পাওয়া মাএই ওকে নিয়ে বসুন্ধরা থেকে যমুনা ফিউচার পার্কে ছোটে।মিম ওকে বললো,
– “দেখ আলাইনা,আমি স্টাইলিশ কিন্তু দেশি আউট ফিট চাই।”
– “ঠিক আছে,তবে আমি ভেবে ছিলাম অব শোল্ডার ব্লাউজ উইথ জামদানী শাড়ি কেমন হবে?” মিম কিছুটা দূরে আরাব’কে ওর ফ্যাশান ডিজাইনারের সাথে দেখে বলে,
– “আমার মনে হচ্ছে আমার হবু বর রেগে যাবে।”
– “কিহ!”
– “কিছুনা,আমি ট্রায়াল দিয়ে দেখছি?”
– “ওঁকে।” মিম অব শোল্ডার ব্লাউজ এবং পিচ কালারের জামদানী শাড়ি পরে বাহিরে আসার পর আলাইনা বললো,
– “ওয়াও,পুরোই বোল্ড লাগছে তোমাকে।” মিম ইমান’কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
– “জানি তো,সবাই আমাকে দেখে ঘায়েল হয়ে যাবে।” ইমান ভ্রু কুঁচকে মিম’কে বললো,
– “ঘায়েল না কচু! তুমি কি পার্টিতে উলঙ্গ হয়ে যাবে?” মিম বেশ ভাব নিয়ে বললো,
– “জ্বি,যাবো।আপনার কোনো সমস্যা আছে?”
– “ডেফিনিটলি,আমার প্রচুরররররর…..সমস্যা আছে।”
– “তাহলে বাবা! বিয়ে ক্যান্সেল,আমি বাবা’কে ভালো পাএ দেখতে বলে দেবো আজ রাতে?”
– “কেন? এখন আমার আমাকে আকর্ষনীয়লাগে না? বিকর্ষন হচ্ছে আমাকে দেখে?”
– “কেন? আপনি কি চুম্বক? বোকাবোকা কথা বলছেন কেন পাবলিক প্লেসে বসে?” ইমান মুখ ভেংচে বললো,
– “যদি একটু অটোগ্রাফ দিতেন ম্যাম? আমি একটু বিশেষ ভাবে বাধিত হতাম আপনার সান্নিধ্যে থেকে।” মিম সাথে সাথে নিজের পার্স থেকে মার্কার বের করে “আই লাভ ইউ” লিখে দেয় ইমানের মুখে,অতঃপর তার গালে চুমু খেয়ে দৌড় আলাইনা “হা” করে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে।ইমান গাল মুছতে মুছতে বললো,
– “পাগল একটা,এখনো আগের মতোই আছে।” রহমত পাশ থেকে বললেন,
– “গাল মুছে লাভ নেই বাবা,পারমানেন্ট মার্কার মে’রে দিয়েছে তোমার মুখে।” ইমান হতবুদ্ধির ন্যায় আয়নায় নিজেকে দেখছে আর আশেপাশে সবাই হাসছে ওকে দেখে।ও বাসায় ফিরে এসে শত ঘষাঘষি করে ও পার্মানেন্ট মার্কারের দাগ তুলতে পারেনি নিজের মুখ থেকে,উপরন্তু এক বন্ধুর কথায় ইউটিউব দেখে রেমিডি তৈরি করতে গিয়ে বেচারা এখন ভূত হয়ে বসে আছে।রহমত ইমান’কে শান্ত না দিয়ে বলেন,
– “রাগ করে না বাবা,মেয়ে টা না বুঝেই দুষ্টুমি করছে তোমার সাথে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “ও বরাবরি এমন,পরিবর্তন নেই মেয়েটির মাঝে ছোটো বেলায় আমি ঘুম থাকলে,আমাকে রংচং মেখে ভূত বানিয়ে পালিয়ে যেতো তারপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যেতো নাঃ! এ তল্লাটে।যাই হোক চাচা,কালকের জন্য রেদোয়ান’কে ডেকে পাঠান,আমার ওর সাথে অনেক জরুরী কাজ আছে।” পরেরদিন পার্টিতে মিম’কে দেখে সবার চোখ জুড়িয়ে গেছে,মিম কোনো নামি-দামি ব্রান্ডের শাড়ি পরে আসেনি,ও শোভার রিসেশনের শাড়ি পরে এসেছে পার্টিতে।বিষয়টি খুব ভালো লেগেছে সবার কাছে ইমান প্রশংসা করে থামছে না ডান্স করার জন্য অনুরোধ করেছিলো মিমের কাছে।মিম বললো,
– “আমি আপনার সাথে রাগ করেছি মিঃ,আপনি কেন লেখা টা তুলে ফেললেন মুখ থেকে?” ইমান বিড়বিড় করে বললো,
– “আমার থোবড়া খানায় কালি মেখে স্বাধ মেটেনি তোমার? এখন আবার তুমি,তুমি অভিমান করছ আমার সাথে?” মিম হঠাৎ ইমানের প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো,বেচারা একটু ভড়কে গেলো সাথে সাথে।ইশান এসে ইমান’কে ডেকে নিয়ে গেলো একটা জরুরী কাজে,কাজ শেষ করেই ইমান কি মনে করে প্যান্টের পকেটে হাত দিলো আর বের করে দেখলো একটা চিরকুটের সাথে একটা হজমি চকলেট বাঁধা আছে।চিরকুট পড়ার নাম নেই, ইমান হাসতে হাসতে শেষ হজমি চকলেট টা দেখে,মনেমনে বলে,
– “কি আজব? মেয়ে টা কি পাগল হয়ে গেছে?” তখন কেউ হঠাৎ ইমানের ব্লেজারের কলার চেপে ধরে ওকে টেনে বাথরুমে নিয়ে আসে,তারপর দু’হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– “কি ব্যাপার হবু জামাই? চিরকুট দিয়েছি এক ঘন্টা হয়ে গেছে।”
– “হুমম,জানি আই লাভ ইউ টু।”
– “আমি আর ভালোবাসি না তোমাকে।”
– “তাহলে ধরে নিয়ে এসেছ কেন?”
– “শরীরে জ্বালা মেটাতে।”
– “মানে?”
– “মানে বোঝানোর এতো সময় নেই জনাব আপনা’কে বোকা নাকি আপনি? সবটা বুঝিয়ে বলতে হবে?” তারপর মিম আচমকা এগিয়ে এসে চুমু খায় ইমানের ঠোঁটে।ইমান দু’হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে আর এদিকে ইশান দু’জন’কে খুঁজে বেড়াচ্ছে এদিক-সেদিকে।তখন ইকবাল এসে বললো,
– “স্যার! দু’জন কে দেখে এলাম হল ঘরে আছে।”
– “যাক,আমার দুশ্চিন্তা একটু কমলো এবার কাজ টা সহজ হবে।” তারপর ইশান নিচে এসে দেখে,ইমান যেন কমন করে মিমের দিকে তাকিয়ে আছে।ও জিজ্ঞেস করলো,
– “কি দেখেছিস তুই?”
– “তোর বউ টা কে।”
– “ভালো লাগে?”
– “খুব।”
– “তাহলে ডিল হয়ে যাক?”
– “কত দিতে হবে?”
– “আরে বেশি কিছু না,তোর হাইলি বাজেটের প্রজেক্ট গুলো আমার সাথে করতে হবে আর আমার কোম্পানি’কে ফিফটি পারসেন্ট টাকা ডোনেট করতে হবে।”
– “আমি রাজি কিন্তু তোর বউ কি রাজি হবে?” ইশান ডিল সাইন করে বললো,
– “ও আজ থেকে তোর বউ ভাই,আমি আর তাকিয়ে দেখবো না ওর দিকে….তুই যা পারো কর,তোর ইচ্ছে আমি আজ থেকে চিনি না ওকে।”
– “সত্যি বলছিস?”
– “কোনো সন্দেহ আছে?”
– “না যদি,জ্বালাতন করে?”
– “চিন্তে নেই,সবার অগোচরে তোর দিয়াবাড়ির ফার্ম হাউসে পৌঁছে যাবে।”
– “কেমন মানুষ তুই?”
– “আমার মতো মানুষ ইতিহাসে ও অনেক আছে।”
– “মীরজাফর ফেইল,ব্রো।”
– “রবার্ট ক্লাইভ বলে ডাকতে পারিস আমাকে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “শালা! এমনি এমনি ব্রিটিশ বলে ডাকি তোকে?” মিম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি ব্যাপার? ডিল সাইন হয়ে গেছে?” ইশান হাসতে হাসতে মিমের গাল টেনে ধরে বললো,
– “নিঃসন্দেহে! চলো এনাউন্সমেন্ট করতে হবে!” অতঃপর মনেমনে বললো,
– “আজ রাতে তুমি তোমার নতুন স্বামীর সজ্জা সঙ্গিনী হবে,খুব অহংকার না তোমার? সব ধুলোয় মিশে যাবে।তারপর তুমি নিজেই ঘৃণা করবে নিজের শরীর টাকে।”
চলবে,,,,,