#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৫
– “বাজে লোকটা এখনো আগের মতোই আছে।” পরক্ষণেই মিম অবাক হয়ে আরাবের দিকে তাকিয়ে রইলো।আরাব হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো ইশানের কেবিন থেকে।
এদিকে,
আমির সাহেব মনমরা হয়ে নিজের কেবিনে বসে আছে।বারবার সে একটা কথাই ভাবছে,
– “এতো বড় ভুল কি করে হলো আমার কাছ থেকে? আমি কি করে নিজের সন্তান’কে ঠেলে দিলাম বিপদের দিকে? এখন যদি আমার মেয়ের কিছু হয়ে যায়? তখন আমি কি জবাব দেবো শোভার কাছে?” ওই….সময় তৌহিদুর রহমান সাহেব এসে আমির সাহেব’কে বলেন,
– “স্যার! কেউ একজন দেখা করতে চায় আপনার সাথে।” আমির সাহেব বললেন,
– “আমি ব্যস্ত এখন দেখা করতে চাই না কারো সাথে।”
– “কিন্তু স্যার! ভদ্রলোক বললেন যে জামাই বাবা সম্পর্কে তার কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে।” আমির সাহেব সাথে সাথেই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
– “তাকে গিয়ে বসাও,আমি এই…মুহূর্তে কথা বলতে চাই তার সাথে।”
– “জ্বি,স্যার! সে ওয়েটিং রুমে বসে আছে,আপনি একটু কষ্ট করে ওয়েটিং রুমে চলুন আমার সাথে।” আমির সাহেব ম্যানেজার তৌহিদুর রহমানের সাথে এস্ত পায়ে বেড়িয়ে এলেন ঘর থেকে,কিন্তু ওয়েটিং রুমের এসে কাও’কে দেখতে পেলেন নাঃ! তাই তৌহিদুর রহমান’কে রাগারাগি করে চলে এলেন ওখান থেকে।তবে তিনি দরজা ঠেলে কেবিনে এসে ঢুকতেই কেউ একজন বলে ওঠে,
– “শুভ জন্মদিন বাবা! অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে।” আমির সাহেব দৌড়ে এসে চেয়ার টেনে দেখেন, তার ছোটো মেয়ে টা দু’ই পাউন্ডের কেক হাতে নিয়ে বসে আছে।মিম কিছু না বলে’ই বাবা’কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– “আই এম সরি,বাবা! রাগ করে অনেক অনেক কথা বলে ফেলেছি তোমাকে।জানি,রাগ সামলাতে না পেরে অনেক অনেক কষ্টে দিয়ে ফেলেছি তোমাকে আর মা’কে।” আমির সাহেব মেয়ের চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলেন,
– “আই এম সরি,মা! ভুল আমি করেছি,তোমার কোনো দোষ নেই এতে।তোমার রাগ করা স্বাভাবিক,আমি আর কোনো কষ্ট পেতে দেবো না তোমাকে।আমি নিজে ডিভোর্স কেইস ফাইল করবো,তোমাকে থাকতে হবে না ওই….নোংরা ছেলেটার সাথে।” পেছন থেকে হঠাৎ এসে স্পর্শ,স্পন্দন আর মানহা এসে আমির সাহেব’কে জড়িয়ে ধরলো।আমির সাহেব বেশ অবাক হলো ছেলেমেয়ের কাণ্ডকারখানা দেখে,তখন শোভা এসে বললেন,
– “আমি কি তোমাদের পর? আমাকে কি লাগে না কোনো কাজে?” মিম ছুটে গিয়ে মা’ক জড়িয়ে ধরে এটা-ওটা বলতে লাগলো।শোভা পরম যত্নে মেয়ে’কে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকে।মিম নিচু স্বরে বললো,
– “সরি,মা!”
– “থাক আর লাগবে না,আমি এমনি তেও রাগ করিনি তোমার সাথে।তুমি চাইলে আমি এবং তোমার বাবা নিজে গিয়ে তোমার ছোটো চাচার সাথে কথা বলবো।”
– “কিন্তু,আমি আর ভালোবাসি না ওকে।না মানে,মাহাদী হয়তো আমার ভালো লাগা ছিলো মা,কিন্তু আমি ভালোবাসি না ওকে।ও গত চার বছর ধরে আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড ছিল,সেভাবে ও হঠাৎ একদিন প্রপোজ করে বসে আমাকে।হ্যাঁ মা, আমার ওকে হয়তো অনেক ভালো লাগে,তবে আমার বাবা-মা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।” মেয়ের কথা শুনে আমির সাহেব চুমু খায় মেয়ের হাতে।মানহা বুঝতে পারছেনা বাবা’কে কি বলা উচিৎ তার? সে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আমির সাহেব নিজে থেকে এগিয়ে এসে বড় মেয়ের সাথে কথা বললেন,
মানহা সাথে সাথেই ঝাপিয়ে পড়লো বাবার বুকে।স্পর্শের স্ত্রী আফরিন একপাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,ভয়ে ভয়ে কথা বললো সে শশুর – শাশুড়ির সাথে।শোভা নিজের গলা থেকে সোনার চেইন খুলে ছেলের বউয়ের গলায় পরিয়ে দিলেন,আমির সাহেব খুশি হলেন বউ মা’কে দেখে,স্পন্দন নিরব দর্শক অস্পষ্ট স্বরে বললো,
– “আমাকেও প্রেম করতে হবে।” মিম ওকে বকা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে বললো,
– “আরে চলো চলো বাবা! কেক টা কাটো আগে।” আমির সাহেব কেক কেটে সবাই’কে খাইয়ে দিলেন নিজের হাতে।মিম বাসায় ফিরে এসে আরাব’কে ফোন করে জ্বালাতে লাগলো।আরাব পায়ের ওপরে পা তুলে বসে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ফোনের স্ক্রিনের দিকে।মনেমনে বললো,
– “আমিও রিসিভ করবো না ম্যাডাম,দেখি তুমি কতো জ্বালতে পারো আমাকে?” ওদিকে বলা নেই কওয়া নেই,মিম হুট করে’ই রাত বারোটার সময়ে আরাবের বাড়িতে চলে আসে….বেচারা তখন নিজের সব কাজ গুছিয়ে খেতে বসে ছিল,কিন্তু মিম সোজা এসে তার কোলে চেপে বসে….আরাব নিশ্চুপ,কোনো কথা নেই তার মুখে।মিম এক হ্রাস অভিমান নিয়ে বললো,
– “ফোন করেছিলাম? মন কোথায় থাকে?”
– “কেন?”
– “দেড়শো মিসড কল আর নব্বই টা ম্যাসেজ কোনো মেয়ে এমনি এমনি দেয় নাঃ! মিঃ বুঝতে হবে।”
– “আমি অতশত বুঝি না,মিম! তুমি যদি একটু বুঝিয়ে দিতে আমাকে?” মিম আরবের গাল চেপে ধরে হঠাৎ নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো,বেচারা ভড়কে গেলো কয়েক মিনিটে…..কিছুক্ষণ পর,আরাব মিম’কে বললো,
– “আর ইউ ক্রেইজি?”
– “জানা নেই,তবে আপনা’কে আমাকে বিয়ে করতেই হবে।” তাহলে ইমান?
– “ও ইমান না,ও একটা বহুরূপী।আমি জানি’না ও ওই…বাড়িতে কি করতে পরে আছে? তবে আমি নিশ্চিত,খারাপ কিছু হয়েছে আমার ইমানের সাথে।” আরাব বললো,
– “মাথা ঠান্ডা করো,মিম! তুমি একটু বেশি ভাবছ?”
– “বেশি না,ঠিক আছে।”
– “চলো তোমাকে বাসায় ছেড়ে আসি,তোমার বাবা মা চিন্তায় আছে।” মিম বললো,
– “কচু! কোথাও যাবো না আমি এখানেই পরে থাকবো আপনার কাছে।” রহমত সাহেব হাসতে হাসতে এসে বললেন,
– “বাবা! আপনি ডেকে ছিলেন আমাকে?” আরাব বললো,
– “হ্যাঁ,চাচা আপনি ওর জন্য একটা ঘর ঠিক করে দিন,ও নাকি থাকবে আজ আমার সাথে।” রহমত সাহেব হাসতে হাসতে মাথা দোলাতে দোলাতে চলে গেলো,আরাব মিম’কে এনে শুইয়ে দিলো ওর পাশের ঘর টা তে।মিম চুপিচুপি পা টিপে টিপে আরাবের ঘরে এলো,তারপর লাইট বন্ধ হতেই সে শুয়ে পরলো আরবের বুকে।আরাব ওঠে বসার চেষ্টা করলো, কিন্তু মিম শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ছেলেটা’কে।মিনিট খানের পর,
আরাব নিজেই হাল ছেলে দিয়ে মিম’কে জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকে।পাঁচ মিনিট পর মিম হঠাৎ লাফিয়ে উঠলো,ওর লাফ দেখা আরাব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে।মিম শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে আরাব’কে বললো,
– “আমি যাই আমার কাজ হয়ে গেছে।” আরাব অকপটে বলে ফেললো,
– “তুমি কি শুধু গা জড়াজড়ি করতে এসেছিলে আমার সাথে?” মিম কোনো উওর দিলো না হাসতে হাসতে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে।আরাব মনেমনে বললো,
– “পাঁজী যেন কোথাকার? সেই মজা নিতে এসেছিল আমার কাছে।” মিম’কে এতো হাসিখুশি দেখে আফরিন জিজ্ঞেস করলো,
– “কি ব্যাপার ননদিনী?”
– “কিছু না,ভাবি চোর ধরা পরে গেছে।না মানে,হয়তো চেহারা বদলানো সম্ভব,তাই বলে ভেতরের সত্তা টাকে কি করে বদলাবে?” মিমের মতিগতি বোঝা অনেক টা দ্বায় হয়ে গেছে সবার কাছে,তবু্ও বাড়িতে আমির সাহেব এবং মিসেস শোভা খুব খুশি তাদের মেয়ে’কে এতো হাসিখুশি দেখে,আরাবের কাছে পুরো বিষয় টা এখানো রহস্য মিম কেন হঠাৎ সেদিন এসেছিল ওর কাছে? দু’জনে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলছে।মিম দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “বিয়ে করবেননা? আমাকে?” আরাব হাসতে হাসতে ইশান’কে বললো,
– “ভাই কাজি ডেকে দে তোর বউ টা পাগল হয়ে গেছে।” ইশান হাসতে হাসতে বলো,
– “জানি,এদিকে আয় তোর সাথে আলাদা ভাবে কথা আছে।”
– “বল,কি হয়েছে?”
– “জানিস,তো কাল পার্টি?”
– “হ্যাঁ,তো?”
– “মিম’কে তোর কেমন লাগে?”
– “খারাপ না ভালোই।”
– “রাত কাটাতে চাস? ওর সাথে?” আরাব দাঁতের দাঁত চেপে বললো,
– “পাগল নাকি? তোর মাথা ঠিক আছে?”
– “আরে ভাই রেগে গেলে কি করে চলবে? কথা টা শোন আগে?” আরাব রেগে গিয়ে ইমান’কে বললো,
– “রাস্তা ছাড় ইমান! আমার অনেক কাজ আছে।” ইশান কথা বাড়ালো না,চলে যেতে দিলো ওকে।” আরাব মনেমনে বলে,
– “জানতাম,আমি এই…শুয়োরের বাচ্চা টা এমন একটা কিছু করবে মিমের সাথে।আমি,এই ইমান বেঁচে থাকতে তুই ওর কোনো ক্ষতি করতে পারবি না,ইশান।আমি করতে দেবো না তোকে।মিমের সেফটি আগের থেকে দশগুণ বাড়াতে হবে,ও আর এক মুহূর্তের জন্য নিরাপদ নয় ইশানের আশেপাশে।”
চলবে,,,,,,