সুপ্ত বাসনা পর্ব ২৩

0
835

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২৩

– “বলেছিলাম আমি,’কুত্তার নজর সবমসময় ময়লার দিকেই থাকে।’ আর আজ এসবের জন্য শুধু তোমরা দায়ী বাবা! আমি কখনো ক্ষমা করো না তোমাকে।” তারপর মিম দৌড়ে নিজের ঘরে চলে আসে সেখান থেকে।তার মন মেজাজ ভালো নেই আজ,সে আজ খুব কেঁদেছে বাথরুমে বসে।মনেমনে মিম নিজেকে বললো,
– “কেন সবসময় এমন হয় আমার সাথে? আমি এই…ইমান’কে এতো সহজে ছেড়ে দেবো না ওর কপালে ঢের দুঃখ আছে আর ও যদি সত্যি কোন বহুরূপী হয়।তাহলে ওর এমন অবস্থা আমি করবো না,ভবিষ্যতে ও আঁতকে উঠবে নিজের কথা ভেবে।কারণ আমি এতো সহজলভ্য না যে,যে কেউ এসে নাচিয়ে চলে যাবে আমাকে।তোমার কপালে শনি ইমান থুক্কু বহুরুপী ইমান,রেডি হও তুমি কিভাবে আমার মুখোমুখি হবে।আমি যেমন ভালোর ভালো,তেমনি খারাপের খারাপ,তাই এতো সহজে কাবু করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয় আমাকে।তোমার একটু হিসেবে করে ময়দানে নামা উচিৎ ছিল মিঃ বহুরূপী,কারণ আমার যা বোঝার আমি ঠিক বুঝে গিয়েছি আর এখন শুধু একটা টোপ দিতে হবে।আমি ময়দানে এমন ভাবে খেলবো,যে তোমার একূল-ওকূল দু’কূল জলে ভেসে যাবে।তোমাকে বুঝতে হবে বহুরূপী! আই এম নট এভিলএভেল ফর এভরিওয়ান,আমার ডিমান্ড টা ঠিক অন্য জায়গায় আছে।তমুি শুধু একটু ভুল করো,তারপর খেলা হবে,আমি আজ এখানে বসে বৃথাই চোখেরজল নষ্ট করছি আর সস্তা হিসেবে প্রমাণ করছি নিজেকে।আমি সস্তা না,আমি অনেক এক্সপেন্সিভ মিঃ! তোমাকে সেটাই বুঝতে হবে।জাস্ট বিকজ অব তোমার বোঝার কোনো সাধ্য নেই যে,রাস্তার বে*** আর বাড়ির বউয়ের মাঝে একটা বিশাল বড় পার্থক্য আছে,যেখানে তোমাকে আমি স্বামী হিসেবে’ই মানি না,সেখানে তোমাকে সুযোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা কোনো ভাবে।তার ওপর তুমি আমার মনে যে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়েছ ‘বহুরূপী’ তার একটা সুরাহা করতেই হবে আমাকে।আমি এতো সহজে চুপ করে বসে থাকার মতো মেয়ে নই,তাই খেলার জন্য তুমি প্রস্তুত করে নাও মিঃ নিজেকে।কারণ আমি কোনো কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আঘাত করবো না তোমাকে।ময়দানে দাঁড়িয়ে চোখেচোখ রেখে বীরের মতো লড়াই করবো তোমার সাথে।” অতঃপর গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে,
আরাব হলে বসে গল্প দিচ্ছে সবার সাথে।মিম’কে দেখেই হাসিমুখে বলে,
– “কি ব্যাপার ভাবি? এমন দেখতে লাগছে কেন আপনা’কে?” মিম বললো,
– “দেখুন আমি কারো ভাবি নই।”
– “তাহলে কি আমি ‘মিষ্টি’ বলে ডাকতে পারি আপনা’কে?”
– “ডাকুন,তবে ভাবি বলে ডাকবেননা প্লিজ আমাকে।”
– “এ মা সে কেমন কথা? আপনার না বিয়ে হলো ইমানের সাথে?”
– “আপনার কি মনে হয় আরাব? আমার রুচি এতো খারাপ যে আমি সংসার করবো এই….লোকের সাথে?”
– “মিম প্লিজ।”
– “ইউ আর গো টু হেল।”
– “তুমি এমন করছ কেন আমার সাথে?” আরাব হাসতে হাসতে বললো,
– “এর আগে তুই বল ভাই,তুই সেদিন কি করছিলি উর্মির সাথে? দেখ বিয়ের পর অন্তত এই….ধরনের আচরণ আমি এক্সপেক্ট করিনি তোর কাছ থেকে।” ইমান কিছু বললো না মাথা নিচু করে বসে আছে আরাবের পাশে।মিম উঠে চলে গেলো আর তখন একটা ম্যাসেজ আসে মিমের কাছে,সেখানে লেখা,
– “মন খারাপ করো না মিষ্টি,একটু হাসো।তোমাকে হাসলেই ভালো লাগে।” মিম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে দেখে,
আরাব হাতে ফোন নিয়ে বসে আছে,ও মনেমনে বলে,
– “কিন্তু ও যদি ইমান হয়? তাহলে ওর মুখ টা কেন অন্য রকম দেখতে হবে? আরাব ইমান হতেই পারে না, হয়তো কেউ মজা করছে আমার সাথে? কিন্তু কে আর কেনই বা এমন করছে আমার সাথে? কি উদ্দেশ্য তার? সে কি কিছু বলতে চায় আমাকে? এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে? আদৌও ওই….সুন্দরী হওয়ার কথাটা কি ইমান বলেছিল আমাকে? না কি ইশান? এমন কেন হচ্ছে আমার সাথে? ‘তুমি যদি তোমার বান্ধবীর মতো সুন্দরী হতে,তাহলে আমি হয়তো এই….বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখতাম।’ এ কথা গুলো কি তাহলে সেদিন ইশান বলেছিল আমাকে? হ্যাঁ ইশান সবসময় ইমান হওয়ার চেষ্টা করতো,ও তো ইমান সেজে বেশ কয়েকবার বোকাও বানিয়েছিল আমাকে? এমন নয়তো সে দিন এক্সিডেন্টে ইমানের কোনো ক্ষতি হয়েছিল আর ইশান কোনো ভাবে বেঁচে গিয়েছিল সে দিন কে? কেন আমার এতো ভয় করছে? কি হয়েছিল সে দিন এক্সিডেন্টে? যদি আমি ভুল না হই তাহলে ইশান ‘ইমান’ সেজে রয়েছে এই….বাড়িতে,কিন্তু কেন? কি লাভ ওর তাতে? তবে কি ইমান বেঁচে নেই আর নাঃ! ওই আরাবের সাথে ইমানের কোনো লিংক জড়িয়ে আছে? আচ্ছা ওরা দু’ভাই তো একরকমের দেখতে ছিল,তাহলে আজ আরাবের কেন কোন চেহারায় মিম পাচ্ছি না আমি ইমানের সাথে? উফফ,আমার মাথা টা আর কাজ করছে না।আমি কেন পারছিনা পুরো বিষয় টা দুইয়ে দুইয়ে চার করতে?” রাতে মিম’কে রান্নাঘরে একা দেখে ইমান এগিয়ে এসে মিম’কে বলে,
– “আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমার ভুল হয়ে গেছে।” মিম হাসতে হাসতে বলে,
– “বহুরূপী যেন কোথাকার? তোর এই…..ভুলের নাটক কতদিন ধরে চলবে? আমার পক্ষে তোকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া পসিবল নাঃ,সো গেট লস্ট ওঁকে?” ইমান বললো,
– “তুমি সবসময় এভাবে কথা বলো কেন আমার সাথে?” মিম জাবাবে বললো,
– “ছোটো বেলা থেকে তোর খুব ইমান হওয়ার শখ না? কি মনে হয় ‘ইশান’ সবকিছু তুমি এতো সহজে পেয়ে যাবে? না মানে,ইমান হওয়া এতোই সহজ? যদি সুপুরুষ হও তাহলে সামনে এসে কথা বলো সবার সাথে।কাপুরুষের মতো ছোটো ভাইয়ের নাম খ্যাতির পিছনে লুকিয়ে আছো তোমার লজ্জা করে না এসব করতে?” ইমান নিজেকে যথেষ্ট শান্ত হয়ে বলে,
– “কি সব বলছ তুমি? মিম! তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “তোর এই….সব সস্তার চিফ নাটক,তোর বাবা-মায়ের সামনে বসে করিস।আমার সামনে এসব বস্তাপচা নাটক করে ভাই নেই ব্রো,মাথায় ঢুকেছে? ইশান নাম টা বদলে তুমি ‘ইমান’ হয়েছ ঠিকই,তবে তোমার স্বভাব চরিত্র ওই…..বস্তাপচা’ই আছে।তুমি প্রথম থেকেই ছিলে একটা ইউজলেস,অর্কমা আজও তুমি সেটাই রয়ে গেছো আমার কাছে আর ভালো করে শুনে রাখ আমি আমার ‘ইমান’ কে মানে আসল ইমান’কে ভালোবাসি তোকে না।কথা ক্লিয়ার? এক বিন্দু পরিমাণ মিথ্যে নেই এটার মাঝে আর তুই দুপুর বেলা আমার গায়ে হাত তুলতে এসে বুঝিয়ে দিলি তোর আর ইমানের মধ্যে কত পার্থক্য আছে,কাজেই আমি যে দিন তোর বিরুদ্ধে প্রমাণ পাবে,সে দিন জুতো পেটা করতে করতে তোকে বের করবো এই…বাড়ি থেকে।তাই ন্যাকামো একটু কম কর,যা যাহ আরে দূর ‘হ’ আমার চোখের সামনে থেকে….আর হ্যাঁ মাইন্ড ইট,আমার কথা গুলো যেন মাথায়,থাকে।” মিম ওখান থেকে চলে আসার পর ইমান খুব বিশ্রী রকমের হাসি দেয় নিজেকে আয়নায় দেখে….।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here