#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২২
– “অদ্ভুত! এসব হচ্ছে টা কি? ‘মিষ্টি’ নামে শুধু একজন আমাকে ডাকতো কিন্তু সে তো দেখা হওয়ার পর আমাকে একবারও ‘মিষ্টি’ বলে ডাকেনি?” হঠাৎ আরাব মিম’কে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
– “জুয়োচুরি করতে গিয়ে সব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে খেয়াল করলেও,সে কিছু ছোটোখাটো বিষয় গুলো একদম মাথায় রাখেনি।একজনের পরিচয় চুরি করা হয়তো সহজ,তাই বলে পুরোপুরি ভাবো সেই মানুষ টায় রুপান্তরিত হওয়া আদৌও সহজ কি?” মিম হতবুদ্ধির ন্যায় ইমানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইমান’কে বলে,
– “আশ্চর্য! এসব আমার সাথে হচ্ছে টা কি?” তখন ইমান মিম’কে বলে,
– “ফটোশুটের সময় হয়ে গেছে মিম! তুমি কি রেডি?” মিম কোনো কথা না বলে গিয়ে আরাবের কোলে বসে পরলো,আরাব মিম’কে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না কি?” মিম বললো,
– “নাঃ!”
– “তাহলে ক্যামেরা ম্যান’কে রেডি হতে বলি?”
– “জ্বি।” ফটোশুটের সময় মিম খেয়াল করে দেখলো আরাব ওকে একবারও বাজে ভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করেনি,উপরন্তু যে ছবি গুলো কিছুটা ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছিল আরাব তখনও ওকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেনি।শুধু চোখে চোখ পরে যাচ্ছিল সে এক অদ্ভুত অস্বস্তি,স্পর্শ টা ছিল মিমের অনেক পরিচিত কিন্তু আগে তো কখনো এমন হয়নি? আড়াই ঘন্টার ফটোশুট শেষে ইমান আরাব’কে জিজ্ঞেস করে,
– “তোর কি বিয়ে-শাদি করার ইচ্ছে নেই না কি?” আরাব হাসতে হাসতে একবার মিম’কে দেখে বললো,
– ” ভাই আমি ‘ওয়ান উইমেন ম্যান’ ছোটোবেলা থেকেই একজন’কে ভালোবেসেছি।যদিও কখনো সেটা তাকে খুলে বলা হয়নি,যদি মেয়েটির লেখাপড়ায় ক্ষতি হয়ে যেতো তাই আরকি? আচ্ছা ইমান তোর যে জমজ ভাই পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছিল তার নাম যেন কি?” ইমান বিরক্ত হয়ে বললো,
– “ইশান! আমি আর ইশান ছোটোবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি,আমরা দু’জনেই দু’জনের সম্পর্কে সবকিছুই জানতাম বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম আরকি কিন্তু ইশান কেমন যেন একটু চঞ্চল স্বভাবের ছিল আরকি।”
– “হুমম,ব্রো! আমার বন্ধুই বেস্ট,তবে তুই কখনো মেয়েবাজ ছিলিনা ইমান।তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কি? এক্সিডেন্টে তোর ভাইয়ের সাথে তার এক বন্ধুও মারা গিয়েছিল আমি যতদূর শুনেছি।”
– “হ্যাঁ,তবে সেই পুরনো কাসুন্দি ঘেটে লাভ কি? চোখের সামনে নিজের বড় ভাইয়ারের (ইশান) মৃত্যু টা দেখে আমি না মেনে নিতে পেরে এমন টা হয়ে গিয়েছি যার কারণে তোর ভাবিও আমাকে মেনে নিতে পারছেনা আরাব।আমি ওকে সবটা বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছি।”
– “তাই বলে ‘মেয়ে বাজ?’ বন্ধু,এটা,ঠিক আমার হজম হচ্ছে না হে হে হে,না মানে তুই তো মেয়ে বাজ কখনোই ছিলিনা আগে। তোর এতো পরিবর্তন এতো কিছু সব ইশানের মৃত্যু চোখের সামনে দেখে…আমি বুঝতে পারছি ব্রো তোর কতো কষ্ট হয়েছে ইমান না মানে ইশান’কে ওই….অবস্থায় দেখে।” ইমান নিজেকে যত সম্ভব শান্ত রেখে বললো,
– “তুই আজ থেকে আমার বাসায় থাকবি ব্রো।”
– “সম্ভব নয় দোস্ত,অনেক কাজ আছে।আমার পৈত্রিক ভিটা বাড়ি মেরামত করতে হবে সেখানে থেকে….,তাই কাছেই একটা দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনেছি আর ওখানেই থাকবো চাকরবাকরদের সাথে।” ইমান আর কথা বাড়াল না,তবে ও একটু রেগে গেলো আরাব ওকে না করেছে দেখে….।মিম সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এলো,তখন একটা ম্যাজেস এলো ওর কাছে।ও সেটা চেক করতে গিয়ে দেখে,সেখানে স্পষ্ট করে লেখা,
– “যদি আর কখনো ছেলে সাজতে দেখেছি,তাহলে তোমার ঠ্যাং ভেঙে ধরিয়ে দেবো তোমার দুই হাতে।” মিম মনেমনে বলে,
– “আশ্চর্য! আমি যে মিহান,এটা ইমান কি করে জেনেছে? হে আল্লাহ কে আসল ইমান আর কে নকল ইমান? একটু বোঝার শক্তি দাও আমাকে।কারণ আমি একটা জিনিস জানি,যে ছোটো বেলায় আমি অনেক ছাগলামো করেছি তার সাথে।তবে সে একদম মেয়েবাজ ছিলো না,সে মেয়েবাজ হয়েছে ওই…এক্সিডেন্টের পর থেকে।কি সব যে হচ্ছে? এ সব কিছুই আমার মাথার ওপর থেকে যাচ্ছে।” তখন হঠাৎ মানহা মিম’কে ফোন করে বলে,
– “বাবা মায়ের ওপর রাগ করে থাকিস না ছোটো ক্ষমা করে দে তুই তাদের দু’জন কে।” মিম বললো,
– “তা কখনো সম্ভব নয় আপু,তারা সব সময় আমাদের ভালো করার নাম করে উল্টো টাই করেছে আর নিজেদের জেদ বজায় রাখতে প্রথমে তোমাকে, আর আজ আমাকে বলির পাঠা বানিয়ে ছেড়েছে।আমি কিছুতেই এসব থেকে বের হতে পারছিনা আপু।আমি বুঝতে পারছি তারা কেন আমাকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে ডেকে পাঠিয়েছে।আমি কখনোই বাবা-মায়ের প্রতি বিরক্ত ছিলাম না,কিন্তু তারা আমাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।তুমি জানো না আপু ইমানের এখনো অনেক মেয়ের সাথে নোংরা সম্পর্ক আছে।আমি গতকাল রাতে দেখেছিলাম,ইমান এখনো যোগাযোগ রেখেছে তাদের সাথে।” আড়াল থেকে ছোটো মেয়ের কথা শুনে,
আমির সাহেব দ্রুত পায়ে ইমানের ঘরে এসে দেখে ও যেন হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে কার সাথে? আচমকা আমির সাহেব ইমানের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলেন,
– “তোকে কি আমি আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে ছিলাম ফষ্টিনষ্টি করার জন্য আরেকটা মেয়ের সাথে?” ইলহান সাহেব আমির সাহেবের চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে এসে ছেলে’কে বলেন,
– “তুই কি শান্তিতে বাঁচাতে দিবি না,আমাকে আর তোর মা’কে?” ইমান কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে সবাই’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– “তোমরা আমায় ভুল বুঝছো বাবা! আমি ফোনে কথা বলছিলাম আমার ফরেন ডেলিকেট’সদের সাথে।”
– “তাহলে মিম যে বললো তোমার এখনো অন্য অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে?” ইমান দাঁতে দাঁত চেপে আমির সাহেব’কে বললো,
– “আপনার মেয়ের মাথা খারাপ বাবা! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখান তাকে।” মিম এসে ইমান’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– “আমার মাথা খারাপ হলো, তুই কেন গতকাল রাতে হোটেলে ব্লু এঞ্জেল’স এ গিয়েছিলি উর্মির সাথে? কিচ্ছু জানো না তুমি? ভোদাই সেজে বেড়াও সবার কাছে?”
– “মিম আমার কথা শোনো।”
– “তোর কথা আর চরিত্র দুটো’ই আমার বোঝা হয়ে হয়ে গেছে,কাও’কে আমি ছাড়বো না একে একে জেলে পাঠাবো এক একটা’কে,কারণ আমি মানহা নই,আমি মিম।আমার বাবা মা হয়তো সেটাই ভুলে গেছে।”
– “তুমি অহেতুক কেন মিম ভুল বুঝছো আমাকে?”
– “এখন থেকে চোখ আর গলা, দু’টোই নিচে নামিয়ে তুই কথা বলবি আমার সাথে।একটা ছেলে আর মেয়ে শুধুশুধু পুরো রাত এক হোটেলে কাটায় না ঠিক আছে?”
– “আমি যদি বলি তোমার ভুল,তুমি কাছে টেনে নাওনি আমাকে।”
– “তোর যে আগাগোড়া পুরো টাই নষ্ট ইমান,আমি যে সুযোগ দেবো? সেটাই বা দেবো কাকে? তুই কি আদৌও তার যোগ্য? তোর কি সে যোগ্যতা আছে? সবাই বলছে আমি ভুল,আমি কেন ভুল হতে যাবো? আমার কি অপরাধ আছে এতে? তোর বাবা-মা এবং আমার বাবা-মা মিলে তোর মতো একটা উটকো ঝামেলা চাপিয়ে দিয়েছে আমার কাঁধে আর একটা কথা বল,কোম্পানির লসের ব্যাপারে কিছু বলেছিস ইলহান সাহেবের কাছে? আর এই…যে আপনি? আপনি এতো ছেলের হয়ে সাফাই গাইছেন,আপনি জানেন আপনার কোম্পানি প্রচুর দেনায় ডুবে আছে?
আপনার এই….সু-পুত্র শোয়ার মার্কেটে সব টাকা লাগিয়ে এখন ফকির হয়ে রাস্তায় বসে আছে।অকালকুষ্মাণ্ড,অপদার্থ একটা এখন বড় বড় ডায়লগ মারছে এখানে বসে।শুনুন মামা,আমার মনে হয় কি এবার আপনি একটু শাসন করুণ আপনার এই…অপদার্থ ছেলে টাকে আর কত কাল মেয়েদের সাথে খাট কাঁপিয়ে বেড়াবে? এবার একটু সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন তাকে? মাঝেমধ্যে মনে হয় সেদিন এক্সিডেন্টে ইশান মরে যায়নি বরং আমার ইমান টাই হয়তো কোথাও হারিয়ে গেছে আর এটা হলো একটা বহুরূপী যে আমাদের ইমান সেজে আছে।” মিমের কথা শুনে হঠাৎ ইমান মারতে এগিয়ে যায় ওর কাছে।তখন আমির সাহেব ইমান’কে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
– “খবরদার তুমি আর একটু ও এক পা বাড়াবে না আমার মেয়ের দিকে,তুমি তো ওকে একটু সুযোগ দেওয়া সময়টুকু দিলে না রাত কাটাতে চলে গেলে অন্য আরেকটি মেয়ের,সাথে?” মিম চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
– “বলেছিলাম আমি,’কুত্তার নজর সবমসময় ময়লার দিকেই থাকে।’ আর আজ এসবের জন্য শুধু তোমরা দায়ী বাবা! আমি কখনো ক্ষমা করো না তোমাকে।”
চলবে,,,,,
্