সুপ্ত বাসনা পর্ব ২১

0
895

#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২১

– ” অতঃপর অপর পাশ থেকে কোনো শব্দ শুনতে পাওয়া গেলো না শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ভেসে এলো আর কল টা কেটে গেলো সাথে সাথে।মিম তারপর অনেক বার সেই নম্বরে ফোন করলো অথচ কোনো উওর এলো না অপর পাশ থেকে।সকালে মিমের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে দেখে বাড়িতে সবাই বেশ দুশ্চিন্তায় পরে গেছে।ইমান মিমের পাশে চেয়ার টেনে বসতেই ও চিৎকার করে সবাই’কে বলে,
– “এই…লোকটা কেন এসেছে আমার কাছে?” মিসেস রাইমা মিমের মাথায় বুলোতে বুলোতে বলে,
– “ও যে, তোর স্বামী মা! ও ছাড়া আর কে তোর কাছে?” মিম রেগে গিয়ে ধাক্কা মেরে মিসেস রাইমা’কে বলে,
– “আমি নিজের স্বামী বলে মনে করি না এঁকে,কাজেই ওনার কোনো অধিকার নেই যে উনি নিজের শরীরের চাহিদা মেটাতে জবরদস্তি করার চেষ্টা করবে আমার সাথে….দুশ্চরিত্র,লম্পট লোক একটা রাস্তা বে*** আর বাড়ির বউয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য বোঝে না সে।উনি আমার স্বামী হতে পারে মামণি,তা শুধুই কলমে কাগজে আর তার কারণ আমি আমার পায়ের নখের যোগ্য বলে মনে করি না তাকে।তুমি তোমার ছেলে’কে মানুষ করতে পারোনি সে দায়ভার তোমার,তুমি কি করে ভাবলে বিয়ে দিলে এই….লোকের চরিত্র শুধরে যাবে? না কি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলে? যে কি করে নিজেদের অক্ষমতা অন্যের মেয়ের ঘাড়ে চাপাবে? শেষে মেয়ে মানিয়ে গুছিয়ে সংসার না করতে পারলে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে,”মেয়ের মা সুশিক্ষা দিয়ে বড় করেনি তাকে” অথচ নিজেরা এমন ভাব করছ যেন কতবড় ফেরেস্তা জন্ম দিয়েছ এই….পৃথিবীতে।” ইমান মিমের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করে বলল,
– “প্লিজ তুমি আমার জন্য অসম্মান করো না,আমার বাবা-মা’কে।” মিম বললো,
– “আপনি এতো ইম্পর্টেন্স দেন কেন নিজেকে? আমি আপনার বাবা-মায়ের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাই,,,,,, তারা কি ভুল করেছে।তারা যদি আপনা’কে কঠিন অনুশাসনের মধ্যে রাখত, তাহলে হয়তো এ দিন আর দেখতে হতো না আমাকে….আমি এই….পরিবারের সবার প্রতি বিরক্ত,তাই আমার কাওকে সহ্য হয় না নিজের আশেপাশে।” আমির সাহেব ঘরে ঢুকতে ঢুকতে মেয়ে’কে বললেন,
– “ভদ্র ভাবে কথা বলো মা,আমি কিংবা তোমার মা কিন্তু এই….শিক্ষা দিয়ে বড় করিনি তোমাকে।” মিম তাচ্ছিল্য করে আমির সাহেব’কে বলে,
– “আপনারা! যে কত বড় শিক্ষিত,সে আমার ভালো করেই বোঝা হয়ে গেছে।অশিক্ষিত যেন কোথাকার এখন ওনারা আবার শিক্ষা নিয়ে জ্ঞান দিতে এসেছে আমাকে।ফালতু লোক যেন কোথাকার? এখনে এসে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনার কি মনে হয়,আমার এতো কথা শোনার সময় আছে আপনার কাছে? আপনার বড় বড় বক্তৃতা দিয়ে হয়,বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে দিন…এখানে দাঁড়িয়ে একটা ও কথা খরচ করবেনা আমার সাথে…আমি আপনার বাজে কথা শুনতে আগ্রহী নই মিঃ আমির হোসেন,আপনি প্লিজ বেড়িয়ে জান এখান থেকে….মাহাদীর সাথে আমার বিয়ে হয়নি এই….নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই আমার সমস্যা শুধু এই….লোকটা কে নিয়ে।আমি কোন দুঃখে বিয়ে করতে যাবো এমন একটা দুশ্চরিত্র লোক’কে?” মিসেস শোভা এবার একটু কঠিন গলা মেয়ে’কে বললেন,
– “তুমি কি ভুলে যাচ্ছে,মিম? তুমি কথা বলছ কার সাথে?” মিম শোভা’কে ঝাড়ি মেরে বলে,
– “একদম গলা নামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন আপনি আমার সাথে,আপনাদের কপাল ভালো আমি এখন পুলিশ ডেকে পাঠাইনি এ বাড়িতে।” আমির সাহেব মেয়ে’কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “তুমি কি পুলিশ দিতে চাও আমাকে?” মিম বললো,
– “লাভ নেই,টাকা খেয়ে আপনাদের মতো তথাকথিত বড় লোকদের ছেড়ে দেবে।আমি আমার যা বিচার দেওয়ার, আল্লাহ তাআ’লার কাছে দিয়ে দিয়েছি,সে আপনাদের একটা উচিত শিক্ষা দেবে।” মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে আমির সাহেব চুপ করে গেলেন আর তখন ইমান এগিয়ে এসে হাত রাখল মিমের হাতে।মিম হাত ছাড়িয়ে ইমান’কে ঠাস করে দু’টো চড় মে’রে বলে,
– “এতো সাহস তোর? তুই কোন সাহসে নিজের ওই…নোংরা হাত দিয়ে স্পর্শ করো আমাকে? কি যোগ্যতা আছে কি তোর? শুধু ফুটানি মারতে পারো তুই বাপের পয়সা তে…বাস্টার্ড যেন কোথাকার আজ আমি তোকে বলে দিচ্ছি,তোর জন্মেই সমস্যা আছে।” ইমান এতো অপমান সহ্য করতে না পেরে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে।তখন ইমান’কে অফিসের এম.ডি ফোন করে জানায়,
– ” স্যার! আপনার বন্ধু আরাব খান এসে বাংলাদেশে পৌঁছেছে গত দু’দিন আগে।” ইমান বললো,
– “ভালো এবার যে ভাবে হোক,আরাব’কে আমাদের কোম্পানির প্রোজেক্ট করার জন্য রাজি করতে হবে।”
– “স্যার! তাহলে নতুন মেয়ে পাঠিয়ে দেই?” ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “নাঃ! ওর এ-সব শখ নেই।”
– “ইট’স ওকে,তাহলে স্যার আমি এই… ব্যাপার টা অন্য ভাবে দেখছি?”
– “ওঁকে,বাট বি-কেয়ারফুল।”
– “ডোন্ট ওয়ারি,স্যার।”
– “ওঁকে।”

আরাব বাবা আপনি দেশে ফিরে এসেছে ভালো কথা,কিন্তু আপনার মনে রাখতে হবে।আপনার নিজের রক্ত বেইমানি করেছিল আপনার সাথে।আরাব মিটিমিটি হেসে রহমত সাহেব’কে বলে,
– “কোলা ব্যাঙের ভয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকলে হবে? আপনি অযথা চিন্তা করছেন রহমত চাচা।একদিন না একদিন আমাকে সবার মুখোমুখি হতেই হবে।”
– “হুমম,তা ঠিক।নিচে চলো বাবা তোমার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।”

ওই দিনের পর মিম আর এক ঘরে থাকেনি ইমানের সাথে।তার যে ভয় পেয়ে একসপ্তাহ আগে জ্বর এসেছিল মেয়েটি তা ভুলেই গেছে।আরাব ইমান’কে বললো,
– “আমি এবার নিজেই ফটোশুট করতে চাই সুপার মডেলের সাথে।তবে আমার একটাই শর্ত, মডেল অন্য কেউ নয় বরং বর্তমানে সবচেয়ে পরিচিত মুখ ‘মিম আমির হোসেন’ হবে।” ইমান দুশ্চিন্তায় পরে গেছে সে মিম’কে কি করে রাজি করবে এ কাজে,কারণ মিম কখনো কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে ফটোশুট করেনি আর তাছাড়াও আমির সাহেব এই…বিষয় টা বাজে ভাবে নেবে,কিন্তু ইমান’কে এ বিষয় টা নিয়ে তেমন কাঠখড় পোহাতে হয়নি আর তার কারণ,
মিম কাওকে জিজ্ঞেস না করেই প্রপোজাল টা এক্সেপ্ট করে নেয় সাথে সাথে…বাড়িতে এ বিষয়ে সবাই দ্বিমত পোষণ করলে ও মিম কারো কথা গায়ে তোলেনি সেভাবে।তারপর আজ দু’দিন পর মিম অফিসে যেতেই খেয়াল করে দেখে,
কেউ একজন রোলেক্স ব্রান্ডের ঘড়ি পরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে কথা বলছে সবার সাথে…কাছ থেকে দেখে লোকটা’কে তার বেশ পরিচিত মনে হতেই সে সামনে এগিয়ে এসে দেখতে পায় লোকটা মুখে কালো রঙের মাস্ক পরে আছে এবং সানগ্লাসের ভেতর থেকে সরাসরি চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে।বেচারি মেয়ে টা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিতেই ইমান’কে পরিচয় করিয়ে দেয় আরাবের সাথে….নাম টা শুনে মিম মনেমনে বলে,
– “এই…নামে তো নানুভাই আর নানুমণি ডাকতো ওকে,কিন্তু ও যে ইমান নাঃ! তার বন্ধু ‘আরাব” যে গত দু’দিন আগে সুদূর বিদেশে থেকে ফিরে এসেছে এই…দেশে।তবুও কেন যেন এই…. “আরাব” নাম টা বারবার আমাকে অস্থির করে তুলছে।” ইমান যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে মিম’কে বলে,
– “যাও তুমি তৈরি হয়ে আসো,ওদিকে সবাই সেট-আপ তৈরি করে ফেলেছে।” মিমের বুঝতে বাকি নেই বন্ধুর সামনে অপমানিত হওয়ার ভয়ে ইমান মিম’কে এড়িয়ে চলছে।ও ফটোশুটের জন্য তৈরি হয়ে নিচে এসে দেখে,
আরাব পায়ের ওপরে পা তুলে সোফায় বসে আছে।হাতে তার সেই রোলেক্সে ব্রান্ডের ঘড়ি টা নেই সেটার বদলে টাইটান ব্রান্ডের একটা ঘড়ি পরেছে,হোয়াইট জিন্স আর হুডি পরা ছিলো সে গুলো চেঞ্জ করে মেরুন কালারের কমপ্লিট সুট পরেছে।মিম কৌতূহলী দৃষ্টিতে আরাবের দিকে তাকাতেই আরাব মুখের মাস্ক টা খুলে পকেটে রেখে জিজ্ঞেস করে,
– “হোয়াট হ্যাপেন্ড বেবী? ওহ! সরি ভাবি?” মিম নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
– “আসলে, আজ আমি প্রথমবার এ ধরনের ফটোশুট করছি।” আরাব বললো,
– “আপনার যাতে আমাকে নিয়ে কোনো অসুবিধায় পরতে না হয়,তাই আমি সেট-আপ টা সেভাবেই সাজাতে বলেছি।” মিম একটু থেমে আরাব’কে বলল,
– “থ্যাংক ইউ।”
– “ইট’স মাই প্লেজার বেবী,বাই দ্যা ওয়ে আমি আপনার একটা সুন্দর নাম রেখেছি।” মিম কৌতূহল থেকে জিজ্ঞেস করলো,
– “কি নাম?”
– “মিষ্টি,সাউন্ডস ইন্টারেস্টিং তাই না?” মিম মনেমনে বলে,
– “অদ্ভুত! এসব হচ্ছে টা কি? ‘মিষ্টি’ নামে শুধু একজন আমাকে ডাকতো কিন্তু সে তো দেখা হওয়ার পর আমাকে একবারও ‘মিষ্টি’ বলে ডাকেনি?”

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here