#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৯+২০
– “তুমি না চাইলে কেউ জোরজবরদস্তি করবে নাঃ! প্রিয়,তোমার সাথে।” মিম বিরক্ত হয়ে পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো সেখান থেকে,তারপর কাও’কে ফোন করে বললো,
– “তুমি দু-তিন দিনের মধ্যে এসে দেখা করো আমার সাথে…।আমি কোনো ফেলনা না যে,আমার পরিবার যারতার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে আমাকে।” দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে মিমের বলা কাথা টা শুনে ইমানের বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠ,সে যেন নিজের শরীরে জোর পাচ্ছে নাঃ,
তার খুব কষ্ট হচ্ছে ওখান থেকে হেঁটে যেতে….স্পন্দন এসে মিম’কে অভয় দিয়ে বলে,
– “তুমি ভয় পেয়ো না আপু! আমি তোমার নেওয়া সব সিদ্ধান্তে আছি তোমার সাথে।” মিম মৃদু হেসে ছোটো ভাইয়ের কপালে চুমু খেলো,তারপর হাত বোলাতে লাগলো ভাইয়ের পিঠে।ছেলে’কে এতো চুপচাপ দেখে,ইলহান সাহেব এসে ছেলে’কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “তোমার শরীর ঠিক আছে?” ইমান বাবা কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো,
– “হুমম,তবে আমার মন টা কোনো কারণে খারাপ হয়ে আছে।তবুও আমি চাইবো মিম খুশি থাকুক, হয়তো আমার সাথে আর নয়তো অন্যকারো সাথে।” ছেলের মুখে এমনতরো কথা শুনে ইলহান বললেন,
– “তুমি সত্যি কি ঠিক আছো বাবা? এমন মনমরা মনমরা লাগছে কেন তোমাকে?” ইমান বললো,
– “তুমিই ঠিক ছিলে বাবা! মিম আর ভালোবাসেনা আমাকে….হয়তো আমি ওর মোহ ছিলাম! যেটা ও এতো অবহেলা পেয়ে ভুলে গেছে।” ইলহান সাহেব আর কিছু মুখ ফুটে বলতে পারলেননা।তার খুব কষ্ট হচ্ছে ছেলে’কে এভাবে দেখে আর এদিকে আমির সাহেব কথা না বলে থাকতে পারছেননা ছোটো মেয়ের সাথে,তাই সে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলেন,যে সে তার স্ত্রী’কে নিয়ে ফিরে জবেন দেশে।মিম এই…..খবর পাওয়া মাএই আহ্লাদে গদগদ,সে খুশিতে সাথে সাথে ফোন করে তার বহু কাঙ্খিত মানুষটির কাছে।ভদ্রলোক মিমের ফোন পেয়ে হাসিমুখে বলে,
– “আর চিন্তা নেই “পাখি” আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি এ….দেশে।” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “খুব তাড়াতাড়ি ফিরবেন,আমি কিন্তু অপেক্ষা করে থাকবো আপনার বধূ বেশে।” দু’দিন পর আমিন সাহেব এসে মিমের মুখে তার প্রিয় মানুষটির নাম শুনে,অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে তার মেয়ের দিকে।মিম বললো,
– “কি হলো বাবা? চুপ করে আছো কেন তুমি? তোমার কি পছন্দ নয় মাহাদী’কে?” মেয়ের মুখে নিজের সৎ ভাইয়ের ছেলের কথা শুনে আমির সাহেব ঠাস করে একটা চড় মেরে দেয় মেয়ে’কে।মিম কিছু বলতে চেয়ে ও বলতে পারেনি শুধু ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো বাবার দিকে।আমির সাহেব নিজেকে শক্ত রেখে মেয়ে’কে বললেন,
– “তুমি যা চাইছ তা সম্ভব নয়,আমি কিছুতেই পারবোনা তোমাকে যারতার হাতে তুলে দিতে কাজেই আমি যাকে পছন্দ করেছি দু’দিন বাদেই তোমার বিয়ে হবে তার সাথে।” মিম রেগে গিয়ে বললো,
– “যদি এমন টা হয়,তাহলে আমির হোসেন নামক লোকটা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে,তোমার আমার বাবা হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই।তুমি শুধু পারো নিজের ইচ্ছে গুলো অন্যের ওপরে চাপিয়ে দিতে আর আমার তোমার মতো বাবা চাই নাঃ,আমি আর কোনো যোগাযোগ রাখতে চাই না তোমার সাথে।তুমি খুঁজে খুঁজে আর ছেলে পেলে না,ওই…চরিএহীন এবং নোংরা ছেলেটির সাথে তোমার আমাকে বিয়ে দিতে হবে? আমি প্রয়োজনে পালিয়ে যাবো আর নয়তো আত্মহত্যা করবো তবুও বিয়ে বসবো না ওই….দুশ্চরিত্র আর লম্পট ছেলেটার সাথে।ওই….ছেলেটা কি তোমাকে চাল পড়া এনে খাইয়েছে নাকি বাবা? তুমি এমন করছ কেন আমার সাথে?” আমির সাহেব দৃঢ় গলায় মেয়ে’কে বললেন,
– “ডিসিশন ফাইনাল,তোমার বিয়ে হবে তো ইমানের সাথেই হবে।” মিম মিসেস শোভার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো,কিন্তু তিনি কোনো কথা বললো না মিমের সাথে….মিম তাই নিরুপায় হয়ে সবটা গিয়ে ইলহান সাহেব’কে বললো,তিনি বললেন,
– “তোমার বাবা-মা যা চাবে তাই হবে।” মিম এবার রাগ সামলে রাখতে না পেরে ইলহান সাহেব’কে বললো,
– “আসলে তুমি অনেক স্বার্থপর আর এর জন্যই নিজের দুশ্চরিত্র ছেলে’কে চাপিয়ে দিতে চাইছ আমার কাঁধে।” ইলহান সাহেব অনুনয়ের সুরে মিম’কে বললো,
– “আমার ছেলে টা তার ভুল বুঝতে পেরেছে মা! তুমি ক্ষমা করে দে না ওকে।” মিম বললো,
– “ক্ষমা তাকে করা যায় যে না বুঝে ভুল করে মানুষের সাথে,তোমার ছেলে অবুঝ না।আমার সামনে সে রাত কাটিয়েছে সে নিত্য নতুন মেয়ের সাথে…আমি অন্ধ ছিলাম না,সব দেখতে পেয়েছি এবং সব দেখেছিলাম নিজের চোখে।তোমার লজ্জা করে না? একে তো মানুষ করতে পারোনি,তারপর আবার ওই….ডাস্টবিন টার হয়ে সাফাই গাইতে এসেছ আমার কাছে?” সবাই যেন আজ স্বার্থপর হয়ে গেছে, এমনকি ইমা ও ইমানের জন্য অনুনয়-বিনয় করছে মিমের কাছে।মিম চুপচাপ মনমরা হয়ে নিজের ঘরে বসে রইলো আর তখন মিসেস শোভা খাবার নিয়ে এলো মেয়ের কাছে।মেয়ের গায়ে বোলাতে বোলাতে বললেন,
– “তুমি ভুলে যাও মা ওই….ছেলে টাকে।ও তোমার জন্য একদম ঠিক নয়,ও আসলেই কখনো ভালোবাসেনি তোমাকে আর তুমি তোমার বাবা’কে শুধুশুধু রাগিয়ে দিচ্ছ এর ফল কিন্তু খারাপ হবে।” মিম রেগে গিয়ে মিসেস শোভা’কে বললো,
– “তুমি কি তোমার স্বামীর হয়ে শাসাতে এসেছ আমাকে? তাহলে তাকে গিয়ে বলে দাও, আমি এখন আর ভয় পাই না তাকে।তোমরা কি সত্যি আমার বাবা-মা? আমার বাবা-মা হলে নিশ্চয়ই পারতে না আমার এই….জীবন টা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে আর হ্যাঁ গিয়ে এখন তোমার ওই….ভাইপো’কে পাঠিয়ে দাও।আমি ফেইস টু ফেইস কথা বলতে চাই ওর সাথে।আমি ও দেখতে চাই ওর আমাকে পাওয়ার কি যোগ্যতা আছে?” মেয়ে কথা শুনে মিসেস শোভার চোখে জল চলে আসে।তবুও উনি বাহিরে এসে ভালো কিছুর আশায় ইমান’কে পাঠায় মিমের কাছে।ইমান নিজের প্রস্তুত করে মিমের ঘরে আসতেই মিম তাকে প্রশ্ন করে,
– “আমি জানতে চাই এর আগে আপনি,স্ব-জ্ঞানে এবং স্ব-ইচ্ছায় বিছানায় রাত কাটিয়েছেন কত গুলো মেয়ের সাথে?” ইমান কিছু বলতে পারলো না নিমেষেই তার চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে।মিমের দ্বিতীয় প্রশ্ন,
– “আমি জানতে চাই,এই…মুহূর্তে আপনার কয়টি জারজ সন্তান আছে?” ইমান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
– “কেউ নেই,তুমি একটা সুযোগ দিয়ে দেখ আমাকে।” মিম বললো,
– “তাই নাকি? আপনি জানেন আমি কমিটেড অন্যকারো সাথে?”
– “সে যেই হোক না কেন,আমি রাজরানী করে রাখবো তোমাকে।” মিম হঠাৎ পায়ের সামনে রাখা চেয়ারে টা লাথি মেরে ফেলে দিলো আর ইমান পরে গেলো তার পায়ের কাছে।মিম হাসতে হাসতে ইমান’কে বললো,
– “তোর আমার পায়ের কাছে পরে থাকাও যোগ্যতা নেই আর তুই সুযোগের আশায় এসেছিস আমার কাছে? নিজেকে কখনো আয়নায় দেখেছিস? জানিস আমার তোকে কত নোংরা লাগে? তুই আমকে তোর ওই…নোংরা হাত দিয়ে স্পর্শ করবি আর আমি সবটা মেনে নেবো? তোর কি এতোটাই সহলভ্য বলে মনে হয় আমাকে?” ইমান মিমের প্রশ্নের কোনো উওর দিতে পারলো না চোখের জল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।সবাই বাহিরে দাঁড়িয়ে মিমের প্রতিটি কথা শুনতে পেয়েছে,তারা কেউ ভাবতে পারেনি মিম এতো টা অপছন্দ করে ওকে।তবুও আমির সাহেবের মন একটুও গলেনি,সে অটল তার সিদ্ধান্তে।মিম অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেনি স্পর্শ এবং স্পন্দনের সাথে,ওরা যখন জানতে পারলো,তখন বাড়িতে ফিরে এসে দেখে অনেক ধুমধাম করে মিমের বিয়েটা হয়ে গেছে ইমানের সাথে।একমাত্র বাড়ির লোক আর ইমান ছাড়া কেউ খুশি না এই….বিয়েতে।মিমের বড় বোন মানহা খবর পেয়ে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার বাবা’কে আর বলে,
– “আমার জীবন নষ্ট করে তোর শান্তি হয়নি,তুই এভাবে নষ্ট করে দিলি ওই…বাচ্চা মেয়েটির জীবন টাকে?” আমির সাহেব কিছু বলতে পারেননি শুধু সবটা শুনে গেছে।দু’ছেলের কেউ তার এবং মিসেস শোভার সাথে কথা বলেনি,ওরা কথা বলতে চেয়েছিল শুধু মিমের সাথে,মিম শুধু বললো,
– “আমি কখনো দরকারের সময়ে তোমাদের পাইনি,তোমরা আর প্লিজ যোগাযোগ রেখো না আমার সাথে।” মিসেস শোভা ছেলেদের বোঝাতে এলেন ওরা দু’জনেই বললো,
– “আমার আজ থেকে জানবো,আমাদের বাবা-মা মরে গেছে।” আমির সাহেব দু’ছেলে কে একসাথে জড়িয়ে ধরতে গেলেন ওরা দু’জনেই বাবা’কে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলো নিজেদের কাছ থেকে।বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় বললো,
– “তোমরা যা করলে না,এর জন্য আমরা কখনোই ক্ষমা করবো না তোমাকে।” মিমের শাশুড়ি মা এসে মিম’কে মিষ্টি মুখ করানোর চেষ্টা করতেই মিম থালাটা ফেলে দেয় তার হাত থেকে।মিসেস রাইমা ধরা গলায় বললেন,
– “আমি জানি মা,আমার ছেলে একদিন ঠিক তোকে জিতে নেবে।” মিম তাচ্ছিল্য করে বললো,
– “আপনার ছেলের শুধু নিত্য নতুন মেয়েদের সাথে খাট কাঁপানোর যোগ্যতা’ই আছে আর আমি যতদূর তাকে চিনেছি তাতে সে জোরজবরদস্তি টাই করবে আমার সাথে।” ইমা এসে বললো,
– “এমন কিছু’ই আমার ভাইয়া করবে না,কারণ ও সত্যি খুব ভালোবাসে তোকে।” মিম বললো,
– “ভালোবাসা না ছাঁই! আমি বুঝি না ওই….চরিএহীন টাকে?” ইমা তারপর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মিম’কে নিয়ে রেখে আসে ইমানের বিছানাতে।” ইমান ওর বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করছিল,তখন তনয় বললো,
– “ব্রো,তোর আবার বাসর ঘর? তোর তো বিয়ের আগেই হাজার হাজার মেয়ের সাথে বাসর হয়ে গেছে।” সাথে সাথেই ইমানের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো কারণ বন্ধুরা টিটকিরি মে’রে কথা বলছিলো ওকে।ইমান তারপর হাসি মুখে বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে ঘরে চলে আসে মিমের কাছে।ভেড়ানো দরজা ঠেলে ইমান ভেতরে ঢুকে দেখে,বকুল ফুলের মালা দিয়ে সাজানো বাসোর ঘর এলোমেলো হয়ে আছে,কোনো জায়গায় কোনো কিছু ঠিক নেই সব এলোমেলো হয়ে মেঝেতে পরে আছে।হঠাৎ এদিক-সেদিক করতে করতে ইমান খেয়াল করে দেখে,
মিম মেঝেতে হাঁটুর মধ্যে মধ্যে মাথা গুঁজে বসে আছে।ইমান ধীর পায়ে দুধের গ্লাস টা নিয়ে মিমের সামনে বসে নিচু স্বরে বলল,
– “এটা খেয়ে নাও,তোমার শরীর ঠিক হয়ে যাবে।” মিম হঠাৎ মাথা তুলে দুধের গ্লাস টা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মারে ইমানের মুখে।তারপর ইমান’কে বলে,
– “কাপুরুষ যেন কোথাকার? কি হলো এতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছিস কেন আমার দিকে? তুই কি ভেবেছিলি আমি আর পাঁচটা মেয়ের মতো সস্তা? তোর কি মনে হয় আমাকে দেখে?” ইমান ধরা গলায় মিম’কে বললো,
– “তুমি না চাইলে আমি কখনো স্পর্শ করবো না তোমাকে।” মিম বললো,
– “দু’দিন আগেও,তুই আমাকে এমন একটা মিথ্যে কথা বলেছিলি আর তাই আমি ভরশা করি না তোকে।” তারপর মিম হঠাৎ কিছু ছবি ছুড়ে মারে ইমানের মুখে,অতঃপর বললো,
– “যাঃ আর গিয়ে মস্তি করে আয় আমার কিছু যায় আসেনা তাতে,” কুত্তার নজর সারাজীবন ‘ময়লার’ দিকেই থাকে।” মিমের কথা শুনে ইমানের চোখ ভিজে যায়,সাথে সাথে।ও কিছু বলতে পারেনি,চুপচাপ শুয়ে পরে বিছানার এক পাশে।
চলবে,,,,,
#সুপ্ত_বাসনা
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ২০
– “যাঃ আর গিয়ে মস্তি করে আয় আমার কিছু যায় আসেনা তাতে,” কুত্তার নজর সারাজীবন ‘ময়লার’ দিকেই থাকে।” মিমের কথা শুনে ইমানের চোখ ভিজে যায়,সাথে সাথে।ও কিছু বলতে পারেনি,চুপচাপ শুয়ে পরে বিছানার এক পাশে।কারো চোখে ঘুম নেই সবার নির্ঘুম রাত কেটেছে।সকালে মিসেস শোভা আমির সাহেব’কে বলেন,
– “হুজুগে পরে মিমের বিয়ে টা ইমানের সাথে দেওয়ার আমাদের একদম ভুল হয়েছে।আমার তো ভয় হচ্ছে ছেলে টা কি সত্যি বদলাবে? পাঁচ বছর আগে লন্ডনে ওই…. এক্সিডেন্টের পর থেকেই ছেলেটা কেমন যেন হয়ে গেছে? ওর লাইফ স্টাইল আর ও মানুষ টা কেমন যেন বদলে গেছে? মাঝেমধ্যে মনে হয় যেন ও আমাদের ইমান না,ওর মধ্যে অন্য কোনো সত্তার বসবাস আছে।ইশান এবং ইমানের এক্সিডেন্ট টা এখনো একটা গোলকধাঁধার মতো আমার কাছে।ওরা সেদিন খাদ থেকে পরে গেলো ইশান বাঁচতে পারলো না আর ইমান দিব্যি অক্ষত অবস্থায় ঝুলে ছিল গাছের সাথে? ” আমির সাহেব চশমা খুলে সাইড টেবিলের ওপরে রেখে বললেন,
– “তুমি একটু বেশি চিন্তা করছ শোভা! এতো ভেবো না।”
– “ঠিক আছে।”
– ” আমি বলছি,ইমান অনেক ভালো ছেলে ও আমাদের মিমের সাথে মানিয়ে নেবে।”
– “কিন্তু যদি মিম ইমান’কে মেনে নিতে না পারে তখন কি হবে? ইমান কে নিজের মেয়ের পাশে মেনে নিতে পারছিনা,এখন মনে হচ্ছে আমি ব্যার্থ মা হিসেবে।আমার কোনো সন্তান আজ অব্ধি খুশি হয়নি আমাদের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তে আর মিম কখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবে না।এটা আমাদের ভুল যে আমরা মানহার মতো মনে করেছিলাম ওকে….।আর মেয়েটা কখনো আমাদের অবাধ্য হয়নি,আজ ও খুব কষ্ট পাচ্ছে আমাদের এমন আচরণ দেখে,তোমার ওপরে মেয়েটা আগে থেকেই অনেক রেগে ছিলো আর তুমি এবার অনেক রাগিয়ে দিয়েছ তাকে।” আমির সাহেব মৃদু হেসে বললেন,
– “দুশ্চিন্তা করো মা,ভবিষ্যতে বাচ্চাকাচ্চা হলে ঠিক হয়ে যাবো।”
– “তোমার কি মনে হয় সবকিছু এতোই সোজা? ও সব কিছু এতে সহজে মেনে নেবে? এর জেদ ধরে যদি ও নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলে,তখন তুমি কি শান্তি পাবে?” আমির সাহেব চুপ করে গেলেন তার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি কালিমায় পরিণত হয়ে যায় সাথে সাথে।সকালে সবাই নাস্তা করতে নিচে এসে ইমানের মুখ দেখে বুঝতে পারে বিশেষ কিছু হয়নি বাসোর রাতে।আমির সাহেব মেয়ের সাথে কথা বলতে এসে ওর মাথায় হাত রাখতেই মিম ঘৃণায় ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দেয় তাকে।কপাল কেটে গিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত পরছে তার কিন্তু মিমের কোনো হেলদোল নেই তাতে…..।ও রিসেশনের জন্য নিচে ও আসেনি…..আর না কোনো কথা বলেছে কারো সাথে।মাঝে একবার মিম মাহাদী’কে ইমানের ফোন থেকে ফোন করেছিল আর মাহাদী বললো,
– “পরী,তুমি মেনে নাও চাচাজানের সিদ্ধান্ত টাকে,বাবা মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না তুমি ভুল বুঝো না নিজের বাবা-মা’কে।আমার বাবা ও তোমাকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবে না সে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে আমাকে।” মিম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– “ওহ! তাহলে তুমি কি এই….কারণে গতকাল আসোনি আমার বিয়ে টা আটকাতে? চিন্তা করে না,না আমি কখনো তোমাকে ক্ষমা করবো আর না ওই….দুশ্চরিত্র লোকটা’কে মেনে নেবো নিজের স্বামীর হিসেবে।আমির হোসেন আর শোভা চৌধুরীর সাথে আমার সম্পর্ক শেষ তারা আমাকে খুব ভালো একটা জীবন দিয়েছে।” মাহাদী কিছু বলতে চাইলো আর তখন মিম কল কেটে দিলো অপর পাশ থেকে।ডক্টর এসে আমির সাহেব’কে দেখে যাওয়ার পর মিম বাদে সবাই এসে দেখে গিয়েছিলাম তাকে।মিসেস শোভা ছেলেদের ফোন করে ছিলেন,ওরা বললো,
– “আমরা কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না তোমাদের সাথে,কাজেই তোমাদের কোনো বিপদে-আপদে আমাদের কখনো ডেকো না।কারণ আমরা কোনো আর যখন-তখন ছুটলে আসবো না তোমাদের মতো স্বার্থপর লোকদের কাছে।তোমরা খুশি থাকো,আর একটু শান্তিতে বাঁচাতে দিয়ো মেয়ে টাকে।” ছেলেদের কথা শুনে মিসেস শোভা কেঁদে ফেলেন কিন্তু ওরা ফোন কেটে দেয় সাথে সাথে।এদিকে ইমা স্পর্শ’কে ফোনে না পেয়ে ভয় গেছে।যদিও নিজের মনের কথা বলা হয়নি ওর স্পর্শ’কে।ও মন খারাপ করে এসে মিমের কাছে বসে পরলো আর মিম ইমা’কে হাসিমুখে বললো,
– “জানিস,ভাইয়া গতকাল রাতে বিয়ে করেছে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ‘আফরিন’ আপুকে।” ইমা খুব অবাক হয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো আর মিম নিজের ফোন টা এগিয়ে দিলো ইমার কাছে।ইমা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো,তারপর উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।মিসেস রাইমা মিম’কে খাওয়াতে আসলো আর কথায় কথায় বললো,
– “আজ আমার কিছু বান্ধবী দেখতে আসবে মা তোকে।” মিম বললো,
– “আমি কোনো সং নই, যে মানুষ সং সেজে দেখতে আসবে আমাকে আর যদি তারা এ বাড়িতে আসে? তাহলে তাদের আমি এমন আপমান করবো না যে আপনাদের সবার বন্ধুত্ব চিরকালের জন্য ঘুচিয়ে যাবে।” আড়াল থেকে মেয়ের কথা শুনে মিসেস শোভার চোখে জল চলে আসে।আজকাল চার ছেলেমেয়ের মধ্যে কেউ যোগাযোগ করে না মিসেস শোভা এবং আমির সাহেবের সাথে….।দুই ছেলের মধ্যে কেউ তাদের ফোন কল রিসিভ করে না আর মানহা রিসিভ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাবা-মা’কে…..কপালে কেটে যাওয়ার পর মিম একদিন ও এসে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেনি,আর না কথা বলার চেষ্টা করেছে তাদের সাথে।দুপুরে খেতে বসে আমির সাহেব ইমা’কে নিজের পাশে বসিয়ে ইলহান সাহেব’কে বললেন,
– “ওকে যদি আমার বড় ছেলের বউ করে নেই,তাহলে কেমন হবে?” মিম সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে ইমা’কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– “কি রে? মুখে কুলুপ এঁটে আছিস কেন এখন? তোর ফুফা’কে বল তার বড় ছেলে স্পর্শ! আমার বিয়ের দিন রাতেই নিজের পছন্দের মেয়ে’কে বিয়ে করেছে।আজ আমার ভাইয়ের দশদিনের সংসার জীবন আর সে খুব ভালোবাসে আমার ভাবি’কে।” মেয়ের মুখে ছেলের বিয়ের কথা শুনে দু’জনেই বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিমের মুখের দিকে।মিম নিজের ফোন টা আমির সাহেবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– “আপনার কি মনে হয় আমির সাহেব? সবাই আপনার হাতের পুতুল? আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন সবার সাথে?” ফোনের স্ক্রিনে বড় ছেলের বিয়ের ছবি দেখে দু’জনের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরছে,যেন কোনো কথা নেই তাদের মুখে।” ইমা এগিয়ে এসে মিমের হাত ধরে বললো,
– “তুই স্পর্শ’কে বোঝা আর ওকে ফিরে আসতে বল এই…বাড়িতে।” মিম বললো,
– “কেন? যাতে তুই ঝামেলা করতে পারিস আমার ভাই এবং ভাবির মাঝে? তুই নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছিস? আমার ভাই তো কখনোই ভালোবাসার দিব্যি দিয়ে রাখেনি তোকে।” মিমের মুখে এমন কথা শুনে ইমা কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে যায় ওখান থেকে।আমির সাহেব বড় ছেলে’কে ফোন করেছিলেন কিন্তু আশানুরূপ কোনো উওর পায়নি স্পর্শের কাছ থেকে।ইমান সারাক্ষণ মিমের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিল,কিন্তু মিম কথা বলার কোনো আগ্রহ দেখায়নি তার সাথে।ইমান দিন’কে দিন অধৈর্য্য হয়ে পরছে এভাবে সে কিছুতেই থাকতে পারছে না মিমের সাথে।রাতে ইমান মিম’কে একা ঘরে পেয়ে জবরদস্তি করার চেষ্টা করে তার সাথে,কিন্তু শেষমেশ পেরে ওঠেনি কারণ মিম ফুলদানি দিয়ে ইমানের কপালে আঘাত করে ওকে অজ্ঞান করে ফেলে সাথে সাথে।তারপর একটা অপরিচিত নাম্বার দিয়ে ফোন আসে মিমের কাছে।মিম আনমনে সেটা রিসিভ করতেই কেউ একজন অপর পাশ থেকে বলে ওঠে,
– “মিষ্টি,কেমন আছো তুমি? তুমি কি করে চিনতে ভুল করলে আমাকে?” মিমের শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এই….কন্ঠস্বর টা শোনার পর থেকে।মিম কিছু উওর করতে পারলো না শুধু অস্ফুটে বলে উঠলো,
– “তু তু তু….তুমি যদি ইমান হ হ হ….হও? তাহলে আ আ আ….আমার সামনে মেঝেতে কে পরে আছে?” অতঃপর অপর পাশ থেকে কোনো শব্দ শুনতে পাওয়া গেলো না শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ভেসে এলো আর কল টা কেটে গেলো সাথে সাথে।
চলবে,,,,,