সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-২৫

0
523

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
২৫
আদালত প্রাঙ্গণে নীরবতা বিরাজ করছে, সবাই চুপচাপ তাকিয়ে আছে রায় কি হবে শুনার জন্য।
রুমা নীরবে কান্না করে যাচ্ছে,সালমান কারো চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা।
রায় শুরু হলো জজ একজন মহিলা।
-বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সালমানের প্রথম পক্ষের স্ত্রী মামলা করলে সালমানের ৫-৭বছরের জেল হতে পারতো।কিন্তু উনার প্রথম স্ত্রী মামলা করেনি।তাই সালমান,রুমার পরকীয়া প্রেমের বিয়ে নিয়ে কিছু বলার নেই।
এবার আসি রুমার বিষয়ে মূলত বাংলাদেশের আইনে মহিলাদের পরকীয়ার কোনো শাস্তির বিধান নেই।অনেক সময় দেখা যায় স্ত্রীকে হয়রানি করার জন্য স্বামী পরকীয়ার মামলা করে দেয়।
রুমার জন্য রাসেল,অহনার জীবন নষ্ট হয়ে গেলো। তবুও তাকে শাস্তি দেয়া যাচ্ছে না। পরোক্ষভাবে রুমা জড়িত না একজন এক্সিডেন্ট অন্যজন আত্মহত্যা করেছে।
রুমার শাস্তি প্রকৃতি দিয়ে দিয়েছে একজন মানুষ সুন্দর পৃথিবীকে আর দেখতে পাবে না।রুমার অন্ধত্বের জন্য সালমান দায়ী সেহেতু সালমানের শাস্তি স্বরূপ ও রুমাকে নিয়ে সংসার করতে হবে।আর কোনো বিয়ে ও করতে পারবে না আদালতের হুকুম।রুমাকে মানুষিক টর্চার কিংবা শারীরিক টর্চার করতে পারবে না।
সালমানের উপর পুলিশের নজর থাকবে।রুমাকে কিছু বলার নেই যেহেতু ওর অবস্থা অন্যের হেল্প ছাড়া কিছুই করতে পারবে না।

আদালতের রায় শুনে অনেকেই খুশি আবার অনেকেই চেয়েছিলো কঠোর শাস্তি।
তবে এই রায়ে স্বপন খুশি হয়ে প্রতিপক্ষ উকিলের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।
-সালমানের এ রায়ে আমি অনেক খুশি,কারণ একজন অন্ধ মানুষকে নিয়ে সারাজীবন কাটাতে হবে।
-আপনার কাজ অনেক ভালো। কিন্তু উকালতি করতে দেখি না তো।
-বাবার ইচ্ছায় ব্যারিস্টারি পড়া,আমার এসবে আগ্রহ নেই। ফ্যামিলি বিজনেস এইটা নিয়েই দিব্যি আছি।আপুর অনুরোধে এই কেইস লড়াই করা।

কোর্টের সমস্ত কাজ শেষ করে রুমাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো সালমান।বাসায় ফিরতে হচ্ছে ওকে নিয়ে।রুমার মা আসলেন না রুমার সাথে।
সালমান পাশাপাশি সীটে বসা তবুও একবার রুমার দিকে তাকায়নি।
সালমানের বাসায় ওর মা এসেছেন,সবকিছু গোছগাছ করলেন।নিজ হাতে রান্না করলেন।

তিয়াস এই তিনদিন নানির কাছে ছিলো।
সালমান, রুমাকে নিয়ে বাসায় আসলো, চম্পা এসে রুমাকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো।
রুমা অনবরত কান্না করছে সালমান ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে গেলো আবার।
চম্পা এসে তিয়াসকে রুমার কোলে দিলো।মাকে দেখে তিয়াসের কি কান্না।
রুমা ও কাঁদছে ছেলেকে দেখতে না পারার যন্ত্রণায় কাঁদছে।চম্পা চায়ের কাপ এনে রুমার হাতে দিলো।
-আপা আপনি কি আর জীবনে চোখে দেখবেন না?
-না দেখায় ভালো, সালমানের চোখের সাথে চোখ মিলাতে পারবো না।
-আপা আপনি মানুষটা বহুত খারাপ।নিজের জামাই রাইখা পর পুরুষের সাথে এমন নষ্টামি করলেন।
-চম্পা
-দেখেন আপা ধমকাইবেন না।পরে কিন্তু চাকরি ছাইড়া চলি যাইমু।
-সময় খারাপ থাকলে চামচিকা লাথি মারে।
-আমাগো গেরামে আপনি এমন কাজ করলে।গেরামের মাতবর বাইন্ধা বেথ দিয়া ১০০আঘাত করতো।
-তুই এখান থেকে যা।

চম্পা মুখ ভেঙচি দিয়ে চলে গেলো।রুমা ওয়াশরুমে যাবে যেহেতু ঘরের সব চেনা তাই হাত দিয়ে ধরে ধরে ওয়াশরুমে গেলো।
কিন্তু ট্যাব ছাড়বে কি করে হাত দিয়ে খুঁজে পাচ্ছে না।বাধ্য হয়েই আবার চম্পাকে ডাকলো।
চম্পা এসে রুমার হাতমুখ ধুইয়ে দিলো।
-দেখেন আপা আমার কাজ এখন অনেক বাড়ছে,কানা মানুষ সামলানো কতো কষ্টের। আমার বেতন বাড়াতে হবে।
-তোর স্যারকে বলিস।

**সালমান পুরো সন্ধ্যা বাইরে কাটালো,বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছেনা।
রিদ্ধ তখন দোকানে,এখনো ক্লাস পুরো দমে শুরু হয়নি তাই রাত ৮ টা পর্যন্ত দোকানে থাকে।
সালমান এসে রিদ্ধের দোকানে বসলো।
-এক গ্লাস জল দে তো বাবা।

রিদ্ধ বাবার দিকে জলের গ্লাস এগিয়ে দিলো।টকটক করে পুরো গ্লাস খালি করলেন।
-সারাদিন কি কিছু খাননি?
-নাহ।
-একটু কেক আর ড্রিংক দিবো?
সালমান উওর না দিয়ে বসে আছে।রিদ্ধ একটা কোকের বোতল আর কেক দিলো।
সালমান সেটা খেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।
-আল্লাহ সবসময় ভালো মানুষের পক্ষে থাকেন।আপনি বিনা অপরাধে আমার মাকে কত বড় শাস্তি দিলেন।আমার মা তো সুস্থ সবল ছিলেন তা ও ছেড়ে গেলেন।এবার কি করে সারাজীবন একটা অন্ধ মেয়েকে নিয়ে কাটাবেন?

সালমান মাথা নিচু করেই চলে গেলো।রিদ্ধ নিজেও জানে না বাবার এমন অবস্থা দেখে কি খুশি হবে না কষ্ট পাবে।খুশি হবার কথা কিন্তু খুশি হতে পারছেনা কারণ বাবাদের মাথা নিচু করে চলা সন্তানদের জন্য কষ্টের।

রিদ্ধ বাসায় ফিরে দেখলো ওর মা মন খারাপ করে বসে আছেন।
-মা খেতে দাও।
-আয় দিচ্ছি।
-মন খারাপ তোমার?
-নাহ রে মাথা ধরছে।
রিদ্ধ জানে ওর মা খুব কেঁদেছে, ভালোবাসার মানুষের খারাপ থাকা কি সহ্য করা যায় না,রিদ্ধ মনকে প্রশ্ন করলো?
মায়ের সাথে বসে খাবার খেয়ে নিলো।ওর শাশুড়ী মা ওই বাড়িতে আছেন।
রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিয়েছে চম্পা।সালমান খেতে বসলো, রুমা একা খাবার টেবিলে আসতে পারেনি।
সালমানের মা চম্পাকে বললেন রুমাকে টেবিলে নিয়ে আসতে।
-খেয়ে নে।
-খাচ্ছি।
-কি ভাবলি?
-কি?
-রুমার বিষয়ে বিদেশে কোনো ডাক্তারে নিয়ে যাবি?
-আমার কাছে কি বিষ কিনে খাওয়ার টাকা আছে।ওকে নিয়ে বিদেশে যাবো।
-এভাবে চলবে কি করে?
-স্বপ্না টাকা না দিলে তো জেলে থাকতাম।আর ওর মতো নষ্টার জন্য এক টাকা খরচা করবো না।

-আমার জন্য কিছু করতে হবে না সালমান।আমাকে নিয়ে মায়ের কাছে রেখে আসো।
-সুযোগ থাকলে তাই করতাম।
-আমি কোনো অভিযোগ করবো না রেখে আসো।

সালমানের মা কথা বাড়াতে দিলেন না।রুমাকে খেতে ডাকলেন।
ভাত মাখিয়ে দিলেন রুমাকে।রুমা খেয়ে নিলো।

একই ঘরে একই সাথে থাকার পর রুমা আর সালমানের মধ্যে কথা হয় না।
চম্পা সব সামলায় প্রতিদিন একবার এই বাসায় এসে সবকিছু দেখে যান সালমানের মা।

কেটে যায় ১৫দিন, রিদ্ধ ওর দাদুকে নিয়ে ডাক্তারে গেছে তরী ক্লাসে।
সেই সুযোগে সালমান বাসায় আসলো
রিহান দরজা খুলে দিলো,স্বপ্না ভিতর থেকে বলছে কে এসেছে।
-বাবা
বাবা শোনামাত্র স্বপ্না নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।
-রিহান এই চকলেট নাও।আর ওই রুমে গিয়ে খাও।

রিহান চকলেট নিয়ে চলে যেতেই সালমান আসলো।দরজা বন্ধ দেখে নক করলো।
-তোমার সাথে আমার কথা ছিলো স্বপ্না।দরজা খুলে দিবে?
-আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই।
-প্লিজ স্বপ্না একবার আমার মুখোমুখি বসো।আমি সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইবো।
-আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
-তবে কেনো সামনে আসছো না?
-ক্ষমা করে দিয়েছি মানে এই না যে সব ভুলে গিয়েছি।
-স্বপ্না একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলো।
-আপনি এখন যান এখান থেকে।আমার ছেলে মেয়ে চলে আসবে ওরা খারাপ ভাববে।
-আমি তো পরপুরুষ না?
-যেদিন থেকে আপনার জীবনে আমার জায়গায় কেউ এসেছে সেদিন থেকেই আপনি পরপুরুষ।
-আমার এই বিপদে মুখ ফিরিয়ে নিবে?
-ভুল বলছেন আপনাকে বিপদ থেকে আমিই উদ্ধার করেছি।
-আমি বুঝতে পারছি স্বপ্না আমার জীবনে তোমাকে কতোটুকু প্রয়োজন।
-এখন বুঝে লাভ নেই।
-স্বপ্না একটা সুযোগ দিতে পারো না?
-আপনি কি এখানে এসেছেন নিজের অক্ষমতা দেখাতে।
-মানে?
-ঘরে অন্ধ স্ত্রী তাই বুঝি আমাকে প্রয়োজন।শুনোন আমি বাজারের মেয়ে না।যে কেউ এসে বলবে একটা সুযোগ আর আমিও দিয়ে দিবো।অন্ধ হলেও রুমা আপনার স্ত্রী তাই ওকে ওর প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এখানে লীলা করতে এসেছেন।
-স্বপ্না তুমি এভাবে কেনো কথা বলছো?
-আপনার সাথে কথা বলছি এটাই আপনার ভাগ্য।
সেদিন তো বলেই দিলাম। আমি অন্যের ইউজ করা জিনিস পছন্দ করি না।
যেদিন থেকে রুমা আপনার জীবনে এসেছে সেদিন থেকে স্বপ্নার জীবন থেকে সালমান মরে গেছে।
একবার আমি যে জিনিস ফেলে দেই স্বর্ণ হলেও কুড়িয়ে নেয়ার অভ্যাস আমার নেই।আপনি নিশ্চয়ই আমার স্বভাব সম্পর্কে জানেন।

-নিজের রাগ, জেদের জন্য এভাবে শাস্তি দিচ্ছো আমায়?
-রাগ থেকে জন্ম নেয় ক্ষোভ আর ক্ষোভ জন্মালে প্রতিশোধের নেশা জাগে।তাই আপনার প্রতি আমার রাগ নেই।
আপনার প্রতি আমার অভিমান ছিলো, সেটা ঘৃণায় রূপান্তরিত হয়েছে।কাউকে ঘৃণা করলে তার প্রতি আর ভালো লাগা জন্মায় না।
আপনি হয়তো ভাবছেন আপনাকে টাকা দিয়েছি আমার ভাই আপনার পক্ষে লড়েছে। আপনার প্রতি আমার আগের ভালোবাসা ফিরে এসেছে।ভুল মিঃ সালমান আমি আপনাকে দয়া করেছি।আমার ছেলেমেয়েদের জন্মদাতা আপনি।১৮বছর আমাদের দেখভাল করেছেন অনেক ঋণ জমে ছিলো কিছুটা শোধ করলাম।আমি সবাইকে বলেছি আমার মৃত্যুর পর আপনি যাতে আমার মুখ না দেখেন
এবার নিশ্চয় ক্লিয়ার হয়েছে বিষয়টা।কতোটা ঘৃণা করি আপনাকে।

সালমান এতোক্ষণ চুপচাপ সব শুনলো। কিছু বলতে পারলো না ওর গলাটা ধরে আসছিলো,অশ্রু গড়িয়ে পরছিলো।
সালমান ফিরে গেলো সালমানের ফিরে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছে স্বপ্না।স্বপ্নার বুক দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে যাক তবুও পিছন ডাকবো না।যাকে মুক্ত করে দিয়েছি তাকে আর চাইবো না।

চলবে
(একটা কথা আইন সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।গুগল থেকে তথ্য নিয়ে লিখেছি।যেহেতু এইটা গল্প তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here