#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৯
সালমানের অবস্থা মোটামুটি ভালো। ওকে দেখেই বিকেলে ওর মা ফিরে আসতে চাইলেন।রুমা যত্নের ত্রুটি রাখেনি,তবুও সালমানের মা ওর সাথে ভালো করে কথা বলেননি।
-মা আপনারা দু দিন না হয় থেকে যান।
-নাহ আমাদের ফিরতে হবে।
-মা সালমানের ভালো লাগবে আপনি এখানে থাকলে।
-ছেলেকে দেখতে এসেছি, দেখা হয় গেছে,এবার যাইতে হবে।
রুমা আর পাল্টা কিছু বললো না।সালমান ইশারা দিয়ে থামিয়ে দিলো।
-মা আবার আসবে তো?
-সম্ভব হইলে আসবো।
-কাছাকাছি তারপর ও আসতে অসুবিধা কি?
-কাছাকাছি কিন্তু মাঝের দেয়ালটা বড্ড শক্ত।
-এই দিক থেকে আসার গেইট আছে তো।
-তোর ইট পাথরের দেয়ালের কথা আমি বলি নাই।তোর আর আমাদের সম্পর্কে তুই যে দেয়াল তুইলা দিছিস সেটার কথা বলেছি।
-মাফ করে দাও না মা।
-মাফ করে দিয়েছি বলেই তো আসলাম।
-থেকে কেনো যাচ্ছো না?
-আমার মেয়েটা অপেক্ষা করে আছে।
-নিজের ছেলের চাইতে অন্য মেয়ের প্রতি তোমাদের বেশিই আধ্যিকেতা।
-তুই যদি স্বপ্নার মর্ম বুঝতি তবে শেষ বয়সে তুই শান্তিতে মরতে পারতি।
-মা তুমি আমায় অভিশাপ দিচ্ছো?
-না রে বাপ তোকে অভিশাপ দেয়ার মতো পাথর মন আমার না।
সালমানের বাবা আর সালমানের মা বেড়িয়ে গেলেন।রুমা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-তুমি কিছু বললে না কেনো?
-কি বলবো?
-তোমার মা আমাকে এতো অপমান করলেন।
-তোমাকে অপমান!! কখন?
-এই যে উনি বললেন শেষ বয়সে তুমি শান্তিতে মরতে স্বপ্না থাকলে।আমি কি তোমাকে অশান্তি দিবো কি মনে করেন তোমার মা।
-মা স্বপ্নাকে বেশি ভালোবাসেন তো।
-তুমি, তুমি কি কম ভালোবাসো?
-মানে?
-জ্ঞান ফিরতে মুখ থেকে স্বপ্নার নাম বের হইছিলো কেনো?
-কি?
-তুমি কি তলে তলে স্বপ্নার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছো।
-স্বপ্নাকে কি তোমার বাজারি মেয়ে মনে হয়।এতো কিছুর পর লুকিয়ে আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে।
-দোষের কি এখনো আইনগত, ধর্মমতে তোমার স্বামী -স্ত্রী।
-রুমা পেইন দিয়ো না তো।
-আমি কথা বললে পেইন।
-ইশ বুঝো না তুমি কষ্ট হচ্ছে আমি কথা বলতে পারছিনা।
রুমা চুপটি করে সালমানের কাঁধে মাথা রাখলো।
-আমি তোমাকে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না।বড্ড ভালোবাসি তোমায়।
সালমানের বুকটা ধুঁক করে উঠলো। স্বপ্না ঠিক এইভাবেই বলতো তোমাকে আমি কখনোই কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না।
রুমার ডাকে সালমানের ধ্যান ভাঙ্গে।
-তুমি কি খাবে বলো?
-এখন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
**সালমানের মা এসে কলিংবেল চাপতে রিদ্ধ দরজা খুলে দেয়।
স্বপ্না বাইরে এসে শাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।
-কাঁদছিস কেনো,কি হয়েছে তোর?
-আমি ভেবেছি তুমি বোধহয় আসবে না।
-পাগলি।
-তোমরা ছাড়া আমি একা মরে যাবো।
-কাঁদিস না রে মা।তোর কষ্ট আমরা বুঝি।
তরী সবার জন্য চা-নাস্তা বানিয়ে আনলো।সবাই মিলে সন্ধ্যার নাস্তা খেলো।
পরদিন কলেজ গেইটে পা রাখতেই পিছন থেকে উল্লাস ডাক দিলো।
-মিষ্টি আমার কথাটা একটু শুনো।
তরী পিছন ফিরে তাকিয়ে ভিতরে চলে গেলো।
তিনটে বাজতেই বেড়িয়ে এসে দেখে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে উল্লাস।ফর্সা চেহারা রোদের তাপে লাল হয়ে গেছে।শার্ট ঘামে ভিজে একাকার।
নিরীহ মানুষের মতো তাকালো তরীর দিকে।নীলা তরীকে বললো।
-ছেলেটা তোকে প্রতিদিন বিরক্ত করবে।তুই এক কাজ কর ছেলেটার সাথে কথা বল।
-আমি কথা বলবো না।
-প্লিজ তরী। এটা মহিলা কলেজ একটা ছেলে যদি এভাবে তোকে ডিস্টার্ব করে।কারো নজরে পরলে কি হবে ভেবেছিস।
তরী ভয় পেয়ে যায়।
-তুই আমার সাথে চল।
-আমি এখানে আছি। তুই ওইদিকে যা কথা বলে আয়।
তরী কলেজের পিছনের দিকে গেলে উল্লাস ওর পেছন পেছন যায়।
-মিষ্টি আমাকে এভাবে ইগনোর কেনো করছো?
-আপনি অসভ্যের মতো কলেজ গেইটে কেনো দাঁড়িয়ে আছেন?
-তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।
-আপনাদের মতো মানুষের সাথে আমার কথা নেই।
-তুমি ভুল বুঝতেছো।আমি।খারাপ ছেলে না।
-রুমার মতো মহিলার পরিবারের লোক কেমন হবে আমি ভালো করে জানি।
-রুমা আন্টির সাথে তোমাদের মনমালিন্য থাকতে পারে।কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছো কেনো?
-আমি আপনাকে রিকুয়েষ্ট করছি প্লিজ আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।
-প্রমিজ আমি আর আসবো না কলেজের সামনে।তুমি আমাকে ফোন করবে কথা দাও।
-জীবনে ও না।
-তাহলে আমি এখানে রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকবো।
-আপনাদের কাজ অন্যের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।
-উফফ!মিষ্টি এভাবে কথা বলো না।
-কিভাবে বললো। আপনার রুমা আন্টি আমাদের জীবন শেষ করে দিয়েছেন।এবার আপনি এসেছেন আমাদের জীবনে নতুন ঝড় সৃষ্টি করতে।
-রুমা আন্টি কি করেছে আমি জানিনা। আমি তো কিছুদিন হলো দেশে এসেছি।আর পাশাপাশি থাকলে ঝগড়া হতেই পারে।
-ওই মহিলা ঝগড়া করেনি।আমার বাবাকে বিয়ে করে আমাদের বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছে।আমার মাকে স্বামী থাকতে বিধবা বানিয়েছে।
সেটা আপনি জানেন না।
-থামো, থামো, এসব কি বলছো?
-ন্যাকামি করেন।জানেন না, উনি আগের স্বামী কে ঠকিয়ে আমার বাবার সাথে পালিয়ে আসছেন।
-আমি এসব কি করে জানবো?
-এখন তো জানলেন।তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা কতটুকু।
-এতে আমার দোষ কোথায় মিষ্টি।
-আপনার দোষ আপনি ওই মহিলার আত্মীয়।
-প্লিজ আমাকে বুঝো।
-দয়া করে আর আমাদের জীবনে ঝামেলা বাড়াবেন না।
প্লিজ আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন।
তরী সেখান থেকে চলে আসলো।উল্লাস শুধু তরীর দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলার কিংবা পিছনে ডাকার সাহস নেই।
কেটে গেলো ১৫দিন সালমান এখন অনেকটাই সুস্থ।স্বপ্নার নামে করা ডিপিএসের টাকার মেয়াদ শেষ হয়েছে। টাকা তুলতে হবে রুমা মনে করিয়ে দিলো।
স্বপ্নার সাইন লাগবে। রুমা সালমানকে নিয়ে স্বপ্নার বাসায় গেলো।রিদ্ধ আর তরী টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়তে গেছে।সালমানের মা দরজা খুলে ওদের দেখে অবাক হলেন।
-তোমরা এখানে?
-মা ভিতরে আসো কথা আছে।
ড্রইংরুমে সোফায় বসে আছে ওরা।রুমা ছেলেকে কাজের মেয়ের কাছে রেখে আসছে।
-মা স্বপ্না ডাক দাও দরকার ছিলো।
-আমাকে বল।
-ওকে লাগবে মা।
-ও তোর সামনে আসবে না।
রুমা-সালমান উনাকে এখানে ডেকে লাভ নাই। তুমি মাকে দিয়ে সাইন করিয়ে নাও।
-কিসের সাইন?
-মা আমি, স্বপ্নার নামে একটা ডিপিএস করেছিলাম ১২বছর মেয়াদী ওইটা শেষ হয়েছে।এখন ওর সাইন লাগবে টাকা তুলতে হলে।
-তুই টাকা তুলবি কেনো?
-আমার টাকা আমি তুলবো না?
-স্বপ্নার নামে ওইটা স্বপ্নার টাকা।
-মা,আমার বিজনেস ভালো যাচ্ছে না।স্বপ্নাকে বলো সাইন করে দিতে আমার টাকা লাগবে।
-স্বপ্না সাইন করবে না।
-কিন্তু কেনো?
-ওইটা স্বপ্নার টাকা তাই।
-মা তুমি বাচ্চাদের মতো জেদ করছো।স্বপ্নাকে ডাক দাও।
স্বপ্না শুইয়ে ছিলো কারো কথা শুনা যাচ্ছে দেখে বাইরে আসলো।
রুমা আর সালমানকে দেখে অবাকই হলো।
রুমা-ওই যে স্বপ্না।সালমান কাগজ দাও আমি সাইন করিয়ে আনছি।
সালমান কাগজ এগিয়ে দিতেই সালমানের মা কাগজ নিয়ে নিলেন।
-তোরা এখন যা।
-মা তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।
-সালমান….একদম উঁচু গলায় কথা বলবি না।
-আমার টাকা আমি তুলবো তুমি বাঁধা দিচ্ছো কেনো।
স্বপ্না-মা কি হয়েছে।
-তোর নামে ব্যাংকে ডিপিএস ছিলো। ওইটার মেয়াদ শেষ হয়ছে কাল আমরা টাকা তুলতে যাবো তুই ভিতরে যা।
স্বপ্না রুমে যেতে গেলেই রুমা চেঁচিয়ে উঠে।
– সালমানের টাকা সালমান তুলবে।তুমি সাইন করে দাও।
-মা কি বললো তুমি শুনোনি।
-মা কি বললো সেটা বড় কথা না।তুমি সাইন করবে।
-তুমি কি জোর করছো আমার সাথে।
-হ্যাঁ আমার স্বামীর টাকা তুমি দখল করবে তা হয় না।
স্বপ্না এসে রুমার মুখের সামনে দাঁড়ালো।সালমানকে আড়াল করে যাতে সালমান ওর মুখ দেখতে না পায়।
-তুমি যে আমার আস্ত স্বামীকে দখল করলে তার বেলা।
– নির্লজ্জ মহিলা, টাকার জন্য রূপ পাল্টে দিলে।
-এই টাকায় আমার ছেলে মেয়েদের অধিকার। কোনো সস্তা বাজারের মেয়েদের না।
-তুই সস্তা , বাজারি মেয়ে।
ঠাসস করে দুইটা থাপ্পড় পরলো রুমার গালে।থাপ্পরগুলো স্বপ্না দিয়েছে।
-আমার দিকে আঙ্গুল তোলার আগে বুঝে শুনে তুলবি আঙ্গুল কেটে রেখে দিবো।
সালমান কে ভিক্ষা দিয়েছি বলে, তুই ভাবিস না আমি সব অধিকার ছেড়ে দিবো।
সালমান তোর মতো নষ্ট হয়ে গেছে তাই ছেড়ে দিয়েছি।
তুই আর সালমান এক।তোরা দুজনের অন্যের ইউজ করা জিনিস পছন্দ বেশি।আমাকে তোদের পাল্লায় মাপতে যাস না।
*সালমান তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
-এতো বড় সাহস তোমার।আমাকে এতো বাজে কথা বলো।
-আপনার মতো কুৎসিত মানুষের সাথে কথা বলার রুচিবোধ আমার নেই।এখন যেতে পারেন।
আর টাকা এই টাকার উপর আপনার অধিকার নেই।দীর্ঘ ১৮বছর আমি আপনার সেবা করেছি,ঘর সামলে এসেছি।এই টাকা না হয় বেতন হিসাবে নিলাম।
-স্ব সম্মানে চাইলে আমি তোমাকে দিতাম।নিজেকে তুচ্ছ করে টাকা নিচ্ছো।
-আপনার স্ত্রী হিসাবে ছিলাম এটা আমার জন্য অসম্মানের। এর চাইতে কাজের মেয়ে ছিলাম সম্মানের।
রুমা-এই থাপ্পড়ের বদলা আমি নিবো।
সালমান আর রুমা বেড়িয়ে গেলো।সালমানের মা এসে স্বপ্নাকে বসালেন।
-কি রে তুই এতো রাগী জানতাম না।
-মা আপনি রাগ করেননি তো।এতো খারাপ কথা আপনার ছেলেকে বলেছি।
-এগুলো তো অল্প আমি হলে থাপ্পড় সালমানের গালে দিতাম।
-আপনারা এতো ভালো কেনো মা।
-তুই ভালো তাই আমরা ভালো।
-টাকাগুলো দিয়ে দিতাম কিন্তু আপনি বাঁধা দিলেন।
-রুমা টাকার পাগল।ওর বাসায় যখন গিয়েছি পুরো বাসা জুড়ে দামি দামি জিনিসপত্র। ওর শরীরে সোনার গহনা মুড়ানো । পুরো আলমারি জুড়ে শাড়ি, ড্রেস সাজানো।১৮বছরে তুই যতো বিলাসিতা করিস নি মেয়েটা এক বছরের তার চাইতে বেশি করছে।
টাকাগুলো অযথা নষ্ট করবে সালমান।তোর কাছে থাকলে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে।
পরদিন স্বপ্না আর ওর শাশুড়ী মিলে গেলেন ব্যাংকে।সেখানে গিয়ে ১৫লক্ষ টাকা তুললেন।
রাস্তা দিয়ে আসার পথেই কয়েকটা ছেলে মিলে ওদের ব্যাগ ছিনিয়ে নিলো।ছেলেগুলো গাড়িতে উঠার সময় স্বপ্না স্পষ্ট রুমা কে দেখতে পায়।
চলবে
(আমি খুব বেশি অসুস্থ ছিলাম।দেরিতে দেয়ায় কেউ রাগ করবেন না)