সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৮

0
800

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া

তরী রুমে এসে হাঁপাচ্ছে, ভয় পেয়ে গেছিলো।ছেলেটা নিশ্চয়ই ওই মহিলার কিছু হবে।
স্বপ্না মেয়ের হাঁপানো দেখে জিজ্ঞাসা করে।
-হলো কি তোর?
-কিছু না মা।
-ভয় পেয়েছিস?
-নাহ!কিসের ভয়?
-হাত মুখ ধুইয়ে নাস্তা খেতে আয়।
-মা আমি ছাদে ফুল গাছে পানি দিয়ে আসি।পরে নাস্তা করবো।
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো। ছাদে গেলে তো তুমি আসতে চাও না।

ছাদের পরিবেশ বেশ সুন্দর। বড় ছাদে এক কোণায় দোলনা, এক পাশে ফুলের বাগান আর অন্যদিনে মায়ের সবজির বাগান।
ফুল গাছে পানি দিয়ে আসতে গেলেই কারো সাথে ধাক্কা খায়।এ কি!ওই ছেলেটা।
তরী পাশ কাটিয়ে আসতে গেলে ছেলেটা সামনে দাঁড়ায়।দু তিনবার এপাশ ওপাশ করতে গিয়ে তরী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-আপনি তো বোবা না তাহলে কিছু বলছেন না কেনো?
-আপনি সাইডে দাঁড়ান আমি নিচে যাবো।
– আশ্চর্য মানুষ আপনি, আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইছি, আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
-আমি আপনাকে চিনিনা বিধায় আপনার সাথে কথা বলার কোনো আগ্রহ আমার নেই।
-আপনাদের বাসার ছাদ আর আন্টিদের বাসার ছাদ এক। কিন্তু বাসা আলাদা এরকম কেনো?
-সেটা আপনার আন্টিকে জিজ্ঞাসা করেন।
বাই দ্যা ওয়ে গতকাল আন্টিদের বাসায় আপনাদের নিমন্ত্রণ ছিলো না?
-নাহ।
-পাশাপাশি বাসা তবুও আন্টি আপনাদের দাওয়াত দিলেন না।
-আমি যাই আপনি সাইড দিন।
-আপনি এমন কেনো বলুন তো?কথা বলতে চাইছি আপনি শুধু পালাচ্ছেন।
-আমার কাজ আছে।আর আপনার কথা শোনার সময় নেই।
-ওরে বাপ রে!! কি মেজাজ।

তরী ছুটে নিচে চলে গেলো।এখন তো ছাদে আসা ও যাবে দেখছি।
রিদ্ধ প্রাইভেট থেকে এসেছে হাতে গরম সিংগারা। এসেই মাকে বলছে আপু কোথায়?
তরী নিচে এসে দেখে রিদ্ধ দাঁড়িয়ে।
-আপু তোর প্রিয় গরম গরম সিংগারা।
-ওয়াও লাভ ইউ ভাই।
-পড়া না পারলে মাইর দিবি না কিন্তু।

রিদ্ধ অনেকটা বড় হয়ে গেছে তবুও তরী পড়া না পারলে মাইর দেয়।
-সকাল সকাল তেলে বাজা জিনিস খা আর পেটে গ্যাসের বাসা বানা তোরা।
-কি করবো মা দোকানদার গরম গরম তেল থেকে তুলছিলে তখনি তোমার সিংগারা পাগল মেয়ের কথা মনে হলো নিয়ে আসলাম।
-এই না হলে আমার ভাই, আমি এখুনি হাত মুখ ধুইয়ে আসছি।
তরী হাতমুখ ধুইয়ে খেয়ে নিলো।তারপর দুজন মিলে রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেলো।
একটা রিকশা করে দুজন যাচ্ছে তরী, রিদ্ধকে স্কুলে নামিয়ে দিলো।
একটু পর খেয়াল করে দেখলো পিছনে বাইকে করে অই ছেলে আসছে বাইকের পিছনে বসা।
তরীর গলা শুকিয়ে গেলো ড্রাইভারকে দ্রুত চালাতে বলে। ছেলেটা বাইকের পিছনে সাথে আরেকটা ছেলে ড্রাইভ করছে।
কলেজ গেইটে এসে তাড়াহুড়ো করে পা চালাতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়লো।
ছেলেটা বাইক থেকে এসে হাত বাড়িয়ে দেয়।তরী হাত না ধরে উঠে হাঁটা ধরলো।
পুরো ক্লাসে মন বসছে না, কে এই ছেলে কেনো এমন করছে। রুমার কোনো প্লান নয়তো।
ক্লাস শেষ করে বাইরে এসে দেখে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু বাইক নেই।
আবার গেইটের ভিতর চলে গেলে।ওর বান্ধবী নীলাকে ডাক দিলো।
-আজ তোদের গাড়িতে এসেছিস তুই?
-হ্যাঁ।
-আমাকে পৌঁছে দিবি মাথা ঝিমঝিম করছে।
-চল তাহলে একসাথে যাই।অনেক দিন একসাথে যাওয়া হয় না।

গাড়িতে উঠে বারবার পিছনে তাকাচ্ছে তরী।নাহ ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে না।
-তরী কোনো সমস্যা?
-আসলে।
-কি?
-একটা ছেলে আমাকে ফলো করছে।
-ওহ মাই গড! এজন্য তুই আজ আমার গাড়িতে আসলি।আমাকে দেখাতি নাকে মুখে থাপ্পড় বসিয়ে দিতাম।আমাদের কলেজের কেউ?
-নাহ রে ছেলেটা আমার পাশের বাসার।
-কি বলছিস!তুই বাড়িতে জানাসনি?
-আজ সকাল থেকেই দেখছি।
-তুই আন্টিকে বলে দিস বাবা এখনকার ছেলেদের বিশ্বাস নেই। কখন কি করে বসবে।

গল্প করতে করতে দুজন বাসায় চলে আসলো।তরীকে নামিয়ে নীলা চলে গেলো।
গেইট দিয়ে ঢুকতেই একটা কাগজের টুকরো এসে পরলো তরীর মাথায়।
উপরে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা কাগজ তুলতে বলছে।না তুলে উপায় নেই রিদ্ধের হাতে গেলে যাচ্ছেতাই কান্ড হয়ে যাবে।
কাগজ তুলে ছুটে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।
হাই মিস,
আমি উল্লাস। আপনার নাম জানিনা, কিন্তু আপনার নাম আমি দিয়েছি মিষ্টি। সো মিষ্টি আপনি দেখতে সাদা মিষ্টির মতো।আমি আমেরিকা থেকে এসেছি ৩সপ্তাহের জন্য।
আন্টির বাসায় প্রথম আসলাম। আপনাকে দেখেই ভালো লেগেছে।আপনি কথা বলার কোনো সুযোগ দিচ্ছেন না।তাই চিঠি দিতে বাধ্য হলাম।আর হ্যাঁ আপনার চুলগুলো অনেক সুন্দর। চুলগুলো কাটবেন না প্লিজ। কোমর অবধি চুলগুলো লম্বা করবেন।
আর এইটা আমার ফোন নাম্বার আর দুই সপ্তাহ বাংলাদেশে আছি।প্লিজ একবার কল দিয়েন।ভালো থাকবেন, সব সময় মুখ গোমড়া রাখবেন না।আমার ব্যবহারে কষ্ট পেলে সরি।আজ আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
আবার দেখা হবে

তরী চিঠি ছিঁড়ে কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দিলো।রুমার কোনো আত্মীয় ভালো হতে পারে না, সবাই স্বার্থপর।

কেটে গেলো আরো কিছুদিন। আজ স্বপ্না টেইলারের কাছে যাচ্ছে কিছু জামা বানাতে হবে তরী আর নিজের জন্য।
টেইলারের দোকানে ঢুকতে গিয়েই ধাক্কা খেলো সালমানের সাথে।সালমানের মুখ দেখা মাত্রই নিজের মুখ ঢেকে ভিতরে চলে গেলো।
পুরনো ক্ষত জেগে উঠতেই চোখ জ্বালা করছে স্বপ্নার।এই টেইলারে স্বপ্নার জামা নিতে আসতো সালমান। আজ রুমার জামা নিয়ে যাচ্ছে।
কিছুদূরে গিয়ে সালমান পিছন ফিরে তাকাই।আবছা যতোটুকু দেখেছে স্বপ্না খুব শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচ খুব কালো হয়ে গেছে।ও কি ভালো নেই।আমাকে ছাড়া অবশ্য ভালো থাকার কথা না।।স্বার্থপর মহিলা কি হতো যদি আমার সাথে রুমাকে মেনে নিতো।
একটা পুরুষ দুই বউ নিয়ে সংসার করে না।

স্বপ্না কাপড় দিয়ে রিকশায় উঠলো। সালমান আগের চাইতে হ্যান্ডসাম হয়েছে।হবেই না কেনো কত সুন্দর স্টাইলিশ বউ পেয়েছে।

স্বপ্না বাসায় ফিরে আসে।কিছুক্ষণ পর ওই বাড়ি থেকে রুমার চিৎকার কানে আসছে।দৌঁড়ে বেড়িয়ে গেলেন সালমানের বাবা। গিয়ে জানতে পারলেন সালমান এক্সিডেন্ট করেছে।
হাসপাতালে আছে খুবই খারাপ অবস্থা।যত হোক নিজের ছেলে তো কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো।
উনি রুমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন।বাঁ হাতের কনুইয়ের উপর ভেঙ্গে গেছে।মাথায় আঘাত গুরুতর।
ডাক্তার বলেছে কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে।জ্ঞান ফেরার পর মুখ ফসকে স্বপ্নার নাম বেড়িয়ে আসে।চমকে যায় রুমা পাশে থাকা ওর বাবাও।

রুমা কি তবে সালমানের মোহ।ভালোবাসার জায়গা এখনো স্বপ্নার জন্য বরাদ্দ।এসব ভাবনার মধ্যে সালমানের ডাকে ঘোর কাটে ওর বাবার।
১সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর বাসায় ফিরে ও।ফেরার পথে বাবার হাত ধরে অনুরোধ করে।
-বাবা প্লিজ মাকে নিয়ে এসো কিছুদিন আমার কাছে থেকে যাও।
-তা হয় না, তোকে দেখতে যাবো।
-বাবা আমি তো তোমার নিজের সন্তান অন্যের সন্তানের জন্য এতো করছো কেনো।
-স্বপ্না অন্যের সন্তান তাই না রে।স্বপ্না ওর বাপ মায়ের কাছে ১৬বছর ছিলো আর আমাদের কাছে ১৯বছর ধরে আছে।
ওর বাবা মায়ের চাইতে আমরা ওর বেশিই আপন।মেয়েটা আজ পর্যন্ত বাবার বাড়ি যায়নি।কিছু মুখ ফুটে বলতে হয় না সময়মতো সব পেয়ে যাই।

রুমা-বাবা আপনি আমাদের কাছে এসে থাকুন।আমি অনেক সেবা করবো আপনাদের।
-পারবো না গো।বিকেলে সালমানের মাকে নিয়ে আসবো ছেলেকে দেখতে।

রিদ্ধ হাসপাতালে গিয়েছিলো আড়াল থেকে বাবাকে দেখে এসেছে। স্বপ্না যতো হোক নামাজে বসে সালমানের জন্য দোয়া করেছে।
বিকেলে স্বপ্নার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সালমানকে দেখতে গেলেন ওনারা।
স্বপ্না উনাদের বিদায় দিয়ে ভাবছে উনারা হয়তো আর ফিরবেন না।নিজের ছেলের এই অবস্থায় কি ফিরতে মন চাইবে।

চলবে
(দুঃখিত আমি খুব অসুস্থ তাই পর্বটা ছোট হয়ে গেছে,ঠিকমতো সাজাতে পারিনি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here