সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৫

0
845

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া

এইতো সেদিন সালমান কোম্পানির নতুন একটা অর্ডার পায়।কোম্পানির জন্য বিশাল কিছু। বাড়িতে ফেরার পথে কেক নিয়ে আসলো।সবাই মিলে সেলিব্রেট করে বাইরে গিয়ে ডিনার করলো।
বাচ্চারা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সালমান কালো জামদানী শাড়িটা স্বপ্নার হাতে তুলে দিলো।
যাও শাড়ি পরে আসো দেখি তোমায় কেমন লাগে।
-এই বয়সে এতো ঢং! বুড়ো হয়ে গেছি তো।
-আমার চোখে স্বপ্না রাণী কখনোই বুড়ো হবে না।
-জানো খুব ইচ্ছে করছে আমার মা-বাবা কে এখানে নিয়ে আসতে।উনাদের দেখাতে যে উনাদের মেয়ে এই মানুষটার হাত ধরে ভুল করেনি।
-চলো না আমরা একদিন মা-বাবার কাছে গিয়ে মাফ চাই।
-সেটা হবার না সালমান।মা-বাবা আমাকে মৃত ঘোষণা করছেন।
-দূর পাগল আমরা ভুল করেছি আমরা গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
-গেলাম তো অনেকবার বাড়ির গেইটে দারোয়ান দিয়ে আটকে দিলেন।
-আচ্ছা পাগলি এবার যাও শাড়ি পরে আসো।খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

স্বপ্না শাড়ি পাল্টে নতুন শাড়ি পরে আসলো।
-চোখ বন্ধ করো তো।
স্বপ্না চোখ বন্ধ করতেই সালমান টিপের পাতা থেকে একটা কালো টিপ পরিয়ে দিলো।
আয়নার সামনে স্বপ্নাকে দাঁড় করিয়ে বললো।
-দেখো কত সুন্দর লাগছে তোমায়।

চোখমুখে খুশির ঝলক! স্বপ্না, সালমানের বাহুডোরে নিজেকে আবদ্ধ করলো।

মাঝরাতে কল্পনায় ডুবে ছিলো স্বপ্না। বারান্দার ইজি চেয়ারে বসে এসব ভাবছিলো।পিছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘোর কাটলো।
তরী এসে মায়ের কাঁধে হাত রাখলো।চোখের জল মুছে স্বপ্না মেয়ের হাতের উপর হাত রাখলো।
তরী মায়ের হাটুতে মাথা গুছলো।
-মা এমন কেনো হলো?
-নিয়তি সব।
-মা তুমি কি কখনোই বাবাকে ক্ষমা করবে না?
-তুই কি চাস তোর মা আবার ঠকবে?
-মা আমি যে বাবার পাশে অন্য কাউকে মেনে নিতে পারিনা।
-তোর বাবার পাশে আমাকে মানাচ্ছেনা।

স্বপ্না আর কথা বাড়ালো না।মেয়েকে রুমে নিয়ে আসলো। মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতেই তরী ঘুমিয়ে যায়।
স্বপ্না ও মেয়ের পাশে ঘুমিয়ে আছে।এখন আর নিজের ঘরে যেতে ইচ্ছে করে না।সালমানের স্মৃতি বড্ড যন্ত্রণা দেয়।

পরদিন আবার চলছে সব দুপুর নাগাদ কারো হাঁকডাক শুনে সবাই বাইরে আসে।
একি স্বপ্নার বাপ ভাইয়েরা এতো দিন পর।
– শুউয়ের বাচ্চা বাইরে আয়।আমি ছোট্র মেয়েটাকে ভুলিয়ে নিয়ে আসছিলো।এখন আমার মেয়েকে কষ্ট দিয়ে তুই অন্য মেয়ে নিয়ে সংসার করবি।

সালমান আর রুমে বাইরে আসে।অবস্থা বেগতিক দেখে স্বপ্না ছুটে ভাইদের কাছে।
তপন-স্বপন প্লিজ ঝামেলা করিস না।তোরা কেনো এসেছিস আমি তো তোদের কাছে মৃত।
-আপু তুই আমাদের একমাত্র বোন।বাবা এখনো এক খন্ড জায়গা কিনলে তোর নাম দেয়।রাগ অভিমানের পাল্লা ভারি হওয়ায় বাবা তোকে মেনে নেয়নি।কিন্তু তোর কষ্টের কথা শুনে একমুহূর্ত অপেক্ষা করেনি।
এতোদিন আমাদের জানালি না আজ বাবা জানলেন নিজাম ভাইয়ের কাছ থেকে।

-তোরা ভিতরে এসে বস।
স্বপ্না বাবা বলে ডাকতেই তেজস্ক্রিয় লোকটা গলে চোখের জল মুছছে।মেয়ের মুখ থেকে কতদিন পর বাবা ডাক শুনলেন।
বুকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
-বাবা ভিতরে আসো।

উনারা এক পা এগিয়ে দিতেই সালমান চিৎকার করে উঠলো।
-আমার বাড়ির আঙ্গিনায় আর এক পা দিবেন না।
অনেকবার আপনার বাড়ির গেইট থেকে আমরা ফিরে এসেছি।
স্বপ্না ঘোমটা টেনে বলে উঠলো।
-আমার বাবা ভাইয়েরা আমার ঘরে আসবে এতো কারো সমস্যার কথা না।

রুমা-এই বাড়ি কি সালমান তোমার নামে করে দিয়েছে।সালমান ওদের এখানে আসতে দিও না।

তপন গর্জন করে উঠলো তোর মতো নষ্ট মেয়ের সাথে আমরা কথা বলতে আসিনি।
রুমাকে নষ্ট বলতেই সালমান তেড়ে আসলো তপনের দিকে।
এক পর্যায়ে হাতাহাতি অবস্থায় চলে গেলো।তপন আর স্বপন মিলে আচ্ছামত ধোলাই করলো সালমান কে।
রুমা পুলিশকে ফোন দিয়েছে পুলিশ এসে তপন আর স্বপনকে থানায় নিয়ে যায়।রুমা সালমানকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এরমধ্যেই স্কুল থেকে আসে রিদ্ধ। কলেজ থেকে আসে তরী।
মাকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে অস্থির হয়ে পরে ওরা।সব জেনে কি করবে বুঝতে পারছেনা। বাবার কাছে যাবে কিন্তু কোন হাসপাতালে।
তপন স্বপনকে বিকেলে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে।তবে ওরা সালমানের নামে কেইস করেছে সালমান স্বপ্নাকে নির্যাতন করতো,ওর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।

হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয় সালমানকে।মাথা কেটে গেছে শরীরে অনেক কিল ঘুষির দাগ পরে আছে।
রিদ্ধ আর তরী বাবাকে দেখতে যায়।
-কি এখানে কেনো?তোমাদের মা তো গুন্ডা ভাড়া করে এনে উনাকে মার খাইয়েছে।

রিদ্ধ-আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছা নেই।
তরী-বাবা কেমন লাগছে এখন?
-তোর মা ঠিক করলো না এইটা।
-মা কিছুই জানতেন না।এমনটা মা চাননি।
-তোর মা এতো রাগ পুষে ছিলো ছিঃ ছিঃ।

রিদ্ধ-যদি ও মা কিছুই করেননি।তবুও আমি বলবো যদি এইটা করতেন তাহলে বেশ করতেন।
-তুমি এই মুহুর্তে বেড়িয়ে যাও রিদ্ধ।

রিদ্ধ আর তরী বের হতেই পুলিশ আসে।
মিঃ সালমান আপনাকে এরেস্ট করা হলো নারী নির্যাতনের মামলায়।আপনার প্রথম স্ত্রীর ভাই মামলা করেছে।
সালমান রিদ্ধ আর তরীর দিকে তাকিয়ে বলে -এখনো বলবি তোদের মা কিছুই জানতো না।
আমি ফিরে এসে এর শেষ দেখে ছাড়বো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here