সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৪০

0
591

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৪০
সালমান খুব অসহায় হয়ে রিদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।
-এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো?
-জীবন কত সহজে শেষ হয়ে গেলো। চাইলে জীবন অন্যরকম হতে পারতো কিন্তু হলো না।
-বাবা আপনার মনে আছে,সেদিন ওই রুমার কথায় কতগুলো মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলেন আমার মায়ের নামে।
-সব মনে আছে বাবা,তাই হয়তো আল্লাহ আমাকে এতো শাস্তি দিচ্ছেন।
-আজ আপনি খুন না করে ও খুনি।
-প্রকৃতির প্রতিশোধ এটাই।
-বাবা আপনি ঘুমানোর ট্রাই করুন।আমাকে এখন যেতে হবে সময় শেষ।
-একটা কথা দিয়ে যা।
-কি?
-তোর মাকে একবার নিয়ে আসবি শুধু একবার।
-চেষ্টা করবো।
-আমি জানি মৃত্যু পদযাত্রীদের উপর কেউ রাগ করে থাকতে পারে না।

রিদ্ধ বেড়িয়ে আসলো কেবিন থেকে।করিডোরে এসে হাত দিয়ে মুখ গুজে কান্না করছে।খারাপ হোক ভালো হোক তবু তো বাবা।
প্রথম বুলি ফুটেছিলো বাবা ডেকে।
প্রথম হাঁটা বাবার হাত ধরেই শিখেছিলাম।
প্রথম দিন বাবার কাঁধে করে স্কুলে গিয়েছিলাম।স্কুল ব্যাগ থাকতো বাবার কাঁধে আমি হাত ধরে মনের সুখে হাটতাম।
প্রতিদিন বাবা ফেরার পথে চকলেট নিয়ে এসে লুকিয়ে রাখতেন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলে আদর করে চকলেট হাতে দিতেন।
আজ সেই ভালো বাবা কত সহজে খারাপ হয়ে গেলো।

রিদ্ধের মাথায় কেউ হাত রাখতেই রিদ্ধ তাকিয়ে দেখে ওর ছোট মামা স্বপন।
-খারাপ লাগছে বাবার জন্য?
-এতোদিন কত কথা শুনিয়েছি তখন বাবা স্ট্রং ছিলেন।আজ এই অসহায় বাবার দিকে তাকিয়ে কিছুই বলতে পারলাম না।
-চল বাসায়।

রিদ্ধকে নিয়ে স্বপন বাসায় যাচ্ছে।দুপুর থেকে স্বপ্না অনেকবার বাইরে তাকাচ্ছে ওরা আসছে না।তরী ঘরে চুপ করে বসে আছে।এখন আগের মতো এতো দূর্বল হয়ে পরে না।নিজেকে যথেষ্ঠ সামলে নিয়েছে।
রিদ্ধ এসে ধপ করেই সোফায় বসে পরলো।স্বপন গিয়ে এল গ্লাস নিয়ে আসলো।স্বপ্না ছুটে আসে রিদ্ধের কাছে।
-তোর বাবার কি অবস্থা,ঠিক আছেন তিনি?
-হুম
-কি,রে কি হয়েছে বল?
-আপা আসলে দুলাভাইয়ের খাদ্যনালীতে ক্যান্সার ধরা পরছে।
-কি?
-হ্যা আপু লাস্ট স্টেইজ।বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব না।
-চোখের সামনে একটা তরতাজা মানুষ মরে যাবে?
-কিছুতেই কিছু করা যাচ্ছে না আপা।
-তোরা কি বলছিস এসব।

তরী ছুটে আসলো।
-ভাই, বাবা ঠিক আছেন তো?
-হ্যা।
-তোদের এমন মন মরা লাগছে কেনো?

তরীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রিদ্ধ মাকে বলতে শুরু করলো।
-আমার একটা কথা রাখবে মা?
-কি কথা?
-তুমি জানো মা আমি অযথা কিছু বলি না।
-বল কি বলবি?
-মা একবার বাবার সাথে দেখা করবে?
-আমি কিন্তু কেনো?
-মা শেষসময়ে কি ক্ষমা করে দিতে পারো না।মানুষটা অনেক কষ্ট পেয়েছে হয়তো এসব পাওনা ছিলো।একবার শুধু তোমার কাছে ক্ষমা চাইবেন। প্লিজ মা আমার এই কথাটা ফেলে দিও না।

তরী-ভাই এসব কি বলছিস তুই।শেষসময় মানে আমার বাবা কি আর বাঁচবেন না?
-আপু বাবার ক্যান্সার লাস্ট স্টেইজ।
-কি?
-আপু প্লিজ তুই শান্ত হো।তোর কিছু হয়ে গেলে আমাদের কি হবে।
তরী কিছুক্ষণ চিল্লিয়ে কান্না করে রুমে চলে গেলো।স্বপ্না জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

এই রুমের এই জানালা আমাদের কত প্রিয় ছিলো।দুজন মিলে বাইরে চাঁদের আলো দেখতাম এই জানালা দিয়ে।
মন খারাপ হলে বাইরে তাকিয়ে থাকতাম। তুমি এসে হাতটা ধরলেই আমার মন ভালো হয়ে যেতো।

সেই তুমি নাকি চিরতরে বিদায় নিবে এই পৃথিবী থেকে।আমার না থাকো তবুও তো ছিলে। আমি তো জানতাম তুমি পৃথিবীর অস্তিত্বে আছো।
আমার তো ইচ্ছে ছিলো বৃদ্ধ বয়সে শেষ সময় আসলে আমি লাঠি ভর দিয়ে তোমার মাথার কাছে বসে থাকবো।তখন আমি ও তোমার মতো বুড়ো হয়ে যাবো।তবুও তোমার যত্নের কমতি করবো না।
স্বপ্নার স্বপ্ন কেবলই স্বপ্ন থেকে গেলো।তোমার এই অসময়ে তোমার পাশে একবার গিয়ে বসতে আমার সংকোচ হচ্ছে।
আমি বলেছিলাম তুমি আমার কাছে মৃত।তবুও সাদা শাড়ির জড়াতে হয়নি।
আজ যখন ভাবছি আমি সাদা থান জড়িয়ে রাখবো বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
তরী আসলো মায়ের কাছে।
-মা তুমি কি একবার যাবে না বাবার কাছে?
-আমি কি করবো আমি তো নিজেই জানিনা।
-তোমার ভালো যা মনে হয় তাই করো।

তরী চলে গেলো মায়ের কাছ থেকে। প্রাইভেট পড়তে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।তবুও ঘরে বসে না থেকে প্রাইভেটে চলে গেলো।
তরী প্রাইভেট থেকে আনমনে আসছিলো হেটে হেটে।ওর সামনে এসে হিমেলের গাড়ি থামলো।
আকস্মিক গাড়ি থামায় তরী কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
হিমেল নেমে আসতে তরী সামনের দিকে এগুতে লাগলো।
-কি হচ্ছে তুমি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো?
-আমার তাড়া আছে।
-আমার কথা আছে তরী।
-আমি এখন যাবো।
-প্লিজ ৫টা মিনিট সময় দাও।
-বলুন।
-গাড়িতে উঠে বসবে প্লিজ?একটু সামনে যাবো।
-দেখুন আমার মা যা বলার বলে দিয়েছেন।আপনি রাস্তায় সিনক্রিয়েট করবেন না।
-হোয়াট আমি সিনক্রিয়েট করছি?এতো ভদ্রভাবে বলার পর সিনক্রিয়েট মনে হচ্ছে?
-আপনি চিল্লিয়ে কথা বলছেন কেনো?
-এই মেয়ে এই এতো ভাব কিসের?
-আপনি অভদ্রের মতো কথা বলছেন কেনো?
-আমি অভদ্র তোরা কি হ্যা।তোর মা সেদিন আমার মমকে উসকিয়ে দিয়ে বাসা ছাড়তে বাধ্য করে দিয়েছে।তুই আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছিস।তোর জন্য আমি একটা রাত ঘুমাতে পারছিনা।

তরী আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকে সার্কাস দেখার মতো তাকিয়ে আছে।
কেউ কেউ ভিডিও করছে।
-এই মেয়ে তুই দু পয়সার মেয়ে।আমার পাশে দাঁড়ানোর কি যোগ্যতা আছে তোর।তবুও তোর ইনোসেন্ট চেহারা দেখে তোর বাপের কুকর্ম সব মেনে রাজি হয়েছিলাম।আর তুই আর তোর মা মিলে আমাদের পুরো পরিবারকে লণ্ডভণ্ড করে দিলি।
-এনাফ আপনি এতোক্ষণ ধরে বাজে বলে যাচ্ছেন।কোন সাহসে আমার মাকে কথা শুনাচ্ছেন।এতো সাহস আপনার।থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিবো সব।
নিজের মাকে সম্মান দিতে জানে না।আবার অন্যের মাকে নাকি সম্মান দিবে।আপনার মতো মানুষের কাছ থেকে সম্মান আশা করা বোকামি।
নিজের মা জানেন মা মানে কি?ওই মহিলা দশ মাস পেটে রেখেছে রক্ত খেয়ে বেড়ে উঠেছেন আপনি। আর উনাকে মা না বলে মম ডাকেন।আরে নিজের মায়ের কোলে একবার মাথা রেখে শুইয়ে দেখুন পাহাড় সমান কষ্ট চলে যায়।
আমি আর আমার মা আপনার পরিবার নষ্ট করিনি।বরং আপনার মাকে উনার প্রাপ্য সম্মান দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।কিন্তু আপনারা তো সঠিক জিনিসের মূল্য দিতে জানেন না।

হিমেল,তরীর কথায় বোকার মতো তাকিয়ে আছে।তরী এতো কথা বলে হাঁপিয়ে উঠছে।
হিমেলের ফোন বেজে উঠলো।
-বাবা তুই কোথায়?
-এইতো বড় মা রাস্তায়।
-তাড়াতাড়ি আয় তোর বাবা কেমন করছেন।
-বাবার কি হয়েছে?
-তুই তাড়াতাড়ি আয়।
হিমেলে তরীর সামন থেকে ছুটে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।হাসপাতালে গিয়ে দেখে ওর বাবা আই,সি,ইউতে।
-বড় মা,বাবা তো দিব্যি ভালো ছিলেন।হুট করে কি হলো বাবার?
-কি জানি, ডাক্তার ভিতরে আছেন কিছুই বলেন নি।

চেকাপ করার পর ডাক্তার বাইরে আসলো।
-আমাদের জানামতে হাসান সাহেব একজন ডাক্তার।উনার তো এতো বড় ভুল হবার কথা না।
-কি হয়েছে ডাক্তার।
-উনি প্রায় অনেকদিন থেকে ভুল ওষুধ খাচ্ছেন।সময়ের ওষুধ সময় মতো খাননি।ডায়বেটিস, হার্টের রোগী এতো বড় ভুল করে নিজের জীবনকে বিপদে টেলে দিলেন।
-বাবা কি হয়েছে বলুন না?
-উনি কোমায় চলে গেছেন।

সবাই একসাথে শকড হয়ে চেয়ারে বসে রইলো।রুবি ভাবছে অরু যাওয়ার পর থেকে ও হাসানকে ওষুধ দিতো।প্রেসক্রিপশন দেখেনি কিভাবে খাওয়া। হাসান দেখিয়েছিলো তবে কি দেখায় ভুল ছিলো।

  • চলবে<

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here