সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৪

0
880

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া

তরীর অবস্থা খারাপ এদিকে ডাক্তার ফোন ধরছেনা।রিদ্ধ ছুটে গিয়ে ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বললো।
-বড় স্যার কি বের হবেন?
-নাহ আমি আপুকে নিয়ে হাসপাতালে যাবো।
-বড় স্যার যদি রাগ করেন?
-এতো কথা বলছেন কেনো গাড়ি বের করুন।
তখনি সেজেগুজে বাইরে আসলো রুমা।
-ড্রাইভার গাড়ি বের করো পার্টিতে যাবো।
-কিন্তু ছোট ম্যাডাম রিদ্ধ বাবা বললেন তরী মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাবেন।
-রিদ্ধ বাবা কি হয়েছে তরীর?
-কিছুনা।
-ড্রাইভার আপনি তাড়াতাড়ি আমার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যান আমাদের পার্টিতে যাওয়ার দরকার নেই।সালমান তাড়াতাড়ি বাইরে আসো তোমার মেয়ের কি জানি হয়েছে।

সালমান বাইরে আসে।
-রিদ্ধ কি হয়েছে তরীর?
– মাথাব্যথা।
-আবার সেই মাথাব্যথা।
ওকে নিয়ে আয় আমি গাড়িতে বসছি।
-আপু অজ্ঞান হয়ে গেছে।

সালমান ছুটে গিয়ে তরীকে কোলে নিয়ে বাইরে চলে আসে।স্বপ্না আড়াল থেকে দেখছে কি দরকার এই মিছে মায়ার।আজ মেয়েটার এই অবস্থার জন্য তো সালমান সাহেব আপনি নিজেই দায়ী।

গাড়িতে বসে সালমান, রিদ্ধকে বলে স্বপ্না কি যাবে না?
-নাহ।
-ড্রাইভার চলো।

তরীকে হাসপাতালে নেয়া হলো।ডাক্তার চেকাপ করে ওষুধ দিলো অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মেয়েটার মাথায় চাপ সৃষ্টি হয়।একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।সাথে ডাক্তার এটা ও বলে দিলো যাতে তরী কখনোই বেশি আপসেট না হয়।ব্রেন কে পুরোপুরি ফ্রেশ রাখতে হবে না হলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে।

তরীকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।স্বপ্না সারাক্ষণ মেয়ের কাছেই আছেন। এ বাসা আজ রান্না হয়নি। রিহান ছুটে গিয়েছে বাবার কাছে।
-বাবা তুমি কাল আমাদের সাথে ঘুমালে না কেনো?
-নাহ আসলে বাবা…
-বাবা তুমি আমাকে চকলেট দিবে না?
-এই তো দিচ্ছি বাবা।

তখনি রুমা আসে -এখন তো চকলেট খাওয়া যাবে না।
-আমি চকলেট খাবো।
-নাহ বাবা তুমি এখন ভাত খাবে।আসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
-আমি আপুনি হাতে খাবো।
-আজকে তো তোমার আপুনি অসুস্থ। কাল যখন সুস্থ হবে তখন খাবে ঠিক আছে।
-আচ্ছা।

রুমা গিয়ে ভাত মাখিয়ে নিয়ে আসে।রিহান বাবার কোলে বসে আছে।
ছোট ছোট লোকমা করে রিহানকে খাইয়ে দিলো রুমা।
-আচ্ছা সালমান আমার কি উচিত না একবার মেয়েটাকে দেখে আসা।
-নাহ রুমা এখন যাওয়ার দরকার নেই।স্বপ্না কিংবা রিদ্ধ রেগে যাবে।
-মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে।
-মন খারাপ করো না দোয়া করো।
-আচ্ছা আমি একটা কাজ করে ফেলছি।
-কি?
-আসলে..ওরা তো মেয়েকে নিয়ে টেনশনে আছে।রান্নাবান্না কিছু করেনি হয়তো, আমি আজ ওদের জন্য রান্ন করেছি।
-ওরা এসব খাবেনা রুমা।তুমি খামোকাই কষ্ট করলে।
-সালমান প্লিজ যাওনা ওদের দিয়ে আসো।
-রুমা ঠিক হবে না।
-প্লিজ সালমান একটু রাগারাগি করবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের মেনে নিতে হবে,আমরা তো ভুল করেছি।
-উফফ!!আচ্ছা দাও।

বাটিতে করে তিন রকম পদের তরকারি আর ভাত দিয়ে দিলো রুমা।
সালমানের সাথে রিহান ও গেলো।রিদ্ধ পড়ার টেবিলে ছিলো স্বপ্না নামাজ পড়ছিলো।

-রিদ্ধ আমি খাবার টেবিলে রেখে যাচ্ছি তোর মা আর তরীকে নিয়ে খেয়ে নিস।
-আপনার বাসার খাবার লাগবে না।
-অযথা জেদ করিস না রিদ্ধ খেয়ে নিস।
-রিহান কি? বারবার ওই মহিলার কাছে।
-ছোট মা আমাকে খাইয়ে দিয়েছে।

সালমান আর ছেলের সাথে তর্কে জড়ালো না। তরীর রুমে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।
তরী চোখ মেলে বাবা কে দেখে খুশি হলো।উঠে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
-বাবা তুমি তো আমাদের সেরা বাবা ছিলে কেনো এমন করলে।

সালমান হয়তো অনুতপ্ত আবার না ও হতে পারে।কথা পাল্টে মেয়েকে প্রশ্ন করলেন।
-তোর এখন কেমন লাগছে।
-ভালো বাবা।
-আর কখনোই কিছু নিয়ে টেনশন করিস না।
-আচ্ছা।
-টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিস।রুমা খুব ভালো রান্না করে।

রিদ্ধ এসেই কথাটা শুনতে পেলো।
-আমার মা বুঝি খারাপ রান্না করতেন।আমাদের কাছে তো কখনোই খারাপ মনে হয়নি।বেশ তৃপ্তি নিয়ে মায়ের হাতের রান্না খেতাম আর আপনি ও খেতেন।

সালমান কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলো।রিদ্ধ এসে বোনের পাশে বসলো।
-আপু মাথা ফ্রেশ লাগছে এখন?
-হ্যা ভালো লাগছে।
-খেয়ে নিবি চল।না এখানে খাবার নিয়ে আসবো?
-আমি যেতে পারবো।মা কোথায়?
-নামাজে।
-ওহ আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।

তরী উঠে মায়ের কাছে গেলো। তিনি তখন তসবিহ পড়ছিলেন তরী গিয়ে মায়ের গাঁ ঘেঁষে বসলো।
মেয়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে ফুঁ দিয়ে দিলেন। নামাজ শেষ করে রান্নাঘরে যেতে নিলেই রিদ্ধ ডেকে বললো।
-মা ওই বাসার মহিলা খাবার পাঠিয়েছেন।

স্বপ্না বেগম শুনে ও শুনলেন না।চুলায় ভাত বসিয়ে ডিম ভাজলেন।রিহান, তরীর কোলে মাথা রেখে শুইয়ে আছে।
তরী, রিহানকে ঘুম পাড়ানোর ট্রাই করছে।
আলু সেদ্ধ করে ভর্তা বানালেন।এই সময় ফ্রিজ থেকে মাছ বের করে রান্না করা সম্ভব না।

ওদের দেয়া খাবারগুলো টেবিলের এক পাশে রেখে দিলেন।আলু সেদ্ধ আর ডিম ভাজি দিয়েই ওর তিনজন খেয়ে নিলো।
সকালে খাবার গুলো বাইরে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো স্বপ্না।রুমা সেটা দেখলো।
বারান্দায় বসে কান্না করছে সালমান জানতে চাইলে কান্নার গতি বাড়িয়ে দিলো।
-আমি কি খুব খারাপ সালমান?
-কি হয়েছে?
-কাল কত শখ করে ওদের জন্য রান্না করে পাঠালাম।আজ স্বপ্না আপা সব ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন।
-এইটা তো স্বাভাবিক রুমা।ওরা এমন করবে সেটা জেনেই তো তুমি খাবার পাঠিয়েছিলে।

সালমানকে জড়িয়ে ধরে রুমা।
-আমার জন্য তোমার ছেলেমেয়ে তোমার কাছ থেকে দূরে সড়ে গেলো।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি রুমা তোমার কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না।প্লিজ কান্না থামাও।

মাস দুয়েক চলে গেলো সালমান বাজারহাট করে তরীদের বাসায় দিয়ে যায়।এখন আর সময় হয় না ছেলেমেয়েদের দেখতে আসার।
রিদ্ধের স্কুলের মাসিক ফি দিতে হবে। কিন্তু স্বপ্না কিংবা রিদ্ধ কেউই সালমানকে বলতে চাইছে না।
দু মাসের ফি জমা এবার না দিলে স্কুলে বকা খেতে হবে।তাই একমতো বাধ্য হয়েই সালমানের ফ্ল্যাটের কলিংবেল চাপলো।
রুমা এসে দরজা খুলে দিলো।
-আরে রিদ্ধ বাবা ভিতরে আসো।
-আপনার স্বামী বাসায় নেই?
-আছেন তো।ভিতরে এসে কথা বলো।
-উনাকে একটু দেখে দিন।
-সালমান একটু এদিকে আসো।

-রিদ্ধ আয় ভিতরে আয় না?
-নাহ একটা কাজে এসেছি।
-হ্যা বল কি কাজ।
-আমার স্কুলের দু মাসের ফি বাকি আছে।একটু যদি দিয়ে দিতেন।
-আমি কাল তোর স্কুলে গিয়ে ফি দিয়ে আসবো।একটু ভিতরে এসে বসে যা।
-কাকে তুমি বসতে বলছো গো।তোমার ছেলে এসে বলছে আমার স্বামী কোথায়।ও তো তোমাকে বাবাই বলে না।

রিদ্ধ কিছু বললো না চলে আসলো।দরজা বন্ধ করে রুমা বলতে লাগলো
-কি দরকার এতো ভালো স্কুলে পড়ানোর অযথাই টাকা মাটি।
-আমার ছেলে কোন স্কুলে পড়বে সেটা তোমাকে বলে দিতে হবে না।
রুমা ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলো।রিদ্ধ রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেলো।
-কি হয়েছে রিদ্ধ এমন রাগী মুখ করে আছিস?
-আমি ওই লোকের কোনো টাকা নিবো না।
-কার?
-সালমান সাহেবের।
-কি হয়েছে বল তো ভাই?

রিদ্ধ সবকিছু বললো।
-শোন তিনি আমাদের বাবা আর ওই মহিলা বাবার সেকেন্ড ওয়াইফ।বাবার উপর দাবী কার বেশি নিশ্চয়ই আমাদের।
এখন যদি আমরা সবকিছু বাদ দিয়ে বসে থাকি লাভ কার হবে ওই মহিলার।বাবার পুরো সম্পত্তি বাবার টাকা পয়সা একা ভোগ করবে।আমাদের অধিকার আমরা ছাড়বো কেনো।
-আমার ঘৃণা হয় আপু ওই লোকটার কিছু আমার চাই না।
-না চাইলে ও মেনে নিতে হবে তিনি আমাদের বাবা।বাবার কর্তব্য তো উনাকে পালন করতে হবে।

-আমাদের মা কে কষ্ট দিয়েছেন।
-ভাই তিনি ও কষ্ট পাবেন আজ নয়তো কাল। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।
-তুই কি বুঝাতে চাইছিস?
-আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার ছাড়বো না।মা ছেড়ে দিয়েছেন আমরা ছাড়লে চলবে না।
-ঠিক আছে তাই হবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here