#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৩৫
তরীকে স্বপ্না অনেক প্রশ্ন করলেন।মেয়ের কাছ থেকে শুনে মোটামুটি সিউর হিমেল ভালো ছেলে।
রিদ্ধকে ফোন করে স্বপ্না বলেন।
-তোর বাবাকে আগামি শুক্রবার আমাদের বাসায় থাকতে বলিস।
-কেনো মা?
-হিমেলদের বাড়ি থেকে লোকজন আসবে।
-তো ওই ভদ্রলোক কেনো আসবেন?
-বিয়ের ব্যাপারে মেয়ের বাপদের প্রাধান্য বেশি।
-যে কেলেঙ্কারি হয়েছিলো কিছুদিন আগে।যে কেউ উনাকে দেখে চিনে ফেলবে।
-তবুও তুই তোর বাবাকে বলিস আসার জন্য।
রিদ্ধ মায়ের উপর কিছু রাগ দেখালো।কিছুক্ষণ পর বাবাকে ফোন দিয়ে বললো শুক্রবারে ওদের বাসায় থাকার জন্য।
-কি জন্য বাবা?
-আপুর বিয়ের বিষয়ে কিছু লোক আসবে।
-এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার কি হলো?
-দাদু চাইছেন তাই।
-আচ্ছা আসবো।
**দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১সপ্তাহ। স্বপ্না এই সপ্তাহ জুড়ে ঘরদোর গুছানো, সবকিছু ঠিকঠাক করা সব করেছে।অসুস্থ কেউ ঘরে থাকলে সবদিক নজর দেয়া যায় না। তবুও স্বপ্না কোনো কিছুর ত্রুটি করেনি।
বৃহস্পতিবার থেকে রান্নার আয়োজন শুরু।হরেক রকম নাস্তা বানিয়েছে। গরু,খাসি,মোরগ সব রান্না করেছে।
প্রায় ২টার সময় ওরা আসলো।স্বপ্না, তরীকে শাড়ি পরে সাজিয়ে দিয়েছে।
রুবি,রুমেল,শিমুল,আর ওদের স্ত্রী সবাই এসেছে।হিমেল আর অরু ও এসেছে।
শুধু হাসান সাহেব হাসপাতালের ডিউটির জন্য আসতে পারেননি।
স্বপ্না সবার সাথে বেশ বিনয়ী আচরণ করছে।তরীকে ওদের সামনে নিয়ে আসতেই সবাই শকড।বিশেষ করে ভাবীরা, নিজেদের চাইতে দেবরের বউ বেশি সুন্দর মানতে কষ্ট হয়।
অরু-তরী আয় মা এখানে এসে বস।
তরী গিয়ে অরুনার পাশে বসলো,হিমেল আড়চোখে তাকাচ্ছে।
শাড়িতে একদম পরী লাগছে,চুল বেঁধে না রেখে খুলে দিলে আরো ভালো লাগতো।
রুবি-তুমি কোন ক্লাসে পড়াশোনা করছো?
-জ্বি আমি অনার্স প্রথম ফাস্ট ইয়ারে।
-বয়স তো অনেক কম।
তরী চুপচাপ বসে আছে।
কণিকা-একটু দাঁড়াও তো দেখি প্রিয়ন্তি আর আমার মতো লম্বা কিনা?
প্রিয়ন্তি হচ্ছে শিমুলের স্ত্রী,হিমেলের ছোট ভাবি।
তরী উঠে দাঁড়ালো ওরা দুজন মেপে দেখলো তরীর চাইতে খাটো।
-তুমি বোধহয় হিল পরেছো?
-না বড় আপু, আমি হিল পরিনি।
মুখ ফোটা হয়ে গেলো,প্রিয়ন্তি এসে হাত দেখলো।
-মুখ থেকে হাত একটু কালো।কোন ফাউন্ডেশন ইউজ করেছো?
-ক্রিম আর ফেস পাওডার দিয়েছি শুধু।
-নিশ্চয় ভালো ব্রান্ডের?
-কাছের একটা কসমেটিকস দোকান থেকে নেয়া।ব্রান্ড কি জানিনা ছোট আপু
ওরা আবারও মুখ কালো করে বসে রইলো।স্বপ্না নাস্তার ট্রে নিয়ে আসলো।
রুবি-এতোসব তুমি করেছো?
-জ্বি না আন্টি,আমার মা সব করেছেন।
-তুমি কি রান্নাবান্না কিছু পারো?
-অল্প কিছু।
স্বপ্না-আসলে আমার মেয়ে পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।তাই রান্নাবান্না তেমন শিখেনি।
অরু-আপা রান্নাবান্না শিখতে হবে না।আমাদের এই দুই ছেলের বউ এক কাপ চা বানাতে ও পারেনা।সব আমি আর কাজের মেয়ে করি।তরীকে আমি যতোটুকু শেখার শিখিয়ে দিবো।
কথাবার্তার মাঝে সালমান সাহেব আসলেন।তরী বাবাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
সবার সাথে গল্প করছে সালমান। স্বপ্না টেবিলে খাবার দিলো।
সালমান সবার সাথে বসে খাওয়াদাওয়া করলো।তরী আর রিদ্ধ সবার খেয়াল রাখলো।
সালমান কতদিন পর স্বপ্নার হাতের রান্না খাচ্ছে।তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে উঠলো।জরুরি কাজে বেশিক্ষণ বসতে পারলো না,ক্ষমা চেয়ে বেড়িয়ে গেলো।
সবাই স্বপ্নার রান্না খেয়ে প্রশংসা করলো।বিয়ের পাকা কথা আজ হবে না।রুবির বক্তব্য অনুযায়ী ছেলে পক্ষ এসে সব দেখেছে এবার মেয়ে পক্ষ যাবে।
স্বপ্না অনেকবার না করলো তবুও রুবি মানতে রাজি না।একদম তরীকে নিয়ে যেতে হবে।এখানে তরী বউ হিসাবে না আত্মীয় হয়ে যাবে।মূলত ওখানে নিয়ে কিছু একটা ঘটাবে।
কিন্তু ওর শাশুড়ী অসুস্থ মানুষ রেখে কি করে যাবে।স্বপ্না রুবিকে বুঝিয়ে না করলো।রুবি এবার বিয়ের কথাবার্তা শুরু করলো।
-দেখুন অরু বাচ্চাদের জন্ম দিয়েছে ঠিক।তবে বাচ্চাদের লালন-পালন ওদের খাবার দাবার আমি সব ঠিক করে দিতাম।
-ভালো তো আপু বাচ্চারা দুজন মা পেয়েছে।
-অরু তো বাচ্চা সামলাতে পারতো না।বাচ্চারা আমার কোলে আসলে একদম শান্ত হয়ে থাকতো।
-ওহ।
-রুমেল,শিমুল,তোহাকে আমিই বিয়ে দিয়েছি আমার পছন্দে।
এই যে কণিকা ও হচ্ছে চট্রগ্রাম শহরের বড় শিল্পপতি রুহুল সাহেবের একমাত্র মেয়ে,প্রিয়ন্তি কানাডা প্রবাসী ওর বাবা বড় গার্মেন্টস, ফোন কোম্পানির মালিক।আর তোহা ও তো আমেরিকা আছে বর নিয়ে।
-বেশ ভালো তো।
-হিমেল তো আমার পছন্দ ছাড়া বিয়েই করতে চাইতো না।অরু ছেলেকে ফোর্স করায় শেষমেশ রাজি হলো।
-হিমেল আমার সোনা ছেলে আমি পছন্দ করে দিলে তবেই কাপড় পরবে।
কোন ভার্সিটি কোন সাবজেক্ট সেটা ও আমার পছন্দ মতো হয়েছিলো।অরু একবার হিমেলের জন্য শার্ট কিনেছে কি বলবো ছেলে দেখে রেগে আগুন।শেষমেশ কাজের ছেলেকে ওই শার্ট দিয়ে দিলাম।ওর জন্য আমি নতুন কিনে আনলাম।
আবার রুমেলের জন্য কোথাকার বস্তির মেয়ে ধরে এনেছে বিয়ে দিবে। রুমেল রেগে গেলো আবার আমি কণিকাকে ঠিক করে রুমেলের সাথে বিয়ে দিলাম।
অরু একটু লজ্জায় পরে গেলো।সবার সামনে ওর অবস্থান সম্পর্কে অকপটে বলে দিচ্ছে রুবি।
স্বপ্না কিংবা তরীর কারো ভালো লাগছে না শুনতে।
স্বপ্না চুপ করে থাকতে পারলো না।হিমেলের দিকে তাকিয়ে বললো।
-বাবা মায়ের মনে কষ্ট দিতে নেই।তোমাকে দেখে তো মনে হয় না তুমি বেয়াদব ছেলে।
হিমেল মাথা নিচু করে রইলো।
রুমেল-আন্টি আমাদের একটা স্ট্যাটাস আছে সেটা বুঝতে হবে।আপনি আমার ভাইকে বেয়াদব বলতে পারেন না।
-বাবা তুমি ও এখন আমার সাথে বেয়াদবি করছো।
-আপনি তো বেশ ঝামেলা বাঁধানোর মানুষ।
-মায়েদের সবচেয়ে খারাপ লাগার জায়গা যখন ছেলেমেয়ে রেস্পেক্ট করে না।
-আমরা মম কে যথেষ্ট রেসপেক্ট করি।
-যদি করতে তবে আজকে মম না বলে মা ডাকতে।
রুবি-ওহ কাম অন স্বপ্না তুমি খুব ব্যাকডেটেড। মম তো মর্ডান ডাক।আমিই শিখিয়েছি মম ডাকা।
-মম যদি মর্ডান ডাক তবে আপনি কেনো শিখালেন না আপনাকে মম ডাকতে।
-তুমি কি বুঝাতে চাইছো।
-এটাই যে একজন মায়ের কাছ থেকে তিনটা ছেলেমেয়েকে আপনি সড়িয়ে রেখেছেন।যার জন্য নতুন আত্মীয়ের বাড়িতে এসে অরু আপাকে ছোট করে কথা বলছেন।আমি অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করলাম উনাকে ছোট করে কথা বললে প্রায় ছেলেরা, বউয়েরা মুচকি হাসি দিচ্ছে।
-হিমেল ব্যাডা তোমার মম আমাকে অপমান করার জন্য নিয়ে এসেছেন।তোমাদের আমি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলাম সেই ভালোবাসায় আজ প্রশ্ন উঠছে।তোমার মম ঠিক কাজ করেনি।
হিমেল-আন্টি আপনি বড় মায়ের সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না।
-হিমেল বাবা,তুমি তোমার মায়ের দিকে তাকাও লজ্জায় তিনি মাথা নুইয়ে আছেন।কিসের জন্য লজ্জা একটা আধপাগল মা কিন্তু সন্তান ঠিক বুঝে।সেখানে তোমার সুস্থ সবল মা, তোমরা দিনের পর উনাকে অবজ্ঞা করছো সেটা কি ঠিক।
-আপনি বড় মায়ের সম্পর্কে না জেনে বাজে কথা বলছেন।
-একটা মানুষের সম্পর্কে জানার জন্য বছর লাগে না।দুই একটা কথার ধরনে বুঝা যায়।তেমনি আজ তোমার বড় মা চাইলে অরুকে ওর প্রাপ্য সম্মান দিতে পারতেন।কিন্তু সেখানে তিনি প্রতিটি কথা বলেছেন অরুকে ছোট করে।
আমি বলছিনা তোমার বড় মা খারাপ।তিনি তোমাদের ভালোবাসা পেতে গিয়ে আরেকটা মানুষের সব ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছেন।
ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখো অরু কি তোমাদের ভালোবাসে না।তোমাদের কাছ থেকে একটু ভালোবাসা,সম্মান কি ওর প্রাপ্য না।
রুবি কথা না বলে রেগেমেগে বেড়িয়ে গেলো।সবাই ওর পিছনে ছুটলো।অরু সোফায় বসে অনবরত কান্না মুছছে।
স্বপ্না ওর কাঁধে হাত রাখতেই ওকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়।
চলবে