#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৩০
রিকশা করে অরুনাকে কোচিং-এ দিয়ে তরী গেলো একটা ফুলের দোকানে।
তরতাজা একটা বেলীফুলের গাজরা কিনলো।সেখান থেকে বেড়িয়ে কসমেটিকস এর দোকানে গেলো।এক ডজন চুড়ি কিনলো সাথে সুন্দর ঘ্রাণের জেসমিন ফুলের, সি স্প্রে পারফিউম।
রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।তরী খাবার খেয়ে মাকে রুমে ডাকলো।
-কি রে কি হয়েছে,আমার অনেক কাজ তাড়াতাড়ি ?
-মা তুমি আমাদের একটা কথা রাখবে?
-আরে পাগল তোদের কোন কথা আমি রাখিনি।
-মা আজ তুমি আমাদের সাথে বেড়াতে যাবে?
-এসব একদম না।বেড়াতে যেতে আমার ভালো লাগে না।
-প্লিজ মা প্লিজ না করো না।
রিদ্ধ আসলো ওর শাশুড়ী আসলেন।
-দেখ স্বপ্না ছেলেমেয়েরা এতো করে চাইছে যা না।
-মা আমার এসব ভালো লাগে না।
রিদ্ধ-মা প্লিজ চলো না সারাদিন একা বসে থাকো।
-আমাকে ছেড়ে দে তোরা যা।
-বুঝছি দাদুভাই ভেবেছিলাম একটু ঘুরেফিরে মজা করবো।তোদের মা যাবে না আমি কি করে যাই।
-মা আপনি যাবেন?
-আশা তো করেছিলাম।
-ঠিক আছে আমি যাবো।
ইয়াহু সবাই মিলে চিল্লিয়ে উঠলো।
-মা তুমি চুপ করে বসে থাকবে আমি তোমাকে রেডি করিয়ে দিবো।
-এই বয়সে আবার রেডি কী?
-প্লিজ প্লিজ মা শুধু আজকের দিন আমাদের মতো করে সাজবে।
-তোরা কি শুরু করেছিস।
**তরী অনেকক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে রাজি করালো।স্বপ্না বসে আছে তরী সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো মাকে।বয়স অনুযায়ী সাজিয়ে দিয়েছে।
আকাশী রঙের জামদানী শাড়ীর সাথে বেলীফুলের গাজরা।
এক ডজন চুড়ি আর মায়ের প্রিয় সেই পারফিউম দিলো।
-এই পারফিউম দিলি কেনো?
-এই পারফিউম তোমার কত পছন্দের ছিলো।কত বছর হলো এই গন্ধ আসে না তোমার গাঁ থেকে।
-তরী আমার ভালো লাগছেনা।
-তোমাকে এতো দুঃখী দেখতে কি আমাদের ভালো লাগে?ও মা তুমি আগের মা হয়ে যাও আমাদের জন্য।
-আমি তো আগের মতোই আছি।
-আগের মতো চুল খোঁপা করো না,আগের মতো পারফিউম মাখো না।আগের মতো গুনগুন করে গান ধরো না।
-আমার জীবন থেকে যে সব রং হারিয়ে গেছে।সাদাকালো জীবন বেছে নিয়েছি।সেখানে এসব বেমানান।
– কিচ্ছু বেমানান না। তুমি আজ থেকে আমাদের আগের মা হয়ে যাও।
-পাগলি।
রিদ্ধ এসে দরজায় নক করলো।
আপু তাড়াতাড়ি আয় গাড়ি এসে গেছে।তরী মাকে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই রিদ্ধ,রিহান খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা কত সুন্দর লাগছে।ছেলেদের এমন উল্লাস দেখে স্বপ্নার খুব ভালো লাগছে।
ওর শাশুড়ী মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন।স্বপ্না কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে এদের পাগলামি দেখে।
ওরা সবাই মিলে বিকেলে লেকের পাড়ে হাটলো। সন্ধ্যায় ফুটপাতে বসে কেউ চটপটি কেউ ফুচকা খেলো।
রাতের ডিনার করে ওরা রেস্টুরেন্টে গেলো।মাকে যত্ন করে নিজ হাতে খাবার বেড়ে দিচ্ছে তরী।আবার এমন দৃশ্য চোখে ভেসে উঠলো হিমেলের।এক মিনিটের জন্য হিমেল ভাবতে বাধ্য হলো তরীকে নিয়ে।বাচ্চা বাচ্চা মেয়েটা এতো কেয়ারিং।
বাইরে ডিনার শেষ করে বাসায় ফিরলো ওরা।অন্যরকম ভালো লাগছে স্বপ্নার।
রিদ্ধ ডেকে নিলো তরীকে।
-আপু আজ মাকে কত খুশি দেখাচ্ছিলো।তুই এতো সুন্দর প্লান করে সবার মন ভালো করে দিয়েছিস।
-আজ মায়ের জীবনে স্পেশাল দিন।সারাদিন মা মন খারাপ করে থাকবে তাই ভাবলাম মাকে একটু আনন্দ দেই।
স্বপ্না শুইয়ে শুইয়ে ভাবছে, আর নিজেকে দুঃখী ভাববে না।এমন ছেলেমেয়ে যে মায়ের আছে তার দুঃখ কিসের।
সালমানের কালো অধ্যায় জীবন থেকে মুছে দিবে।অতীতের গ্লানি মুছে নিজের সন্তানদের নিয়ে সুখী থাকবে।
*হিমেল এসেছে অরুনার রুমে। অরু তখন বই পড়ছিলো হিমেলের দিকে তাকিয়ে আবার বইয়ে ধ্যান দিলো।দেখে ও না দেখার ভান করছে।
-মম তুমি কি বিজি?
-নাহ তেমন না, বই পড়ছিলাম।
-আমি কি বসবো?
-প্রয়োজন হলে বস।
-এভাবে বলছো কেনো?
-তোরা তো প্রয়োজন ছাড়া আমার কাছে আসিস না।
-মম এটা তোমার ভুল ধারণা।
-আচ্ছা বল কি বলবি?
-এমনি গল্প করতে এসেছি।
-ওহ আচ্ছা
-মম তুমি আইসক্রিম খেতে পছন্দ করো?
-কেনো?
-আজকে দেখলাম ওই মেয়ের সাথে আইসক্রিম খেতে খেতে গল্প করছিলে।
-দেখেছিস তাহলে বকে দে,কেনো নিজের স্ট্যাটাস ভুলে রিকশা করে ঘুরলাম।
-মম কি হয়েছে তোমার?
-কিছু না।
-আমার সাথে রেগে আছো?
-নাহ রে বাবা। আমার কি কারো উপর রাগ করার অধিকার আছে?
-মম শুনো।আমি তোমার কথা ভেবে দেখছি।আচ্ছা আমাকে কিছুদিন সময় দাও।
-মনের সাথে যুদ্ধ করে কিছু করতে হবে না।
-নাহ মম। আমি ভেবে দেখছি আমি জানাবো তোমাকে।
-আচ্ছা।
-মম এক কাপ কফি খাওয়াবো।কিছুদিন থেকে তো রাতে কফি দিচ্ছো না আমায়।
অরুনা একটু হেসে উঠে গেলো।ছেলেমেয়ের জন্য নিজ হাতে কিছু করতে বরাবরই ওর ভালো লাগে।
*রুমা হাটতে হাটতে রাস্তায় এসে যায়।গাড়ি চলছে সেদিকে খেয়াল নেই।ওর ইচ্ছা গাড়ির নিচে পরবে।তখনি সালমান ওকে টান দিয়ে সড়িয়ে নেয়।
-কি করছো তুমি?
-এমন জীবন আমি চাই না।আমি মরতে চাই।
-আরে তুই তো এখন মরে আমাকে ফাঁসাতে চাইছিস।
-হ্যা চাইছি।তুমি আমাকে এতো অবহেলা করছো।আমার বাঁচার ইচ্ছে মরে গেছে।
-তুই আমার সাথে বেঈমানী করেছিস।
-আমাকে মাফ করে দেয়া যায় না।বেঈমানীর শাস্তি পাচ্ছি তো।নিজের ছেলেকে পর্যন্ত কোলে নিতে পারি না।আদর করতে পারি না।
-আরো অনেক ভয়ানক শাস্তি তুই পাবি।
-মরতে দাও আমাকে।
-ঘরে চল।
সালমান, রুমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় ঘরে।
**দেখতে দেখতে তরী মেডিকেলে পরিক্ষা দিলো।রেজাল্টের অপেক্ষায় আছে।
- চলবে