সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৩৯

0
607

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৩৯
স্বপন নিজেকে রক্ষা করে কোনো অবস্থায় গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরলো।
স্বপনের এমন অবস্থা দেখে স্বপ্না ঘাবড়ে গেলো।
-তোর এই অবস্থা কেনো?
-তুই আমার কি হাল করবি কি জানি আপা।
-কি হয়েছে?
-তোর বরের এমন কুকীর্তি কি বলবো আমাকে সবাই পঁচা টমেটো দিয়ে আঘাত করছে।
-তোর লাগে নি তো ভাই?
-ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাচ্ছে।
-একটা নির্দোষ মানুষ শাস্তি পাবে।
-তোর কি করে মনে হয় সালমান নির্দোষ। তোর সাথে কি করেছে ভুলে গেছিস?
-যা করেছে ভুলবার মতো না।তবুও মনে হয় লোকটা খুন করতে পারে না।

দু দিন সালমানকে রিমান্ডে প্রচুর মারধর করা হয়।সালমান হুট করে স্বীকার করে নিলো।রুমাকে ও পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।
তিনদিন পর আদালত প্রাঙ্গণে স্বপনকে কোনো কথার সুযোগ দিলো না বাদী পক্ষের উকিল।
সালমান বেজায় বলে যাচ্ছে রুমাকে আমি মেরেছি।
আদালত আজকে কোনো রায় দেয়নি।পুলিশকে তদন্ত করতে দেয়া হলো ভালো করে।
স্বপন বাসায় ফিরে মুখ গম্ভীর করে বসে আছে।
-আপা আমি এই কেস লড়তে পারবো না।
-কেনো?
-তোর বর তো নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে।

স্বপ্না,স্বপন ওরা কেউই বুঝতে পারছেনা সালমান কেনো এসব বলতে গেলো।রিদ্ধ ওদের পাশে এসে বসলো।
-মা,আমার মনে হচ্ছে বাবা খুন করেননি।খুব বাজে ভাবে ফেঁসে গেছেন।
-সেইটা তো বুঝতে পারছি। এখন কি করা যায়?
-আমি গিয়ে একবার কথা বলবো?
-তুই আগামীকাল যা।গিয়ে দেখ কি বলেন।

**তরী সবকিছু শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলো।এদের পাশে এসে বসে রইলো কিছু বলছে না।
-তুই কিছু বলবি আপু?
-আমাকে নিবি তোর সাথে?
-বাবার কাছে যাবি?
-হ্যাঁ।
-মা ওকে নিবো?
-যা নিয়ে।
পরেরদিন রিদ্ধ আর তরী মিলে জেলখানায় গেলো।ওইখানে অন্যরকম কান্ড।তরী ভেবেছিলো সিনেমার মতো হয়তো বাবাকে কাছ থেকে দেখবে।কিন্তু গিয়ে দেখলো দুইটা লোহার জানালার ওপাশে বাবা দাঁড়িয়ে মাঝখানে ২ফিট দূরত্ব।
তরী বাবাকে দেখামাত্র কেঁদে দেয়।অসহায় মুখ দেখে তরীর বুক দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে।
রিদ্ধ চিল্লিয়ে কথা বলছে তবুও কিছু শোনা যাচ্ছে না।কত মানুষ যে এসেছে নিজের লোকদের দেখার জন্য।
১০মিনিট সময় দিয়েছিলো সময় শেষ হয়ে গেলো তাকিয়ে থাকতে থাকতেই।
কি আর করার দুজনেই বাসায় ফিরলো।স্বপ্না ওদের সাথে কথা বলে নিরাশ হলো।
কিছুদিন পর আদালত সরকারি ছুটি দিলো ১৫দিনের।স্বপন খুনের রহস্য খুঁজে হয়রান কিছুই জানতে পারছেনা।সালমান যেদিন খুনের কথা স্বীকার করলো সেদিন থেকেই রুমার ফ্যামিলি বাসা ছেড়ে দিয়েছে।আজকাল চম্পা কথার ধরণ পাল্টে ফেলছে।
সবমিলিয়ে অন্যরকম একটা অবস্থা।কারো মনে শান্তি নেই।

এভাবে কেটে গেলো ১০দিন।জেল থেকে ফোন আসলো স্বপনের কাছে সালমান হাসপাতালে ভর্তি।
স্বপন,রিদ্ধকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে গেলো।সালমান কিছু খেতে পারছেনা দু দিন, গলা গিয়ে রক্ত এসেছে।
কথাটা শোনামাত্র রিদ্ধ ভয় পেয়ে যায়।পুলিশ জানিয়েছে অনেক টেস্ট করিয়েছে তিনদিন পর রিপোর্ট পাবে।

এই কয়দিনে সুস্থসবল মানুষটা কেমন শুকিয়ে গেছে।মলিন চেহারা বিছানার সাথে মিশে আছে।এমন অবস্থায় বাবাকে দেখবে রিদ্ধ কখনোই ভাবেনি।
বাসায় ফিরে ওরা তরী কিংবা স্বপ্নাকে কিছুই জানায়নি।অপেক্ষা করছিলো রিপোর্টে কি আসবে সেটা শোনার জন্য।

অরুনা কে কোথায় না খুঁজেছে ওরা কোথাও পায়নি।আশা ছেড়ে সবাই বসে আছে রুবি,হাসান ওরা সুখেই সংসার করছে।সবাই যার যার মতো আছে কিন্তু হিমেল মোটেও ভালো নেই।মায়ের জন্য প্রতিনিয়ত মন কাঁদছে।তরী অল্প দিনের পরিচয়ে কেমন জানি অন্তরে মিশে গেছে।
ভুলতে গিয়ে ভুলতে পারছেনা দুজন মানুষকে একসাথে ভুলা যায় না।
**অরুনা অনেক বাজার নিয়ে বাসায় ফিরলো ওর বাসায় না মেয়ের বাসায়।
ফিরে যাওয়া যাক দুই মাস আগে।অরুনার মেয়ে মিতু সেদিন মাকে ফোন দিয়ে বললো।
-মা তোমরা আমাকে টাকার কাছে বিয়ে দিয়ে আমি কি সুখ পেলাম?
-তুই কি সুখী না মিতু?
-মা রোজ ছেলেটা পার্টিতে যায় মদ খেয়ে বাসায় ফিরে।ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন ওর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে হয়।মা টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায়।রোজ সোনার গহনা,দামী শাড়ি পরে নিজেকে পুতুলের মতো সাজিয়ে রাখতে হয়।আমি কি কেবল মাত্র মনোরঞ্জন করার দাসী।
-তুই চলে আয়?
-কি বলছো মা?
-যেখানে মনের শান্তি মিলে না সেখানে থাকা কতোটা কষ্টকর সেটা আমি ভালো করেই জানি।
-বাসার সবাই তোমাকে খেয়ে ফেলবে।
-ভয় নেই আমি তোর জন্য লড়বো।যা হয় হবে তবুও চলে আয়।
-সত্যি মা?
-হ্যা রে সত্যি।
**মিতু খুশি মনে ফোন রেখে দিলো।কিছুদিনের মধ্যে দেশে আসার সবকিছু ঠিক করলো।মায়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতো।
সেদিন যখন অরু ঠিক করলো ও চলে যাবে।মা, মেয়ে অনেকক্ষণ ফোনে কথা বললো।মিতুর বান্ধবী গাড়ি পাঠিয়ে উনাকে তাদের বাসায় নিয়েছিলো।মিতু আসার পর ওরা ছোট্র একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। মিতু শিক্ষিত মেয়ে চাকরি একটা জোগাড় করে ফেলবে।
মিতু স্বামীর কাছ থেকে পালিয়েছে রুবি জানে তবে দেশে ফিরেছে সেটা জানে না।
বাজার রাখতে রাখতে অরু ডাকলো মিতুকে।
-কি রে বাজার দেখে যা।
-এতোসব কেনো মা?
-আমার সোনা মেয়ের কাল ২৬তম জন্মবার্ষিকী।
-তোমার মনে আছে।
-আমার যে একটাই মেয়ে।

মিতু মাকে জড়িয়ে ধরে।আমরা মা-মেয়ে এভাবেই জীবন কাটিয়ে দিবো।যাও তাড়াতাড়ি আজ আমরা বাইরে ফুচকা খাবো।
-তুই আবার বিয়ে কর মিতু।
-কাকে বিয়ে করবো মা?
-নতুন কাউকে।
ওকে ডিভোর্স দিয়ে।
-আমি ওকে ডিভোর্স দিবো ঠিকই। কিন্তু আর বিয়ে করবো না।
-এভাবে জীবন চলবে না মিতু।
-চলবে মা।যাকে মন দিয়ে ভালোবাসতাম তাকেই তো ফ
পেলাম না।
-আমি ওর সাথে কথা বলি।
-লাভ নেই মা।ও বিয়ে করে নিয়েছে।ওর জীবনে নতুন মানুষ এসেছে।
মিতুকে জড়িয়ে রাখে অরুনা।আজ আর মেয়েকে কিছু বলবে না।অন্যদিন কথা বলবে দেখবে মেয়ের নতুন সংসার বেঁধে দেয়া যায় কি না।

**তিনদিন পর সালমানের রিপোর্ট আসলো ওর খাদ্যনালীতে ক্যান্সার ধরা পরেছে লাস্ট স্টেজ। এতো বড় অসুখ সালমান কি বুঝতেই পারলো না।
হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় কাটছে সালমানের দিন।জীবন যে শেষের পথে বেশ বুঝতে পারছে সালমান।যৌবনের বড়াই ছিলো খুব বেশি। মোটা হয়ে যাওয়া তিন বাচ্চার মা নিজের স্ত্রী চেহারা নিয়ে ছিলো অভিযোগ। আজ নিজের সেই সুঠাম দেহ বিছানায় নেতিয়ে আছে।দাপট করে বেড়ানো বিজনেস ম্যান নামটার পাশে কয়েদি নাম্বার ৪৩১যোগ হয়েছে।
রিদ্ধ বাবার কাছে এসে বসতেই বাচ্চাদের মতো কান্না করে দিলো।
-আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা।
রিদ্ধ চোখের জল আড়াল করলো।
-আমার পাপের শাস্তি এতো ভয়ানক।
-এসব বলতে নেই বাবা।
-আমার একটা কথা রাখবি?
-কি কথা বাবা?
-তোর মাকে একবার নিয়ে আসবি।শুধু একবার আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইবো।
-মা যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
-একবার বলে দেখিস যদি আসে।

রিদ্ধ আজ বাবার উপর রাগারাগি করতে পারছেনা।নীরবে কেবল তাকিয়ে আছে।

চলবে

(গল্পের পার্ট ছোট নিয়ে কেউ কিছু বলবেন না প্লিজ।আমি অনেক সমস্যায় থেকে এইটুকু লিখেছি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here