#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
২৯
তিয়াসকে বুকে জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে সালমান।
ঘুম আসছিলো না সালমানের উঠে বাইরে গেলো।রুমা তখন টেবিলে মাথা রেখে শুইয়ে আছে।
রুমা এতো বড় অপরাধ করার পর ও কোনো অনুশোচনা নেই। মেয়েটা কি পরিমাণ খারাপ আর নির্লজ্জ ।আজ সালমান বুঝতে পারছে সেদিন শফিক ওর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে আনন্দ করেছিলো।ওর মনে কোনো কষ্ট ছিলো না।
আমি স্বপ্নাকে কাঁদিয়ে যে ভুল করেছি তার ফল পাচ্ছি এখন।
সালমান পিছন থেকে রুমার ঘাড়ে হাত রাখলো।
-যাও রুমে গিয়ে ঘুমাও তিয়াসের কাছে।
রুমা কিছু না বলে উঠে যাচ্ছিলো।সালমান হাত ধরে রুমে দিয়ে আসলো।
অসহায়দের প্রতি মায়া হয় কেনো জানি এই রুমার প্রতি মায়া হয় না সালমানের।না হওয়ার কারণ রুমার চরিত্র।
সালমান বাইরে এসে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে।
স্বপ্না পাশে থাকলে আজকের দিনটা অন্যরকম হতো।
স্বপ্না আধারে দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে।হাতে ওদের বিয়ের সাদাকালো একটা ছবি। রাত ১২টা বেজে গেছে ওদের বিয়ের ২০বছর হয়ে গেলো।প্রতিজ্ঞা ছিলো যতদিন দেহে প্রাণ আছে কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না।
মাত্র ১৮বছরের মাথায় আমি পুরোনো হয়ে গেলাম। কত সহজে তুমি নতুন কাউকে তোমার জীবনে নিয়ে আসলে।এখন ভালো আছো তো তুমি।জানি ভালো নেই এমন জীবনে কেউ ভালো থাকে না সালমান।বেঈমানদের শাস্তি ভয়ানক তাই তুমি এমন শাস্তি পাচ্ছো সালমান।ধুলো জমা ছবি শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছলো।
চোখের জল মুছে স্বপ্না ঘরে গেলো ওর শাশুড়ি ওকে কাছে ডাকছেন।
-মা তুমি ঘুমাওনি?
-শুভ বিবাহবার্ষিকী মা।যদি ও শুভ বলা ঠিক না।
স্বপ্না চোখ বন্ধ করে আছে তাকালে অশ্রু গড়িয়ে পরবে।
-তোর কষ্ট হচ্ছে রে মা,কেঁদে নে হালকা হবে।
স্বপ্না আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না।শাশুড়ীকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।
-মন খুলে কেঁদে নে।চোখের জলে তোর কষ্টগুলো ঝরে যাক।
-মা আমার সাথে কেনো এমন হলো।আমি তো কারো ক্ষতি করিনি।এতো ভালোবাসার পর ওই মানুষটা আমাকে এতো কষ্ট দিলো।
-তোকে কষ্ট দিয়ে এখন নিজে শাস্তি পাচ্ছে।
-মা গো আমি যে আর সহ্য করতে পারছিনা।
– ধৈর্য ধর।
মায়ের বুকে গুমরে কাঁদছে স্বপ্না।
স্বপ্নার কান্না দেখছে রিদ্ধ আড়ালে দাঁড়িয়ে। রিদ্ধ কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে গেলো।ওর নিজের কান্না আসছে চোখের জল মুছে বাবার ছবির দিকে তাকালো।
বাবা আপনি এতো বড় অন্যায় কি করে করলেন আমাদের মায়ের সাথে।যে মানুষটা আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে,যে মানুষটাকে প্রতিদিন নামাজে আপনার জন্য দোয়া করে।এমন মানুষকে আপনি ফেলনা মনে করলেন।
আপনার জন্য কষ্ট হয় বাবা।এই যে এতো যন্ত্রণার জীবন আপনার সেটা আপনারই কর্মফল।
সালমান বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তা ধরে হাঁটছে।কথা ছিলো ২০তম বিবাহবার্ষিকীতে ২০টা লাল গোলাপ গিফট করবে।
এতো রাতে গোলাপ পাবে কোথায়।হাটতে হাটতে ফুলের দোকানে চলে আসলো সালমান। ফুলের দোকান খোলা ভিতরে গিয়ে দেখলো গায়ে হলুদের জন্য কিছু ফুলের দরকার। খুশিতে সালমান ২০টা গোলাপ কিনে নিলো।
স্বপ্নার রুমের বারান্দায় ফুল রেখে গেলো।ঘুম থেকে উঠে স্বপ্না কাজে ব্যস্ত বারান্দায় যেতে পারেনি।ঝাড়ু দিতে গিয়ে দেখলো ফুলগুলো শুকিয়ে গেছে।গুনে গুনে ২০টা গোলাপ।ফেলে দিতে গিয়ে ও পারলো না। মানুষটা তাহলে ভুলে যায় নি।মরে যাওয়া গোলাপ ফুলদানিতে রেখে দিলো।গোলাপের দিকে তাকিয়ে স্বপ্না হাসছে আমাদের সম্পর্ক এই ঝরা গোলাপের মতোই।
**অরু সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে।রান্নার সময় কেবল বলে দেয় কি রান্না হবে।কোচিং শেষে যে টুকু সময় কেবল সে সময় টুকু বই পড়ে না হয় বারান্দার চেয়ারটায় বসে কাটায়।
রুমেলের বউ আসলো অরুর কাছে।
-মম, আমি আর রুমেল কক্সবাজার যাচ্ছি।
-আচ্ছা।
-কিছুদিন থাকবো।
-ভালো।
-ঠিক আছে আমরা তাহলে যাই?
-আচ্ছা।
রুমেলের বউ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
-মমকে বলেছো?
-হ্যাঁ বলেছি।তোমার আধ পাগল মা কথায় কথায় স্বায় দিয়েছেন।
– ইদানীং মম কেমন জানি হয়ে গেছেন।আমাদের কারো দিকে লক্ষ্য দিচ্ছেন না।
-সেটাই দেখছি।
-ফিরে এসে কথা বলবো।বড় মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসো তুমি।
রুমেল গিয়ে অরুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসলো।অরু ভাবছে রুমেলের স্ত্রী কনিকার কথা ওর বাড়ি কক্সবাজার। কিছুদিন পর পর ওরা সেখানে যায়।কিন্তু অরু কখনোই এতো সহজে বাপের বাড়ি যেতে পারতো না।গরিব শ্বশুর বাড়ি যেতে নারাজ হাসান,সাথে হাসানের মায়ের কড়াকড়ি নিষেধ। বছরে একবার মা,বাবাকে দেখার সুযোগ হতো।
অরু কোচিং এ আসলে ও বেশিক্ষণ চুপচাপ থাকে। তরী সে বিষয় খেয়াল করলো।
-আন্টি আজকাল কেমন চুপচাপ সব ঠিক আছে?
-হ্যাঁ রে সব ঠিক আছে।
-আন্টি আজ চলুন আমরা বাইরে একসাথে কফি খাই।
-কফি তো এখানে আছে আমি বানিয়ে দেই।
-আন্টি বাইরের কফির মজা আলাদা।
-আচ্ছা তুমি নিচে যাও আমি আসছি।
তরী নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অরুনা চৌধুরী নিচে আসলেন।
-আমি ড্রাইভারকে ফোন দিচ্ছি।
-আন্টি আমরা রিকশা করে যাবো।
অরু ভাবছে ওর ছেলেরা, বউ,কিংবা রুবিনা কেউ যদি ওকে রিকশা করে ঘুরতে দেখে বকাবকি করবে।
তরী জোর করেই উনাকে রিকশায় তুললো।হোট তোলা রিকশায় বসে ওরা গল্প করতে করতে যাচ্ছে।সামনে একটা কফিশপে গিয়ে ওরা নামলো।
দু কাপ কফি অর্ডার দিয়ে ওরা আবার গল্প করছে।তখনি হিমেল ওখানে আসলো।ওর অফিসের পাশেই এই কফি শপ।এখানকার কফি খুব ভালো রোজ এসেই হিমেল এখানে কফি খায়।
মা আর তরীকে একসাথে দেখে পাশের একটা টেবিলে বসলো ওদের আড়ালে।
ওর মম তরীর সাথে প্রাণ খুলে কথা বলছেন।দেখে মনে হচ্ছে ওরা সমবয়সী।
কফির বিল তরী দিলো অরুনাকে দিতে দেয়নি।তারপর দুটো আইসক্রিম নিয়ে ওরা বেড়িয়ে গেলো।হিমেল পিছনে গেলো একটা রিকশায় উঠে দুজন আইসক্রিম খাচ্ছে, হাসছে, গল্প করছে।ওর মমের এমন বাচ্চামি স্বভাব এই প্রথম দেখছে হিমেল।
এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে হিমেলের অনেক ভালো লাগছে।
চলবে