#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
২৮
অরুনা চৌধুরীর মনটা বিষাদে চেয়ে গেলো।গরীব ঘরের মেয়ে হয়ে জন্মানো বোধহয় পাপ ছিলো।
বাবা ট্রাকের ড্রাইভার ছিলেন,যথেষ্ট ভালো দিন কাটতো ওদের।ছয় ভাইবোনের সংসারে অরুনা সবার বড়।এস,এস,সি পরিক্ষা দেয়ার পর শুরু হয় কষ্টের জীবন।ট্রাক এক্সিডেন্টে বাবা হারান দুটো পা।
ভাবনার জগতে ডুবে ছিলো অরুনা,তখনি হিমেলের বাবা ঘরে আসলেন ডাক্তার হাসান ইসলাম।
হাসানকে দেখে চোখের জল মুছে বিছানার ওপাশে শুইয়ে রইলো অরু।
হাসান হয়তো কিছুক্ষণ এখানে গড়াগড়ি করবেন।কারণ রুবি এখন ব্যস্ত ব্যবসায়ীক কাজে।
তার কাছ শেষ হওয়ার হাসান যাবে ওই রুমে।অরু চোখ বন্ধ করেই আছে হাসান অরুর বাহুতে হাত দিলো।
-তুমি কি ঘুমিয়ে গেছো?
-নাহ, কিছু বলবেন?
-মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষা তো সামনে।কোচিং থেকে যারা পরিক্ষা দিবে কোচিং-এর সুনামের জন্য আগে যদি প্রশ্নপত্র ওদের হাতে দেয়া হয়।
-তুমি কি প্রশ্ন ফাঁস করার কথা বলতেছো?
-হ্যাঁ সেটাই।শোন কেউ জানবে না।কোচিং থেকে সাজেশন হিসাবে দেয়া হবে।
-প্রয়োজন নেই।দক্ষ টিচার দিয়ে কোচিং হচ্ছে আমার আশা অনেকেই মেডিকেলে চান্স পাবে।
-তুমি বরাবরই বেশি বুঝো।সহজ জিনিস সহজভাবে নিবে না।
-এটা সহজ জিনিস না।দেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
-ধ্যাত তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই।
-বলো না। আমার দ্বারা বে আইনি কাজ হবে না।
হাসান সাহেব উঠে চলে গেলেন।তিনি জানেন অরু না করে দিয়েছে মানে তর্কে গিয়ে লাভ নেই।
রুবিনা ল্যাপটপে মন দিয়ে কাজ করছে।তখনি হাসান ঘরে ঢুকে শুইয়ে পরলো।
-কি হলো শুইয়ে রইলে যে?
-ভালো লাগছে না।
-অরুর সাথে তর্কাতর্কি হয়েছে নাকি?
-ভালো বুদ্ধি দিলে শুনবে না।নিজে যা বলবে তাই সবসময় সঠিক।
-দেখো হাসান তোমাকে আমি ভালো মতোই চিনি তুমি ভালো বুদ্ধি দেয়ার মানুষ না।
-হ্যা সেটাই তো আমার বুদ্ধি কারো কাছেই ভালো না।
হাসান রাগ করেই ঘুমিয়ে গেলো রুবির পাশে।রুবি হাসছে ও জানে হাসান মানুষ হিসাবে খারাপ না।ভেবেচিন্তে কিছু বলে না হুট করেই বলে দেয়।ডাক্তার হিসাবে সুনাম আছে বেশ।
রুবি ল্যাপটপ বন্ধ করে হাসানের চুলে বিলি কেটে দেয়।
ভাবছে ৩৫বছর আগের মতোই ওদের ভালোবাসা এখনো রয়ে গেছে। তৃতীয় ব্যক্তি অরু ওদের জীবনে প্রবেশ করতে পারতো না যদিও না রুবির মা হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হতো।সেদিন হাসান চায় নি বিয়ে করতে বৃদ্ধ বাবা-মা মরার আগে নাতি নাতনি দেখবেন।অনেক জোড়াজুড়ি করে হাসানকে বিয়ে করাতে হয়েছিলো।৩৫বছর আগে অরুকে বাসরঘরে রেখে হাসান রুবির কাছে এসেছিলো।
কতোটা ভালোবাসলে মানুষ এমন করে রুবি সেদিন বুঝেছিলো।সে রাতে কিছুতেই হাসান কে ওই ঘরে পাঠানো যায়নি।
হাসানের বুকেই ঘুমিয়ে গেলো রুবি।অরু ঘুমাতে পারছেনা প্রতিদিন একাই ঘুমায় তবুও আজ কেনো অসহায় লাগছে।
অরু,হিমেলের ঘরের দিকে উঁকি মারছে হিমেল ঘুমায়নি দেখে ওর রুমে গেলো।
-মম তুমি ঘুমাওনি কেনো?
-ঘুম আসছিলো না বাবা। তোকে একটা আবদার করবো রাখবি?
-মম কি বলবে বলো না?
-তোর কি কাউকে পছন্দ,আই মিন ভালোবাসিস?
-হঠাৎ এসব কথা কেনো?
-থাকলে বল? না বল বাবা।
– না মম তেমন কেউ নেই।আসলে কলেজ লাইফের প্রেম ছিলো ছন্নছাড়া দুজন আলাদা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রেম শেষ।
এরপর আর কাউকে ভালো লাগেনি।
-এখন যদি তোর বিয়ের কথা বলি তোর আপত্তি নেই তো?
-এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম।নিশ্চয় বড় মা কাউকে পছন্দ করছেন।
-তোদের জীবনে আমার কোনো মূল্য নেই?
-মম আজ তুমি বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়ার করছো।
-আমার পছন্দে তুই বিয়ে করবি না?
-সবার যদি মত থাকে আমার আপত্তি নেই।
-সবার মতামত জানতে চায় নি আমি।আমি বলছি আমার পছন্দে তুই বিয়ে করবি কি না?
-মম এতোটা রেগে যাচ্ছো কেনো?ওকে ফাইন তোমার পছন্দটা কে আগে বুঝি আমার পছন্দ হয় কি না?
-আমার পছন্দ তরীকে।
-মম, তরী মানে তোমার কোচিং স্টুডেন্ট মেয়েটা?
-হ্যাঁ।
-মম এরকম একটা মেয়ে তোমার পছন্দ।মেয়েটার বয়স কম,দেখতে কেমন বাচ্চা বাচ্চা,আনস্মার্ট উফফ মা বুঝাতে পারছিনা কেমন জানি মেয়েটা।
-তুই আমার পছন্দের মূল্য দিবি না তাই তো।সবাই যেমন আমাকে আবর্জনা ভাবে তুই ও সেরকম ভাবলি।
-মম তুমি বোঝার ট্রাই করো তরীর মতো মেয়েকে আমার সাথে যায় না।
-সেটাই তো তোর বাবার সাথে আমাকে যেরকম যায় নি।
-উফফ মম যাও ঘুমাও গিয়ে।
অরু বের হয়ে গেলো হিমেলের ঘর থেকে।শেষ আশা ছিলো হিমেল ও বরাবরই মাকে ভালোবাসতো।আজ সেই ছেলেটা মায়ের পছন্দকে অবজ্ঞা করলো।
**সালমান বাসায় ফিরে অনেক রাত করে।আজ বাসায় ফিরতেই দেখলো রুমার পক্ষ্যের উকিল মহিলা বসা।
সালমান কথা বলে রুমে যেতে চাইলে তিনি ডাক দিলেন।
-সালমান সাহেব আপনি আদালতের কথার বরখেলাপ করছেন।
-কি করেছি আমি?
-আপনি রুমার দেখাশুনা করছেন না।স্বামী -স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক স্থাপন করছেন না।তার উপর রুমা বললো রাত করে বাসায় আসেন।ওর সন্দেহ আপনি আবার কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন।
-কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না।
রুমা সেই কয়লা ওকে যতোই আগলে রাখুন,ভালোবাসুন ও মূল্য দিবে না।তাই আদালত জোর করে ওকে আমার কাছে দিয়েছে আমি যেভাবে খুশি রাখবো।
-আইন লঙ্ঘন করার জন্য আপনার জেল হবে।
-এই জেলের চাইতে ওই জেল ভালো।
-আজ যদি রুমার খোঁজ নিতে না আসতাম তাহলে রুমার আরও ক্ষতি হতো
-যান আবার গিয়ে মামলা করুন।
উকিল মেয়েট রেগেমেগে বেড়িয়ে গেলো।সালমান গিয়ে রুমার চুলের মুঠি টেনে ধরলো।
-কি রে এতো কিছুর পর তোর ঝাঁঝ কমে না?
-তুমি কি? এখন নিজে সাধু।আমি অন্ধ হয়েছি বলে এখন আর আমাকে ভালো লাগে না।অন্য মেয়ে লাগছে।
-তুই মেয়েদের তোর মতো সস্তা বানিয়ে দিচ্ছিস।সব মেয়ে তোর মতো সস্তা না।আর আমি ও তোর মতো চরিত্রের মেয়েদের ছায়া ও দেখবো না।
রুমার চুল ছেড়ে সালমান রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।রুমা ভাবছে এরকম অন্ধত্বের অভিশাপ জীবন নিয়ে ও আর বাঁচতে চায় না।সকাল হলেই গাড়ির নিচে গিয়ে পরবে।
তিয়াসকে বুকে নিয়ে সালমান ঘুমিয়ে আছে।রুমাকে মাফ করে দিতে পারছেনা। স্বপ্না তো ওকে ক্ষমা করেনি তাহলে রুমা ও ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না। নাহ রুমার ও ক্ষমা নেই।
চলবে
(গুড নিউজ কাল থেকে প্রতিদিন রাত ১১টায় গল্প পেয়ে যাবেন।জরুরি প্রয়োজনে গল্প দিতে না পারলে বলে দিবো)