সুগন্ধি ফুল২ (পর্ব ৮)

0
4

#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা

-“আবরাজ উঠুন। দেখুন না কেউ এসছে। শুনছেন আপনি? আমাকে ছাড়ুন।”

ফিজার লাগাতার ডাকে আবরাজ ঘুমঘুম চোখে মাথা টা তুলে বউয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। ফিজার চোখ-মুখ ফুলে খুব ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে মেয়ে টার। গলায় ঘাড়ে ছোপ ছোপ দাগ আরও ভয়ংকর। আবরাজ সেদিকে হাত বাড়াতেই ফিজা বাঁধা দিলো। বললো,

-“বাইরে কেউ এসছে।”

বাড়ির মূল ফটকে রয়েছে কড়া সিকিউরিটি। বাড়ি পর্যন্ত আসা চাট্টিখানি কথা নহে। নিশ্চয়ই খুব পরিচিত কেউ হবে। ফিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো,

-“কে এসছে বলুন তো? কে হতে পারে এতো সকালে?”

আবরাজ বিছানা ছেড়ে নিচে নামলো। ফোন টা ফ্লোর থেকে তুলে হাতে নিলো। গতকাল রাতে এটা বিছানা থেকে কখন নিচে পড়েছে কে জানে। ফোন অন করে আবরাজ দেখলো আব্রাহাম অনেকগুলো কল দিয়েছে। আবরাজ নিচে থেকে ফিজার ড্রেস গুলো তুলে ছুঁড়ে দিলো বিছানায়। এরপর বললো,

-“বাইরে আসবে না। শাওয়ারে যাও। দুই মিনিটে আসছি আমি।”

আবরাজ ভারিক্কি গম্ভীর স্বরে কথা গুলো বলে বাইরে চলে গেলো। ফিজা নিজের পোষাক গুলো কোনো রকম গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। শরীর টা বড্ড কাহিল হয়েছে। কী এক পাগল পুরুষ যার বাঁধা পছন্দ নয়। তবে ফিজার ধারণা পালটেছ রাতে মানুষ টা সত্যি তাকে কষ্ট দেয় নি। যত্নে করে আগলে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে দীর্ঘ একটা রাত কাটিয়ে দিয়েছে। ফিজা তপ্ত শ্বাস ফেললো। ঠান্ডার মধ্যে গোসল দিতে বেশ সময় নিলো।

——

দরজা খোলার পরপরই লম্বা এক সুদর্শন যুবকের ক্লান্তি মুখ দেখতে পাওয়া গেলো। হাতে ট্রলি ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সর্বোচ্চ ভারী শীতের পোশাক জড়িয়েছে গায়ে। গলায় কালো রঙের মাফলার পেচিয়ে নিজের প্রায় অর্ধ মুখ ঢেকে রাখা। আবরাজ এতো সকালে নিজের ছোট ভাই আব্রাহাম কে দেখে কিছু টা অবাক হয়েছে বোধহয়। সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

-“এতো সকালে? তোর তো বিকেলে আসার কথা।”

-“আর বলো না ভাইয়া। ট্যুরে গিয়েছিলাম এক ফ্রেন্ড এর সাথে। সেখান থেকেই ফিরেছি।”

-“যা ফ্রেশ হয়ে নে। রেস্ট করে। পরে কথা হবে।”

-“ওকে ভাইয়া।”

আব্রাহাম মাথা দুলিয়ে নিচের সিঁড়ির সঙ্গে থাকা রুমের দিকে চলে গেলো। আবরাজ দরজা বন্ধ করার আগে একজন মেড এসে উপস্থিত হলো। আবরাজ উনাকে কফি দিতে বলে নিজেও রুমে ফিরে এলো।

——

-“হোয়াইট ফ্লাওয়ার, ওপেন দ্য ডোর।”

আবরাজের মোহগ্রস্ত স্বর ফিজার চলন্ত হাত থামে। মাত্রই সে শাওয়ার জেল লাগিয়েছে সর্বাঙ্গে। ক্ষত-বিক্ষত শরীর প্রচুর জ্বলছে সাথে। তারউপর আবরাজের কণ্ঠ ফিজার কেঁপে উঠলো। খুব ভালো করে সে জানে আবরাজ কেনো তাকে দরজা খুলতে বলছে। এর পরবর্তী ঘটনা যে আবরাজ খান সাজিয়ে রেখেছে। তা ঘটুক ফিজা কিছুতেই তা চাইছে না। তাই না শোনার ভান করে ফিজা বাথটবে বসে গেলো। আবরাজ অধৈর্য হয়ে দ্বিতীয় বার ডেকে বললো,

-“তুমি কী শুনতে পাচ্ছো? সুইটহার্ট, আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে দরজা খুলছো না। এর পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হবে, সুগন্ধি ফুল।”

ফিজা দীর্ঘ শ্বাস টানে। সত্যি হবে সে জানে। কিন্তু এই মূহুর্তে ওঠে গিয়ে দরজা খুলে দেওয়া অসম্ভব। তাই কিছু টা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

-“আপনি ভুল। আমি এখন দরজা খুলে দেওয়ার পরিস্থিতিতে নেই।”

-“আমি তোমাকে সেভাবেই দেখতে চাচ্ছি, তুমি যেভাবে আছো। আমাকে রাগিয়ো না সুইটহার্ট।”

ফিজা ততক্ষণে নিজের পোষাক পরিধান করছে। তাই তো ভয় তেমন পেয়ে ও পাচ্ছে না এখন। দুর্বল শরীর হলে-ও মনে বেশ জোর এটা ভেবে এখন আর কিছু করতে পারবে না আবরাজ। কিন্তু মানুষ যা পরিকল্পনা করে তা যদি সত্যি সত্যি হতো তবে হয়তো নিজের ভাগ্য মানুষেরা নিজেরাই নির্ধারণ করতো। কিছু সময় চুপচাপ। কোনো সাড়াশব্দ নেই। ঝড় আসার পূর্ব মূহুর্তে পরিবেশ পতিকুল যেমন হয় ঠিক তেমন। ফিজার দরজা টা খোলার আগে মাথায় এলো আবরাজ কী এরজন্য কঠিন শাস্তি দিবে? না-কি সে চলে গিয়েছে? ফিজা অনেক সাহস নিয়ে দরজা টা খুলে দিলো। তবে সামনে কিছু দৃষ্টি বুলিয়ে দেখার আগেই ঝড়ের বেগে আবরাজ বউয়ের কোমর পেচিয়ে ধরলো। নিজে সহ বউ কে নিয়ে ঠেলে ওয়াশরুম প্রবেশ করলো। কাচের থাই টা টেনে দিয়ে ওর মাথা থেকে টাওয়াল টা এক টানে খুলে নিলো। ফিজার ঘন লম্বা চুল গুলো তখন এলোমেলো হয়ে নিজেদের উন্মুক্ত পেয়ে নিজেদের গায়ে লেপটে থাকা পানি বিন্দু টপটপ করে পড়তে লাগলো। ফিজা আতংকিত। হকচকিয়ে যায়। রাগান্বিত স্বরে বললো,

-“আল্লাহ! আবরাজ ছাড়ুন ব্যাথা পাই আমি।”

অথচ পুরুষ টা ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে মাত্র। তবে গত দুই রাত এতোটা ভয়ংকর ছিলো যে আজ শাওয়ার নিতে গিয়ে গায়ে পানি পড়াতেও শরীর নিজের অসুস্থতা আর দুর্বলতা জানান দিচ্ছিল। ফিজার ইঙ্গিত বুঝে আবরাজ। তবুও সে মেয়ে টাকে নিজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ করে রাখলো। বললো,

-“লিটল বার্ড তুমি খুব সাহসী।”

ফিজা কিছু টা চমকে উঠলো। শরীর টা কাঁপছে মৃদু। আবরাজ তাকে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু কিসের? সে ভয় কেনো পাচ্ছে? কিসের জন্য? ফিজার ভাবনার মাঝেই আবরাজ আবার বলে উঠলো,

-“তুমি আমার কাছে কেনো আসতে চাও না সুইটহার্ট? না আমাকে যেতে দাও। খুব অন্যায় এটা জান।”

অন্যায় কী সে করছে না-কি এই পুরুষ তার সঙ্গে করছে? আর কাছে আসতে দিচ্ছে না এই কথাও হাস্যকর। পুরুষ টার এমন নাটকীয় কথা ফিজা চোখ পিটপিট করে আবরাজের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“আপনি খুব বাজে পুরুষ। এক্কেবারে জঘন্য।”

-“উম, জান এভাবে বলো না। আমি খারাপ হবো তা তো তুমি আগে থেকে জানতে। আমি তোমায় জানিয়ে ছিলাম।”

-“জোর করে বিয়ে করেছেন।”

ফিজা চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো। আবরাজ ফিসফিস স্বরে বলে উঠলো,

-“আমার জন্য তোমাকে আমি সব করতে রাজি। শুধু বিয়ে নয়।”

-“আপনার কাজ নেই আর?”

-“তুমি কী আমাকে বিদায় করতে চাচ্ছো?”

আবরাজ ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান কণ্ঠে জানতে চাইলো। ফিজা আমতা আমতা করে বললো,

-“হাঁ। আপনার জন্য আমি ঠিকঠাক বিশ্রাম করতে পারছি না।”

ফিজার কথা টা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবরাজ ফিজা কে পাঁজা কোলে তুলে নিলো। ফিজা চমকে উঠলো। মস্তিষ্ক সংকেত দিলো আবারও আবরাজ হয়তো পাগলামো শুরু করবে। তাই তড়িঘড়ি করে ভয়ার্ত স্বরে বললো,

-“আবরাজ প্লিজ এখন আর ন,,,”

আবরাজ শীতল দৃষ্টিতে বউয়ের মুখের দিকে তাকালো। বিছানায় আলতো করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ঝুঁকে থেকে বললো,

-“সারাদিন রেস্ট করো জান। তোমার কাছে মোট আট ঘন্টা টাইম আছে। এরপর আমার টাইম শুরু হবে।”

আবরাজ খানের টাইম যে কিসের ইঙ্গিত বোঝাচ্ছে ফিজার সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। তবে সে কথা ভেবে গলা শুঁকিয়ে আসে। আবরাজ ফিজার শুঁকনো চোখমুখের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসি হাসে। নিম্ন ওষ্ঠ কামড়ে ধরে দাঁত দ্বারা। সেই হাসিতে ফিজার গলা শুঁকিয়ে আসে। বড্ড তেষ্টা পায়। আবরাজ ততক্ষণে ফিজার দিকে আরও এগিয়ে গিয়েছে। দুই জোড়া ওষ্ঠদ্বয় একে-অপরের ছোঁয়া পাওয়ার অপেক্ষা মাত্র। ফিজার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আবরাজের উষ্ণ নিঃশ্বাস ওর ভেতর তোলপাড় সৃষ্টি করছে। কাঁপছে ঠোঁট। কাঁপতে থাকা ঠোঁট নেড়ে বলে,

-“আমার কেমন লাগছে।”

-“ডুই ইউ নিড এনি থিং, সুগন্ধি ফুল?”

ফিজা কিভাবে বলবে তার পানির প্রয়োজন? মজা নিবে যে এই পুরুষ। আস্তে করে সে ঢোক গিলে নিলো। মাথা নেড়ে বোঝাল কিছু চাই না তার। আবরাজ সাথে সাথে হিমবাহের ন্যায় শীতল কণ্ঠে বলে উঠলো,

-“বাট আই নিড ইট, সুইটহার্ট।”

তর্জনী আঙুল টা ফিজার ঠোঁটে চেপে ধরে ধীরে ধীরে আঙুল টা দিয়ে স্লাইড করছে সেখানে। ফিজা ফুসফুসে অক্সিজেনের অভাব বোধ করছে। লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নেওয়ার আগেই আবরাজ ফিজার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের ভাজে রাখলো। ভেজা চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে মাথা টা চেপে ধরে নিজের আরও কাছে টেনে নিলো। ফিজা উপায়ন্তর না পেয়ে হাত জোড়া আবরাজের পিঠে রাখলো। উলের সোয়েটার সহ পিঠে খামচে ধরলো। আবরাজ দীর্ঘ করলো না চুম্বন। ফিজা ছাড়া পেয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে নিজে কে স্বাভাবিক করতে চায়। আবরাজ ওর কপালে চুমু দিলো আলগোছে। ফিসফিস করে আবারও বললো,

-“এখানে শেষ নয়। বি রেডি ফর নাইট, সুগন্ধি ফুল।”

#চলবে…..

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here