#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_২০
#জান্নাত_সুলতানা
-“আপনি কিভাবে খুঁজে পেলেন আমায়?”
যদিও ফিজা জানে এই প্রশ্ন টা বোকার মতো শোনায়। তবুও সে জানতে চায়। আবরাজ ওর হাতের কালশিটে দাগে ঔষধ লাগাচ্ছে। আর গম্ভীর স্বরে জবাব দেয়,
-“তোমার হাতের ঘড়ি। তোমার ফোন তোমার মাথায় থাকা হেয়ার ক্লিপ।”
-“আপনি অনেক বেশি ধূর্ত আবরাজ।”
ফিজা ফিসফিস করে বললো। আবরাজ ওর চুল হাত বুলায়। ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে দেয় আর সেখানে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। কিছু সময় পর আবরাজ নিজে কে ছাড়লো।
-“আমি তোমাকে,,,
-“ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি।”
আবরাজের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ফিজা বলে উঠলো। আবরাজের চোখে-মুখে দুষ্টুমিতে মেতে উঠলো। সে হালকা স্বরে বলে উঠলো,
-“ওহ, সুগন্ধি ফুল পুরো কথা শুনবে তো।”
-“তো?”
-“আমি তোমাকে আদর করবো।”
আবরাজ বাঁকা হেঁসে বলে। ফিজা লজ্জায় মুখের ওপর হাত রাখে। ফিজার চোখ বন্ধ। আবরাজ ওকে বলে,
-“আমাকে দেখো।”
এই আদেশ অমান্য করতে পারে না ফিজা। চোখ খুলে আর আবরাজের মুখের দিকে তাকায়। চোখের মনি পুরুষ টার কালো নয়। ড্রাক চকলেট রঙের। সাদা অংশ টা ও সম্পূর্ণ সাদা নয়। অদ্ভুত সুন্দর আর মায়ায় ভরতি পুরুষ টার চোখ। ফিজা কথা বললো না। শুধু তাকিয়ে রইলো। আবরাজ ওর চোয়ালে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,
-“তুমি কত সুন্দর, সুগন্ধি ফুল।”
নীরবতায় লজ্জায় ফিজার মুখে লাল আভা ছড়িয়ে পরে। একটি সদ্য ফোঁটা গোলাপ। যে শুধু তার মালকিনের নয় পুরো বাগানের আনন্দ। আবরাজের শুধু মনে নয় পুরো শরীরে অনুভূতি ছড়িয়ে পরে। সে মেয়ে টার কপালে মাথায় আর মুখে লাগাতার চুমু দেয়। আর বলতে থাকে,
-“তুমি শুধু আমার। অনলি মাইন।”
বারবার। এই একই কথা উচ্চারিত হয়ে আবরাজের ঠোঁট ভেদ করে। ফিজা হাঁপিয়ে ওঠে। মানুষ টার আলিঙ্গন সে সানন্দে গ্রহণ করে। আর ফিসফিস করে বলে,
-“আমি শুধু আপনার।”
আবরাজ ওর অধরে হামলে পড়ে। ফিজা হাত আবরাজের পিঠে। আবরাজ নিজের কাজে বাঁধা একদম পছন্দ করে না। সে মেয়ে টার বুকের উপরিভাগে মুখ গুঁজে রেখেই ফিসফিস করে আদেশ দেয়,
-“হাত ওপরে সুগন্ধি ফুল।”
ফিজা মান্য করে হাত মাথার ওপর রাখে। আবরাজ এক হাতে মেয়ে টার কব্জি চেপে ধরে আঁটকে রাখে। ফিজা চোখ বন্ধই রাখে। শুধু অনুভব করে ঘর ভরতি ভারি নিঃশ্বাসের।
——
সময় খুব দ্রুত চলছে যেনো। ফিজার কিডন্যাপারে পর আজ চৌদ্দ দিন হয়ে গেলো। আবরাজ তাদের দেশে যাওয়ার বন্দবস্ত করছে। ফিজার আনন্দিত মুখ দেখলে বোঝা যায় সে বোনের বিয়ে নিয়ে খুব খুশি। ফ্লাইটের টিকিট ও নেওয়া হয়েছে। আজ জন বাসায় এসছে। কারণ ফিজা মার্কেট যাচ্ছে। জন তাকে নিয়ে এখান থেকে যাবে আর আবরাজ কে অফিস থেকে পিক করবে। আবরাজ না-কি মিস্টার জি এর বিজনেস ছেড়ে দিচ্ছে। এমনিতেই আবরাজ ছোটখাটো একটা কোম্পানি আছে যেটা সে জন এর দায়িত্বে রেখে যাবে বা আগে যেতো। মিস্টার জি ভীষণ অসুস্থ। আজ এতোদিনেও তিনি মেয়ে কে খুঁজে পায় নি। এক মাত্র মেয়ের জন্য তিনি আজ অসুস্থ। ফিজার শুনে খারাপ লাগছিলো। কিন্তু পরক্ষণেই তা উবে যায়। তাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে তারা আঠারো ঘন্টায় সেটা তার হাতের কালশিটে দাগ এখনো তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তবুও মনটা আনচান করে।
-“তৃণা হঠাৎ করে কোথায় হারিয়ে গেলো?”
গাড়িতে বসে ফিজা জিজ্ঞেস করলো জন কে। জন মুখের ভাবভঙ্গি এমন যেনো সে সত্যি কিছু জানে না আর এটা নিয়ে সে নিজেও চিন্তিত। সে মশলা লাগিয়ে এটাকে আরও একটু স্বাদ করতে সাথে যোগ করে জবাব দিলো,
-“সাথে জুনায়েদ। মিস্টার জি এর একটি হাত বলা চলে ওই জুনায়েদ। বিজনেসের খুব খারাপ অবস্থা।”
ফিজার ভ্রু কুঁচকে যায়। সে খুব ভালো করে জানে এসবের পেছনে আবরাজ আছে। সে এটা নিয়ে চিন্তিত নয়। প্রথমে সে এই দেশ ছাড়তে চায়। বাকিটা সে পরবর্তীতে প্ল্যান করে নিজের মতো চালিয়ে নেবে।
——
কাল ফ্লাইট। ফিজা নিজের সব লাগেজ প্যাক করে নিয়েছে আস্তে আস্তে। আবরাজ রুমে ফিরে এখোনও বউ কে লাগেজ গোছাতে ব্যাস্ত দেখলো। সে তপ্ত শ্বাস ফেললো। ঢুলতে ঢুলতে এসে আবরাজ বউয়ের পেছনে দাঁড়াল। ফিজা তার উপস্থিতি পেয়ে ঘুরে আবরাজের মুখোমুখি হলো। আবরাজ কখনো তার সামনে সিগারেট খায় নি অ্যালকোহল পান করে বাড়ি ফিরতে দেখে নি। বিয়ের এতো মাসে ও সে আবরাজের সাথে মধুময় মূহুর্ত শেষ আবরাজ ক্লান্ত হয়ে সিগারেট জ্বালায় নি৷ ফিজা একটু অবাক হলো। আবরাজ নিজের বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল টা তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
-“এইটুকু। প্লিজ রাগে না লক্ষীসোনা।”
-“আসুন শাওয়ার নিলে ঠিক হয়ে যাবে।”
-“তুমি ও এসো তাহলে। আমি একা পারবো না।”
আবরাজ ঢুলে ঢুলে আবদার করলো। ফিজা আবরাজের বাচ্চামিতে হাসে পায়। সে গাল কামড়ে হাসি আঁটকে রাখে আর আবরাজ কে নিয়ে ওয়াশরুম যায়। গরম পানি বাথটাবের মধ্যে দিয়ে ফিজা আবরাজ কে সেখানে বসিয়ে দিলো। একটা টাওয়াল ও পাশে রেখে বললো,
-“আমি খাবার দিতে বলছি মেড কে।”
আবরাজ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ফিজা যখন চলে নিতে যাচ্ছিলো আবরাজ তখন মেয়ে টার হাত ধরে নিলো। আর ঠোঁট প্রসারিত করে বলে উঠলো,
-“আই নিড ইউর হেল্প, সুগন্ধি ফুল।”
ফিজা চোখ পিটপিট করে তাকায়। আবরাজ হেঁচকা টানে ওকে ও নিজের কোলে বসিয়ে নেয় আর গরম ধোঁয়া ওঠা পানি মেয়ে টার গায়ে ছিটিয়ে দেয়। উলের সোয়েটার ভিজে মূহুর্তেই নারী কায়া দৃশ্যমান হয়। আবরাজ ওর ভেজা এলোমেলো চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলে,
-“তুমি সুন্দর।”
ফিজা তপ্ত শ্বাস ফেললো। এই এক কথা শুনতে শুনতে তার কান ঝালাপালা। তবুও তার বিরক্তি আসে না। সে আবরাজের ভেজা কপালে আলতো করে উষ্ণ ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। আবরাজ চোখ বন্ধ করে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
——
বিয়ের ঠিক একদিন আগে এসে ওরা বাংলাদেশ পৌঁছাল। বিয়ের তোড়জোড় বেশ ভালো। ফিজার তেমন ভালো লাগলো না। ব্যাপার টা সে এখনো বুঝে উঠতে পারে না এটা কার পক্ষ থেকে হচ্ছে। সে চাই ছিলো না কোনো ভাবে তাকে কিংবা তার পরিবার কে মানুষ ছোটলোক বলার সুযোগ পায়। কিন্তু যখন সে জানলো তার মা নয় স্বয়ং তার শ্বশুর মশাই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন সে এতে স্বস্তি পায়।
একটা রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠান হতে পারতো। কিন্তু আব্রাহাম একদম সাদাসিধা একটা বিয়ের আয়োজন চাইলো। খান পরিবারের কেউই এ নিয়ে কিছু বলে নি। তাদের এই নিয়ে মাথাব্যথা নেই। পরে না-হয় তারা বড়ো করে অনুষ্ঠান করবে।
এখন সন্ধ্যায় সাত টা। বিয়ে হবে এশার নামাজের পর। বরযাত্রী ও চলে এসছে। ফিজা এসছে পর বোন আর মায়ের সাথেই আছে। বোন কে সে নিজেই সাজিয়ে দিয়েছে। মোহিতা বেগম রুমে আসতেই ফিজা মায়ের কাছে যায়। মেহরিন লজ্জায় অস্বস্তি নিয়ে বসে। ফিজা ফিসফিস করে। মোহিতা বেগম জোরেই বলেন,
-“আমার মেয়েরা তো এমনিতেই সুন্দর।”
একটা সুন্দর বিয়ে। শুধু খেজুর দিয়ে বিয়ে সম্পূর্ণ। এরপরই বিদায়ের সময়। মোহিতা বেগম এবার আরও ভেঙে পরলেন। দু’টো মেয়ে মাত্র। বিদায় বড়ো বিষাদ। ইলা বেগম বড়ো ছেলের বউকে আজ এখানে রেখে গেলেন।
——–
-“আম্মু শাওয়ার নিতে হবে। তুমি একটা কফি কাউ কে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ো।”
আব্রাহাম মায়ের সাথে কথা শেষ যখন রুমে এলো মেহরিন তখন একটা টাওয়াল হাতে দাঁড়িয়ে। আব্রাহাম এটা দেখে অবাক হয়ে মুখে হাসি নিয়ে বলে উঠলো,
-“ওহ মেহুরানী, তোমার কতো বড়ো কান।”
মেহরিন থতমত খেলো। লজ্জায় ফোলা ফোলা গাল গুলো যেনো জ্বলতে শুরু করলো। হায়। তাকে তো মা বলে দিয়েছিলো যেনো স্বামীর সবদিক নজর রাখে। মেহরিন দাঁড়িয়ে রইলো আব্রাহাম এগিয়ে এসে মুচকি হেঁসে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।
সে যখন শাওয়ার নিয়ে শুধু টাওয়াল কোমরে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো মেহরিন গোল গোল চোখে কয়েক সেকেন্ড তাকে পর্যবেক্ষণ করলো। পরক্ষণেই চোখের ওপর হাত চেপে ধরলো। আব্রাহাম চুলের পানি ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে আসে। মেহরিন পানির ঠান্ডা স্পর্শ পেয়ে মৃদু কাপে। আব্রাহাম ওর থুতনিতে আঙুল ছুঁয়ে মুখ উঁচু করে ধরে। আর শান্ত স্বরে আদেশ করে,
-“মুখ ওপরে। চোখ খোলো মেহুরানী।”
-“আ-আম,,
-“আমি ভীতু। আই নো বেবি গার্ল। বাট বাট। আমাদের আজ ফার্স্ট নাইট।”
মেহরিন অবাক হয়। চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে এক পলক তাকায়। তারপর আবারও দৃষ্টি নত করে। আর আমতা আমতা করে না বুঝে প্রশ্ন করলো,
-“আপনি কী বলছেন?”
-“তুমি যা ভাবছো।”
আব্রাহাম ওর শাড়ির আঁচলের ডান দিকে হাত রাখলো। অথচ শাড়ীর আঁচল বাঁ দিকে। আব্রাহামের ধীরে স্পর্শ আঁচল টা নিজের স্থান পরিবর্তন করতে শুরু করলো। মেহরিন চোখ বন্ধ করে। আব্রাহাম ওর ভীতু মুখের দিকে তাকায়। আর ওর অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসে। একটা হালকা পিংক কালার শিফন শাড়ী। আর মুখে কোনো সাজ নেই। ঠোঁটে হয়তো লিপস্টিক লাগানো হয়েছিল। তবে মেহরিন হয়তো সেটা তুলে ফেলেছে। মোটামুটি সব সাজ এই মেয়ে তুলে নিয়েছে। মোটা চুলের বেণী টা একদম শক্ত। সামনে দিয়ে কোমর ছাড়িয়ে গিয়েছে। নাকে বড়ো ডায়মন্ডের রিং টা জ্বলজ্বল করছে। যেটা আব্রাহামের নামে পরা হয়েছে। আব্রাহাম ওর গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে স্পর্শ করলো। মেহরিনের কম্পন টের পেলো সে। আর তাতে সে আরও ঘনিষ্ঠ হলো। মেহরিনের ভারি নিঃশ্বাস তার খোলা বুক ভেদ করে যেনো বুকের বাঁ পাশে থাকা যন্ত্র টায় লাগছে। আব্রাহাম নিজে কে সামলে নিলো৷ আর ওর কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে চুলের গোছা শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
-“শোনো মেয়ে, তুমি সময় নাও আর নিজে কে আমার জন্য গুছিয়ে নাও, ততদিনে আমি না-হয় সিগারেট দিয়ে চালিয়ে নেবো।”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]