#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা
-“আজকেই বিয়ে? তুমি তাদের না করে দাও আম্মু।”
-“এটা পুতুল খেলা নয়, যে যখন ইচ্ছে খেলবে ইচ্ছে না করলে বাদ দিবে।”
মোহিতা বেগমের গম্ভীর স্বরে ফিজা অবাক হলো। মা তার সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারে এ যেনো কল্পনার বাইরে। তবুও ফিজা নিজে কে শক্ত রাখলো। কিছু টা রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলো,
-“হ্যাঁ আম্মু, আমার জীবন টা খেলনা নয় যে তোমরা আমাকে নিয়ে খেলবে। আম্মু বিয়ে একটা সারাজীবনের প্রশ্ন। এতো দ্রুত কিভাবে,,, ”
-“দেখো পুষ্প কখনো তোমাকে কোনো কিছুতেই জোর করি নি। এখানে করছি কারণ তোমার ভালোর জন্যেই করছি। উনারা কিছুক্ষণ বাদে আসবে। তুমি রেডি হয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও।”
মা যে কিসের ভালো বলছে ফিজা বুঝতে পারছে না। সে বিয়ে করতে চায় না এমন নয়। শুধু একটু সময় চাইছিল। যাতে করে আবরাজ খান সম্পর্কে একটু ভালো করে জানতে পারে চিনতে পারে। একটা মানুষ। যার সঙ্গে সে সারাজীবন কাটাবে। তার সম্পর্কে কিছু জানে না। জানা কী প্রয়োজন না? একে-অপরকে নিজেদের জানার জন্য একটু সময় তো সে চাইছে শুধু। তা-ও কীসের এতো সমস্যা সবার? মোহিতা বেগম চলে গেলে ফিজা বসে রইলো বিছানায় চুপ করে। মনেমনে একপ্রকার স্থির করে নিলো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে। কোনো এক ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবে। বিয়ের সময় টা পেরিয়ে গেলে আবার ফিরে আসবে। সেই ভেবেই মেয়ে টা নিজের হাতব্যাগ টা খুঁজে বের করলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন নিজে কে দেখছিলো তখনই রুমে প্রবেশ করলো মেহরিন। বোনের ভোলা ভালা মুখের দিকে তাকিয়ে ফিজার সব এলোমেলো হয়ে গেলো। সে পালিয়ে যাচ্ছে না। কিন্তু এভাবে বিয়ের আগে বেরিয়ে যা-ওয়া টা কীসের কাতারে পরে? এর এফেক্ট কী তার ছোট বোনের ওপর পড়বে না? ওর ও তো বিয়ে দিতে হবে। ফিজা চেয়ারে বসে পড়লো ধপ করে। কত রকম চিন্তা এসে মাথায় ভর করলো। মেহরিন দরজায় দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
-“আপু কেউ একজন এসছে। তুমি এসো।”
ফিজা ব্যাগ টা রাখলো ড্রেসিং টেবিলের ওপর। মেহরিন আবার বেরিয়ে গেলো। ফিজা রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সোফায় বসে আছে সাব্বির। ফিজা মানুষ টাকে চিনে। মিলন খানের বিশ্বস্ত একজন কর্মচারী। সাব্বিরের সামনে রাখা একটা লাগেজ। এটা দিয়ে যে বিয়ের প্রয়োজনীয় সব পাঠানো হয়েছে দেখে বোঝা যাচ্ছে। ফিজা কে দেখে সাব্বির মৃদু হাসলো। ভদ্রতার খাতিরে ফিজাও হাসে। মিসেস মোহিতা সাব্বির কে নাশতা দিচ্ছেন। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আরও একজন গার্ড। সাব্বির কিছু নিলো না। ফিজার সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে গেলো। সময় টা বিকেল। সন্ধ্যা হতে অনেক সময় বাকি। মোহিতা বেগম মেহরিন লাগেজ টা নিয়ে রুমে এলো। পেছনে ফিজা ও এসছে। হাতে ওর ফোন। রুমে প্রবেশ করার আগেই ফোনে নোটিফিকেশন এলো। ফিজা ভ্রু কুঁচকে নিলো। এমন সময় কে নক করবে তাকে? ফিজা শুধু টেলিগ্রাম ইউজ করে। ম্যাসেজ নোটিফিকেশন চেক করে ও অবাক হলো। আবরাজ খানের অ্যাকাউন্ট থেকে একটা ম্যাসেজ এসছে।
-“I don’t wait, babe. I take what’s mine. The saree, the jewelry. Everything’s ready. Now all that’s left, is you. And I’m coming for you.
Be ready to become Mrs. Abraj Khan.”
ম্যাসেজ টা পড়ে ফিজা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। একবার সাক্ষাৎ আর এমন বিহেভিয়ার? ফিজার কপালে ঘম জমে। চিকচিক করে নাকের আশপাশ। হাতের উল্টো পিঠে সে ঘাম মুছে নিলো। তার বুঝতে অসুবিধা হলো না পুরুষ টা বেশি সুবিধার ন্যায়। শরীর টা কাঁপছে। ফিজা রুমে ফিরে এলো কোনোরকম। মা এবং বোন দু’জনেই যে এতো সব দেখে খুব বেশি অবাক হয়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। খুশি না হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। এতো সব এক্সক্লুসিভ জিনিসপত্র সত্যি বিস্ময়কর।
——-
শরতের শেষ বিকেল। আকাশে রঙ বদলে যাচ্ছে। নীলচে ছায়া থেকে সোনালি। আবার ধূসর।
বাতাসে যেন মেঘের গন্ধ। শান্ত পরিবেশ। শুধু লিভিং রুম থেকে আসছে মানুষের কথোপকথনে শব্দ। ফিজার গায়ে একটি সাদা শাড়ী শরীর জড়িয়ে আছে।
শাড়িটি একদম সাদা নয়। রূপালি জরি, প্যাস্টেল ছোঁয়া। আর ঝিকিমিকি মতি দিয়ে সাজানো। লম্বা কোমরের নিচে সমান ঘনকালো চুলটা খোঁপা করে সাদা গোলাপে গুঁজে রেখেছে। কানে ঝুলছে মুক্তোর ছোট দুল। চোখে শুধু কাজল। ঠোঁটে ন্যুড পিঙ্ক। কিন্তু সবচেয়ে উজ্জ্বল হচ্ছে তার দৃষ্টি। সে কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে না। কিন্তু তার সাজসজ্জা সেই কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।
ধীরে ধীরে পেছন থেকে হেঁটে আসছে কেউ। সে অনুভব করে। আয়নায় তাকালো দৃষ্টি তুলে, চোখ আঁটকে যায় সুদর্শন পুরুষ আবরাজ খানের সৌন্দর্যে। প্রথমবারের মতো মেয়ে টার চোখ বেহায়া হলো। কালো পাঞ্জাবি, হাতে সোনালী রঙের চেইন ঘড়ি। পায়ে লোফার। গা থেকে আসা মিষ্টি এক পারফিউম এর সুগন্ধি একটা অদ্ভুত মুগ্ধ করা গন্ধ এসছে ফিজার নাসারন্ধ্র ভেদ করলো। গভীর চোখের চাহনি। পাশ ঘেঁষে কেবল দাঁড়িয়েছে আবরাজ, ফিজার হুঁশ এলো তৎক্ষনাৎ। অথচ একটু আগেই তাদের বিয়ে হয়েছে। তাকাতেই পারে সে এই পুরুষ টার দিকে। সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এখন তারা স্বামী স্ত্রী। ফিজার পাশেই ছিলো মেহরিন। আবরাজ হাত টা আলতো করে বাড়িয়ে ঘোমটা তুলে কিছু বিড়বিড় করে আওড়াল। মেহরিন এবং রুমের ভেতর থাকা ক্যামেরাম্যান সবাই বিদায় নিলো। দরজা টা হালকা করে ভিড়িয়ে রাখা। ফিজার দৃষ্টি তখন ও নত। পুরুষ টার অদ্ভুত এক শক্তি আছে, যা তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। লজ্জা না-কি প্রথমবার কোনো পুরুষের এতো সংস্পর্শে এসে মেয়ে টার শরীর কাঁপছে মৃদু। সেই কাঁপন স্থায়ী করে আবরাজ নিজের সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীর কোলে মাথা রাখলো। ফিজা চমকে উঠলো। শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ চমকানোর ন্যায় অনুভূতি হলো। আবরাজ মেয়ে টার শরীর কাঁপছে সেটা অনুভব করছে। কাজল চোখের দিকে সে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে রইলো। রয়েসয়ে শান্ত গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-“তুমি জানো আজ তোমায় কেমন লাগছে?”
তার কণ্ঠ নরম। কিন্তু ফিজার মনে তবুও ঝড় উঠলো। এ কেমন কথা সে জানে না। ফিজা ধীরে মুখ ফিরিয়ে তাকায় তার কোলে শুয়ে থাকা পুরুষের মুখের দিকে। ইশ দাড়ি হলে মানুষ টাকে আরও চমৎকার লাগতো। যদিও দাড়ি রেখা রয়েছে। শুধু ট্রিম করা। আর সেই নির্জন দৃষ্টি। যেখানে কিছু চাওয়া আছে। অভিমান নেই। আবরাজ ওর মাথার পেছনে ঘাড়ে হাত রাখলো। ফিজার দিকে একটু এগিয়ে এসে বললো,
-“ইউ আর নট ওয়্যারিং এ শাড়ি। ইউ আর ওয়্যারিং সাইলেন্স। আর সেই নীরবতা আমাকে ভেতর থেকে পুড়িয়ে ফেলছে, সুগন্ধি ফুল।”
ফ্যানের এক ফোঁটা বাতাস ওড়ায় আঁচল। আবরাজ বউয়ের গালে হাত রাখে আলতো করে। হিমবাহের ন্যায় শীতল কণ্ঠে বললো,
-“আই নিড টু টাচ ইউ। নট উইথ মাই হ্যান্ডস। উইথ মাই পেন। উইথ মাই হার্ট।”
ফিজা এবার হালকা করে হাসে। চোখে জল নেই। কিন্তু চাহনিটা তীক্ষ্ণ। আবরাজের হিমশীতল চাহনিতে মেয়ে টাকে আপাদমস্তক দৃষ্টি বুলিয়ে নেয়। ওঠে বসলো সে তৎক্ষনাৎ।
বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। বাতাসটা আজ বেশ শান্ত। সন্ধ্যার আলোটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে। রমণী কোনো কথা বলে না। কেবল চোখ তুলে তাকায়। সেই চাহনি। নীরব অথচ সব বলা হয়ে যায়।
-“ইউ লুক লাইক আ প্রেয়ার আই ওয়ান্ট টু উইস্পার ফর এ লাইফটাইম।”
পুরুষ টা আবারও বলে ফেলে। এক মুহূর্তের জন্য বাতাস থেমে যায়। ফিজার অন্তর কেঁপে উঠলো। আবরাজ ওর গলা চেপে ধরে মুখ টা ওর একদম নিজের কাছে নিয়ে নিলো। নিজেও ঝুঁকে এসে ফিজার ঠোঁটে গভীর এক চুমু খেলো। ফিজার শরীরে যেনো বিদ্যুৎ চমকানোর মতো আবারও কেঁপে উঠলো। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। সামনের বলিষ্ঠ সুঠাম দেহের আবরাজ খান কে ধাক্কা দিলো। কিন্তু সামনের পুরুষের কোনো হেলদোল হলো না। প্রথমবারের মতো কোনো পুরুষের স্পর্শ ফিজার দেহ জুড়ে বারবার কম্পন তুলে। আবরাজের একটা হাত তখন মেয়ে টার কোমরে। সময় গড়ালো। ফিজার কাছে সেই সময় দীর্ঘ লাগলো। নিঃশ্বাস আঁটকে আসে। আবরাজ বউ কে ছাড়লো। করুণ দশা ফিজার। চোখ টলমল করছে। আবরাজের বুকে ধাক্কা দিলো। কিছু টা পিছিয়ে গেলো আবরাজ। ফিজা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। টলমল আঁখি পল্লব তুলে চাইলো আবরাজের দিকে। আবরাজ এগিয়ে এলো। ফিজা এবার পিছিয়ে গেলো। আবরাজ বুঝি বউ কে দূরে থাকতে দিবে? উঁহু, হেঁচকা টানে মেয়ে টাকে নিজের বক্ষে টেনে নিলো। ঠোঁটের কোণায় আঙুল ছুঁয়ে দিয়ে নিষ্প্রভ দৃষ্টে তাকিয়ে হাস্কি আওয়াজ বলে,
-“নাউ ইউ আর অফিশিয়ালি মাইন, সুগন্ধি ফুল। সো ডোন্ট ব্লেইম মি ইফ আই স্টিল কিসেস এভরি ফাইভ মিনিটস অ্যান্ড স্টেয়ার লাইক আ লাভসিক ফুল!”
#চলবে….
[সিজন টু খুব সাধারণ আর গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করছি আমি। সিজন ওয়ান এর মতো এলোমেলো যেনো না হয়ে খেয়াল রাখবো আমি।💜 ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]