#সুগন্ধি_ফুল_২
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা
-“আমার যেকোনো কথা সেকেন্ড টাইম রিপিট করা একদম অপছন্দ। সেটা তুমি খুব ভালো করে জানতে জুনায়েদ।”
আবরাজ বসে আছে একটা বেঞ্চের ওপর। বাঁ পা ডান পায়ের ওপর তুলে রাখে। পায়ে কালো শো এর একদম শেষপ্রান্ত টা লাগাতার নেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত রাগে যখন আবরাজ কোনো গভীর ছক কষে তখনই তার ভাবভঙ্গি এমন হয়ে থাকে। জন ভয় পাচ্ছে। সে মনেপ্রাণে চাইছে তার স্যার কিছু অঘটন না ঘটিয়ে ফেললেই হয়। কেননা জুনায়েদ তাদের জগতের এমন একজন মানুষ যার সবার সাথে কানেক্ট আছে। ভালো খারাপ সবার সাথে। এক্ষেত্রে জুনায়েদ এর কিছু হলে অবশ্যই সেটা খুব বেশি সুবিধার হবে না আবরাজের জন্য। কিন্তু কৌশলে কিছু করতে পারলে সেটা অন্য ব্যাপার। জন যখন মাতাল জুনায়েদর দিকে তাকিয়ে এ-সব ভাব ছিলো আবরাজের গম্ভীর কঠিন স্বর ভেসে আসে।
-“এখন তুমি কী চাও আমি অন্য রাস্তা বেছে নেই?”
-“তা তুমি করতে পারবে না। অন্তত এই লাইনে যতোদিন আছো।”
জুনায়েদ পিটপিট করে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে। বিশ্রী এক হাসি। জনের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। মাতাল না হলে এর কী যে করতো আবরাজ। জন ভাবে তার স্যার এমনিতে ভালো মানুষ। কারোর দুঃসময়ের সুযোগ নেয় না। লড়াই হবে সমানে সমানে। আর সমানে সমানে না হলে লড়াই মজা নেই। এটা আবরাজের ভাষ্যমতে। কিন্তু জনের ইচ্ছে একে এই অবস্থায় ইচ্ছে মতো পিটাইতে পারলে তার মন টা শান্তি পেতো।
-“আবরাজ খান কেমন সেটা তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাইছি না। এটা মাথায় রেখো।”
আবরাজ শান্ত স্বর ঘরে চারদিকে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।
-“আমি তোমার বউয়ের দিকে এখনো ভালো করে নজর দেই নি, তবে ওর ফ,,,
-“আর নজর দেওয়ার কথা চিন্তা ও করো না। আমি এই বিষয় টা নিয়ে তোমার সাথে জাস্ট কথা বলতে চাই না। শুধু আমার ভাই কে বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য তোমার এটা ওয়ার্নিং। আমাদের থেকে দূরে থাকো।”
জুনায়েদের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবরাজ ওর চেয়ার টা লাত্থি মেরে ফেলে দিয়ে বললো। আর সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। জুনায়েদ খুব বিশ্রী ভাবে জোরে জোরে হেঁসে কিছু বলতে লাগলো। তবে আবরাজ সে-সব উপেক্ষা করে। আর গার্ড জুনায়েদ কে টেনে নিয়ে গাড়িতে তুলে।
—–
একটি ভীতু মুখ ভয়ার্ত চোখের দৃষ্টি আর অসহায় একটি চিৎকার। আব্রাহামের কানে ভেসে আসে বারবার। সে চমকে উঠলো। সোজা হয়ে বসে ইজি চেয়ারের হাতলে হাত ঠেকিয়ে কপালে হাত রাখলো। চোয়াল সহ হাতিয়ে দেখলো ঘেমে উঠছে সে। অস্থির দেখাচ্ছে তাকে। এর আগে কখনোই সে এমন অস্থিরতা কোনো মেয়ের জন্য অনুভব করে নি। মাত্র একবার সাক্ষাৎ কোনো রমণী যে কোনো পুরুষের এমন ঘুম হারাম করে দিতে পারে, তা আব্রাহামের জানা ছিলো না। এটা নিয়ে এই তার প্রথম অভিজ্ঞতা। আব্রাহাম তপ্ত শ্বাস ফেললো। দরজায় কেউ কড়া নাড়তেই আব্রাহাম গম্ভীর স্বরে অনুমতি দিলো,
-“কাম ইন।”
সময় টা বিকেল ছাড়িয়ে কিছু টা গোধূলি। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবে যায় নি পুরোপুরি। কমলা রঙের আভা ছাড়িয়ে কী দারুণ দেখাচ্ছে। তবে তবুও তার ওই মেয়ে টার ভীতু মুখ টাই মনে পরলো। আব্রাহাম জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখনই মায়ের চিন্তিত স্বর শোনা গেলো,
-“কী হয়েছে আব্বা? এসছো পর কেমন মনমরা হয়ে থাকছো, তোমার কী কোনো কারণ মন খারাপ?”
-“না আম্মু। ওই অনেকদিন পর তো তাই আমি ঠিক মানিয়ে উঠতে পারছি না।”
-“আমি তোমাকে একটা প্রস্তাব দিতে চাই।”
-“কিসের প্রস্তাব আম্মু?”
-“তুমি কী আমার প্রস্তাব মেনে নিবে?”
-“কেননা নয়। অফকোর্স মেনে নেবো।”
-“বিয়ে করো। দেখবে তখন ব্যাস্ততায় সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।”
আব্রাহাম মায়ের কথায় অবাক হলে-ও তার চোখের সামনে সর্বপ্রথম যে চেহারা টা ভেসে উঠলো সেটা সত্যিই অনেক টা আশ্চর্যজনক। সে কী বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। কেনো মনে হচ্ছে মেয়ে টার সম্পর্কে একবার হলে-ও তার খোঁজ নিতে হবে! অদ্ভুত হলে-ও সত্যি সে আগে ভাবতো এক দেখায় কখনো কাউ কে চিনা যায় না। প্রেমে পরা যায় না। ওগুলো শুধুমাত্র সিনেমাতে হয়। বাস্তবে কখনো পসিবল নয়। তবে কী তার ধারণা ভুল? সে-ও কী ওই ভীতু মেয়ে টার প্রেমে পরে গেলো?
-“আচ্ছা তুমি ভাবো। ভেবে জানাও আমাকে। আমি তোমার সিদ্ধান্ত জানার পর-ই পাত্রী দেখা শুরু করবো। এখন এ-সব ছাড়ো, আজ তোমার ভাবির মা এবং বোন আসবে। আসতে চায় নি তোমার বাবা জোর করে আনছেন। তুমি সন্ধ্যায় রেডি থেকো।”
আব্রাহাম তেমন কোনো উত্তর দিতে পারলো না। শুধু লাস্টের কথায় সম্মতি দিয়ে বললো,
-“আচ্ছা থাকবো।”
ইলা বেগম মৃদু হেঁসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আব্রাহাম তপ্ত শ্বাস ফেললো। মাথা নেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে পর্দা মেলে দিয়ে দিলো। তার বিরক্ত লাগছে সবকিছু। কারণ কী? ওই মেয়ে টা? তবে যদি তাই হয় তবে খুব খারাপ হবে এই মেয়ের সঙ্গে। তার জন্য কতোটা প্রস্তুত ওই ভীতু মেয়ে!
——
-“ইউ লুকিং সো গর্জিয়াস, সুগন্ধি ফুল।”
মেরুন রঙের শাড়ী। শিফন বা অর্গানজার মতো হালকা ও ঝলমলে ফ্যাব্রিক পুরো শাড়ির উপর ছোট
ছোট সোনালি পুঁতির মত এমবেলিশমেন্ট রয়েছে। এবং পাড়ে গোল্ডেন লেইসের কাজ যা খুব সূক্ষ্ম এবং পরিপাটি।
একটি পাতলা সোনালি চেইন টাইপ নেকলেস। যার মধ্যে ছোট ছোট মুক্তার মতো কাজ রয়েছে। এটি ঘাড়ে একদম ফিট করে বসে। যা চোকার টাইপ নেকলেসের মতো লাগছে। বড় সোনালি ঝুমকা। নিচে দুলতে থাকা ডিজাইন। যা ট্র্যাডিশনাল লুকে চমৎকার মানিয়ে গেছে। একটি সোনালি চুড়ি। ব্যাস এতেই তার সময় ভুলিয়ে দিতে যথেষ্ট। আবরাজের মুগ্ধ চাহনি ফিজার শরীরে শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।
মাত্র একটি বাহু এবং কাঁধ উন্মুক্ত। তবুও ফিজার নিজে কে অনাবৃত মনে হচ্ছে। কেমন খালি খালি লাগছে। সে রুমের বড়ো লাইট অফ করে রেখেছে। টিমটিমে আলো চারপাশে। আবরাজ ধীরে পায়ে এগিয়ে আসছে। অথচ ফিজার মনে হচ্ছে খুব দ্রুতই আবরাজ সেই পথ অতিক্রম করে তাকে ছুঁয়ে দিবে। যা তারজন্য খুব বেশি ভালো হবে না। আবরাজ নিশ্চয়ই তার পাগলামির সর্বোচ্চ সীমা আজ লঙ্ঘন করবে। ফিজার মনের সাথে শরীর টা ছটফট করতে লাগলো। আবরাজ মুগ্ধ দৃষ্টি ফিজার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে যাচ্ছে যেনো। সে এদিক-ওদিক অচেতন দৃষ্টি ফেলে। মানুষ টার শরীর থেকে আসা পুরুষালী গন্ধ ফিজার নাসারন্ধ্র ভেদ করে। সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত এক আকর্ষণ অনুভব করলো সে। দৃষ্টি তুলে সামনে দাঁড়ানো আবরাজ কে দেখে ওর গলা শুঁকিয়ে আসে। আবরাজ ওর উন্মুক্ত কাঁধ আর গলায় মুখ গুঁজে দিতেই ফিজার শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ চমকালো। সে আবরাজের পিঠের শার্ট টা খামচে ধরে নিলো নিজের অজান্তেই। তার ফুসফুস তৎক্ষনাৎ অক্সিজেনের অভাব বোধ করলো সে। শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো,
-“এমন করবেন না, প্লিজ। আমার অস্বস্তি হচ্ছে।”
-“হোক।”
আবরাজ ঘোর লাগা স্বরে ফিসফিসিয়ে উত্তর দিলো। ফিজা চোখ বন্ধ করে নিজে কে স্বাভাবিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। আবরাজ ওকে আচমকাই ঝুঁকে কোলে তুলে নিতেই ফিজা চমকে ওঠে আবরাজের গলা জড়িয়ে ধরলো। আবরাজ ওর কাণ্ড দেখে হাসলো। এরপর ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে ফিজা কে বিছানায় রাখলো। ফিজা এবার সব সময়ের মতো ঝুঁকে পেছনে হেলে গেলো। সে ভেবেই নিয়েছে আবরাজ সব সময়ের মতো তার গলায় মুখ গুঁজে শার্টের বাটন খুলতে খুলতে পাগলামো করবে। অথচ আবরাজ কিছুই করলো না, ফিজা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-“সোজা হয়ে বসো।”
ফিজা অবাক হয়ে। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলো। আবরাজ আস্তে আস্তে এবার পিছিয়ে যেতে লাগলো। রুমের মাঝে রাখা ধূসর রঙের সোফায় গিয়ে বসলো এরপর। সোফার হ্যান্ডেলে হাত রেখে থুতনির নিচে হাত ঠেকিয়ে দিয়ে কাত হয়ে ফিজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওকে দেখতে লাগলো। ফিজা কিছুই যেনো বুঝতে পারছে না। তবুও সে অনেক কিছু সহ্য করছিলো। বিশেষ করে আবরাজ খানের জ্বলন্ত দৃষ্টি। যাতে শুধু ছিলো তৃষ্ণা আর তৃষ্ণা। আর সেই তৃষ্ণা ফিজা কেও তৃষ্ণার্ত করে গেলো। আর তা ভেবেই সে লজ্জায় মুখ লুকাতে চাইলো। বউয়ের লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আবরাজের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। আবরাজ ওর চোখে চোখ রেখে হিমবাহের ন্যায় শীতল কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“আমার ভাবনার চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে, সুগন্ধি ফুল।”
#চলবে……
[ছোট বলবেন না প্লিজ। নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি আমি। রাইটিং ব্লকে যেনো না পড়ি দোয়া করবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]